পিতা হারানোর শোকে পাথর প্রায় নিষ্পাপ শিশুকন্যা তার খালার কাছে প্রশ্ন "খালাম্মু, আমার বাবা শহীদ হয়েছেন না ?" জানে তার বাবা আর কোনোদিন ফিরে আসবে না তাই সে এই প্রশ্নের উত্তরে সান্ত্বনা খোঁজে যে তার বাবা শহীদ হয়েছেন | আসলেই তার বাবা শহীদ হয়েছেন | গত ২১শে এপ্রিল ২০১৫ সাভারের কাঠগড়া কমার্স ব্যাংকের দূর্ধর্ষ ডাকাতিকালে ডাকাতদের গুলিতে যারা নিহত হয়েছেন তাদের মধ্যে তার বাবাও একজন | তার বাবা ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার কাজী বদরুল আলম | দেশের কর্তব্যপরায়ণ এই বীর সন্তান ১৯৮৩ সালে সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগদান করেন। ১৯৯১ সালে তিনি কুয়েত মিশনে যান এবং সৌদি আরবে হজ্জ্ব পালন করেন। সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার পদে থেকে ২০১২ সালে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর এর পর তিনি অলস সময় না কাটিয়ে ২০১৪ সালের জুলাই মাসে কমার্স ব্যাংকে গানম্যান হিসেবে যোগদান করেন।
গত ২২শে এপ্রিল বুধবার বিকালে যখন নিহত বদরুল আলমের মৃতদেহ এ্যাম্বুলেন্স যোগে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে পৌছায় তখন হাজারো মানুষের ঢল নামে এই বীর সন্তান কে শেষ বারের মত শ্রদ্ধা জানানোর জন্যে | পরিবারের সদস্য, আত্মীয় স্বজন ও আশে পাশের এলাকার মানুষের কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। ওইদিন ২২শে এপ্রিল সন্ধ্যায় জানাযা শেষে যশোর সেনাবাহিনীর একটি দল তাকে গার্ড অব অনার প্রদানের পর গ্রামের বাড়ি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার আমাদা গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
https://www.youtube.com/watch?v=IiEOvspOaIY
https://www.youtube.com/watch?v=7KMmfNxB3nM
ছবি ক্যাপশন: গত ২১শে এপ্রিল ২০১৫ সাভারের কাঠগড়া কমার্স ব্যাংকের দূর্ধর্ষ ডাকাতিকালে ডাকাতদের গুলিতে নিহত অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার কাজী বদরুল আলমের পতাকা মোড়ানো কফিন সন্ধ্যায় জানাযা শেষে যশোর সেনাবাহিনীর একটি দল গার্ড অব অনার প্রদানের জন্যে নিচ্ছেন |
দীর্ঘ ২৯ বছর যে পতাকার জন্যে এই বীর সন্তান কাজ করেছিলেন সেই পতাকা জড়িয়েই সে শেষ বিদায় নিলো | যার অবদানের জন্যে বাংলার মাটি ছিল সুরক্ষিত আজ সেই বীর সন্তান নিজেই অরক্ষিত হয়ে এবং তার পরিবারকে অরক্ষিত রেখেই চলে গেলেন না ফেরার দেশে | সেনাবাহিনীর গার্ড অব অনার দিয়ে পতাকা মোড়ানো কফিন থেকে লাশটি যখন কবরে নামিয়ে কবরে মাটি দেয়া হচ্ছিলো তখন মনে হচ্ছিলো একসময় যে মাটির সুরক্ষার জন্যে সে কাজ করেছে আজকে সে মাটি যেন অতি আদরে তাকে বুকে আগলে নিলো | এই মাটিতেই সে সুরক্ষিত থাকবে আজীবন | শোনা যাচ্ছিলো সেনাবাহিনীর গার্ড অব অনারের রাইফেল থেকে ছোড়া ৩ বারে ২৪ রাউনড গুলীর শব্দ | রাইফেল গুলো যেন পুরনো বন্ধুর শেষ শ্রদ্ধায় এসে বার বার গর্জন দিয়ে বলছিল এর একটিও যদি তখন তোমার কাছে থাকতো তাহলে একটি ডাকাতও তখন ব্যাংকের দরজা পেরিয়ে দুনিয়ার আলো দেখতে পেত না | বদরুল আলম নেই কিন্তু তার কফিনে মোড়ানো পতাকা আর তার আদর্শ থাকবে তার দুই কন্যা ও স্ত্রীর কাছে আজীবন | বদরুল রা কখনো মরে না ওরা শহীদ | শুধু বদরুল নয় ২১শে এপ্রিল ২০১৫ সাভারের কাঠগড়া কমার্স ব্যাংকের ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে যারাই ডাকাতদের প্রতিহত করতে এসেছিলেন তারা প্রত্যেকেই এক একজন বীর আর যারা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন তারা প্রত্যেকেই শহীদ | আল্লাহ তায়াল যেন তাদের সবাইকে শহীদের দরজা দেন |
মাত্র ২০ মিনিটের ঘটে যাওয়া ভয়াবহ এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের স্মরণকালের দূর্ধর্ষ ব্যাংক ডাকাতিতে সর্বশান্ত যে ৮টি অথবা ৯টি পরিবার তাদের সবাই সচ্ছল, অসচ্ছল যায় হোক আজ তারা খুব অসহায় | স্বামী হারা, বাবা হারা মানুষ গুলোর মাথার উপর থেকে ছায়া চলে গেছে | মানুষ হিসাবে আমাদের উচিত এদের পাশে দাঁড়ানো | করুণার দৃষ্টিতে নয় সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকেই উচিৎ এদের পাশে থাকা | যেকোনো ব্যাক্তি, যেকোনো প্রতিষ্ঠান কিংবা যেকোনো অঙ্গ সংগঠনের উচিৎ এদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর | আজকে যদি আমরা এই পরিবার গুলোকে সুরক্ষিত না করি তাহলে একদিন আর কোনো স্ত্রী তার স্বামীকে পাঠাবে না, আর কোনো সন্তান তার বাবাকে পাঠাবে না আমাদের সুরক্ষিত করার জন্যে |
২১শে এপ্রিল ২০১৫ সাভারের কাঠগড়া কমার্স ব্যাংকের ডাকাতির ঘটনা ২২ শে এপ্রিল ২০১৫ তারিখে সকল পত্র প্রত্রিকার প্রধান শিরোনাম হিসাবে প্রকাশিত হয় | নিচে কিছু লিঙ্ক দেয়া হল ঃ
http://goo.gl/0XpPAq
http://goo.gl/GJUwQP
http://goo.gl/l0h7Li
বি ঃ দ্র ঃ বদরুল আলমদের মত বীরের আত্মত্যাগের খবর বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের জানতে হবে | জানাতে হবে সবাইকে | সবাই এই বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে পোস্টটি শেয়ার করুন | নিজে শেয়ার করুন বন্ধুদেরও শেয়ার দিতে বলুন |