ওয়াং ওয়ে প্রাচীন কবিতা, আধুনিক অনুবাদমালা

অংকুর সাহা
Published : 24 Dec 2010, 05:56 AM
Updated : 24 Dec 2010, 05:56 AM

।।১।।

চিনদেশে তাং সাম্রাজ্য (Tang Dynasty) স্থাপিত হয়েছিল ৬১৮ খ্রীস্টাব্দে। প্রায় তিন শতক রাজত্ব করেছিলেন তাঁরা—দেশের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও স্থাপত্যে এক উন্নততর সময়। ওয়াং ওয়ে (৬৯৯-৭৬১) এই যুগের এক প্রধান কবি, চিত্রশিল্পী এবং অক্ষর অংকনে সিদ্ধহস্ত। ওয়াং নদীর তীর বরাবর ভ্রমণকালে সেই অঞ্চলের নৈসর্গের অভিঘাতে তিনি একগুচ্ছ কবিতা লিখেছিলেন—তার মধ্যে একটি বিশেষ কবিতার সহস্রাব্দ পেরিয়ে যাত্রা—আমাদের আলোচ্য। বিশাল গোটানো এক পার্চমেন্ট পুঁথিতে অনুভূমিক ভাবে আঁকা হয়েছিল দৃশ্যপট—তার ফাঁকে ফাঁকে সুচারু অংকনে লেখা কবিতাগুলি। চিনে ভাষায় মূল কবিতা—বাংলায় লিপ্যন্তর (Transliteration)—চিনে ভাষার উচ্চারণে নানান বিশেষজ্ঞের নানান মত, আবার ভৌগোলিক অঞ্চল অনুযায়ীও উচ্চারণের ফারাক ঘটে। তাং সাম্রাজ্যের সমসাময়িক চিনে ভাষার উচ্চারণ বর্তমানের চেয়ে অনেকটাই আলাদা। ১৯২০র দশাব্দে ভাষাবিদ বার্ণার্ড কার্লগ্রেন (১৮৮৯-১৯৭৮) চেষ্টা করেছিলেন, তাং সাম্রাজ্যের চিনে ভাষার মৌখিক পুনর্সৃষ্টির , কিন্তু তাতে বিশেষ লাভ হয়নি। আধুনিক যুগের চিনে পাঠক কবিতাটির পাঠ করবেন এইভাবে—

লু জাই

কংশানবুজিয়ানরেন
দানওয়েনরেনশিয়াং
ফানজিং (ইং)রুশেনলিন
ফুজাওচিংতাইশাং


চীনা হরফে ও ভাষায় ওয়াং ওয়ে'র 'লু জাই'

এবং প্রতিটি শব্দ, অক্ষর বা ছবির আক্ষরিক বঙ্গানুবাদ করলে দাঁড়াবে—

হরিণ অরণ্য

শূন্যপর্বতনাদেখামানুষ
কিন্তুশোনামানুষশব্দপ্রতিধ্বনি
ফেরতআলো (ছায়া)ঢোকাঘনবন
আবারউজ্জ্বলসবুজশ্যাওলাউর্ধ্বে

এবার এই বাইশটি সচেতন শব্দকে বাংলা কবিতার রূপ দেওয়া যাক, মূল কবিতার অন্ত্যমিলগুলি যতোটা সম্ভব বজায় রেখে—

মৃগদাব

পর্বত একাকী শূন্য, মানবের চিহ্নমাত্র নেই,

সতত কেবল শুনি ধ্বনি থেকে প্রতিধ্বনি বাজে,

গহন বনানী তার অভ্যন্তরে আলো নামে যেই-

সবুজ শৈবাল শিরে উজ্জ্বলতা আবার বিরাজে।

বাইশটি শব্দ এখানে বেড়ে দাঁড়াল সাতাশ; প্রতিটি পংক্তি পাঁচটি শব্দের বদলে বাংলায় ৬, ৭, ৭, ৬। প্রথম পংক্তিদুটি সাদামাটা এবং সহজে অনুবাদযোগ্য।

অন্তিম পংক্তিদুটির কাব্যভাষা তুলনামূলক ভাবে জোরালো এবং সেই কারণেই বিভিন্ন ও বিচিত্র পাঠ সম্ভব। প্রচুর অনুবাদ, আলোচনা ও গবেষণা ঘটেছে কবিতাটিকে ঘিরে এবং তার এক সংক্ষিপ্ত রূপরেখা উপস্থাপিত হবে পাঠকের সামনে পরবর্তী পৃষ্ঠাগুলিতে।

