পাকিস্তান আরও কাঁদবে, বাংলাদেশকেও শিক্ষা নিতে হবে

জায়েদুল আহসান পিন্টু
Published : 24 Dec 2014, 06:43 AM
Updated : 24 Dec 2014, 06:43 AM

পেশাওয়ারে জঙ্গিদের হামলায় শিশুহত্যার পর কাঁদছে পাকিস্তান। কাঁদছে মানবতা। কাঁদছে বিশ্বসম্প্রদায়। কারণ শিশুরা কোনো ব্যক্তি, দল বা দেশের নয়। তারা পৃথিবীর সন্তান। তারা আগামীর। পাকিস্তানকে আরও কাঁদতে হবে। কাঁদতে হবে বাংলাদেশকেও যদি পাকিস্তানের ঘটনা থেকে শিক্ষা না নেয়, তাহলে।

লাখ লাখ মানুষকে হত্যা, ধর্ষণ ও নিপীড়িনের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ করে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের সেনাবাহিনী পরাজয় মেনে নিয়েছিল বাঙালি জাতির কাছে। তার ঠিক তেতাল্লিশ বছর পর, ২০১৪ সালের এই দিন তালেবান জঙ্গিরা বেছে নিয়েছে সেনাকর্মকর্তাদের শিশুসন্তানদের ঠাণ্ডা মাথায় খুন করার জন্য। যে দিন তারা এতদিন ধরে পালন করেছে পরাজয়ের গ্লানি দিবস হিসেবে, এবার থেকে সেটি হয়ে উঠল শোকের দিন।

এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের পর পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলো প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শরীফের ডাকে এক টেবিলে বসে আলোচনা করেছে। সন্ত্রাসবাদ বিন্দুমাত্র সহ্য করা হবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নেওয়াজ শরিফ। সেনাপ্রধান রাহিল শরিফ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তিন হাজারের বেশি জঙ্গিকে ফাঁসিতে ঝোলানোর অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। এরই মধ্যে জঙ্গিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর শুরু হয়ে গেছে। সেনাবাহিনী জঙ্গিবিরোধী অভিযানও শুরু করেছে। গত রোববার পর্যন্ত অভিযানে ৯৬ জঙ্গি নিহত হয়েছে।

নেওয়াজ শরীফের ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে তালেবানপন্থী তেহরিক ইনসাফ দলের প্রধান ইমরান খানের উপস্থিতি তাৎপর্যমূলক মনে করেছেন অনেকেই। কারণ, ইমরান তালেবানদের প্রতি সহানুভুতিশীল হিসেবে পরিচিত। আর তার দলও পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সমর্থনপুষ্ট। সর্বদলীয় বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর আমির অধ্যাপক সিরাজুল হক দেশকে সন্ত্রাসমুক্ত করতে যৌথ উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছেন। আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টির প্রধান আসফান্দিয়ার ওয়ালি খান বলেছেন, ''সমস্যার সমাধান করতে হলে আমাদের সবার অহংবোধ চিরদিনের জন্য ধ্বংস করতে হবে।''

ওদিকে পাকিস্তান মুসলিম লীগের (কায়েদে আযম) নেতা মুশাহিদ হোসেইন সাইয়্যেদ প্রশ্ন রেখেছেন, ''যদি তামিলনাড়ুতে সন্ত্রাসবাদ বন্ধ হতে পারে তবে পাকিস্তানে নয় কেন?''

ওই বৈঠকে উপস্থিত প্রত্যেকের কথাই তাৎপর্য বহন করে। পাকিস্তানের ক্ষমতার নিয়ামক শক্তিগুলোর অবশ্যই অহঙ্কার ঝেড়ে ফেলতে হবে, সবাই মিলে উদ্যোগ নিয়ে সমস্যার সমাধান করতে হবে, জঙ্গিদের ফাঁসিতে ঝুলাতে হবে, তামিলনাড়ু পারলে পাকিস্তানও পারবে। সব কথাই সত্য এবং কার্যকর উপায়। কিন্তু, প্রশ্ন হল, দেশটা হচ্ছে পাকিস্তান। আমি মনে করি, কোনো উদ্যোগই সফল হবে না যতদিন পর্যন্ত না পাকিস্তানিদের মনোজগতে আমূল পরিবর্তন না হয়। বিশেষ করে, যারা ক্ষমতার স্টেক হোল্ডার– যেমন, পাকিস্তানের রাজনীতিবিদরা ও পাক সেনাবাহিনী– বদলাতে হবে তাদের।

পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির জন্মের পর থেকেই গণতন্ত্র সেখানে অকার্যকর। সেনাবাহিনী আর ভুস্বামীদের কথায় দেশ চলেছে। একই সঙ্গে ভারতের জন্ম হলেও রাজনৈতিক নেতাদের দূরদর্শিতায় সেখানে জনগণের শাসন কায়েম হয়েছে। ভালো, মন্দ যে রকমই হোক, দেশ চালিয়েছেন রাজনীতিবিদরা। একটি বারের জন্যও সেনাবাহিনী অনুভব করেনি রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার কথা, তারা দেশসেবাই করে যাচ্ছে।

বিপরীতে, পাকিস্তানে সামন্তবাদী মন-মানসিকতার ক্ষমতাধর এক শ্রেণির মানুষ আর সেনাবাহিনী মনে করেছে, জনগণ হল প্রজা, তাদের সেবা নয়, শাসন করতে হবে। তাই দেশটিতে গণতান্ত্রিক কাঠামো কখনওই গড়ে তুলতে দেওয়া হয়নি। যার খেসারত সবসময় দিতে হচ্ছে, হয়েছে পাকিস্তানের সাধারণ মানুষকে।

এসব কারণেই আবার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সেখানে জঙ্গিবাদের চাষ হয়েছে। সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে পুরনো অভিযোগ, তারা জঙ্গিদের শুধু প্রশিক্ষণই নয়, বিপুল অংকের অর্থও দিয়ে থাকে। আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের বিরোধিতাকারী তালেবানদের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতাই শুধু নয়, প্রশিক্ষণও দিয়েছে পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা, 'আইএসআই'। এই হচ্ছে পাকিস্তানের বাস্তবতা।

অন্যদিকে, অনেক রাজনৈতিক দলই তালেবানদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলে। বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য জঙ্গিদের সঙ্গে আপোষ করেছে। গত ছ' বছর ধরে পাকিস্তান সরকার জঙ্গিদের ফাঁসির আদেশ কার্যকরে স্থগিতাদেশ দিয়ে রেখেছিল এই আপোষের কারণেই। এখন তাদের সন্তানদের হত্যার পর সেই আদেশ প্রত্যাহার করা হল। ৬ হাজার জঙ্গির বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ রয়েছে। এতদিনে সেগুলোর কিছু কিছু কার্যকর হলেও হয়তো পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারত।

এ তো গেল একটি দিক। সরকার ও সেনাবাহিনীর বাইরে পাকিস্তানে কোনো রাজনৈতিক দলেরও জঙ্গিবিরোধী কোনো কর্মসূচি নেই। দিনের পর দিন পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে পাকিস্তানের সর্বত্র জঙ্গিবাদ শিকড় গেড়ে বসেছে। পাকিস্তান হয়ে উঠেছে জঙ্গি রপ্তানিকারক দেশ। এ জন্য শুধু পাকিস্তানের জনগণই নয়, সারা বিশ্বের মানুষকেই ভুগতে হচ্ছে। ওদের সীমান্ত অঞ্চলগুলোতে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো আস্তানা বানিয়েছে। সেখান থেকে ওরা সারা বিশ্বে 'জেহাদ'এ যোগ দিচ্ছে। তাদের জঙ্গিরা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে এসেও জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা-'আইএসআই' গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছে। এটা নতুন তথ্য নয় যে, ভারতে জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটাতে তারা বাংলাদেশের ভুখণ্ডও ব্যবহার করেছে।

বর্তমান প্রেক্ষপটে জঙ্গি দমনে যদি পাকিস্তানের সরকার, রাজনৈতিক দল, সেনাবাহিনী, সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার কথা তাৎপর্যপূর্ণ হয়, তাহলে লাল মসজিদের খতিবের কথাও স্মরণ রাখতে হবে। সেখানকার ইসলামপন্থী কতিপয় প্রভাবশালী মানুষের চিন্তা-চেতনার রূপটিও বুঝতে হবে। শিশুহত্যার এত বড় জঘন্য ঘটনার নিন্দা যখন সারা বিশ্বের মানুষ করছে, বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ যখন শোকার্ত, তখন পাকিস্তানের লাল মসজিদের খতিব আবদুল আজিজ তালেবানের বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে পরিচালিত সেনা অভিযানকে 'অনৈসলামিক' বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, তালেবানের ওপর বিমান হামলার প্রতিশোধ নিতেই পেশাওয়ারের স্কুলে ১৩৩ শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। কত বড় নিষ্ঠুর ও বর্বর মানসিকতা হলে এ কথা বলা যায়?

