সম্ভাবনার “সুনেত্র”: আশা ও আশংকা

কল্লোল মোস্তফা
Published : 1 May 2011, 06:18 AM
Updated : 15 Sept 2011, 11:31 AM

পুঁজি ও প্রযুক্তির অভাবের কথা বলে যখন দেশের একের পর এক গ্যাস ক্ষেত্র বিদেশী কোম্পানির হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে, তখন দেশের চলমান জ্বালানি সংকট থেকে উত্তরণের এক নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচিত হয় দেশীয় কোম্পানি বাপেক্স কর্তৃক সুনেত্র গ্যাস ক্ষেত্র আবিস্কারের মাধ্যমে। স্বল্প খরচ ও নিজস্ব দক্ষতাকে অবলম্বন করে বাপেক্স গত ২০০৯-২০১০ সালে ২৫৯ কিমি ভূ-কম্পন জরিপের মাধ্যমে সুনামগঞ্জ-নেত্রকোনা অঞ্চলে এই গ্যাস ক্ষেত্রটি আবিস্কার করে।

কিন্তু ২০১০-এর ২৬ জুলাই সুনেত্র আবিস্কারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়ার পর থেকে নানান অপতৎপরতা চলছে গ্যাস ক্ষেত্রটিকে কেন্দ্র করে যাতে বিদেশী কোম্পানির হাতে এই গ্যাস ক্ষেত্রটিকেও তুলে দেয়া যায়। সুনেত্র গ্যাস ক্ষেত্র উন্নয়নে বাপেক্সের প্রথম ডেভেলাপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল বা ডিপিপি অনুমোদন করা হয় নি, সময় মতো প্রয়োজনীয় অর্থও বরাদ্দ করা হয় নি। ফলে প্রথম পরিকল্পনা অনুসারে আগষ্ট ২০১১ এর মধ্যে যেখানে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং ড্রিলিং সাইটে সেগুলো স্থাপন করার কাজ সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার কথা, সেখানে এখন পর্যন্ত কেবল ইট বিছানো একটি অর্ধ কাচা রাস্তা তৈরি ও গ্যাস ক্ষেত্রের চারপাশটা ইটের নীচু দেয়াল দিয়ে ঘেরাও করা ছাড়া আর কোন কাজ হয়নি!

সুনেত্র গ্যাস ক্ষেত্র: গ্যাস ব্লক ১১ ও ১২ তে আবিস্কৃত সুনেত্র গ্যাস ক্ষেত্রটি ছাতক গ্যাস ক্ষেত্র থেকে ৫৯ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং বিবিয়ানা গ্যাস ক্ষেত্র থেকে ৬৯ কিমি উত্তর-পশ্চিমে গ্যাস সমৃদ্ধ সুরমা বেসিনের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত। উৎস শিলা, গ্যাস ধারণকারী মজুদ শিলা, ফাদ, আচ্ছাদন শিলা ইত্যাদি বিবেচনা করে ক্ষেত্রটির ভূ-তাত্ত্বিক সফলতা বা Probability of geologic success, Pg নির্ধারণ করা হয়েছে ০.৬১৭ যা ভূ-তাত্ত্বিক বিবেচনায় গ্যাস প্রাপ্তির উজ্জ্বল সম্ভাবনা নির্দেশ করে। নিকটতস্থ বিবিয়ানা গ্যাস ক্ষেত্রের বৈশিষ্টের সাথে তূলনা করে বাপেক্স ক্ষেত্রটির সম্ভাব্য মজুদ নির্ধারণ করেছে ২.৪৭ টিসিএফ আর ৭০% রিকভারি ফ্যাক্টর ধরলে উত্তোলণ যোগ্য গ্যাসের পরিমাণ দাঁড়াবে ১.৭৩৫ টিসিএফ। যদিও নিকটস্থ বিবিয়ানা গ্যাস ক্ষেত্রের বেলাতেও প্রথমে ২.৫ টিসিএফ মজুদের কথা বলা হয়েছিল, পরে সেটা বেড়ে ৪ টিসিএফ এর বেশী হয়েছে। সে হিসেবে অনেকেই ৪-৫ টিসিএফ গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনার কথা বলছেন। উল্লেখ্য USGS-পেট্রোবাংলার যৌথ একটি ষ্টাডি অনুসারে যে সুরমা বেসিন এলাকায় সুনেত্র অবস্থিত সেখানে এখনো অনাবিস্কৃত গ্যাসের পরিমাণ ১.৮ থেকে ৮.১৪ টিসিএফ হতে পারে।