চতুষ্পদীর প্রথম পাঠে তাকে মনে হবে প্রকৃতির কবিতা এবং তারমধ্যে কোন ধর্মীয় অনুষঙ্গ নেই; কিংবা হয়ত ভীষণভাবে রয়েছে। কারণ অষ্টম শতাব্দীর চিনদেশের ধর্ম, সংস্কৃতি, শিল্প বা সাহিত্যে কপিলাবাস্তর "Big B" এর প্রভাব প্রবল, অমোঘ, গভীর এবং সুদূরপ্রসারী। সেখানেই কবিতাটির অন্তরের ঐশ্বর্য অথবা আত্মিক সম্পদ—অগভীর, পল্পবগ্রাহী পাঠে তাকে আত্মস্থ করা মুশকিল। ওয়াং ওয়ে দার্শনিক, মরমী, আধ্যাত্মিক কবি এবং তাঁর কবিতার উপরিতল স্পর্শ করে ফিরে যাওয়াটা ভুল হবে।

কবিতার নাম আক্ষরিক অর্থে 'হরিণ অরণ্য' এবং অন্য অনুষঙ্গ থেকে পরিস্কার যে সেটি স্থান নাম। আমেরিকাতেও 'ডিয়ার পার্ক' বা 'ডিয়ার গ্রোভ' নামে শহর রয়েছে। আমি কবিতার নাম সামান্য পাল্টে রেখেছি 'মৃগদাব'—তার প্রধান কারণ বৌদ্ধ ধর্মীয়। বৌদ্ধ ধর্মের চারটি মূল তীর্থস্থান—লুম্বিনী (জন্ম) বোধগয়া (বুদ্ধত্ব লাভ), সারনাথ (প্রথম ধর্মপ্রচার ও সংঘস্থাপন) ও কুশীনগর (মহানির্বাণ)। সারনাথের স্থাননামটি এসেছে সারঙ্গঁনাথ থেকে, যিনি হরিণদের দেবতা; সারনাথ শহরের অপর একটি নাম 'মৃগদাব' অর্থাৎ 'হরিণ কানন'।

সারনাথে গৌতম বুদ্ধের প্রথম ধর্মপ্রচার—পাঁচজন শিষ্য দিয়ে শুরু করেন। অল্পসময়ের মধ্যেই তা বেড়ে দাঁড়ায় ষাটে। নিকটবর্তী অরণ্য থেকে হরিণেরা এসে বসত উপাসনারত ধর্মগুরুর পাঁয়ের কাছে। প্রাচীন তাম্রলিপিতে ধ্যানরত বৌদ্ধ শ্রমণের আশে পাশে দেখতে পাওয়া যায় একটি দুটি হরিণ।

কবিতাটিতে শৈবালের ওপর আলোক পতনের অর্থ কী মানসিক জ্ঞানালোক প্রাপ্তি? পশ্চিমের সূর্য কী গৌতম বুদ্ধ? অরণ্য ও পর্বতের নির্জনতা কী মানবের বিষয়সংকুল মনে ঈশ্বরের অনুপস্থিতি? কে বলতে পারে? এইভাবেই কবিতার অর্থপ্রসার ঘটে এবং চেতনার সঞ্চার ঘটে তার শরীরে।

।।২।।

কবিতার অনুবাদ কিভাবে করা হয়, বা করা উচিত?

প্রায় তের শতাব্দীর পুরানো এই চিনে চতুষ্পদী, নাম সহ কুল্লে ২২টি শব্দ; কেমন তার অনুবাদ? মূল বিষয়গুলি পাহাড়, অরণ্য, সূর্যাস্ত, শৈবাল—এমন চিনে ভাষায় রচিত যা এখন আর ব্যবহার হয় না সে দেশে অথচ কবিতা হিসেবে এখনও প্রাসঙ্গিক। কিভাবে হবে তার অনুবাদ ? তার চিনে চরিত্র কি বজায় রাখা সম্ভব? অনুদিত ভাষাতেও (ইংরেজি, বাংলা অথবা এস পানিওল) তাকে হয়ে উঠতে হবে সফল কবিতা?

চিনে কবিতার ইংরেজি অনুবাদের সূচনা উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে। প্রথম অনুবাদ জেমস লেগে (১৮১৫-১৮৯৭) স্কটিশ ধর্মপ্রচারক—অল্পবয়েসে পূর্ব এশিয়াতে এসেছিলেন এবং তিন দশক সেখানে ধর্মপ্রচার ও অধ্যপনা করেন। চিনে ভাষায় তাঁর দখল প্রশ্নাতীত হলেও কবিত্ত্বশক্তি নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। দ্বিতীয়জন হারবার্ট অ্যালেন গাইলস (১৮৪৫-১৯৩৫) চিনে ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। তাঁর করা অনুবাদেরও ঐতিহাসিক মূল্য থাকলেও তা কবিতার পদবাচ্য নয়।

ওয়াং ওয়ের কবিতার প্রথম সফল অনুবাদ করেন চিনে ব্রিটিশ দুতাবাসের কর্মী উইলিয়াম জন বেইনব্রিজ ফ্লেচার (১৮৭১-১৯৩৩)। আমাদের আলোচ্য কবিতাটি তাঁর অনুবাদে –

The Form of the Deer

So lone seem the hills; there is no one in sight there.

But whence is the echo of voices I hear?

The rays of the sunset pierce slanting the forest,

And in their reflection green mosses appear.