২০০৭ সালে ইসলামাবাদের লাল মসজিদে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে এক অভিযান চালায় তৎকালীন পারভেজ মোশাররফ সরকার। এতে শতাধিক মানুষ নিহত হয়। ওই অভিযানে আবদুল আজিজের ভাই আবদুল রশিদ গাজী নিহত হন। আবদুল আজিজ বোরকা পরে পালানোর সময় সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে যান। ২০০৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের আদেশে তিনি মুক্তি পান।

তবে আশার কথা হচ্ছে, ইসলামী চরমপন্থার একটা 'অস্পৃশ্য' (ছোঁয়া যাবে না এ অর্থে) দূর্গ হিসেবে পরিচিত ওই লাল মসজিদের সামনে শত শত মানুষ ইমামের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। রাজনৈতিক ঐক্য ও সেনাবাহিনী ধাক্কা খাওয়ার পর সাধারণ মানুষের এই প্রতিবাদ তালেবানবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেবে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়। পাকিস্তানের মতো নানা ভাগে বিভক্ত সমাজ ব্যবস্থায় ও শক্তিশালী সেনাবাহিনীর জঙ্গি চাষাবাদের মধ্যে কোনো পরিবর্তন আসবে কিনা, শতাধিক শিশুহত্যার ঘটনা পাকিস্তানের জন্য টার্নিং পয়েন্ট হবে কিনা, এখনই বলা মুশকিল। তারপরেও বিক্ষোভ তো শুরু হয়েছে। এই বিক্ষোভ পাকিস্তানের নিরাপত্তা নীতি এবং তথাকথিত রক্ষকদের মধ্যে অন্তত ধাক্কা দিতে পারবে।

তবে খুব কঠিন পুরানো এই পাপমোচন। কারণ, তা করতে হলে পাকিস্তান রাষ্ট্রটিকেই ১৮০ ডিগ্রি উল্টাতে হবে। এরই মধ্যে তালেবানরা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পরিবারসহ দেশটির রাজনীতিবিদ ও সেনাকর্মকর্তাদের সন্তানদের হত্যার হুমকি দিয়ে বলেছে, ''যদি আমাদের কোনো সহযোগী ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তোমাদের শিশুদের ওপর আমরা প্রতিশোধ নেব। সেনাবাহিনীর জেনারেল ও রাজনৈতিক নেতাদের ঘর শোকের আধারে পরিণত করব।''

পাকিস্তানে বিদ্যমান এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশেরও শিক্ষা নেওয়ার বিষয় আছে। কারণ, এই দেশেও এক সময় জঙ্গিবাদ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে। বিশেষ করে ২০০৩ থেকে ২০০৫ সাল ছিল জঙ্গিদের 'ফলনের বছর'। এর আগে, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকেই জঙ্গিরা সংগঠিত হতে থাকে। সে সময় তারা সারাদেশে একের পর এক বোমা হামলা চালিয়ে প্রগতিশীল মানুষদের হত্যা করেছে। জঙ্গিবাদে আওয়ামী লীগের সমর্থন না থাকলেও তারা তা দমনে সেবার কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।

এরপর, ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গিরা রীতিমতো উল্লসিত হয়; কারণ, গ্রেফতার হওয়া জঙ্গিরা এ সময় একে একে ছাড়া পেয়ে যায়। এক পর্যায়ে জেএমবি বা জমিয়াতুল মুজাহিদিন নামে সংগঠন খুলে জঙ্গিরা শায়খ আবদুর রহমান ও বাংলা ভা্‌ইয়ের নেতৃত্বে মিছিলও করেছে। আর সেই মিছিলে পাহারা দিয়েছে পুলিশ, রসদ জুগিয়েছেন বিএনপির নেতারা!

