ডেমোক্রেসি – যে কারো বিজয়ই যেন পরাজয়

কৌশিক আহমেদ
Published : 5 Oct 2014, 03:28 PM
Updated : 5 Oct 2014, 03:28 PM

লাস্ট দুই/তিন বছর যাবত বিশ্বের মানুষ হঠাৎ করে যেনো ঘুম থেকে জেগে উঠতে শুরু করেছে। শান্ত-শিষ্ট-নম্র-ভদ্র-লেজ বিশিষ্ট মানুষজন হঠাৎ করে লাখে লাখে রাস্তায় নেমে দেশগুলোকে অস্থির বানিয়ে ফেলছে। রাস্তায় নেমেছে তো নেমেছে আর ফেরার কোনো খবর নাই, দিনের পর দিন বসে থেকে রাস্তাঘাট অচল করে দাবী-দাওয়া নিয়ে আঁকড়ে পড়ে থাকছে। মিশরে এমন পড়ে পড়ে বসে আঁকড়ে থেকে থেকে গুলি খেয়ে হাজারের উপরে মরেও গেলো। তিউনিসিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেনে, সিরিয়া, তুরস্কে, থাইল্যান্ডে, ইন্ডিয়া, পাকিস্তানে, যুক্তরাষ্ট্রে, যুক্তরাজ্যে, হংকং ও বাংলাদেশে এমন গণআন্দোলনের, নানা ইস্যুতে দেখা গেলো বা যাচ্ছে।

এই একই চিত্রের কথা মনে পড়ে নব্বই দশকের (নব্বই দশক মানে কি ৯১ থেকে ৯৯! অলওয়েজ কনফিউজড!) শুরু থেকে মানে ৮৮ থেকে ৯২/৯৩ পর্যন্ত ইউরোপের নানান দেশে এমন চিত্রের কথা। সেটা ছিলো ইউরোপিয়ান আপ-রাইজিং – অ্যান্টি-কমিউনিস্ট, সরকার পতনই যার মূল লক্ষ্য। আর এখন যদিও নানান বিষয়, ডেমোক্রেসি থেকে শুরু করে যুদ্ধাপরাধের বিচার, নারী নির্যাতনের প্রতিবাদ ইত্যাদি হলেও আপ-রাইজিং টা হচ্ছে তেমন অকুপায়িং ফ্যাশনেই।

এই যে হঠাৎ করে মানুষজন আর বসে থাকবো না বলে রাস্তায় নেমে আসছে এবং বেশ মরীয়া হয়ে জীবন উৎসর্গের ঝুঁকি নিয়েও বেশ নেচেগেয়ে আন্দোলন করছে, স্লোগান দিচ্ছে তার একটা কমন সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ ১৩/১৪ টা দেশে বিভিন্ন সময়ে, পরস্পর থেকে সংযোগহীন বিষয়ে একই ধরণের প্রতিবাদের ভাষা ও পদ্ধতি অবলম্বন করছে এটার পেছনের গ্লোবাল পরিপ্রেক্ষিত খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে।

লাখো লাখো মানুষ প্রতিবাদ জানাচ্ছে একত্রিত-ভাবে কিন্তু সরকার সেই লাখো মানুষকেই ভুল মনে করছে এবং নিজেদের সঠিক মনে করছে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব দেশে গণতন্ত্রের সরকার আছে বলে মনে করা হলেও সেটার ব্যবহার গণতন্ত্রের সাথে এতই সাংঘর্ষিক মনে হয় যেনো গণতন্ত্র মানে হচ্ছে রাজতন্ত্র।

বৈশ্বিক এই প্রতিবাদের ধরণ এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার সমূহের পরিবর্তন এবং যেখানে পরিবর্তন হতে পারছে না সেখানে আন্দোলন দমন – সবক্ষেত্রেই আবার জনগণের বিজয় বলেও চিহ্নিত হবার সুযোগ থাকছে না। এত বেশী মাল্টি-ফেসড ডাইমেনশন নিয়ে সরকারের অংশসমূহ ক্রিয়াশীল এবং প্রত্যেক দেশের জনগণই এত-বেশি ব্রড-পার্থক্যে একে অপরের থেকে বিভক্ত যে গণতন্ত্রকে পুরোপুরিই অকার্যকর করে ফেলছে। যেকারো বিজয়ই যেনো পরাজয়।

গণতন্ত্রকে নতুনভাবে ব্যাখ্যা করার ও জনগণের শাসন কেমন হতে পারে তার জন্য নিউ-ডেমোক্রেসির বা কোনো এক ক্রেসি মহাশয়ের বড়ই প্রয়োজন।