[১৯১৯ সালে ডব্যু জে বি ফ্লেচার(১৮৭১-১৯৩৩)-এর অনুবাদ]

এর বাংলা অনুবাদ করেছেন সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ—

হরিণের রূপ

কী নির্জন টিলাগুলি; এখানে কোথাও কেউ নাই।

কিন্তু এই কথার গুঞ্জন তবে আসে কোথা থেকে?

অরণ্যকে আড়াআড়ি চেরে সন্ধ্যারবির রোশনাই,

যেখানে- যেখানে পড়ে, সবুজ গুল্মেরা ওঠে গেজে।

[ডবল্যু জে বি ফ্লেচার (১৮৭১-১৯৩৩)-এর ১৯১৯-এ করা ইংরেজি অনুবাদ থেকে।]


…………..
ওয়াং ওয়ে (৬৯৯-৭৬১), সূত্র: http://www.poetry-portal.com
…………..

অহমিকাময় ব্রিটিশ আমলা ফ্লেচার এই নেটিভ কবিতাটিকে 'উন্নত' করার কাজে হাত দিয়েছেন। ওয়াং-এর সূর্যালোক বনের মধ্যে ঢোকে, কিন্তু ফ্লেচারের সূর্যাস্তের আলো Pierce slanting! ওয়াং-এর রচনায় শব্দ শোনা যায়; ইংরেজিতে কবি নিজে শব্দ শুনছেন এবং প্রশ্ন করছেন শব্দের উৎস বিষয়ে। চতুর্থ পংক্তিটি প্রায় অর্থহীন – কিসের প্রতিফলন কোথায় ? কবিতার নামটির তথৈবচ-মূলের সঙ্গেঁ বিশেষ সম্পর্ক নেই এবং বোঝার ওপরে শাকের আঁটির মতন গম্ভীর পাদটীকা: "জাই – The place where deer sleeps, its 'form'" আমি সুব্রতকে এই সব তথ্য না জানিয়ে তাঁর কাজ কঠিন করে দিয়েছি, কিন্তু তিনি তার স্বভাবসিদ্ধ দক্ষতায় বাংলা কবিতাটিকে উতরে দিয়েছেন।

আড়াই দশক পরে কবিতাটির নতুন ইংরেজি অনুবাদ করেন লন্ডনে ব্রিটিশ মিউজিয়ামের প্রাচ্য প্রদর্শনশালার পদস্থ কর্মী সোয়ামে জেনিনস্‌ (১৯০৮-১৯৭৬):

The Deer Park

[Wang Wei]

An empty hill, and no one in sight

But I hear the echo of voices

The slanting sun at evening penetrates the deep wood:

And shines reflected on the blue lichens

[১৯৪৪ সালে করা সোয়ামে জেনিনস্‌ (১৯০৮-১৯৭৬)-এর অনুবাদ]

প্রথমতঃ সোয়ামে কবিতার নামটি অনুধাবন করেছেন সঠিকভাবে এবং তার সম্যক অনুবাদ করেছেন ইংরেজিতে। "লু জাই"একটি স্থান – নাম এবং শব্দদুটির বাংলা করলে দাঁড়ায় "হরিণ অরণ্য", অতএব "ডিয়ার পার্ক" সঠিক এবং মূলানুগ। দ্বিতীয়ত:, তিনিও ফ্লেচারের ফাঁদে পড়েছেন—উল্লেখ করেছেন "আমি" (I), সূর্য "slanting" এবং "at evening" যেগুলি মূল কবিতায় নেই। তৃতীয়ত: চতুর্থ পংক্তিতে জাও হয়ে যায় "shines reflected" এবং সবশেষে দ্বিতীয় পংক্তির সঙ্গে তিনি জুড়ে দেন এক অখাদ্য পাদটীকা—"The woods are so thick that woodcutters and herdsmen are hidden." সম্পূর্ণ অর্থহীন এবং অপ্রাসঙ্গিক। সব মিলিয়ে সোয়ামের অনুবাদটি নিস্তেজ ও অনুজ্জ্বল হলেও আমি তাকে রাখব ফ্লেচারের একধাপ ওপরে।

সোয়ামের ইংরেজি ভাষ্যটির বাংলা অনুবাদ করেছেন তাপস গায়েন।

দি ডিয়ার পার্ক

[ওয়াং ওয়ে ]

দৃশ্যহীন, শূন্য এই পাহাড়

কিন্তু আমি শুনি গুঞ্জনের প্রতিধ্বনি

গভীর অরণ্য ভেদ করে শেষ বিকালে হেলানো সূর্যের আলো

আর নীল পুষ্পল ছত্রাক শুধু বিকিরণে জাগে।

[তাপস গায়েন / নিউ ইয়র্ক/ সেপ্টেম্বর ১২, ২০১০]

তিনি ইংরেজি কবিতার থেকে খানিকটা স্বাধীনতা নিলেও (reflection—বিকিরণ , lichens—ছত্রাক) বাংলা অনুবাদটি নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে গেছে কবিতা হিসেবে। আরেকটি উল্লেখযোগ্য তথ্য—আমি কবিতাটির যতগুলি ইংরেজি অনুবাদ পড়েছি। তার মধ্যে একমাত্র সোয়ামেই ব্যবহার করছেন "lichens" শব্দটি। বাকি সবাই লিখেছেন "moss"।

