৩২ নম্বরের নিকটস্থ শিশুপার্কটি খুলবে কবে? নাকি মাদকের আখড়া হিসাবেই থাকবে?

কৌশিক আহমেদ
Published : 23 Feb 2015, 04:01 AM
Updated : 23 Feb 2015, 04:01 AM

 

৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধুর বাড়ির কাছে, কলাবাগান লাজফার্মার অপজিটে, একটা পার্ক হয়েছে বাচ্চাদের জন্য। হয়েছে না বলে হয়েছিলো বলা ভালো। প্রায় এক বছর আগে কাজ কমপ্লিট করে খুলেও দিয়েছিলো কয়েক দিনের জন্য। ভীষণ আনন্দিত হয়েছিলাম। বাচ্চাদের খেলার জন্য এমন একটা পার্ক এত কাছে পাওয়া খুবই সৌভাগ্যের বিষয়। যে শহরে পার্ক বন্ধ করে মার্কেট করে বেড়ায় নেতারা সেখানে এমন একটা উদ্যোগ দেখে আশাবাদী হয়ে উঠেছিলাম – হবে‍! দেশের কিছু একটা হবে!

কিন্তু হায়! মাত্র কয়েকদিন চলার পর থেকে পার্কটা বন্ধ হয়ে আছে। এক বছর হয়ে গেলো পার্কটার বন্ধ গেট আর খোলে না। এত চমৎকার একটা বাচ্চাদের পার্ক কিন্তু সেটা কেনো চালু রাখা হচ্ছে না ভেবে ভেবে হয়রান হয়েছি অনেকদিন। গেটের উপরে গাছপালা ফেলে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। টিকিট কাউন্টারের মত ঘরটিতে একজন দারোয়ান বাস করে। আশেপাশে – মানে পার্কের ফুটপাথে দু-একটা ছিন্নমূল পরিবারও বাস করে। অথচ লেকের পাড়ে পার্কটা হওয়াতে ভিউটাও চমৎকার, বাচ্চাদের জন্য এর চেয়ে ভালো আর কিছু হতে পারতো না।

অনেকদিন বন্ধ থাকায় একদিন ওটার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় জিজ্ঞেস করলাম দারোয়ানকে কবে খুলতে পারে। সে বললো, খুলবে না। কারণ জিজ্ঞেস করায় জানালো, পার্কটা সিটি কর্পোরেশনকে দিয়ে দেয়া হচ্ছে। পার্কটা কার ছিলো তাহলে? সে বললো, জানি না, তবে পার্কটা আর্মি করেছিলো।

বোঝাই যাচ্ছে ধানমণ্ডি লেক উন্নয়নের সময় এই পার্কটা করা হয়েছিলো। লেক উন্নয়নের দায়িত্বে ছিলো আর্মি। স্বাভাবিকভাবে ধানমণ্ডি লেক কর্তৃপক্ষের আওতাধীন এই পার্ক। কিন্তু এখন সিটি কর্পোরেশনকে দেয়ার কথা যেহেতু শুনলাম বোঝাই যাচ্ছে বড় ধরণের জটিলতার মধ্যে পড়ে গেছে পার্কটি। লোকেশনটা অত্যন্ত চমৎকার, বাণিজ্যিকভাবে অত্যন্ত দামী – আশঙ্কা করা যায় পার্কটি হয়তো আর পার্ক থাকবে না। সিটি কর্পোরেশন যেভাবে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে অবস্থিত পার্ককে ধ্বংস করে বিক্রি করে দিচ্ছে মার্কেট বানানোর জন্য – সেখানে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের কাছের এই গুরুত্বপূর্ণ পার্কটি তারা বিশাল কোনো আবাসন বা সুপার মার্কেটের জন্য বিক্রি করে যে দিবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নাই!

আরেক দিন দেখলাম পার্কের গেটে দুই তিনজন নিম্ন আয়ের মানুষের জটলা। পরের দিনও দেখলাম ঐ একই চেহারা। একটা ফ্লাক্সের চা-ওয়ালা তাদের চা খাওয়াচ্ছে। এমন সময় একজন লোক আসলো এবং সে পার্কের কাউন্টারের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দিলো। ভেতরে একজন লোক শুয়ে ছিলো – সে ঐ ব্যক্তির হাতে কিছু গুজে দিলো। আগন্তুক হাত গুজে জিনিসটা নিয়ে চলে গেলো। আমি ধারণা করি সে কোনো মাদক নিলো। এবং ঐ পার্কের গেটে বা খালি জায়গাটাতে আসলে গাজা, ইয়াবা বা হিরোইন বিক্রির চমৎকার একটা সুযোগ হয়ে থাকতে পারে। জায়গাটা এমনিতেই নিরিবিলি – মানুষজন বিশেষ গ্রাহ্য করে না। ফলে মাদক বিক্রির জন্য এবং মাদক সংগ্রহের জন্য খুবই নিরাপদ একটা জায়গা হিসাবে গড়ে উঠছে। যেখানে শিশুরা ঘুরতে পারতো, খেলতে পারতো, বড়রা হাটতে পারতো – সেখানে এখন মাদকের আখড়া তৈরি হয়েছে।

পার্কের গেটের পাশেই ওয়াসার পাম্প। অন্য আরেক দিন দেখলাম সেটার ভেতর থেকে দেয়ালের এপাশে পড়লো একটা লোহার চাকতির মত কিছু। তারপর দেয়াল টপকে নামলো একজন মানুষ। ছেঁড়া জিন্স। শার্টটা হাতা গুটানো। পায়ে স্যান্ডেল। জীর্ণ-শীর্ণ অবস্থা। রুগ্ন শরীর। সে লোহার চাকতিটা তুলে পার্কের লোহার ছোট গেট টপকে ভেতরে ঢুকে পড়লো। সাধারণত মাদকসেবীরা লোহার এমন জিনিসপত্র চুরি করে বিক্রি করে নেশার টাকা জোগাড় করে থাকে।

একটা তৈরি করা পার্ক – যেখানে বাচ্চাদের খেলার জন্য সব অ্যারেঞ্জেমন্ট ইন প্লেস – তৈরি করার পরে এক বছর পর্যন্ত পড়ে আছে। অথচ ঐ এলাকায় হাজার হাজার বাচ্চা সামান্য খেলার জায়গার অভাবে ঘরবন্দী হয়ে বেড়ে উঠছে। মাঠের স্বল্পতা, ঘিঞ্জি বিল্ডিং, জ্যামের রাস্তা পেড়িয়ে একটা পার্ক যে বাচ্চাদের জন্য কি ভীষণ আনন্দের হতে পারে বলার অপেক্ষা রাখে না।

অথচ বঙ্গবন্ধুর বাড়ির পাশে এমন একটা পার্ক প্রতিষ্ঠিত করার পরেও সেটাকে পরিণত করা হলো মাদক বিক্রির আখড়ায়!