স্মারক ইট ক্রয়: ব্লগারদের বিজয় মাস সূচনা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে

আইরিন সুলতানাআইরিন সুলতানা
Published : 2 Dec 2012, 05:32 PM
Updated : 2 Dec 2012, 05:32 PM

ব্লগার ইলিয়াছ চৌধুরীর পোস্ট থেকেই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ইট কেনার মাধ্যমে জাদুঘরের নির্মাণ কার্য সাধারণ নাগরিকের সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে জানাশোনা হল। ব্লগাররা এ প্রসঙ্গে আলাপে বসেছিল। আহবান ছিল ব্লগার নাহুয়াল মিথের পক্ষ থেকে। ব্লগারদের উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর গড়ে উঠুক আমাদের উপার্জিত অর্থে..শ্রমে…চেষ্টায়..। কী-কিভাবে-কতটুকু করা সম্ভব ব্লগারদের পক্ষে, এসব ছিল সময়-সুযোগ মত আড্ডা-আলাপের [লিংক] গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সে সময় ব্লগার নাহুয়াল মিথের সাড়া ফেলা একটি পোস্ট শিরোনাম ছিল – দেবেন মাত্র ৪টি টাকা?। সাগ্রহে অনুদান তৎপরতায় সোশ্যাল মিডিয়াকে সচেতন করতে সময়-সুযোগ মত পোস্ট দিয়ে যাচ্ছিল ব্লগারারা, সেই সম্মিলিত আহবান – আসুন সবার সহযোগিতায় গড়ে তুলি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।

ব্লগারদের জীবিকা-জীবনের চাপে আলোচনাগুলো মাঝে মাঝে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত একাকী হয়ে উঠছিল। যদিও ভাসতে থাকা আশার ভেলার হাল ধরতে এগিয়ে আসছিল কেউ না কেউ। ব্লগার জাহেদ-উর-রহমান -ও আমাদের চেতনার দোরগোড়ায় ঢং ঢং করে কড়া নেড়ে বলে গিয়েছিলেন কমপক্ষে একটা ইট – শুরু হোক নতুন পথচলা

চারাগাছে পুনরায় নিড়ানি লাগলো। রবিবার ১১ নভেম্বর ২০১২, সন্ধ্যা ৫:৪৩, ব্লগে প্রকাশিত হল সহজসরল অথচ দায়িত্বশীল-আবেগপূর্ণ আহবান। ব্লগার মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধূরী একেবারে দিন-তারিখ ধার্য করেই আহবান জানালেন- আসুন সবাই মিলে একটি ইট কিনি। পোস্ট পড়ে মনে হল, বিশাল কোন লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলার আকাঙ্খা নিয়ে নয়, বরং সামান্য নিয়ে সকলকে সাথে রাখার একটি আন্তরিক প্রচেষ্টা।

কথা ছিল, বিজয়ের মাসের প্রথম দিনই জাদুঘরে অন্তত একটি ইট ব্লগাররা কিনবে। ব্লগাররা তাদের কথার সম্মান রেখেছে পূর্ণ আবেগ দিয়ে। সামান্য সামান্য করে আর্থিক অনুদান যুক্ত হয়ে একটি অদৃশ্য গাঁথুনি গড়ে উঠছিল সকলের মাঝে। মোত্তালিব দরাবারী, বিন্দুবিসর্গ, নুরুন্নাহার শিরীন, সুলতান মির্জা, জিনিয়া, কৌশিক আহমেদ, ইলিয়াছ চৌধুরী, নীলকণ্ঠ জয়, মজিবর প্রত্যেকেই যেন একক নয়, একাধিক ব্লগারের পক্ষ থেকে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। বিশেষত, ব্লগার জিনিয়ার আবেগ শ্রদ্ধা করার মত। প্রবাসীরা দেশের জন্য ভাবেন, কাঁদেন। জিনিয়া যেন সকল প্রবাসীদের চেতনাকে ব্লগে তুলে আনল তার সম্পৃক্ততায়। একাই একটি ইট কেনার সুযোগ থাকা সত্বেও, সে বেছে নিল যূথবদ্ধতা। সকলেই যেখানে খেদোক্তি করে, বাঙালি এক থাকতে পারে না, সেখানে জিনিয়া আপ্লুত হয়ে উঠেছিল, সবার সাথেই তার অংশগ্রহণ মিলেমিশে একাকার হয়ে যাক।