।।৩।।

টোকিও ইমপিরিয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন ও অর্থনীতির মার্কিন অধ্যাপক আর্নেস্ট ফ্রানসিস্কো ফেনোলোসা (১৮৫৩-১৯০৮) কিছু প্রাচীন চিনে কবিতার ইংরেজি অনুবাদের কাজে হাত দিয়েছিলেন দুই জাপানি সহকর্মীর (অধ্যাপক মোরি এবং আরিনয়া) সাহায্যে, কিন্তু তাঁর অকালমৃত্যুর কারণে কাজটি সমাপ্ত হয়নি। তাঁর বিধবা স্ত্রী মেরি কাজটি সম্পন্ন করার ভার দেন তরুণ কবি এজরা পাউন্তের (১৮৮৫-১৯৭২) হাতে ১৯১৩ সালে। ফেনোলোসা অনুবাদ করেছিলেন লিপো (জাপানি নাম 'রিহাকু') এবং ওয়াং ওয়ে (জাপানি নাম 'ওমাকিৎসু') এর কবিতা। ১৯১৫ সালৈ পাউন্ত লি পো'র ১৯টি অনুবাদের কাব্যরূপ দেন তাঁর ক্যাথে (cathay) কাব্যগ্রন্থে। ইংরেজি ভাষার কোন প্রধান কবির হাতে চিনে কবিতার অনুবাদ সেই প্রথম। কবিতাগুলি নিয়ে অসংখ্য আলোচনা ও গবেষণা হয়েছে গত একশো বছরে এবং তাদের প্রভাবও পড়েছে পরবর্তীকালের কবিদের ওপরে।

ক্যাথে গ্রন্থটির প্রকাশের পর ইয়োরোপ ও আমেরিকার প্রথম শ্রেণীর কবিদের মধ্যে চিনে সাহিত্য ও কবিতা বিষয়ে আগ্রহ ভীষণভাবে বাড়লো; চিনে কবিতার অনুবাদের বিষয়টি মুষ্টিমেয় কয়েকজন অ্যাকাডেমিক ও চিন-বিশেষজ্ঞের হাত থেকে উঠে এলো মূল ধারার কবিদের হাতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এমি লোয়েল (১৮৭৪-১৯২৫) এবং উইটার বাইনার (১৮৮১-১৯৬৮); জার্মানিতে অকালমৃত কবি ও নাট্যকার আলফ্রেড হেনশ্‌কে (১৮৯০ – ১৯২৮), যিনি 'ক্লাবুন্ড(Klabund)' ছদ্মনামে লিখেছিলেন; ফ্রান্সে স্বনামধন্য তেওফিল গোতিয়ে (১৮১১-১৮৭২)-এর কন্যা জুডিথ গোতিয়ে (১৮৪৫-১৯১৭); এমনকী সুদূর ফিনল্যান্ডে ফিনিশ ভাষার কবি পের্তি নাইমিনেন (১৯২৯-) এঁরা যে কেবলমাত্র চিনে ভাষা না জেনেও চিনে কবিতার সফল ও সঙ্গঁতিপূর্ণ অনুবাদ করলেন নিজ নিজ ভাষায় তাই নয়, তাঁদের নিজস্ব কবিতাও সমৃদ্ধ হল চিনের উপমা ও অনুষঙ্গে। ধর্মীয় কবিতা, উপাসনার কবিতা, প্রেম ও যৌনতার কবিতা, লোকগাঁথা ও লোকগীতি – চিনে কবিতার সব সম্ভব্য ধারাতেই গা ভেজালেন এঁরা।

আমাদের আলোচ্য কবিতাটির ইতিমধ্যে ইংরেজি অনুবাদ হয়েছে বেশ কয়েকবার, কিন্তু সেগুলি কবিতা হয়ে ওঠেনি। অনুবাদকেরা চিনে ভাষা জানলেও কবিতা বিষয়ে বিশেষ কিছু জানতেন না বলে মনে হয়। এবং সচেতন অথবা অচেতনভাবে মূল কবিতাটির উন্নতি সাধনের চেষ্টা হয়েছে। সেই ধারার একটি প্রধান ব্যতিক্রম বিট কবিদের মানসশুরু ও উপদেষ্টা কেনেথ রেক্সরথ (১৯০৫-১৯৮২) – তাঁর চিনে কবিতার সংকলনটি প্রকাশিত হল ১৯৭০ সালে এবং ভূমিকায় তিনি জানালেন, 'It is offered with no pretense to scholarship or to mastery of that complex subject, sinology.' তাঁর রচনাটিকে অনুবাদের বদলে অনুসৃজন বলাই ভালো –

Deep in the Mountain Wildnerness

Deep in the Mountain Wilderness

Where nobody ever comes

Only once in a great while

Something like the sound of a far off voice.

