প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদই অপরাধ – শির হারানো মানুষটি নিরাপরাধ প্রতিভাসিত হয়ে ওঠে রাষ্ট্রের গর্হিত অপরাধের কালিমায়!

কৌশিক আহমেদ
Published : 13 Oct 2011, 08:08 PM
Updated : 13 Oct 2011, 08:08 PM

দশই অক্টোবরের ডেইলী স্টারের খবরে জানা যায় আরো ৫জন বাংলাদেশীর মৃত্যুদন্ডের আদেশ হয়েছে যাদেরও হয়তো অচিরে শিরশ্ছেদ করা হবে। তবে অবস্থা দৃষ্টে সৌদিদের এই শিরশ্ছেদের ভয়াবহ আইনী ব্যবস্থার যে উদ্দেশ্য বলে প্রচার করা হয়, দৃষ্টান্ত স্থাপন, সেটা বরঞ্চ ব্যাক ফায়ার করছে মনে হয়। ভিডিওতে ছড়িয়ে পড়া শিরশ্ছেদের ঘটনা দেখে অপরাধীর জন্য সমবেদনা জন্মাচ্ছে মানুষের।

পৃথিবী পাল্টে গেছে চোদ্দশ বছরে চোদ্দ হাজার বার। এর মধ্যে মানুষ দেখেছে এমন ভয়াবহ অন্যায়ের দৃষ্টান্ত। যেখানে অন্যায়ভাবে একদল মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। দাঙ্গা, বিশ্বযুদ্ধ এবং এ শতাব্দীর প্রযুক্তির কল্যানে এখন এমন মৃত্যু উৎসব দেখা যাচ্ছে হরহামেশা। এসব ক্ষেত্রেই ভিকটিমরা নিরীহ আর হত্যাকারীরা অপরাধী হিসাবে সর্বজনে পরিচিতি পেয়ে এসেছে।

পরিবর্তিত এই সমাজ ব্যবস্থায় যখন মানুষকে মারার সরাসরি কোনো দৃশ্য দেখানো হয় – তখন তার পেছনে কোনো বিচারিক ব্যবস্থা থাকে না। থাকে অপরাধীর মুখ। আর রাষ্ট্র যখন অপরাধীর শাস্তি হিসাবে সেই একই মৃত্যু নকশা আঁকে এবং প্রচার করে দৃষ্টান্তমূলক হিসাবে, তার মেসেজও যায় ঘুরে।

Stand against Saudi for unequal human rights to stop the barbarism নামের ফেসবুক গ্রুপে প্রকাশিত এই ভয়াবহ ভিডিওটি দেখুন এবং বিচার করুন – এর পেছনে রাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থা যে ন্যায় সংরক্ষণের কথা বলে তার কোনো ছিটেফোঁটা দেখা যায় কিনা! এই দৃশ্য দেখার পরে পুরো বিচার প্রক্রিয়া ও এর সাথে জড়িত প্রশাসনকেই বরঞ্চ অপরাধী হিসাবে মনে হবে।

এমন প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদের এখন একটাই অর্থ দাঁড়ায় – তা হলো রাষ্ট্রিয় সন্ত্রাস, এবং অন্তর্নিহিত যে ব্যাখ্যা আমরা বুঝে নেই তা হলো এই শিরশ্ছেদই অপরাধ – আর শির হারানো মানুষটি বরঞ্চ নিরাপরাধ প্রতিভাসিত হয়ে ওঠে রাষ্ট্রের গর্হিত অপরাধের কালিমায়!

অপরপক্ষে এই শিরশ্ছেদের নামে সৌদি রাজতন্ত্র তাদের নিজস্ব জাতীয়তাবাদ ও সংস্কৃতি চাপিয়ে চলছে যা বিশ্বব্যাপী ঘৃণ্য মতবাদ হিসাবে পরিগণিত। এর ভেতরে না আছে ধর্মীয় অনুভূতি না আছে ঐশ্বরিক কিছু। সৌদী রাজতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণে থাকা মক্কা মদীনার মত পবিত্র ভূমি এবং এর সাথে জড়িত মানুষের আবেগ প্রতিনিয়ত লাঞ্ছিত হচ্ছে। এতে সৌদি মানুষের কোনো ক্ষোভ নাই, তাদের মুখ আক্ষরিক অর্থে তালা মেরে রাখা হয়েছে। আসুন তাদের মুখে প্রতিবাদের শ্লোগান জোগাই, ভাষা যোগাই – যেন তারাও ঘুরে দাড়াতে পারে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা প্রতিবাদ করবো না ততক্ষণ পর্যন্ত এই পবিত্র ভূমির সাধারণ জনগণ বুঝবে না সারা বিশ্ব তাদের কত ঘৃণার চোখে দেখে। সৌদী রাজতন্ত্র পৃথিবীর মধ্যে কতটা নিকৃষ্ট মানব হত্যাকারী।