জীবনরক্ষাকারী জেনেরিক ঔষধের প্যাটেন্ট শৃংখলিত করা মানবতাবিরোধী চরমতম অপরাধ

কৌশিক আহমেদ
Published : 17 July 2011, 09:43 AM
Updated : 17 July 2011, 09:43 AM

জ্বরের ঔষধ কিভাবে তৈরী হয়? ফার্মাসিটিক্যালস কোম্পানীগুলো কোনো এক সূত্র মতে সেটা তৈরী করছে। সেই সুত্র যিনি আবিষ্কার করেছিলেন – আমরা তার নাম জানি না। নাপা বা প্যারাসিটামল কে আবিষ্কার করেছিলো – আমাদের সেটা জানার দরকার পড়ে নাই। কোনো ব্যক্তি না কি কোনো ঔষধ কোম্পানীর ল্যাবে কয়েক ডজন বিজ্ঞানী মিলে নাপা/প্যারাসিটামল তৈরী হয়েছে সেটা আমাদের না জানলেও চলে। সামান্য জ্বরের ঔষধ কিনে খাবার মত সহজলভ্য করে সমাজ/রাষ্ট্র আমাদের সামনে হাজির করতে পেরেছে – এই-ই যথেষ্ট। আমরা একে সরকারের দায়িত্ব বলে মনে করি। মৌলিক চাহিদা পূরণে নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্রের কর্তব্য।

প্রচলিত এই ছকের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে অচিরে। সমস্ত বিশ্বের ঔষধ শিল্প জাতিসংঘের এক অমানবিক সংস্থা World Intellectual Property Organization (WIPO) র করালগ্রাসে পড়ে দুষ্প্রাপ্য ও নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের। এবং এটা ঘটতে পারে ২০১৬ সালে – মানে মাত্র ৫ বছর পরে। ঔষধ শিল্পের রমরমা রপ্তানী তো বন্ধ হবেই – দেশের মধ্যেই ঔষধ কিনে খেতে হবে বিদেশী কোম্পানীর কাছ থেকে এবং তাও উচ্চ দামে।

চিকিৎসাসেবার অপরিহার্য একটা মৌলিক চাহিদা মেটাতে আমরা আমদানী নির্ভর হয়ে পড়বো। উন্নত বিশ্বের স্বার্থ রক্ষাকারী জাতিসংঘের আওতাধীন সংস্থাসমূহ পৃথিবীর সমস্ত ঔষধের উৎপাদন ও বিপণনে নতুন নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা চালু করেছে বেশ কিছুকাল আগে। ট্রেড রিলেটেড ইনটেলেকচুয়াল প্রোপার্টি রাইটস অনুসারে (ইউরোপিয় ইউনিয়নের ব্যবস্থাপত্র মোতাবেক) জেনেরিক প্যাটেন্ট ঔষধ উৎপাদন করতে পারবো আমরা ২০১৬ সাল পর্যন্ত। এর পর ফিরে যাবে এসব নিত্য প্রয়োজনীয় ঔষধ উৎপাদনের ক্ষমতা প্যাটেনকৃত সংস্থার কাছে। যত প্রয়োজনীয় হোক – আপনি পারবেন না উৎপাদন করতে। তাদের তৈরী করা ঔষধ খেতে হবে। কিছু দেশী কোম্পানী আপনার কাছে পরিবহন করে নিয়ে আসবে অথবা বিদেশী কোম্পানীকে উচ্চহারে কপিরাইট ফি দিয়ে উৎপাদন করবে। ফলে ঔষধের দাম বাড়াবে এবং সাধারণ মানুষ ভুগবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে ২০১৬ সালের পরে আরো ১৫ বছর উৎপাদন সুবিধা চেয়ে আবেদন করেছে World Intellectual Property Organization (WIPO) কাছে, কিন্তু সেটা আদৌ ঐ অমানবিক সংস্থা মানবে কিনা – বলা যায় না। যদি তারা মেনেও নেয়, তারপরেও জীবন রক্ষা কারী ঔষধের প্যাটেন্টকে এভাবে অচ্ছুৎ করে ফেলা মানবতার বিরুদ্ধে চরমতম অপরাধ হিসাবেই গন্য করা যায়।