বাপেক্সের মূল প্রস্তাব: গত ২৬ জুলাই ২০১০ বিদ্যুত, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত "সুনামগঞ্জ-নেত্রকোণা (সুনেত্র) ভু-গঠনের ভু-তাত্ত্বিক মূল্যায়ন"-এর উপর অনুষ্ঠিত কারিগরী সভায় বাপেক্সের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সুনামগঞ্জ-নেত্রকোণা জেলার মধ্যবর্তী অঞ্চলে একটি বিশেষ সম্ভাবনাময় ভুগঠন প্রাপ্তির ঘোষণা দেয়া হয়। সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে:

সিদ্ধান্ত নং ২: "ডিপিপি(প্রকল্প উন্নয়ণ প্রস্তাব) চূড়ান্ত করত: মার্চ-এপ্রিল ২০১১ এর মধ্যে সুনেত্র অনুসন্ধান কূপ নং ১ এর খননের কাজ শুরু করার লক্ষ্যে সকল কার্যক্রম গ্রহণ করা(Phase-I)।"

সিদ্ধান্ত নং ৩: "গ্যাস আবিষ্কৃত হলে একই ডিপিপি-এর অধীনে দ্বিতীয় পর্যায়ের (Phase-II)কার্যক্রম হিসেবে তিনটি উন্নয়ন কূপ খনন করা এবং প্রসেস প্ল্যান্ট ও পাইপ লাইন স্থাপন করা।"

উক্ত নির্দেশনার আলোকে ২০ অক্টোবর ২০১০ বাপেক্সের পরিচালক মন্ডলীর ২৮২ তম সভায়(সচিব, বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় যার সভাপতি) সুনেত্র গ্যাস ক্ষেত্র উন্নয়নের জন্য প্রথম পর্যায়ে(Phase I) একটি অনুসন্ধান কূপ খনন ও পরীক্ষণের জন্য গ্যাস ডেভেলাপমেন্ট ফান্ড থেকে ৭৭ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা এবং  ২য় পর্যায়ে (Phase II) ৩ টি উন্নয়ন কূপ খননের জন্য একই উৎস হতে ২০০ কোটি টাকা অর্থাৎ দুইটি পর্যায় মিলিয়ে মোট ২৭৭ কোটি ৩২ লক্ষ টাকার একটি Development Project Proposal বা ডিপিপি অনুমোদন করা হয় এবং মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পেট্রোবাংলায় প্রেরণ করা হয়। পেট্রোবাংলার নির্দেশনার আলোকে ডিপিপি'র কতিপয় সংশোধনপূর্বক ফেব্রুয়ারি ২০১১ তে অনুমোদনের জন্য বিদ্যুত, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। উক্ত ডিপিপি'তে প্রথম পর্যায়ের এই খরচের পরিমাণ  ৭৯ কোটি টাকার কথা বলা হয়েছে এবং ২য় পর্যায়ের খরচ ২০০ কোটি অর্থাৎ মোট ২৭৯ কোটি টাকার হিসেব দেয়া হয়েছে। এই অর্থ অবশ্য একবারে লাগবে না, মোট ৪টি অর্থবছরে এই অর্থ বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন পরিমাণে প্রয়োজন হবে। প্রথম পর্যায়ের কাজের জন্য ২০১০-১১ অর্থবছরে ৫৯ কোটি ৬৬ লক্ষ টাকা এবং ২০১১-১২ অর্থবছরে ১৯ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের জন্য ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১২৩ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৭৬ কোটি ১৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

