অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা, এখনি সময় যুগান্তকারী পদক্ষেপের

খোরশেদ মাহমুদ
Published : 4 Nov 2017, 04:40 AM
Updated : 4 Nov 2017, 04:40 AM

তাদের কেউ কখনো রাজনীতি করেনি, করেও না। তাদের কোন নেতাও নেই। তারা এত নির্যাতিত হয়েও কখনো স্বাধীনতা চায়নি। এখন পর্যন্ত কোন শরণার্থী মিডিয়াতে বলেনি আমরা স্বাধীনতা চাই। মিয়ানমারের সামরিক জান্তার অত্যাচার থেকে বাঁচতে ১৯৭৮ সালে প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। সেই থেকে অসহায় রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুর জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশ মমতার হাত বাড়িয়ে রেখেছে। কিন্তু সেই মমতাকে পুঁজি করেই রোহিঙ্গাদের বেশির ভাগ এখন অপরাধী হয়ে উঠেছে। আমাদের সরকারের মানবিকতা ও ভালোবাসার সুযোগ নিয়ে, ভালো ব্যবহারকে দুর্বলতা ভেবে তারা দেশে অপরাধ কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। বর্তমানে কমপক্ষে ৫০ হাজার রোহিঙ্গা নানান অপরাধের সঙ্গে জড়িত। এদের মধ্যে ১০ হাজার রোহিঙ্গা ভয়ংকর হয়ে উঠেছে।

অনেকে প্রাথমিক দিকে বিচার বিশ্লেষণ করলেও শরণার্থী সমস্যাটা মাত্র কিছু দিন। মোটেই কিছুদিনের ব্যাপার না। বাংলাদেশ একটা দীর্ঘস্থায়ী সমস্যায় জড়িয়ে গেল। বাংলাদেশের জঙ্গি-চরমপন্থি উত্থানের উর্বর ক্ষেত্র সামালদেয়া ছাড়াও সামনে আমাদেরকে সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। অগ্রগতি থেমে যাবে, পিছিয়েও যেতে পারে। এইসব বহিরাগত ঝামেলা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামজিক ও রাষ্ট্রীয় অবস্থাকে আরো অস্থির এবং অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। রোহিঙ্গারা আসবে, আসতেছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে নানান সমস্যায় পড়ে যাবে।

বাংলাদেশের নাগরিকদের স্বাভাবিক জীবন ব্যহত হচ্ছে:

শিবিরে আশ্রিত রোহিঙ্গারা শিবিরগুলোর বাইরে পাহাড় বা সংরক্ষিত বন কেটে রোহিঙ্গারা আশ্রয়ের জায়গা তৈরি করছে। পাশাপাশি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা তাদের সাথে মিল থাকায়। এই সুযোগ নিয়ে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সহ বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ছে। রোহিঙ্গাদের কারণে আজ উখিয়া-টেকনাফের মানুষ সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে। এতে স্থানীয়দের নিরাপত্তা দিন দিন ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। আজকে একজন খুন হয়েছে, কাল ১০ জন খুন হতে পারে। কারণ community power মানুষকে হিংস্র ও অপরাধী করে তোলে। এসব বিষয়ে এখন ভাবার সময় এসেছে। স্থানীয় নিম্নআয়ের শ্রমজীবী মানুষের কাছে রোহিঙ্গাদের কমদামে শ্রম বিক্রির বিষয়টি বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রোহিঙ্গারা চুরি, ডাকাতি এবং মাদক পাচারের মতো বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সমাজে এবং আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির উপর। কক্সবাজারে নিবন্ধনকৃত কুতুপালং এবং নোয়াপাড়া শরণার্থী শিবির দু'টিতে বত্রিশ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে। কিন্তু অনিবন্ধনকৃত আরও দু'টি শিবিরসহ অন্যান্য এলাকাতেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রোহিঙ্গারা থাকছে। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রোহিঙ্গাদের পুরোপুরি নিবন্ধনের আওতায় আনা হলে অপরাধীদের চিহ্নিত করা আরও সহজ হবে। তা না হলে অপরাধী সনাক্ত করতে হিমসীম খেতে হবে খোদ প্রাশাসনকে। এর ফলে অপরাধীর সংখ্যা দিন দিন বাড়তেই থাকবে। ফলে মহামারি আকার ধারণ করবে।

বেপরোয়া রোহিঙ্গা:

নতুন করে রোহিঙ্গার সংখ্যা ছয় লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে জাতিসংঘের এক বার্তায় জানাযায়। কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গারা দিন দিন অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠছে। রোহিঙ্গাদের হামলার শিকার হচ্ছেন স্থানীয় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি পুলিশ, সাংবাদিক, এনজিও কর্মী সহ বাদ পড়ছেনা ত্রাণ সহায়তাকারীরাও। ক্যাম্পে তাদের নিজেদের মধ্যেও বাড়ছে ঝগড়া-বিবাদ। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম মারফত জানাযায় এ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের হামলার শিকারে প্রাণ হারিয়েছেন দুজন। আর বিভিন্ন সময় আহত হয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তাও। গত ১৬ সেপ্টেম্বর উখিয়ার কুতুপালং এলাকায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একে অপরের হামলায় এক রোহিঙ্গা খুন হয়। ৭ অক্টোবর কুতুপালংয়ের একটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকার পার্শ্ববর্তী তেলপাড়া খাল থেকে এক অজ্ঞাত রোহিঙ্গার বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গত ১৯ অক্টোবর রোহিঙ্গা দুই সহোদরের ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের আবু ছিদ্দিক।

দুই দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ২১ অক্টোবর ভোরে তিনি মারা যান। মহিষ বিক্রিকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা মোহাম্মদ হোছেনের ছেলে কালা মিয়া ও ধলা মিয়ার সঙ্গে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে আবু ছিদ্দিককে মারধর ও ছুরিকাঘাত করে। সর্বশেষ গত শনিবার টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-ব্লকে রোহিঙ্গা নারী দিল বাহার ও তার স্বামী সৈয়দ আহমদ অবৈধভাবে একটি মুদির দোকান বসানোর চেষ্টা করছিল। এতে নয়াপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (এসআই) কবির আহমদ বাধা দিলে রোহিঙ্গা দম্পতি তার ওপর চড়াও হয়। এ ঘটনায় এসআই কবিরের মাথা ফেটে গেলে তাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে টেকনাফ হাসপাতালে ভর্তি করান।

এর আগে গত এক মাসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গার বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার, কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ইয়াবাসহ রোহিঙ্গা আটক, ত্রাণ দিতে গিয়ে স্থানীয় এনজিও মুক্তির কর্মকর্তা লাঞ্ছিত, রোহিঙ্গার হাতে উখিয়ায় মুরগি ব্যবসায়ী আহত হওয়ার মতো অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। এর বাইরে প্রায় প্রতিদিন উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকে।

মাদক পাচারে রোহিঙ্গা:

সাম্প্রতিক রোহিঙ্গা সমস্যায় প্রাশাসনের ব্যাস্ত সময়টাকেই পুজি করে ইয়াবা পাচারকারী সিন্ডিকেট বেশ সক্রিয় হয়ে উঠে। এ কাজে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের একটি চক্র জড়িত। প্রশাসনের চোখ ও ব্যস্ততাকে ফাঁকি দিয়ে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপসহ বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে গত দুই মাসে বড় বড় ইয়াবার চালান খালাস হয়েছে। উপলব্দি করা যায় সম্প্রতি ধরা পড়া চালানের নমুনা দেখে। শাহপরীর দ্বীপ হাইওয়ে পুলিশের হাতে ৮০ হাজার ও ২ লাখ ৫৫ হাজারের দুটি চালান ধরা পড়েছে। এ ছাড়া বিজিবি, কোস্টগার্ড ও র্যাবের অভিযানেও কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রাশাসন কয়েকজনকে চিহ্নিত ও আটক করতে সক্ষম হলেও মূল হোতারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাই এখনি সময় রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আরো জোড়ালো গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে অপরাধীদের চিহ্নিত করে ধরার উদ্যোগ নেওয়া।

দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন আপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। রোহিঙ্গাদের এই কর্মকাণ্ড থেকে ফায়দা লুটছে এ দেশীয় কিছু স্বার্থান্বেষী মহল। সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব ওমর ফারুক চারদলীয় জোট সরকারের সময় রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে অস্ত্র ব্যবসা করেছেন। ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায়ও তিনি অভিযুক্ত। রোহিঙ্গাদের হাত অনেক লম্বা মন্তব্য করে ওই কর্মকর্তা জানান, ওদের গ্রেপ্তার করতে গেলে অনেক বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। এর আগে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্য রোহিঙ্গা অপরাধীদের গ্রেপ্তার করার দায়ে চাকরিচ্যুত হয়েছেন। অনেকে হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন।

সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা এএসপি নিরঞ্জনের ঘটনাকে নজির হিসেবে টেনে সাংবাদিকদের গোয়েন্দা কর্মকর্তা (ডিবি) মনিরুল ইসলাম বলেন, ২০০০ সালে উখিয়া সার্কেলের সাবেক এএসপি নিরঞ্জন কুমার রোহিঙ্গাদের সামরিক শাখার বড় কর্মকর্তা সেলিমকে জীবন বাজি রেখে গ্রেপ্তার করেন। ওই রোহিঙ্গা নেতা অল্প দিনের মধ্যে ছাড়া পেয়ে টার্গেট করেন নিরঞ্জন কুমারকে। কয়েকবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও বেঁচে যান নিরঞ্জন; কিন্তু পুলিশে আর চাকরি করা হয়নি তার। বিভিন্ন জায়গায় বদলি, জেল-ডিটেনশন, শেষ পর্যন্ত কারাভোগ; অতঃপর চাকরিচ্যুত করা হয় তাকে। এখানেই শেষ নয়। রোহিঙ্গাদের মদদদাতা হিসেবে চিহ্নিত বিশেষ মহলের রোষানল থেকে রেহাই পাননি তিনি। সাজা খেটে বের হওয়ার পরও তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। পরে নিরুদ্দেশ তার আর খোঁজই মেলেনি।

বাংলাদেশী পাসপোর্টে বিশ্বব্যাপী অপরাধে:

রোহিঙ্গারা দেশে অরাজকতার পাশাপাশি প্রবাসে সৃষ্ট সমস্যায় সুনাম ক্ষুন্ন বাংলাদেশী শ্রমিকদের। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা অসাধু উপায়ে বাংলাদেশী পাসপোর্ট সংগ্রহ করে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে শ্রমিক হিসেবে যাচ্ছে। সেখানে গিয়ে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। এদের কারণে বাংলাদেশী শ্রমিকদের সততা ও আইন মেনে চলার দীর্ঘদিনের সুনাম হুমকির মুখে পড়েছে। সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অপরাধের সঙ্গে বাংলাদেশি শ্রমিকদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে সেসব খবর প্রকাশিত হয়েছে, তার জন্য আসলে দায়ী এই রোহিঙ্গারা। বিষয়টি এখনই নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা না হলে মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি শ্রমিকের চাহিদা আরো কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে আমাদের জনশক্তি হুমকির মুখে পড়বে। রেমিট্যান্সের উপর বড় বাঁধা এসে পড়বে।

সম্প্রতি বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতিকালে রাজধানীর মতিঝিল ও ফকিরাপুল এলাকার বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ১৬ জন রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। এসব পাসপোর্ট ব্যবহার করে তারা বিভিন্ন দেশে গিয়ে নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। পেশাদার পাচারকারী চক্রের সহায়তায় মিথ্যা নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে পাসপোর্ট জোগাড় করছে। এদের বিদেশে পাঠাতে সহযোগিতা করছে বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির মালিক। বাংলাদেশি পাসপোর্টের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে তাদের পাঠানো হয়। এতে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম এবং শ্রমবাজার নষ্ট হচ্ছে। ফলে সারা বিশ্বে থাকা বাংলাদেশি জনশক্তির চাহিদা দিন দিন কমতে থাকবে। ফলে এর প্রভাব পড়বে আমাদের অর্থনীতির উপর।

জঙ্গি সম্পৃক্ততা:

১৯৯৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি একটি জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির থেকে একজন রোহিঙ্গাসহ হরকাতুল জিহাদের ৪১ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুই বছর পর কক্সবাজারের বিশেষ আদালতে তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। বিভিন্ন মিডিয়ার তথ্যে জানতে পারি। রাঙামাটির গহীন জঙ্গলেও জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির রয়েছে। ওই ঘাঁটিগুলো সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেলেও বিভিন্ন কারণে সেখানে অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছে না। ওইসব জঙ্গি শিবির থেকে অনেক রোহিঙ্গাকে পাঠানো হয়েছে আফগান রণাঙ্গনে। আফগানিস্তান থেকে এ দেশে ফেরত আসা অনেক রোহিঙ্গা বর্তমানে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরসহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এদের অনেকে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা শিখে সেখানকার মূল জনস্রোতে মিশে আছে। সবাই মূলত বাংলাদেশের পরিস্থিতির অবনতি চাচ্ছেন, দেশটাকে নরক বানিয়ে দেশের চূড়ান্ত সর্বনাশ করে হলেও যদি অল্প কিছু ফায়দা হাসিল সম্ভব হয়, সেটাও তাদের কাছে লাভ।

