সরকার ও মিডিয়ার না জানা কিডন্যাপের একটা!

কৌশিক আহমেদ
Published : 29 Oct 2014, 08:23 AM
Updated : 29 Oct 2014, 08:23 AM

দেশে মোট সংগঠিত কিডন্যাপের কত পার্সেন্ট রিপোর্টেড এবং মিডিয়াতে আসে আমার ঠিক জানা নাই – তবে আমার পরিচিতদের মধ্যে ৩টা কিডন্যাপের ঘটনার কোনো পুলিশ রিপোর্ট হয় নাই, মিডিয়াতেও আসে নাই। ভুক্তভোগীরা অনেক চেষ্টা করে পুলিশ ও মিডিয়া থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে সমর্থ হয়েছেন। কেন এই পুলিশ আর মিডিয়া বিমুখতা তার কারণ আর নাই বা বললাম!

গতকাল দুপুরে আমার বোনের হাজবেন্ড কিডন্যাপ হয়েছিলো। এটাও কোথাও জানাতে চাইনি। তারপরে মনে হলো ঘটনার প্রতিক্রিয়া না জানিয়ে ঘটনার বিবরণটা জানাই।

বেলা আড়াইটা। বোন-জামাই সেগুন বাগিচার অফিস থেকে বের হয়েছে। সামনে এসে একটা কালো মাইক্রোবাস দাঁড়ালো। ওর কলার ধরে টেনে গাড়িতে ঢুকিয়ে মাথায় একটা কালো মুখোশ পরিয়ে দেয়। তারপরে তার সামনে দুটো অপশন দেয় – তিন লাখ টাকা অথবা ১০/১২ টা কেস! হতভম্ব ও বাকরুদ্ধ হয়ে তো আছেই তার উপরে মাথায় শুরু করে আঘাত। মোবাইল, মানিব্যাগ খুঁজে আরেক দফা ধোলাই – কেনো এটিএম কার্ড তার কাছে নাই। একজন কিডন্যাপার এও বলে যে ওর পকেটে এক প্যাকেট বাবা ঢুকাইয়া চালান কইরা দিতে।

শারীরিক নির্যাতনে আমার বোনজামাই জ্ঞান হারায়। তাকে তখন একটা বিল্ডিং এর তিন বা চার তলায় ওঠানো হয় – সিঁড়ির কথা সে মনে করতে পারে। তারপর সে টাকা ম্যানেজ করে দিতে রাজি হয়। কিডন্যাপাররা একটা বিকাশ নম্বর দিয়ে টাকা পাঠাতে বলে। বোনজামাই তার কলিগদের ফোন করে ঐ নম্বরে টাকা পাঠাতে বলে। শুনে কলিগরা নানা প্রশ্ন করলেও সে কোনো উত্তর দিতে পারে না। পরে ফোন ব্যাক করলে যা করতে বলা হয়েছে তাই করতে বলে। তখন কলিগরা বুঝতে পেরে সাথে সাথে র‍্যাবের অফিসে যায়। র‍্যাবের সামনে বসে বোন জামাইয়ের সাথে কথা বলে। র‍্যাব বলে আপনাদের কলিগ যে কিডন্যাপ হইছে তার কি প্রমাণ? সে তো সুস্থভাবে কথা বলতেছে! এবং তাদের টাকা না পাঠাতে বলে।

কিন্তু কলিগরা শোনে না। তারা টাকা পাঠায়। এবং ৮টার সময় কিডন্যাপাররা তাকে নীলক্ষেত এলাকায় ছেড়ে দিয়ে যায়। গাড়িতে আলাপ শুনে আমার বোনাই আন্দাজ করেছে যে তারা সম্ভবত ভুল করে তাকে ধরেছে – কিন্তু ধরেছে যখন তখন খালি হাতে ফেরত যাবে কেন – কিছু কামাই করে নিলো। বিভিন্ন বিকাশ একাউন্টে মোট ৯০ হাজার টাকা তার কলিগরা পাঠিয়েছিলো।

আমার বোনজামাই আমার বাল্যবন্ধু – খুবই শক্ত-সামর্থ্য এবং নিরীহ টাইপের ছেলে। একটা ফার্মাসিটিক্যালস কোম্পানির আরএম। জীবনে কখনও কাঁদতে দেখি নাই। সেই ছেলে হাউমাউ করে কান্নাকাটি করেছে। আমার বোন আর তার দুই মেয়ে পাগলের মত হয়ে গেছিলো।

তারা পুলিশের কাছে যায়নি। যেহেতু তার ধারণা এটা পুলিশেরই কাজ। আমরা এটা কোথাও রিপোর্ট করি নাই। আমার ধারণা দেশে যে পরিমাণ এমন কিডন্যাপ হচ্ছে – এর মাধ্যমে হত্যা হচ্ছে তার এক পার্সেন্টও আসলে আমরা জানতে পারি না। আজকে আমার পরিবারের ঘটনাটা শেয়ার না করলে আপনারাও জানতেন না।

ফলে সরকারও জানে না নিশ্চয়ই জনগণ আসলে কি পরিমাণ সুখে আছে!