আমাদের কথা বলতে নেই!

রাজু হাসান
Published : 12 June 2015, 03:07 PM
Updated : 12 June 2015, 03:07 PM

কথা বলতে নেই কারন ছোট মুখ বলে কথা।
না না গঠনের দিক হতে মুখটা একটা চেপ্টা থালার ন্যায়। ছোট মুখ বলছি এজন্য যে আমি একজন পরবাসী। আর  পরবাসী বলেই মুখটা সর্বদা ছোট করে রাখতে হয় তোমাদের সমাজে। আমাদের মুখে তোমরা কুলুপ লাগিয়ে দিয়েছ। আমাদেরকে কথা বলতে দেওয়া হয়না। আমাদের ভাষায় তোমরা অনেক ব্যাকরণের ভুল খুঁজে পায়। আমরা প্রতি পদে পদে অলিতে গলিতে বঞ্চনার হাজার আঘাতে জর্জরিত হয়ে যাই। কোন দিকটা আছে আমাদের জন্য সরল রেখার ন্যায় বলতে পারো কেউ? এইতো কিছুদিন আগে মুকুল দেশে গেল আট বছর পর। এখানে তার চব্বিশ ঘন্টার আঠারো ঘন্টাই কাটতো কঠোর পরিশ্রমে। তিল তিল করে সে গড়েছে নিজের শরীরটাকে। পরিশ্রম তার প্রধান হাতিয়ার ছিল। বিদেশে মানুষগুলোকে যেমন পরিশ্রমী হওয়া চাই মুকুলও ছিল ঠিক তাই।
সে দেশে গিয়ে বিয়ে করবে বলে বাড়ি গেছে। কিন্তু সমাজ বাম তার জন্য মেয়ে নাই। মেয়ের বাবা বিদেশী ছেলের কাছে মেয়ে বিয়ে দিবেনা। ভাবটা এমন যে মনে হচ্ছে মেয়ে নয় তার বাবাই বিয়ের পিঁড়িতে বসবে। মেয়েগুলোও ঠিক তেমন। আচ্ছা মেয়ে তুমি তাকে বিয়ে করে যদি সর্বদা হতাশ থাকো। ছেলেটি যদি সব ধরনের টিক্সের (পলিটিক্স) সাথে জড়িত থেকে ঘর্ষন, বর্ষন, হর্ষন করে সমাজটাকে বিষিয়ে দেয় প্রতিনিয়ত তাকে তুমি কোন সে যুক্তিতে আগলে রাখতে চাও? আর যে কিনা কোন প্রকার ধর্ষণ, চাঁদাবাজী, খুনের সাথে জড়িত নয়, যাকে তুমি ছাড়া বিদেশীরা খুব পছন্দ করে শুধুমাত্র তার কর্মদক্ষতার জন্য। যার শ্রমে পৃথিবী নব্য সভ্য সভ্যতার বিকাশ হয়। যার পাঠানো অর্থে তোমরা খেয়ে পরে বেঁচে থেকে নাম মাত্র শিক্ষিত হও এবং তার অর্থে তোমর দেশের উন্নয়নের চাকা সচল থাকে তাকে তুমি বিয়ে করবেনা বলে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছ সেখানটা যে ভুলে ভরা তুমি তা বুঝো কি?
মুকুল ব্যর্থ হয়ে সিদ্ধান্ত নিলো সে দেশে থেকে যাবে। অন্তত বিয়েটা করে তাকে একটা জীবন গড়তে হবে, না? যে ভাবা সেই কাজ। আট বছরের সব কামাই দিয়ে ব্যবসা শুরুর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলো সে। না সোনার দেশে ডাইমন্ডের ছেলেরা মুকুলের বুকে পিস্তল ধরে বলেছে শুরুতে দশ দিতে হবে আর প্রতি মাসের প্রথমে ব্যবসার মুনাফা দিতে হবে অবধারিত। মুকুল নিরূপায় হয়ে ছুটে গেল প্রশাসনের প্রথম স্তরে। ওনারা মুকুলকে বললো মাত্র তিন হলে ওনারা তিনাদের দৌরত্ব কিছুটা বন্ধ করবে। তবে ঐ একই কথা মাসিক মুনাফাটা সচল রাখতে হবে। মুকুল ছুটে আসলো এনাদের কাছে এনারাও বললো ভাই পত্রিকায় লিখে দিমু একটা জব্বর নিউজ। আপনে হাইলাইট হয়ে যাবেন দুই দিনে। ক্যামনে লিখতে ঐবো আমি তা জানি। মাগার কলমের খোঁজা এমন জায়গা দিমু যে সারাদিন ঐ জায়গা মলম লাগাইতে ঐবো। বেশিনা মাত্র আধা লাখ ঐলেই চলবো। মুকুল বুঝে গেছে যে একাত্তরের হাতিয়ারের গর্জন আবারো একবার চালাতে হবে। এরপর এসব জঞ্জাল পরিষ্কার করে দেশটাকে সাজাতে ফুলে ফুলে। মুকুল বারবার আতকে উঠে এ ভেবে হায়রে এ কোন দেশে আমরা আছি! মুকুলের স্বপ্নের সব মুকুল ঝরে গেছে বলে সে তার সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেছে রাতারাতি। কাল সকালে সে বিদেশের প্লেনে উঠবে। কাউকে বলা হয়নি। শুধুমাত্র আদরনি মহান মাকে কয়েক মাসের কথা বলে মিথ্যে বুঝানো হলো। মুকুল চলে এসেছে। দেশে ফিরার ইচ্ছাটা আজ কাল আর তার মাথায় আসেনা। মুকুল বলে দিয়েছে বিদেশটাই আজ তার প্রিয় হয়ে গেছে।
তাই আমরা কথা বলতে চাই। মুকুলের মত হতাশ হয়ে ফিরে আসতে চাইনা মায়ের কোল থেকে বারবার। আমাদের চলার রাস্তাগুলো পরিষ্কার করতে হবে। আমরা কোন বিশেষ সুবিধা চাইনা। কারন বিশেষ শুনলে মনে হয়ে যে মানুষের মত দেখতে কিন্তু আসলে তাহা চতুষ্পদী প্রাণী। তাই মানুষ হয়ে নাগরিক সুযোগটা চাই। চাইনা চোখ উল্টিয়ে কেউ বেদেশি শব্দটাকে এমন ভাবে বলুক যাহা শুনতে গালির মত লাগুক।