The low rays of the sun

Slip through the dark forest,

And gleam again on the shadowy moss.

[১৯৭০ সালে কেনেথ রেক্সরথ(১৯০৫-১৯৮২)-এর অনুবাদ]

চার পংক্তির মূল কবিতাটি বেড়ে সাত পংক্তিতে দাঁড়িয়েছে; 'empty hill' এখানে 'Mountain Wilderness'-এ পরিণত। চিনে ভাষার অভিজ্ঞ অনুবাদক এলিয়ট ওয়েনবার্গারের মতে ওয়াং ওয়ে যদি বিংশ শতাব্দীর আমেরিকায় জন্মাতেন, তাহলে তিনি কবিতাটি এইভাবে লিখতেন। সূর্যরশ্মির ক্ষেত্রে–'pierce' অথবা 'Penetrate'-এর বদলে 'slip' ক্রিয়াপদটির ব্যবহার চমৎকার—অরণ্যে কেউ অভিসারে এসেছে নাকি? 'Only once in a great while'—পুরো পংক্তিটি সম্পূর্ণ আরোপিত, কিন্তু খাপ খেয়ে যায় কবিতার মেজাজের সঙ্গে। কবিতাটির বাংলা অনুবাদ করেছেন সৌম্য দাশগুপ্ত –

পর্বতের গহন নির্জনে

গভীর পাহাড়ি নির্জনে

যেখানে কখনো আসে না কেউ

কখনো কখনো অকস্মাৎ

দূর থেকে শুনি কন্ঠস্বর

ঘনজঙ্গল ভেদ ক'রে

নিচু রশ্মিরা পিছলে যায়

ছায়াময় ঘন শৈবালে

দেখি তারা সব ঝকমকায়।

তাঁর "নিচু রশ্মিরা পিছলে যায়" বাক্যবন্ধে প্রাচ্যের প্রকৃতি এবং রেক্সরথ উভয়েই বিশেষভাবে উপস্থিত।

ইংরেজি ভাষায় ওয়াং ওয়ের প্রথম পূর্নাংঙ্গ কাব্যসংকলন Poems of wang wei প্রকাশিত হয় পেংগুইন ক্ল্যাসিকস সিরিজে ১৯৭৩ সালে। ১৪৪ পৃষ্ঠার শীর্ণ পেপারব্যাকটি এখনো জনপ্রিয়। কবিতার নির্বাচক ও অনুবাদক জি ডবল্যু রবিনসন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীতে জাপানি ভাষা শিখেছিলেন; যুদ্ধের পরে নিজের চেষ্টায় প্রাচীন চিনে ভাষা শেখেন এবং পরবর্তী দশকগুলিতে নিয়মিত অনুবাদকর্ম চালিয়ে যান। আমাদের আলোচ্য কবিতাটি তাঁর অনুবাদে-

Deer Park

Hills empty, no one to be seen

We hear only voices echoed–

With light coming back into the deep wood

The top of the green moss is lit again

[১৯৭৩ সালে জি ডবল্যু রবিনসনের করা অনুবাদ]

রবিনসন সাহেব অনেক পরিশ্রমে কবিতাগুলো সংগ্রহ করে দুই মলাটের বাঁধন সংঘবদ্ধ করেছেন, কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে তিনি কবি নন বলে। ফ্লেচার বা জেনিনসের অনুবাদের 'আমি' এখানে 'আমরা' হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং তাতে কবিতার নির্জন মেজাজটি নষ্ট হয়েছে। গহন অরণ্যে কি কেউ সপরিবারে চড়ুইভাতি করতে উপস্থিত হয়েছেন? চতুর্থ পংক্তিতে 'Top' শব্দটিও গোলমেলে—শ্যাওলার কি কোন শীর্ষবিন্দু থাকে ? সব মিলিয়ে অনুবাদটি কেজো, কিন্তু অনুপ্রাণিত করে না পাঠককে। তবু অনুপম মুখোপাধ্যায় সাধ্যমত চেষ্টা করেছেন বাংলায় তাকে হৃদস্পন্দন দিতে –

ডিয়ার পার্ক

ফাঁকা পাহাড়গুলো, কাউকে দেখা যায় না

আমরা কেবল কন্ঠস্বরের প্রতিধ্বনি শুনি—

অরণ্যের গহীনে ফিরে আসছে আলো।

সবুজ মসের ডগাটি আলোকিত আবার।

ভারতবর্ষে বহু বছর কাটিয়েছেন মেহিকোর কবি অক্তাভিও পাস; প্রাচ্যের সাহিত্য ও দর্শনে তাঁর গভীর মনোনিবেশ। তাঁর অনুবাদের ঝুলিটি সুদূরপ্রসারী ও বিশাল। ১৯৭৮ সালে প্রকাশিত অনুবাদ গ্রন্থ—অনুবাদ ও চিত্র বিনোদন (Versiones & Diversiones) আকারে প্রায় ৭৫০ পৃষ্ঠা এবং তাতে রয়েছে সারা পৃথিবীর কবিতার এসপানিওল অনুবাদ। আলোচ্য কবিতাটির তিনি প্রথম অনুবাদ করেছিলেন ১৯৭৪ সালে—

En la Ermita Parque de los Venados

No se ve gente en este monte.

Solo se oyen, lejos, voces.

Por los ramajes la luz rompe.

Tendida entre la yerba brilla verde.

শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুবাদে তার বাংলা রূপান্তর—

হরিণদের মঠোধ্যানে

এই পাহাড়ে মানুষ যায় না দেখা।

শুধু শোনা যায় দূরের স্বরক্ষেপে।

আলো ভেঙ্গে যায় ডালপালাদের মাঝে।

শুধু সে রয়েছে উজ্জ্বল ঘাস ব্যেপে।

ভূমিকায় পাস জানাচ্ছেন, "The translation of this poem is particularly difficeult, for the poem carrles to an extreme the characteristics of chinese poetry: universality, impersonality, absence of time, absent of subject. In wang Wei's poem, the solitude of the mountain is so great that not even the poet himself is present." তিনি এসপানিওল অনুবাদটি করেছেন মিলহীন চার পংক্তিতে প্রথম তিন পংক্তির প্রতিটি ৯ মাত্রার এবং চতুর্থটি ১১ মাত্রার।

এতদিন পর্যন্ত ওয়াং ওয়ের চতুষ্পদীটিকে প্রকৃতির কবিতা বলে অভিহিত করা হত; পাস কিন্তু ধর্মের প্রসঙ্গঁ এবং অমিতাভ বুদ্ধের অনুষঙ্গ আনলেন তাঁর আলোচনায়। ওয়াং ওয়ে প্রকৃতির কবি ঠিকই, কিন্তু বুদ্ধের উপাসনায় নিবিষ্ট প্রকৃতির কবি। সূর্যাস্তের আলোর একটি বিশেষ, গূঢ় অর্থ রয়েছে তাঁর কাছে অপরাহ্ন শেষে ধ্যানে বসেন তাঁরা এবং অরণ্যের শৈবালের মতন ঐশ্বরিক ছটায় আলোকিত হন।

পাস প্রথম পংক্তিতে পর্বতের শূন্যতাকে বাদ দিয়েছেন; দ্বিতীয় পংক্তিতে রেক্সরথের মতনই কন্ঠস্বর ভেসে আসে দূর থেকে; তৃতীয় পংক্তিতে অন্য অনুবাদের মতন আলো অরণ্যে ঢোকে না, বরং 'আলো ভেঙে যায়' এক অপূর্ব ও কবিত্বময় ঝলকানিতে। অন্তিম পংক্তিতে শৈবাল রূপান্তরিত হয়েছে ঘাসে। সরাসরি তার কারণ না জানালেও, তিনি লিখেছেন, "Without losing the reality of the trees, rock and earth, Wang Wei's mountain and forest are emblems of the void. Imitating his reticence, I limited myself to lightly changing the last two lives." এজরা পাউন্ড যেমন চিনে কবিতাকে আবিষ্কার করেছেন ইংরেজি ভাষায়, পাসও তাকে আবিষ্কার করলেন এসপানিওল ভাষায়, ছ'দশক পরে।

ডঃ এইচ. সি. চ্যাং (১৯২৩-২০০৪), (চিনে ভাষায় চ্যাং শিন-চ্যাং) ছিলেন কেম্‌ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক চিনে ভাষার অধ্যাপক। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল চিনের সাহিত্য এবং তুলনামূলক সাহিত্য। তাঁর অনূদিত ইংরেজিতে তিন খন্ডে চিনে সাহিত্যের প্রামাণ্য সংকলন "Chinese Literature"-এর দ্বিতীয় খন্ড "Nature Poetry" তে রয়েছে আলোচ্য কবিতাটির অনুবাদ:

The Deer Park

Not the shadow on a man on the deserted hill–

And yet one hears voices speaking ;

Deep in the seclusion of the woods,

Stray shafts of the sun pick out the green moss.

[১৯৭৭ সালে এইচ. সি. চ্যাং (১৯২৩-২০০৪)-এর করা ইংরেজি অনুবাদ]

চ্যাং মূল কবিতার ২০টি শব্দের মধ্যে ১২টির সুষ্ঠু ইংরেজি অনুবাদ করেছেন, বাকিগুলিতে তাঁর নিজের মনের মাধুরী মিশেছে; এবং যেহেতু তিনি নিজে কবি নন, তার ফল মোটেই ভাল হয় নি। প্রথম পংক্তির "Shadow on a man" মূল কবিতায় নেই, কার ছায়া সেটি? এই পাহাড়ে ছায়াটি উপস্থিত (বা অনুপস্থিত) কেন? শেষ পংক্তিতে সূর্যের আলোর "Shaft" গুলি কোথা থেকে এলো ? এবং তারা "Stray" কেন ? যদিও মাসুদ খান এই শব্দবন্ধের চমৎকার বাংলা করেছেন, "সূর্যের পথভ্রষ্ট আলোফলকেরা", তাতে চ্যাং সাহেবের দায়িত্ব কমে না। শ্যাওলাকেই বা "Pick out" করতে হবে কেন? ক্রিয়াপদটিতে কাঁকড়ার দাঁড়া ভেঙে তার থেকে শাঁস ঘুঁটে খাওয়ার ছবি ফুটে ওঠে। বাংলায় তার ভাবানুবাদ সেই তুলনায় অনেক বেশি সাবলীল–

