জনগণ মেরে সরকার গঠন বা সরকার হটানোর আন্দোলন

কৌশিক আহমেদ
Published : 9 Feb 2015, 07:11 AM
Updated : 9 Feb 2015, 07:11 AM


পাবলিক অবরোধ ও হরতালকে পশ্চাতদেশ দেখিয়ে চলতে শুরু করেছিলো বিগত কয়েক বছর যাবত। কারণ রাজনৈতিক দল অবরোধ ও হরতালের মত যে কর্মসূচী দিচ্ছিলো তার সাথে জনগণ কোনো নিজেদের স্বার্থ খুঁজে পায় নি। যুদ্ধাপরাধীদের সুযোগ করে দেয়া, নির্বাচিত সরকার অস্থিতিশীল করা, নেতাদের পারিবারিক স্বার্থ রক্ষা, ইত্যাদি নানাবিধ দাবী-দাওয়া নিয়ে হরতাল ও অবরোধের মত কর্মসূচী জনগণের পছন্দ করার বিন্দুমাত্র কারণ নাই যেখানে এসব কর্মসূচীতে জনগণের কষ্ট ভোগ করতে হয়, ত্যাগ করতে হয়, জীবন হারাতে হয় আর হরতাল-অবরোধ আহবান কারী নেতাএবং তার দলসমূহের বিন্দুমাত্র ত্যাগ বা ক্ষতি স্বীকার করতে হয় না। ফলে জনগণ যে কর্মসূচীতে ত্যাগ স্বীকার করতে বাধ্য হয় তার ফলাফল হিসাবে রাজনৈতিক দলসমূহ এবং এর নেতারা ব্যক্তিগত সুবিধাপ্রাপ্ত হবে এমন কর্মসূচীতে জন-সম্পৃক্ততা আশা করা অসম্ভব এবং অবাস্তব। ফলে জনগণ হরতাল ও অবরোধকে পশ্চাতদেশ দেখিয়ে চলতে শুরু করেছিলো।

কিন্তু রাজনৈতিক দলসমুহের তো হরতাল ও অবরোধ সফল করতে হবে। আর সফলের ইন্ডিকেটর হলো জনগণ যে ঘর থেকে বের হচ্ছে না, অফিস করছে না, ব্যবসা বন্ধ করে আছে, গাড়ি চলছে না ইত্যাদি দেখানো। কিন্তু পাবলিক তো মানছে না, তারা সবই করে বেড়াচ্ছে। সুতরাং রাজনৈতিক দলসমূহ বেছে নিলো জনগণকে ভয় দেখানো। এমন কিছু করতে হবে জনগণের বিরুদ্ধে যেনো জনগণ হরতাল/অবরোধ শুনলেই ভয় পায়। তারা হরতাল/অবরোধ সফল করে দেয় সব কাজ বন্ধ করে দিয়ে।

ফলে জনগণকে মারা শুরু হলো। পোড়ানো শুরু হলো। এর লাভ সব রাজনৈতিক দলেরই। ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতাহীনদের। কারণ হরতাল/অবরোধ যদি কার্যকারিতা হারায় তবে আজকের সরকারী দল যখন বিরোধী দল হবে তখন কি করে খাবে? পাবলিক তো হরতালের উপরে অনেক আগেই মুত্রত্যাগ করতে শুরু করেছে।

ফলে পেট্রোলবোমা মেরে জনগণকে মেরে আসলে রাজনীতিবিদরা সরাসরি জনগণের সাথে সন্ত্রাস শুরু করেছে এবং এভাবে তারা ফিরিয়ে নিয়ে আসছে হরতার/অবরোধের ঐতিহ্য। তারা হরতাল ডাকবে আর জনগণ মানবে না তা তো হয় না। তাহলে রাজনীতি করবে কি নিয়ে? এজন্য তাদের ছেলে যখন দুর্নীতি করে জেলে যাবে তখন তার মুক্তির জন্য হরতাল হবে এবং জনগণকে মানতে হবে। সরকার বিরোধী আন্দোলন করবে – নিজের পুত্রপরিজনকে ক্ষমতার স্বাদ দিতে আর সেই আন্দোলন যদি জনগণ না করে দেয় তাহলে হবে কিভাবে? আর জনগণ যে আন্দোলন করছে তার প্রমাণ দিতে হবে ঘরে বন্দী থেকে। এমনি এমনি তো থাকবে না – বেয়াদ্দব জনগণকে হরতালের উপরে সুযোগ পেলেই মুতে দেয় – কাজেই এদের বোমা মেরে ঘরে ঢুকিয়ে দিতে হবে। তারা ঘরে থাকবে – আর তাতেই তাদের সেটা আন্দোলনের সোচ্চার অংশগ্রহণ হবে এবং জনগণের এই ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে ঘরে বন্দী থাকার যে আন্দোলন নাম – সেটাই হলো রাজনৈতিক দলের আন্দোলন – সরকার বিরোধী আন্দোলন। এবং এই আন্দোলনে সরকার তার প্যান্টে ভয়ে মলমূত্র ত্যাগ করছে বলে জনগণকেই আবার আবালকণ্ঠে চেঁচিয়ে জানাচ্ছে বিরোধীপক্ষের নেতা এবং তাদের অন্ধ-সমর্থকরা!

অসাধারণ! অসাধারণ আমাদের রাজনৈতিক দলসমূহ! যেখানে জনগণের রায় নিয়ে সরকার গঠন বা সরকার তাড়ানোর দরকার হয় না। জনগণকে কুত্তার মত মেরে সরকার গঠন বা সরকার হটানোর আন্দোলন করতে হয়। জন-বিচ্ছিন্ন/সম্পৃক্ততাবিহীন এই রাজনৈতিক দলসমূহই আবার তাদের সব কর্মসূচীকে জনগণের কর্মসূচি বলে জনগণের সামনে উপস্থাপন করে তখন জনগণ আড়ালে নিজেদের একটা গুপ্তকেশ ছিঁড়ে গোপনে রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশ্যে নাড়তে থাকে – রাজনৈতিক নেতাসমূহ কেবল সেটা দেখতে পায় না। আফসুস কেবল এটাই!