গত ১৪ মে ঠাকুরগাঁও শহরের সবচেয়ে ব্যয়বহুল 'রোজ' হোটেলটিতে গিয়েছিলাম মধ্যাহ্নভোজের উদ্দেশ্যে। মেনুতে মাছ-মাংসের পদের দাম জানলাম – ইলিশ মাছ প্রতি পিস ১৫০ টাকা, রুইমাছ প্রতি পিস ১২০ টাকা, খাসি ১০০ টাকা ইত্যাদি।
আমি খাসির মাংসের বেছে নিলাম দুপুরের খাবারে। ওখানে খাসি আবার দুই ভাবে রান্না হয় – একটা ছোট টুকরা করে, অন্যটা বড় টুকরা করে। বড় টুকরা নিলে এক টুকরা মাংস পাওয়া যাবে, আর ছোট নিলে হাড়গোড় মিলিয়ে ছোট ছোট চার-পাঁচ পিচ পাওয়া যাবে।
আমি ওয়েটারকে ছোট পিসের খাসির মাংসই দিতে বললাম। ওয়েটার একটা বাটিতে তা নিয়ে আসলো। বাটিটা টেবিলের উপর রাখার পর দেখলাম, বাটির ভিতরে শুধু খাসির ঝোল দেখা যাচ্ছে, মাংসের উপরে ঝোল এমনভাবে দেয়া হয়েছে, যেন মাংস দেখা না যায়।
আমি বাটির মধ্যে কী আছে পুরোপুরি নিশ্চিত না হয়ে, বাটির পুরো ঝোল ভাতের মধ্যে ঢেলে দিতে দেখলাম যে খাসির ভুঁড়ির টুকরো ও হাড়ের টুকরো, কোনো ভালো মাংস নেই। আমি তো অত কিছু না বুঝেই ঝোল-ভুঁড়ি সব ভাতের মধ্যে ঢেলে দিয়েছি। এখন আর পাল্টানোর উপায় নেই। ওই দিয়েই কোনোমতে খাওয়া শেষ করলাম।
পরে ওদের মাংস রান্না করে যেখানে রাখা আছে সেখানে সরেজমিনে গিয়ে দেখলাম, পাশাপাশি একটা ট্রেতে খাসির মাংস অন্য ট্রেতে খাসির ভুঁড়ি রাখা। আমাকে ঐ ভুঁড়িই মাংস বলে চালিয়ে দিয়েছে ওরা।
এভাবেই ভালো খাবার দেখিয়ে মানুষকে বোকা বানিয়ে নিম্নমানের খাবার প্রতিনিয়ত খাওয়াচ্ছে। রাতের বেলায় আপনি ঠাকুরগাঁও শহরে অবস্থিত যে কোনো ভাতের হোটেলে যান না কেন সবগুলোতেই দুপুরের রান্না করা বাসি মাছ-মাংস পাবেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ও অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা বাধ্য হয়ে এই সব অখাদ্য প্রতিনিয়ত খেয়ে যাচ্ছে।
এছাড়া এদের তৈরীকৃত সিঙ্গাড়া, পুরি, মোগলাই সবই নিম্নমানের। পুরিতে বাসি ডাল ব্যবহারের প্রমান পাওয়া গিয়েছে। যারা খাবার পরিবেশন করে তারা প্রায় সকলেই অপরিচ্ছন্ন।
ভ্রাম্যমান আদালত যখন পরিদর্শনে যায়, তখন হয়ত কোনো কৌশলে পার পেয়ে যায়। কিন্তু মানুষকে বোকা বানিয়ে নিম্নমানের খাবার বিক্রি করে হাজার হাজার টাকা আদায়কারী এই হোটেল বাণিজ্য কি প্রশাসনের নজরে আসবে না?