বিএনপি-জামাতের শাসনামালে দিনের পর দিন জঙ্গি তৎপরতার রিপোর্ট লিখে সরকারের রোষানলে পড়তে হয়েছে আমাদের। তখনকার সরকার শুধু জঙ্গিবাদের কথা অস্বীকারই করেনি, তারা এ সব 'মিডিয়ার সৃষ্টি' বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারাদেশে একযোগে বোমা ফাটিয়ে তাদের ব্যাপক উপস্থিতির কথা যখন জানান দেয় জঙ্গিরা, তখন দেশি-বিদেশি চাপে সরকার বাধ্য হয় জঙ্গি সংগঠনগুলো নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে। বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধেও তাদের সঙ্গে গোপন যোগাযোগ রাখার অভিযোগ ছিল।

বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকার জঙ্গিবাদের বিস্তার রোধে ভুমিকা রেখে তৃপ্তির ঢেঁকুর গিললেও তাদের করণীয় রয়েছে আরও অনেক কিছু। জঙ্গি দমনে সরকারের কার্যকর ভূমিকা আসলে দেখা যাচ্ছে না। যতটা গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখার কথা তা হচ্ছে বলা যাবে না কিছুতেই। আল-কায়েদা নেতা জাওয়াহিরির উপমহাদেশে তাদের শাখা খোলার ঘোষণা, ময়মনসিংহে ফাঁসির আসামিসহ চার জঙ্গি ছিনতাই, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় জেএমবির জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতা এবং সর্বশেষ ড্রোন তৈরি করে দেশের শীর্ষনেতাদের হত্যা করার পরিকল্পনা জঙ্গি তৎপরতার ভয়াবহতার দিকটিতে ইঙ্গিত করে।

সরকার এসব দমনে চেষ্টা করছে বললেও এখন পর্যন্ত একটি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি। এখনও র‌্যাব, ডিবি বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য শাখাগুলো বিক্ষিপ্তভাবে জঙ্গি তৎপরতা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। ধরা পড়ার পর জামিনে মুক্তি পেয়ে আবার জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়াদের খোঁজও তাদের কাছে নেই।

এ জন্য বিভিন্ন সময় সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এভাবে যে, জঙ্গি দমনে একটা টাস্কফোর্স বা এমন একটা সংস্থা তৈরি করা হোক, যেখানে সেনাবাহিনী পুলিশ, র‌্যাব, বিডিআর, আইনজীবী, সাংবাদিক, বিশেষজ্ঞ, গবেষকসহ যাদেরই প্রয়োজন হবে সবাইকে রাখা হবে। এই সংস্থা সার্বক্ষণিক ভিত্তিতে জঙ্গি তৎপরতা মনিটর করবে। জঙ্গিদের দমন থেকে শুরু করে জঙ্গি সংগঠনে যোগদানে মানুষকে নিরুৎসাহিত করা, যারা ধরা পড়বে তাদের সংশোধন করার ব্যবস্থাগ্রহণ, বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিস্পত্তি করা– এ সব বিষয়ে বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা করবে এই টাস্ক ফোর্স।

তবে তার আগে দরকার রাজনৈতিক ঐক্য। শত শিশুহত্যার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানেও এমন ধারা ঐক্য গড়ে ওঠার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশে সে পরিস্থিতি হওয়ার আগেই এ ঐক্য দরকার। যদিও অনেকে বলবেন যে, এ দেশে পাকিস্তানের মতো পরিস্থিতি নেই, তবু সাবধানের মার নেই। কারণ, আনসারউল্লা বাংলা টিম, আনসার-উল-জিহাদ-বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জিহাদি গ্রুপ, জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ-হুজি, হিযবুত তাহরির এখনও সক্রিয়। এই সংগঠনগুলোর ভয়াবহ কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যক্ষ্ করেছে।

এসব জঙ্গির বাইরেও সম্প্রতি গজিয়ে ওঠা হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবও বাংলাদেশের মানুষ দেখেছে। তাদের প্রতি নমনীয় মনোভাব বা রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার প্রতিযোগিতাই আমাদের উদ্বেগের কারণ।

তাই জঙ্গিদের নির্মূলে সরকার যতক্ষণ না সমন্বিত কঠোর ব্যবস্থা নিবে, আশঙ্কার জায়গাটা থেকেই যাবে।

২১ ডিসেম্বর, ২০১৪

জায়েদুল আহসান পিণ্টু: প্রধান বার্তা সম্পাদক, দেশ টিভি।