ইলিয়াছ চৌধূরী মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে নিয়েছিলেন। কর্তৃপক্ষ ব্লগারদের সাথে আলাপ করতে আগ্রহী হলেন। প্রস্তাবিত দিনের আপডেট জানিয়ে দিলেন ইলিয়াছ চৌধূরী – ১লা ডিসেম্বরে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে যাচ্ছে ব্লগাররা, আপনিও আসুন

নির্ধারিত সময় ছিল সকাল ১১টা। কিন্তু সকাল ৯:৩০টাতেই পৌঁছে যান ব্লগার নীলকণ্ঠ জয়। আজকের প্রজন্মের অনুপ্রেরণা শ্রদ্ধেয়া নুরুন্নাহার শিরীন আপাও পৌঁছে যান। তারপর ইলিয়াছ চৌধূরীও আসেন। আসের ব্লগার মজিবর। নীলকণ্ঠ জয়ের হাতেই স্মারক ইট নিবন্ধন ফর্ম পূরণ হয়। এর মাঝে ব্লগারদের সাথে যোগ দেন রিপোর্টার মামুন। কিছুক্ষণ পরেই ব্লগারদের মাঝে উপস্থিত হন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক এবং মহাব্যবস্থাপক মাহাবুবুল আলম। ব্লগ, সোশ্যাল মিডিয়া, ব্লগারদের তৎপরতা ইত্যাদি নিয়ে জানতে-বুঝতে চান তারা। আনন্দিত হন, আজকের প্রজন্মের উদ্দীপনা থেকে। আশস্ত হন অগ্রজদের আশীর্বাদ সাথে আছে জেনে। আলাপের মাঝে উপস্থিত হন ব্লগার সুলতান মির্জা।

সাদামাঠা কিন্তু ভীষণ স্বতস্ফূর্ত আর আন্তরিকভাবে দু'টো স্মারক ইট কেনার অর্থ তুলে দেয় ব্লগাররা জাদুঘর কর্তৃপক্ষের হাতে। ১লা ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বমোট জমা হয়েছিল ২১,১০০ টাকা। ২০ হাজার টাকার দু'টো ইট নিবন্ধনের পর, বাকি ১,১০০ টাকা সাধারণ তহবিলের জন্য প্রদান করা হয় ব্লগারদের পক্ষ থেকে।

[ছবি ক্যাপশন: নতুন জাদুঘর নির্মান অনুদান ফরম]

[ছবি ক্যাপশন: ব্লগারদের পক্ষ থেকে ফরম পূরণ করছেন ব্লগার নীলকণ্ঠ জয়]

[ছবি ক্যাপশন: ব্লগারদের পক্ষ থেকে ফরম পূরণ করছেন ব্লগার নীলকণ্ঠ জয়। সাথে রয়েছেন সতীর্থ ব্লগাররা]

[ছবি ক্যাপশন: ব্লগার মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধূরী ও ব্লগার মজিবর রহমান]

[ছবি ক্যাপশন: ব্লগার মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধূরী ও ব্লগার নুরুন্নাহার শিরীন]

[ছবি ক্যাপশন: একটি রশিদ ২০ হাজার টাকার দু'টো ইট নিবন্ধনের জন্য, অপর রশিদটি বাকি ১,১০০ টাকা সাধারণ তহবিলের জন্য প্রদানের জন্য]

[ছবি ক্যাপশন: ব্লগারদের সাথে আলাপ বিনিময় এর পর চা-সিঙ্গারার এক ফাঁকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক এবং মহাব্যবস্থাপক মাহাবুবুল আলম]

১লা ডিসেম্বর উপস্থিত ব্লগারদের প্রায় অনেকেই একে অন্যকে প্রথমবার সাক্ষাৎ করলেন, ব্লগের বাইরে। তাও এমন একটি ইতিবাচক কারণে। ব্লগাররা বিজয়ের মাস সূচনা করল চেতনায় ভাস্মর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে। এই চেতনা সমুন্নত থাকুক। ছড়িয়ে পড়ুক। উদ্বুদ্ধ করুক আরো অনেককে।

না বললেই নয়, তাই ব্লগার নাছির মাহমুদ এর মত বলেই ফেলি অভিবাদন ব্লগারদের!