আমাদের দেশে আনাগোনা করা কঠিন কিছু না। ২০১২ ও ২০১৬ তে বিভিন্ন সময়ে জঙ্গি হামলায় রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও পাওয়া যায়। পাওয়া যায় মৌদুদিবাদি রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের বিভিন্ন অপ-তৎপরতার খবর। এর আগে সীমান্ত পাড়িদিয়ে কি পরিমাণ রোহিঙ্গা আমাদের দেশে প্রবেশ করেছে, কতজন বিভিন্ন মাদ্রাসায় পড়াশুনা করছে, কি পরিমাণ আমাদের পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশ অবস্থান করছে তার কোন সঠিক হিসাব কারও কাছে নেই।

যৌন ব্যবসায় রোহিঙ্গা:

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রোহিঙ্গা শিবিরটি কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে। এটি গড়ে উঠে ১৯৯২ সালে। এ শিবিরের প্রায় ৫০০ কিশোরী ও নারী যৌন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। নতুন ছয় লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এবার তাদের মধ্য থেকে আরও ১০ হাজার কিশোরী ও নারী এ পেশায় যুক্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব নারীর অনেকে বছরের পর বছর ধরে কুতুপালং শিবিরেই আছেন।

অর্থের লোভ দেখিয়ে রোহিঙ্গা নারীদের নিষিদ্ধ যৌন ব্যবসায় নামাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কেউ আবার অর্থের জন্য নিজেই এ পেশাকে বেছে নিচ্ছেন। কক্সবাজারের একশ্রেণির হোটেল মালিক ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে এ সমস্ত রোহিঙ্গা কিশোরীদের নিয়ে যৌন বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন অনুসন্ধান রিপোর্টে দেখা গেছে। মাঝেমধ্যে এসব রোহিঙ্গা কিশোরীরা পুলিশের হাতে আটক হলেও পেশাদার দালালদের সহযোগিতায় তারা জামিনে বেরিয়ে এসে আবারো যৌন ব্যবসায় লিপ্ত হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে যৌনকর্মে রোহিঙ্গা নারীরা কোন ধরণের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় মারাত্মক সব যৌনরোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।

এসব রোহিঙ্গা নারীদের অধিকাংশই মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাতে ধর্ষণের শিকার। তাই এসব নারীদের যৌন পেশায় নামানো অনেকটা সহজ। সেই সুযোগ নিচ্ছে দালালরা। তার উপরে দারিদ্র রোহিঙ্গাদের অন্যতম সমস্যা। সরকার তাদেরকে এক জায়গায় রাখার চেষ্টা করলেও এত মানুষকে কোনভাবেই এক জায়গায় আটকে রাখা সম্ভব না। তারা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। এসব রোহিঙ্গা নারীরা দেশের অন্য এলাকাগুলোতে গিয়ে ভাষার কারণে অনেক সময় ধরা পড়লেও চট্টগ্রামের ভাষার সঙ্গে তাদের মিল খুব বেশি বেগ পোহাতে হয়না তাদের। বিগত কয়েক বছরে কুতুপালং থেকে অনেক কিশোরী নিখোঁজ হয়েছে। তার মধ্যে অনেক মেয়ের বয়স ১০ বছরের কম।

গার্মেন্টস এ চাকরি দেওয়ার কথা বলে পাচারকারীরা রোহিঙ্গা কিশোরীদের যৌনপল্লীতে নিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছেন এমন নিউজও মিডিয়ার কল্যাণে প্রাকাশিত হয়েছে। আবার কেউ কেউ বিভিন্ন শহরে গিয়ে ভাসমান যৌনকর্মী হচ্ছেন। তবে কতজন যুবতী বা নারী এ ব্যবসায় এ পর্যন্ত জড়িয়ে পড়েছেন সে হিসাব নেই জাতিসংঘের কোনো এজেন্সির কাছে। বিশৃঙ্খল, এলোমেলো ক্যাম্পগুলোতে পাচারকারীদের খপ্পরে পড়তে পারে শিশু ও যুবক, যুবতীরা। তাদেরকে বিপথে পরিচালনা করা হতে পরে। তাই এখনি সময় যুগান্তকারী পদক্ষেপের। তা না হলে বাংলাদেশ অচিরেই মহা সমস্যার জড়িয়ে পড়বে।

সাংবাদিক ও কলামিস্ট
খোরশেদ মাহমুদ
ইউনিট ফাইভ, হেমার্স্কাল, সাউথ আফ্রিকা।