বাপেক্সের ডিপিপি অনুসারে সুনেত্র গ্যাস ক্ষেত্রের ১ম পর্যায়ের অনুসন্ধান কূপ খনন ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ ২০১০ সালের জুলাই মাসে শুরু হয়ে ২০১২ এর জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা এবং ২য় পর্যায়ের ৩টি উন্নয়ন কূপ খননের কাজ ২০১২ এর জুলাই মাসে শুরু হয়ে ২০১৪ এর জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা। ২য় পর্যায়ের  শেষের দিকে ২০১৪ সালের মে মাসের মধ্যে অন্তত ১০০ মিলিয়ন কিউবিক ফুট বা ১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার কথা বলেছে বাপেক্স। কিন্তু এই কাজ সময় মতো শেষ হওয়ার প্রধান শর্ত হিসেবে বাপেক্স ডিপিপিতে উল্লেখ করেছে গ্যাস ডেভেলাপমেন্ট ফান্ড থেকে সময় মতো অর্থ পাওয়ার নিশ্চয়তা। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুসারে গ্যাস ডেভেলাপমেন্ট ফান্ডে ইতোমধ্যেই ১০০০ কোটিরও বেশি টাকা জমা হয়েছে ফলে সুনেত্র গ্যাস প্রকল্পের জন্য অর্থের সমস্যা হওয়ার কথা না। কিন্তু ভয়ংকর খবর হচ্ছে বাপেক্সের এই ১টি অনুসন্ধান কূপ ও ৩ টি উন্নয়ন কূপ খননের ডিপিপিটি বাতিল করে দেয়া হয়েছে।

মূল প্রস্তাব বাতিল ও দীর্ঘসূত্রিতার আয়োজন:

গত ০৬-০৭-২০১১ তারিখে জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রনালয় সভায় বাপেক্সের করা এই ডিপিপি'র অনুমোদন দেয়া হয় নি। বরং সিদ্ধান্ত নেয়া হয়:

সিদ্ধান্ত নং ৪.১:"১ ম পর্যায় (Phase -I) এর জন্য আলাদা ডিপিপি প্রণয়ন করতঃ এ বিভাগে প্রেরণ করতে হবে।'

সিদ্ধান্ত নং ৪.৭:"প্রকল্পের ১ম পর্যায়ের কাজের সফলতার ওপর ভিত্তি করে প্রকল্পের ২য় পর্যায়ের (Phase –I) ডিপিপি প্রণয়ন করে পেট্রোবাংলা এ বিভাগে প্রেরণ করবে। ২য় পর্যাযের ডিপিপি'তে ৩টি উন্নয়ন কূপ খননসহ গ্যাস প্রসেস প্ল্যান্ট এবং গ্যাস ক্ষেত্র হতে নিকটবর্তী জাতীয় গ্রাস গ্রীড পর্যন্ত সংযোগ লাইন স্থাপন ব্যয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে।"

লক্ষণীয়,দ্বিতীয় পর্যায়ের(Phase -II) জন্য আলাদা ডিপিপি তৈরির এই সিদ্ধান্তটি গত ২৬ জুলাই,২০১০ এ নেয়া সিদ্ধান্ত:৩ এর সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। নতুন এই সিদ্ধান্তের আলোকে গত আগস্ট' ২০১১ তে বাপেক্স হতে পুনরায় শুধু মাত্র একটি অনুসন্ধান কূপের জন্য ডিপিপি প্রস্তুত করা হয় যার প্রকল্প ব্যয় ৮৩.৬৪ কোটি টাকা।

