সুপরিকল্পিতভাবে শিশুদের হিন্দি ও উর্দু শেখানো হচ্ছে

কৌশিক আহমেদ
Published : 19 Nov 2011, 06:36 AM
Updated : 19 Nov 2011, 06:36 AM

সিএন (কার্টুন নেটওয়ার্ক) নামে যে কার্টুন চ্যানেলটি বাংলাদেশ থেকে দেখা যায় তার বেশীরভাগ বিজ্ঞাপনে পাকিস্থান শব্দটা আছে এবং উর্দু শোনা যায়। বোঝা যায় এটা চ্যানেলটার পাকিস্থানী ভার্সন। ডিজনী, নিক, এনিম্যাক্স এসব চ্যানেল ইন্ডিয়ান এবং হিন্দীর আধিপত্য। আমাদের দেশের শিশুরা কার্টুন চ্যানেল বলতে এসব চ্যানেলকেই বোঝে ও চেনে। এবং দেখা যাচ্ছে এর সবগুলোর মাধ্যমেই সে শিখছে হিন্দি অথবা উর্দু ভাষা। এবং ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে যে এসব শিশুরা হিন্দি বা উর্দু যে বাংলা থেকে পৃথক একটা ভাষা তা বুঝে উঠতে পারে না। এসবই আমার পরিকল্পিতভাবে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে সাংস্কৃতিকভাবে বাঙালী ইতিহ্য থেকে সরিয়ে দেবার নীল নকশা মনে হচ্ছে। একটা দেশকে পঙ্গু বানিয়ে দেবার জন্য যে ব্রেন ড্রেন দরকার সেটা সম্পন্ন হচ্ছে আমাদের চোখের সামনে, এবং আমরা হাত পা গুটিয়ে বসে আছি। এর দায় দেশের সরকারকে বহন করতেই হবে।

দেশে এখন বিশের অধিক টিভি চ্যানেল। দর্শকদের মধ্যে নিরবিচ্ছিন্ন ভোক্তা শিশু ও গৃহিণী। মধ্যবিত্তের ঘর ছাড়িয়ে এখন নিম্ন আয়ের মানুষের ঘরেও টিভি আছে। এবং আগে যেটা ধারণা করা হতো হিন্দি টিভি সিরিয়ালগুলো এদেশের মধ্যবিত্তরা দেখে থাকে, সে ধারণা পরিবর্তনের সময় এসেছে। নিম্ন আয়ের মানুষের ঘরেও হিন্দি সিরিয়াল স্বরাজ তৈরী করেছে। এতগুলো দেশী টিভি চ্যানেল দেশে থাকার পরেও বিদেশী চ্যানেলের গড় দর্শক বেশী হবে বলে অনুমান করি। মূলত নন-স্যাটালাইট টিভি দর্শকদের পরিমাণ এত কমে যাচ্ছে যে টিভি দর্শক সম্বন্ধে প্রচলিত তথ্য ও উপাত্তের ব্যাপকমাত্রায় অমিল লক্ষ্য করা যায়। ফলে চ্যানেল হচ্ছে দেশে – দর্শক যাচ্ছে বিদেশে।

দর্শক বিদেশী চ্যানেল থেকে যে মাত্রায় ভ্যারিয়েশন লাভ করে, তেমন কিন্তু দেশী উদ্যোক্তারাও করতে পারে। এখানে সবার একটা কমপ্লিট প্যাকেজ টিভি তৈরীর ঝোঁক, যত বড় বড় কোম্পানীই হোক না কেনো তারা চায় তাদের চ্যানেলে থাকবে সব – নাটক, খবর, খেলা, কার্টুন, ধর্ম থেকে শুরু করে এভিরিথিং। ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভিতে সকাল বেলা কুরআন তেলওয়াত তো রীতিমত বিটিভির কথা মনে করিয়ে দেয়, এ যেনো তার নতুন ভার্সন। আউইজুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ বলে খবর শুরু হওয়ার মত ফানি-ফ্যানটাসী।

এসব উদ্যোক্তাদের কারোই একটা পূর্নাঙ্গ কার্টুন চ্যানেল বা স্পোর্টস চ্যানেল তৈরীর দিকে মনযোগ নেই। ইনফ্যাক্ট তাদের মাথার ভেতরে যে পুঁজিবাদি মস্তিস্ক রয়েছে তার ভেতরেও এটার বিজনিস ভায়াবিলিটি অনুধাবন করতে অক্ষমতা রয়েছে। অথচ শিশুদের উদ্দেশ্য করে নির্মিত চকলেট ও এর বাহারী বিজ্ঞাপন দেখে অনুমান করতে পারার কথা যে কার্টুন চ্যানেল কতটা ব্যাপক ব্যবসা বান্ধব হতে পারে।

যাই হোক – আমার কথা হচ্ছে সরকার করছে কি? কেনো উপরোক্ত কার্টুন চ্যানেলগুলোকে বাংলাদেশী ভার্সন তৈরী করতে বাধ্য করছে না এটলিস্ট দেশের মাথামোটা ব্যবসায়ীরা যদি পূর্নাঙ্গ কার্টুন চ্যানেল তৈরীতে আগ্রহী না-ই হয়?

***
ফিচার ছবি: আন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত