মিশন একমপ্লিশড! ব্লগারদের আন্তরিক অভিনন্দন!

কৌশিক আহমেদ
Published : 7 July 2012, 06:35 AM
Updated : 7 July 2012, 06:35 AM

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ব্লগের ব্লগাররা কক্সবাজারের বন্যাদুর্গত মানুষদের সাহায্যের জন্য যেভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে এসেছেন সেটা নজিরবিহীন। দুর্গত একশর বেশী পরিবারকে একহাজার টাকা করে দেয়া যত সহজ মনে হয়েছিলো, প্রকৃতপক্ষে সেটা যে কতটা ভয়াবহরকমের ঝুঁকিপুর্ণ ছিলো আমরা পূর্বে অনুধাবন করতে পারিনি। ক্যাশটাকা বিতরণ হবে জানতে পেরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ নন এমন অনেক মানুষ চলে আসেন ত্রান নিতে। এমন একটা আশঙ্কা মাথায় রেখে আমরা সরকারী প্রশাসনের পরামর্শে ত্রাণ কাজ চালানোর সিদ্ধান্ত নেই।

ব্লগার আব্দুর রাজ্জাক ভাইয়ের রেফারেন্সে কক্সবাজারের এডিএম জনাব রউফ সাহেব আমাদেরকে পরিচয় করিয়ে দেন কক্সবাজার সদর উপজেলার ইউএনও আমির আবদুল্লাহ মোহাম্মদ মনজুরুল করিম এর সাথে। যিনি সদর উপজেলার ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা প্রণয়ণ থেকে শুরু করে সমস্ত ত্রাণ-কার্যক্রম কোঅর্ডিনেট করছেন। একই ব্যক্তি বা এলাকার মানুষ কেবল যেন ত্রাণ না পায় সেজন্য তিনি পাহাড়ী ঢল বা ফ্লাশ ফ্লাডে নাব্যতা হারানো বাঁকখালী নদীপাড়ের ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়া পরিবারগুলোকে ত্রাণ দেবার জন্য নাম লিস্ট করার জন্য বলেন ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন জিকুকে।

জিকু সাহেব ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ভোটার আইডিকার্ড সহ ঘরহারানো মানুষদের একটা লিস্ট তৈরী করেন। এই লিস্ট অনুযায়ী মোট ৭৫টি পরিবারকে ১ হাজার টাকা ও অন্যান্য সামগ্রী প্রদান করা হয়, ইউএনও সাহেবের উপস্থিতিতে। আমরা আরো ২৫ এর বেশী পরিবারকে অর্থ সাহায্য করতে পারতাম, কিন্তু ইতোমধ্যে দরিদ্র মানুষদের উপস্থিতি অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় ঐ জায়গায় অবস্থান করা আমাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। ইউএনও ও চেয়্যারম্যান সাহেব এ পর্যায়ে আমাদের ত্রাণ কার্যক্রম শেষ করার জন্য অনুরোধ করেন, অন্যথায় পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব হবে না বলেও আশঙ্কা ব্যক্ত করেন।

ত্রাণ কার্যক্রম শেষ করে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার বাড়ীঘর সরেজমিনে দেখতে যাই। বাঁকখালি নদীর তীর রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের দু'শোকোটি টাকার একটা প্রকল্প একনেক-এর অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে কয়েকবছর যাবত। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বাঁকখালী উপকূলের মানুষ হয়তো বন্যার হাত থেকে রক্ষা পেতো। ইউএনও সাহেব ও এলাকার জনসাধারণ প্রকল্পটি শীঘ্রই বাস্তবায়ন করার জন্য সরকারের কাছে দাবী তুলে ধরেন।