এছাড়া সভায় গ্যাস উন্নয়ন তহবিল নিয়েও একটি সিদ্ধান্ত হয় যেখানে বলা হয়:'গ্যাস উন্নয়ন নীতিমালা সংশোধনের নিমিত্তে বিইআরসিসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিনিধিদের নিয়ে এ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটি সভা আয়োজনের ব্যবস্থা নিতে হবে।'(সিদ্ধান্ত নং ৪.৬)

পরবর্তিতে গত ৫/০৮/২০১১ তারিখে অনুষ্ঠিত এক সভায় বর্তমান গ্যাস উন্নয়ন তহবিলটি জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করা হয়। পেট্রোবাংলা ও বাপেক্সের সাথে সংশ্লিষ্টদের আশংকা এভাবে গ্যাস উন্নয়ন তহবিলটি জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের হাতে গেলে অহেতুক আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি হবে যার ফলে গ্যাস উন্নয়নে প্রয়োজনীয় অর্থ দ্রুত বরাদ্দের যে উদ্দেশ্য নিয়ে গত ২০০৯ সালে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন(বিইআরসি) কর্তৃক এই তহবিলটি তৈরি হয়েছিল সেটি ব্যাহত হবে। আর সুনেত্র প্রকল্পটি যেহেতু গ্যাস উন্নয়ন তহবিল এর উপর নির্ভরশীল সুতরাং একদিকে গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের নিয়ন্ত্রণ জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের হাতে নেয়ার পরিকল্পনা এবং অন্যদিকে বাপেক্সের মূল পরিকল্পনাটি দ্রুত অনুমোদন না করে উল্টো পৃথকভাবে শুধু অনুসন্ধান কুপের জন্য নতুন একটি ডিপিপি তৈরি করানোর উদ্দেশ্য হলো দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি করে পরে দ্রুত বাস্তবায়নের প্রয়োজন দেখিয়ে ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের মতো কোন প্রকল্পের আওতায় স্থলভাগের এই সম্ভাবনাময় গ্যাস ক্ষেত্রের উন্নয়ণের কাজও বিদেশী কোম্পানির হাতে তুলে দেয়া।

বিদেশী কোম্পানি ও বাড়তি খরচ: বাপেক্স সংশ্লিষ্টদের আশংকা হলো বাপেক্সের করা ডিপিপি থেকে Phase II বাদ দিয়ে শুধু Phase I এর একটি নতুন ডিপিপি তৈরি করে পেট্রোবাংলায় পাঠানোর উদ্দেশ্য হলো Phase II এর ৩ টি কূপ খননের কাজ রাশিয়ান কোম্পানি গ্যাজপ্রম(Gazprom) এর কাছে কন্ট্রাক্ট দেয়া যায়! উল্লেখ করা দরকার, ইতিমধ্যে পেট্রোবাংলা ফাস্ট ট্র্যাক প্রোগ্রামের আওতায় কোন রকম দরপত্র ব্যাতিরেকে সরাসরি গ্যাজপ্রমকে ১০ টি কূপ খননের যে প্রস্তাব দিয়েছিলো সেখানে পেট্রোবাংলা প্রস্তাবিত ৯০ কোটি টাকার বিপরীতে প্রতিটি কূপ খননের জন্য গ্যাজপ্রম দাবী করেছে ১৪৫.৭৮ কোটি টাকা! অথচ এক একটি কূপ খনন করতে বাপেক্সের গড়ে ৭০-৮০ কোটি টাকার বেশি লাগে না। সুনেত্র গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধান কূপের জন্য প্রস্তাবিত ৭৯ কোটি টাকার বাজেট ছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে বাপেক্সের নিজস্ব লোকবল ও রীগের মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন মোবারকপুর অনুসন্ধান কূপ খননে ৮৯.২৬ কোটি টাকা(গভীরতম কূপ), শ্রীকাইল-২ কূপ খননে ৮১.১২ কোটি টাকা, সুন্দলপুর কূপ খননে ৭৩.৬৫ কোটি টাকা(প্রকৃত ব্যায় ৫৫ কোটি টাকা) এবং কাপাসিয়া কূপ খননের জন্য বাপেক্সের ৭০.১৭ কোটি টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। এভাবে বিদেশী কোম্পানি সিসমিক সার্ভে থেকে শুরু করে অনুসন্ধান ও উন্নয়ন কূপ খনন পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রেই কয়েকগুণ বাড়তি অর্থ আদায় করে । যেমন প্রতি লাইন কি.মি দ্বিমাত্রিক ভূ-কম্পন জরীপ বা সিসমিক সার্ভের জন্য বিদেশী কোম্পানি যেখানে ৬ লক্ষ ৫৩ হাজার টাকা করে খরচ দেখায়, বাপেক্সের সেখানে খরচ হয় গড়ে ১ লক্ষ টাকা করে। সুনেত্র ক্ষেত্রের বেলায় মোট ২৫৯ লাইন কিমি দ্বিমাত্রিক সিসমিক সার্ভের জন্য বাপেক্সের মোট খরচ হয়েছে ৩.৫ কোটি টাকা অর্থাৎ প্রতি লাইন কিমি এ খরচ ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা। বিদেশী কোম্পানিকে দিয়ে এই কাজটি করানো হলে কমপক্ষে ১৭ কোটি টাকা লাগতো।