হরিণ-উদ্যান

জনমানববিহীন পাহাড়টিতে দাঁড়ানো কোনো মানুষের-ওপর-পড়া ছায়া নয় কোনো–

অথচ আওয়াজ শোনে কেউ-কেউ, যেন কথা বলছে কিছু কণ্ঠ;

অরণ্যের গহন বিজনে,

সূর্যের পথভ্রষ্ট আলোফলকেরা ফুটিয়ে তোলে সবুজ শৈবাল।

[এইচ. সি. চ্যাং (১৯২৩-২০০৪) কর্তৃক ১৯৭৭ সালে কৃত ইংরেজি অনুবাদ থেকে বাংলায় ভাষান্তর করেছেন মাসুদ খান।]

আধুনিক মার্কিন কবিতার পাঠকদের কাছে গ্যারি স্নাইডার এক সুপরিচিত নাম। তিনি বিটবংশীয় কবিদের সতীর্থ এবং তাঁদের মতনই প্রাচ্যের সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে সম্পৃক্ত। তিনি বসবাস করেন প্রকৃতির কোলে এবং আলোচ্য কবিতাটির অনুবাদ করতে গিয়ে যেন চোখের সামনে দেখতে পান ওয়াং ওয়ের দেখা দৃশ্যটিকে–অরণ্য, পর্বত ও প্রকৃতি তাঁর কাছে ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মতন–

Empty mountains

No one to be seen.

Yet – hear–

Human sounds and echos.

Returning sunlight

Enters the dark woods;

Again shining

On the green moss, above.

[১৯৭৮ সালে গ্যারি স্নাইডার (১৯৩০-)-এর করা ইংরেজি অনুবাদ]

স্নাইডারের ইংরেজি ভাষ্য অবলম্বনে বাংলা অনুবাদ করেছেন আর্যনীল মুখোপাধ্যায়–

ফাঁকা পাহাড়

জনমনিষ্যি নেই।

তবু–শুনবে–

মানুষের শব্দ, প্রতিধ্বনি।

ফিরতি রোদ

ঢুকেছে বনের ঘনয়;

আর চকচক করছে

সবুজ শ্যাওলায়, তার ওপরেও।

স্নাইডারের কবিতায় ওয়াং ওয়ের মূল কুড়িটি শব্দের সবগুলিই স্থান পেয়েছে, অথচ তা একই সঙ্গে বিশুদ্ধ মার্কিন কবিতা হয়ে উঠেছে। ভাবচাচ্যে "heard" এর বদলে কর্তৃবাচ্যে "hear" বুঝিয়ে দিচ্ছে যে ঘটনাটি ঘটছে এই মুহুর্তে। শব্দ এবং প্রতিধ্বনি দুটোই রয়েছে, যেমন থাকে প্রকৃতিতে। অন্তিম শব্দটি খানিকটা বিচিত্র–শ্যাওলাতে রোদ পড়ে চকচক করে কিন্তু তারপর একটি কমা এবং "above" প্রশ্নের জবাবে স্নাইডার জানান, "The reason for 'moss, above' .. is that the sun is entering the woods and illuminating some moss up in the trees. (Not on Rocks)" সম্পূর্ণ নতুন অর্থ এবং অভিনব ব্যঞ্চনা।

জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক বিক্রম শেঠ (১৯৫২-) ছাত্রজীবনের কয়েক বছর চিনে কাটিয়েছেন এবং লেখাপড়া করেছেন সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে। "সৎপাত্র" ("A suitable boy") এবং "পায়ের তলার মাটি" ("Ground Beneath her feet") এর সুপরিচিত লেখকের কবিতা আমি পড়িনি কিন্তু কবিতার আকারে লেখা একটি সম্পূর্ণ উপন্যাস পড়েছি–"The Golden Gate", অসামান্য তাঁর ছন্দের হাত। ১৯৯২ সালে তিনি আলোচ্য কবিতাটির ইংরেজি অনুবাদ করেন–

Deer Park

Empty hills, no man in sight –

Just echoes of the voice of men.

