ধর্ষণ প্রতিরোধের জন্য স্থানীয় পর্যায় ভিত্তিক আন্দোলন প্রয়োজন

কৌশিক আহমেদ
Published : 7 Jan 2013, 04:20 AM
Updated : 7 Jan 2013, 04:20 AM

সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণের খবর প্রচারে মিডিয়া গুরুত্ব দিচ্ছে বলে সম্ভবত আমাদের কাছে মহামারীর মত মনে হচ্ছে। নইলে পরিসংখ্যান যতদূর মনে পড়ে গতবছরও কম ছিলো না,এর আগের বছরের পরিমাণ ও কম না।

সমাজে রেপ-ভিক্টিমদের স্টিগমাটাইজড করা হয় বলে বেঁচে যাওয়া নারীরা সামাজিক কোনো সালিশির পরিপ্রেক্ষিতে আর কোনো আইনী আশ্রয় নেয় না। যার জন্য ধর্ষকদের বড় কোনো শাস্তি পাওয়ার খবরও আমাদের তেমন জানা নেই।

আইনেও বড় ধরণের কোনো ঝামেলা আছে। রেপিস্টদের শাস্তিকে দৃষ্টান্তমূলক না করা হলে এটা কমবে না।

সামাজিক অনুশাসনে,মহল্লা-ভিত্তিক কোনো কাঠামোতে,সুস্থ্য সাংস্কৃতিক ও মননশীলতা বিকাশের কোনো চর্চা নাই। এর বিপরীতে আছে ধর্মীয় উন্মাদনার প্রচারণা,স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত,যেখানে নারীর প্রতি থাকছে অশ্লীলতার প্রচারণা। যা রেপিস্ট হায়েনা তৈরীতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

এছাড়া,দেখতে হবে ড্রাগের সহজলভ্যতা। যেভাবে ড্রাগ রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিক্রি হচ্ছে,এবং ঝিমানো টাইপের ড্রাগের বদলে উত্তেজনা বর্ধক ড্রাগ এখন সহজলভ্য হচ্ছে – তার একটা প্রভাব ধর্ষণে উৎসাহিত করে বলে ধারণা করি।

এর সাথে ঢাকা শহরে কোনো বৈধ ব্রথেল না থাকাটাও একটা কারণ হতে পারে। এখন যৌনকর্মীরা রাত গভীর হতে থাকলে বেশ কিছু চিহ্নিত স্থানে, রাস্তার মোড়ে, আশ্রয় নেয়। এসব যৌনকর্মীদের বেশীরভাগই বিভিন্ন সময়ে ধর্ষণের শিকার হয়, এমনকি তাদের হত্যা করার খবরও আমরা প্রায়শই শুনে থাকি। এসব ধর্ষকদের মধ্যে টহল পুলিশ থেকে শুরু করে উঠতি মাস্তান রয়েছে। তাদের ধর্ষণের ঘটনা খুব কমই থানায় নথিভূক্ত হয় বা মিডিয়ায় আসতে পারে।

ধর্ষণ প্রতিরোধের জন্য সচেতন মানুষদের এখনই যা করা দরকার:

১. আইনে কি আছে, আর কি শাস্তি হওয়া উচিত তার একটা প্রস্তাবনা তৈরী করা;
২. ঢাকা শহর এবং ঢাকার বাইরে স্থানীয় ভিত্তিক ক্যাম্পেইন,র্যা নডম ডোর টু ডোর লিফলেট বিতরণ;
৩. স্থানীয় পর্যায়ে জন-প্রশাসনের সাথে,(বিশেষত রাজনৈতিক নেতা,মহল্লার প্রভাবশালী মহল) সাংস্কৃতিক কর্মীদের নিয়ে কমপক্ষে ছ'মাস ব্যাপী নানান মহল্লায় গণসংযোগের একটা ক্যালেন্ডার ও তার জন্য ভলান্টিয়ার সংগ্রহ;
৪. মাদক সরবরাহ ও বিক্রয়ের সাথে জড়িত মানুষগুলোর পরিচয় উন্মোচন ও সামাজিক প্রতিরোধ তৈরী করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে দেয়া;
৫. ধর্ষকদের পরিচয় ও তার জীবন বৃত্তান্ত,তার পরিবারের ভেতরে ধর্ষকামীতা তৈরীর উপাদান অনুসন্ধান ও এসব তথ্যের ব্যাপক প্রচার;
৬. থানায় ভিক্টিমদের সহায়তার বিষয়ে প্রচলিত ব্যবস্থাকে আধুনিকায়নের ব্যবস্থা করা;
৭. ধর্ষণের শিকার মানুষেরা যেনো মুখ খুলতে সাহস পায় সেজন্য সরকার,এনজিও ও মিডিয়াতে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে বাধ্য করা।