আমি পুলিশ হতে চাই, চাইনা

রাজু হাসান
Published : 30 June 2015, 05:20 AM
Updated : 30 June 2015, 05:20 AM


সিংগাপুরে একটি ডেভলপার কোম্পানিতে একজন সিনিয়র সুপারভাইজর হিসেবে আমি কর্মরত আছি। কাজটা খুব সাচ্ছন্দে করি সুনামের সহিত। আমাদের প্রজেক্টের হাউজ ড্রেনের কিছু স্টিলের কভার চুরি হয়। যা আজ সকালে আমাদের নজরে আসে। আমরা প্রাথমিক তদন্তে বুঝতে পারলাম গতরাতেই এসব চুরি গেছে। আমাদের প্রজেক্ট ম্যানেজার পুলিশ স্টেশনে ফোন করে কম্লেইন করার পাঁচ মিনিটের মধ্যে পুলিশ এসে হাজির। অামি অবাক হলাম এতো ঝড়ের বেগে তারা চলে আসলো। অথচ আমাদের দেশে তো মানুষ খুন হওয়ার কয়েক ঘন্টা পরও পুলিশ আসেনা!


পুলিশ এসে আমাদের বসসহ সবার স্বীকারোক্তি ও ওয়ার্ক পারমিট নিলো এবং চুরিকৃত জিনিসের কিছু আলামত ও ছবি তুলে আধা ঘন্টা ইনভেস্টিগেশন শেষে তারা চলে গেল। আমি পুলিশ দেখে পুলিশেরে প্রেমে পড়ে গেলাম। ওদের স্মার্টনেস, দক্ষতা ও সততা সেই ২০০৮ সাল হতে অধ্যাবধি আজ পর্যন্ত আমাকে মুগ্ধ করে রেখেছে তাদের প্রতি। আমি যদি এ দেশের নাগরিক হতাম তবে নিশ্চয় আমি পুলিশে চাকরি করতাম। এদের গেটআপ দেখে আমি অবাক! এদের কোমরের এক বেল্টে সব কিছু আছে! জার্মানিতে তৈরিকৃত পিস্তল, স্টিলের স্টিক (কেউ যদি পালিয়ে যায় তখন পিছন হতে এ স্টিকটি ছুঁড়ে মারলে অপরাধীর পায়ে আঘাত হানে এবং অপরাধী মাটিতে লুটিয়ে পড়ে), হ্যান্ডক্যাপ, ওয়াকিটকি ভিডিও রেকডিং গোপন ক্যামেরা। অথচ আমাদের দেশের অনেক পুলিশকে দেখেছি প্যান্টের ছেইন খোলা, লুঙ্গির উপরে প্যান্ট পরেছে সে লুঙ্গির আংশিক ও বাহিরে বেরিয়ে পড়েছে। আমাদের পুলিশের বেল্টে পিস্তল, হ্যান্ডক্যাপ থাকবে তো দূরের কথা অনেকের তো বেল্টেরও খবর নেই।

এদের বড় গুণ হলো এরা বিক্রি হয়না। আপনি যেকোন বিপদে পড়লেন ৯৯৯ নাম্বারে (টোল ফ্রি) নাম্বারে কল করলেই মুহুর্তে তারা হাজির। সেটা হোক ফরেনার শ্রমিক বা ভিআইপি অথবা সিংগাপোরিয়ান বা এমপি। অনকলে এসে এরা প্রথমে দু'পক্ষকে অনুরোধ করে ঝামেলা নিজেরা সমাধান করতে যখন দু'পক্ষ অপারগ তখন পুলিশ হস্তক্ষেপ করে জায়গাতেই তা সমাধান করে দেয়। আর ঘটনা গুরুতর হলে থানা হয়ে আদালতে তার সমাধান হয়। এ দু'পক্ষের (বাদী, বিবাদী) কে ভিআপি, কে ফরেনার শ্রমিক, কে গরিব নাগরিক তা দেখার সময় এদেশের পুলিশের নেই। কারন তারা নিজেদের রাষ্ট্রের নিরপেক্ষ সেবক মনে করে। যে প্রকৃত দোষি, শাস্তি তার জন্যই ধার্য্য।

ও হ্যা, আমাদের এখান হতে চুরির রিপোর্ট নিয়ে ঠিক তিন ঘন্টা পর পুলিশ আমাদের সাইটে এসে জানিয়ে দিলো চোর ধরা পড়েছে। পরে জানলাম পুলিশ রাস্তার গোপন ক্যামেরার ফুটেজ দেখে কয়েকটা স্টিল ফেব্রিক ক্রয় করা দোকানে অভিযান চালিয়ে চোরাইকৃত স্টিল কাভারের সন্ধান পায় এবং দোকানদার ও চোর সহ দু'জনকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়।

আমি আবারো অবাক হয়ে গেলাম এদের দক্ষতা আর সততা দেখে। তখন খুব ভাবতে লাগলাম, এদেশ হতে কিছু পুলিশ আমাদের দেশে ইমপোর্ট করে নিলে মনে হয় ভালোই হতো! আমাদের সরকার কি তা করবে আমার দেশের মানুষকে, পুলিশকে বন্ধুরূপে গড়ে দিতে?