In the deep wood reflected light

Shines on the blue-green moss again

[১৯৯২ সালে বিক্রম শেঠের (১৯৫২-)করা ইংরেজি অনুবাদ]

১৯৯২ সালে হিন্দোল ভট্টাচার্যের বাংলা অনুবাদ–

ডিয়ার পার্ক

শূন্য পাহাড়, কাছাকাছি কেউ নেই–

শুধু কিছু মানুষের কথার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি

নীলচে সবুজ শ্যাওলার গায়ে গায়ে

উজ্জ্বল এখন আলো পুনরায় গভীর জঙ্গলে।

বিক্রম এবং হিন্দোলের অনুবাদে শব্দের মিতব্যয় লক্ষ করার মত। মূল কবিতার প্রতিটি পংক্তিতে পাঁচটি করে শব্দ; বিক্রম লিখেছেন ৬-৭-৬-৬ এবং হিন্দোল ৫-৫-৫-৬। ফলে চিনে কবিতার আঁটসাঁট ভাবটি বজায় থেকেছে। শ্যওলার রঙ সাধারণত "সবুজ" কিন্তু সোয়ামে জেনিন্‌স্‌‌ তাকে "নীল" বানিয়েছিলেন; বিক্রমের শ্যাওলা কিন্তু "নীলচে সবুজ" (Blue-green)| ভালো করে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেল যে মূল কবিতার "চিং" (qing) শব্দটির তিনটি সম্ভাব্য অর্থ- নীল, সবুজ অথবা কালো অর্থাৎ তিনটি রংই সঠিক।

চিনে ভাষায় একই শব্দ বা অক্ষর হতে পারে বিশেষ্য, বিশেষণ অথবা ক্রিয়াপদ। একই শব্দের অর্থ দু'ভাবে পড়া যেতে পারে যাতে সম্পূর্ণ উল্টে যাবে তার মানে। তৃতীয় পংক্তির দ্বিতীয় শব্দটি "জিং" অর্থাৎ "উজ্জ্বল", কিন্তু অন্যভাবে পড়লে "ইং" অর্থাৎ ছায়া"। বিশেষ্যের কোন সংখ্যা নেই – গোলাপ বলে বোঝানো যেতে পারে একটি গোলাপ অথবা সারা পৃথিবীর সমস্ত গোলাপ। ক্রিয়া পদের কোন কাল নেই – অতীত, ভবিষ্যৎ বা বর্তমান। "ভালবাসি" বললে তার ঘটনাকাল হতে পারে এই মুহূর্ত অথবা হাজার বছর।

চিনে কবিতায় উত্তম পুরুষের ব্যবহার বিরল। এই অনুবাদগুলিতে যাঁরা সজ্ঞানে অথবা অজ্ঞানে "আমি" অথবা "আমরা" ব্যবহার করেছেন—তাতে প্রাচীন চিনে কবিতার প্রতি অবিচার করা হয়েছে। চিনে কবিতায় কবি গুরুত্বপূর্ণ নন, পাঠকই গুরুত্বপূর্ণ—কবি চান না নিয়ন্ত্রণ করতে কবিতার ভাবজগতটিতে; তার অভিঘাতে হয় হবে পাঠকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা অথবা সর্বজনীন অভিজ্ঞতা।

আরও প্রায় আধডজন ইংরেজি অনুবাদের সন্ধান পাওয়া গেছে কবিতাটির; আরও কয়েকটি ফরাসি ও জর্মন অনুবাদ। কিন্তু সময়াভাব ও স্থানাভাব। দাঁড়ি টানতে হবে আলোচনার। ১২৫০ বছরের পুরানো একটি চিরসজীব ও চিরনূতন কবিতা এবং গত এক শতাব্দীতে তার বিচিত্র অনুবাদের কিছু নমুনা। জীবন্ত কবিতা মানেই অন্তহীন রূপান্তর অন্তহীন অনুবাদ; নতুন আলোর প্রতিফলনে দেখা যায় অভিনব দ্যুতি। এগুলি অনুবাদ, না কি ইংরেজি, এসপানিওল ও বাংলা ভাষায় লেখা নতুন কবিতা। পাঠক-পাঠিকাই তার বিবেচনা করবেন।

(অক্টোবর ২০১০)

গ্রন্থপঞ্জী:

  • "Nineteen ways of looking at Wang Wei"– by Eliot Weinberger and octavio paz; Moyer Bell Limited; 1987.

    "Poems of Wang Wei" by G . W. Robinson; Penguin Books; 1973.

    Gems of chinese verse and more gems of Chinese Poetry" –

    "Further poems of Tang Dynastry" – Soame Jenyns; John Murray, London; 1944

    Love and the Turning Year : One Hundred more poems from the Chinese – Kenneth Rekroth; New Directions; 1970.

    "Chinese Literature, volume 2 : Nature Poetry " by H.C. Chang; Columbia university Press; New York, 1977.

    Three chinese poets : Vikram Seth; Faber and Faber; London; 1992.

  • কৃতজ্ঞতা স্বীকার

    সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ

    তাপস গায়েন

    সৌম্য দাশগুপ্ত

    অনুপম মুখোপাধ্যায়

    শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়

    মাসুদ খান

    আর্যনীল মুখোপাধ্যায় ও

    হিন্দোল ভট্টাচার্য।

    ওয়েব লিংক
    অংকুর সাহা: আর্টস

    —-
    ফেসবুক লিংক । আর্টস :: Arts