গ্রাম থেকে ফিরে প্রধান সড়কে আসা মাত্র আমাদের ঘিরে ধরে অসংখ্য দরিদ্র মানুষ। প্রত্যেকের টাকা চাই এবং আমাদের জামা-কাপড় ও হাত-পা ধরে টানাটানি শুরু করায় ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। সাথে থাকা এডিএম সাহেবের গাড়ীতে করে একটা দলকে আমরা চটজলদি শহরে পাঠিয়ে দেই। বাকী কয়েকজন দ্রুত হেঁটে একটু দূরে সরে এসে একটা সিএনজি পেয়ে যেই উঠে পড়েছি অমনি উল্কার মত উড়ে এসে আমাদের হাত পা জড়িয়ে ধরলো তিনচারজন মানুষ। সিএনজির মধ্যে ও সামনের চাকার নিচে পা ঢুকিয়ে দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করলো। ভোটার আইডি কার্ড দেখালো। মুক্তি পেতে চটজলদি তিনজনের ভোটার আইডিকার্ড দেখে আমরা এক হাজার টাকা করে দিয়ে দিলাম। কিন্তু এরপরেই যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো। পেছন থেকে ছুটে আসতে শুরু করলো আরো অসংখ্য মানুষ। আমরা কালবিলম্ব না করে কোনভাবে সিএনজি তাদের হাতের নাগাল থেকে মুক্ত করে ফিরে এলাম কক্সবাজার শহরে।

ত্রাণ দেয়া যে এত ভয়াবহ হতে পারে সে ধারণা ব্যক্তিগতভাবে আমার ছিলো না। তবে তারপরেও আমরা সত্যিকারের ক্ষতিগ্রস্থদের হাতে কিছু সাহায্য পৌঁছাতে পেরেছি। এর সব কৃতিত্ব এই ব্লগের ব্লগারদের। বিশেষভাবে যারা অর্থ সাহায্য করেছেন, অন্যান্য সামগ্রী দিয়েছেন এবং দুই রাত জার্নি করে এই কাজটি সম্পন্ন করেছেন।

যে টাকাটা রয়ে গেছে আমাদের হাতে তার একটা হিসাব আমি নিচে দিলাম
মোট সংগৃহিত টাকার পরিমাণ ১,০৬,০৫০ টাকা
মোট ত্রান দেয়া হয়েছে – ৭৮,০০,০০ টাকা
যাতায়াত ও অন্যান্য খরচ – ৫,৫০০ টাকা
মোট ব্যয় – ৮৩,৫০০ টাকা
অবশিষ্ট টাকার পরিমাণ ১,০৬,০৫০ – ৮৩,৫০০ = ২২,৫৫০ টাকা।

এখানে খরচ বাবদ অতি সামান্য একটা অংশ ধরা হয়েছে। দুজন ব্লগারের বাসের টিকিট, দুপুরের খাওয়ার খরচ ও আরো কয়েক হাজার টাকা যানবাহন বাবদ সুলতান মির্জা নিজের পকেট থেকে খরচ করেছেন। তাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

পরিশেষে আপনাদের অসীম শুভেচ্ছা জানাই এমন একটা দুরূহ কাজকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য। এটা আপনাদের ঐকান্তিক আগ্রহ ও ভ্রাতৃত্ববোধের কারণেই সম্ভব হয়েছে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ব্লগের জন্য এটা অন্যতম একটা মাইল ফলক অর্জন।

এই উদ্যোগ সম্পূর্ণ ব্লগারদের ছিলো। কাজেই এখন যে ২২ হাজার ৫ শ ৫০ টাকা আমাদের হাতে রয়েছে সেটা আপনারা কিভাবে দরিদ্র মানুষের কল্যানার্থে ব্যয় করতে চান, আমাদেরকে জানান। আপনারা যে পরামর্শ দেবেন সেইভাবে আমরা এই টাকা অনতিবিলম্বে মানুষের উপকারে ব্যয় করতে চাই।

বিশেষ কৃতজ্ঞতা: এডিএম রউফ, কক্সবাজার সদর উপজেলার ইউএনও আমির আবদুল্লাহ মোহাম্মদ মনজুরুল করিম, ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন জিকু, বিডিনিউজ এর স্থানীয় প্রতিনিধি আনসার ভাই।