খরচের বিষয়টি ছাড়াও,বলা দরকার, স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের এমন কোন কাজ নেই যা বাপেক্স দক্ষতার সাথে স্বল্প খরচে সম্পন্ন করতে পারে না । ২ ডি এবং ৩ ডি সিসমিক সার্ভে থেকে শুরু করে গ্যাস অনুসন্ধান, কুপ খনন ও গ্যাস উত্তোলনের সকল কাজ বাপেক্স সফলভাবে শুধু নিজের ব্লকগুলোতেই করছে না, এমনকি বিদেশী কোম্পানিগুলোকেও সাবকণ্ট্রাকটর হিসেবে এই কাজগুলো করে দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়: বাপেক্স ফেনী-২ এ নাইকোর একটা অনুসন্ধান কুপ খনন করে দেয়, টাল্লোর হয়ে লালমাই ও বাঙ্গোরায় সিসমিক সার্ভের কাজ করে, চাঁদপুরে একটা কন্ট্রোলন পয়েন্ট   স্থাপন করে দেয় এবং বাঙ্গোরায় টাল্লোর একটা কুপও (ওয়ার্ক ওভার) খনন করে দেয়। তাছাড়া  বাপেক্সের সাফল্যের হারও বিদেশী কোম্পানির তুলনায় বেশি: বিদেশী কোম্পানিগুলো যেখানে প্রতি ৩ টি কুপ খননে ১ টি সাফল্য পেয়েছে বাপেক্স সেখানে প্রতি ১.৩৩ টি কুপ খননে ১ টি সাফল্য পেয়েছে এবং এই সাফল্য অর্জনের বেলায় অক্সিডেন্টাল ও নাইকোর মতো 'উন্নত প্রযুক্তি' ওয়ালা কোম্পানিগুলোর মতো মাগুরছড়া ও টেংরাটিলার ধাচে পরিবেশ ও সম্পদ বিনাশী দুর্ঘটনা একটিও ঘটায় নি! এসব বিষয় যদি বিবেচনায় রাখি তাহলে কেবল সুনেত্র নয়, বাংলাদেশের কোন গ্যাস ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সের বদলে বিদেশী কোম্পানিকে দিয়ে কোন ধরণের কাজ করানোর কোন যৌক্তিতা থাকে না। কাজেই বাংলাদেশের জন্য বিপুল সম্ভাবনাময় সুনেত্র গ্যাস ক্ষেত্রের সম্পূর্ণ কাজের জন্য বাপেক্সের নিয়োগ নিশ্চিত করে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেয়া জরুরী।

কল্লোল মোস্তফা : রাজনৈতিক কর্মী ও গবেষক।