সরকারি টাকা হাতিয়ে নেওয়া চোরদের বিচার হবে না কি?

কৃষ্ণেন্দু দাস
Published : 29 April 2018, 10:37 AM
Updated : 29 April 2018, 10:37 AM

আমরা সাধারণ জনগণ অনেকেই জানি না যে, বাজার থেকে একটা এক টাকার লজেন্স কিনলেও ঐ এক টাকার পাঁচ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট সরকারি রাজস্ব খাতে জমা হয়।

বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ভ্যাট নেওয়া হয় প্রাইভেট কারে; ২০০ শতাংশ ভ্যাট। খাদ্যপণ্য,  বস্ত্রপণ্য,  চিকিৎসা সেবার ভ্যাট, আমদানি শুল্ক, রপ্তানী শুল্ক, আয়কর, জমি-খাজনা ইত্যাদি প্রত্যেকটা সেক্টরে রয়েছে রয়েছে কর বা ট্যাক্স। মূল্য সংযোজন করকে (Value added tax)  সংক্ষেপে ভ্যাট বলা হয়।

রাজস্ব খাতের সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন দেওয়া হয় ঐ জনগণের ভ্যাটের টাকা দিয়েই। প্রত্যেকটা সরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার জন্য সরকারের কর্মচারীদের বেতন ছাড়াও অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করতে হয়। আমি বর্তমানে একটি সরকারি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের শিক্ষক পদে কর্মরত আছি।

আমাদের ইন্সটিটিউটের মত দেশের সবগুলো টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটেই ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য ল্যাবরেটরি, কেমিক্যালস, ইলেকট্রনিক্স, ইলেকট্রিক্যাল সামগ্রী, কম্পিউটার সফটওয়্যার ও ব্যবহারিক কাজ সম্পন্ন করার জন্য আনুসাঙ্গিক কাঁচামাল রয়েছে।

আর এ সকল ল্যাবে ক্লাস সম্পন্ন করার জন্য খরচযোগ্য কাঁচামাল ক্রয়ের জন্য সরকারি টাকা বরাদ্দ থাকে,  যার অধিংকাংশ টাকাই কলেজ কর্তৃপক্ষ ব্যয় করে না। এছাড়া কোনো ব্যবহারিক যন্ত্র মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও টাকা বরাদ্দ থাকে,  যেটা অধিকাংশ জায়গাতেই ব্যয় করা হয় না।

প্রত্যেকটা কলেজে বা সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেমিষ্টার ফাইনাল অথবা ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ সকল পরীক্ষার ব্যয় বাবত একটা বড় অংকের টাকা কলেজ কর্তৃপক্ষের নিকট আসে। এই বরাদ্দের পরিমাণ কলেজের শিক্ষার্থী সংখ্যার উপর ভিত্তি করে ১০ লাখ টাকা হতে  ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এখানে কলেজ কর্তৃৃৃৃপক্ষ একটা বড় ধরনের চুুুুরি করতে সক্ষম হয়।

এ ছাড়া যে সকল দিবসগুলো সরকারিভাবে পালন করা হয়, প্রত্যেকটা দিবস  পালন করার জন্য ২০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত সরকারি কোষাগার থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষকে দেয়া হয়, যার সিংহভাগ অর্থই খরচ করা হয় না।

সরকারি হাসপাতালের চিত্রও একই। সরকারি হাসপাতালে রোগীর শয্যা, ওষুধ, ডায়াগনষ্টিক সামগ্রী, বরাদ্দকৃত টাকা থেকে শুরু করে একটা বৃহৎ অংকের টাকা চুরি করা হয়।

সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীর অপারেশনের সিরিয়াল পেতে দালালের খপ্পরে পড়েন নাই এমন লোক কিন্তু খুঁজে পাবেন না। সরকারি ব্যাংকগুলোতে লোন উত্তোলন ও পরিশোধে বড় অংকের ঘুষের লেনদেন হয়ে থাকে। আর থানা পুলিশের কথা তো সবারই জানা আছে।

আমরা সাধারন জনগণ প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে একটা মুরগি চুরি হলেই তুলকালাম কাণ্ড বাধিয়ে ফেলি আর সরকারি খাত থেকে কোটি কোটি টাকা চুরি হলেও এক সেকেন্ড ভেবে দেখি না যে ঐ চুরি হওয়া টাকার মধ্যে আমাদের সাধারণ জনগণের  প্রত্যেকটা পরিবারের ব্যয়কৃত টাকার অংশ রয়েছে।

যারা বিভিন্ন দপ্তরে সরকারি চাকুরিতে নিযুক্ত আছেন, তাদের বহুজনই এভাবে সরকারি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এদের ধরার মত কেউ কি নেই?