আইরিন সুলতানাআইরিন সুলতানা
Published : 6 March 2014, 06:39 PM
Updated : 6 March 2014, 06:39 PM

"সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় না জানি" – কবি আবদুল হাকিম

স্বয়ং কবি সরাসরি বেজন্মা/জারজ শব্দ ব্যবহার না করলেও তিনি জন্মের ঔরস নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। গ্রামে-গঞ্জে মুখ খারাপ হলে বলে বসার চল আছে, "উমুকের জন্ম ঠিক হয় নাই"! সমাজে যাদের জন্ম ঠিক হয় না, তাদের বেজন্মা/জারজ বলে।

বিগত কয়েকদিনে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ে সর্বাধিক বার ব্যবহৃত শব্দটি ছিল 'বেজন্মা', 'জারজ' এবং নব্য গঠিত শব্দ 'পারজ'। অনেক ছেলে-মেয়ের ছবি শেয়ার করে এইসকল শব্দ উপমা হিসেবে বর্ষিত হয়েছে।

রক্ষণশীল সমাজে বেজন্মা এবং জারজ -দের জীবন শাপিত হয়। এরা মূলত অবৈধ সন্তান তথা পিতৃপরিচয়হীন। সামাজিক স্বীকৃতি বহিভূর্ত সম্পর্কের বাইরের যে কোন সম্পর্ক 'নাজায়েজ'। আর সে সম্পর্কের ফলে ভূমিষ্ঠ পাপ হলো বেজন্মা তথা জারজ।

জারজদের খুঁজে পাওয়া যায় ডাস্টবিনে। বেঁচে গেলে বস্তিতে। এই সব বেজন্মাদের প্রগতিশীলরা দয়া করে পথশিশু, পথকলি, টোকাই এর মত বাহারি নামের গোত্রভূক্ত করেন। আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে, এইসব নামপরিচয়হীন শিশুদের জন্য আমাদের বড় দরদ। কিন্তু আমাদের আলাপে, গালিতে, লেখাতে ব্যবহৃত বেজন্মা, জারজ শব্দের উচ্চারণ কালে, লেখার বেলায় আমাদের চোখে-মুখে যে অভিব্যক্তি ফুটে ওঠে, তাতে বোঝায় যায় আমাদের অন্তরের অন্তস্থলে "বেজন্মা", "জারজ" -দের প্রতি কতটা তীব্র ঘৃণা পোষন করি আমরা।

সোশ্যাল নেটওয়ার্কারদের দেশপ্রেমিক হয়ে ওঠার মহৌৎসবে সামাজিক দেশপ্রেমিকদের জারজ হান্টের মত রাতদিন বেজন্মা-জারজ সনাক্তকরনে মেতে থাকা প্রমাণ করে এই সব "সামাজিক মুক্তমনা" -রাও জারজ-বেজন্মাদের সমাজের কীট হিসেবেই মনে করে।

১৯৭১ সালে একটা নতুন দেশ-বাংলাদেশ জন্ম নিয়েছিল। ১৯৭১ -এ আরো জন্ম নিয়েছিল অসংখ্য জারজ। আরো সঠিক করে বললে, পাকিস্তানি বেজন্মা-জারজ। এদেরকে প্রকৃতপক্ষেই "পারজ" বলা যায়।

আমরা যত দেশপ্রেমি হই না কেন, ৪৩ বছর পরে ৪ লক্ষ নারীর জন্য যতই কেঁদেই বুক ভাসাই না কেন, নগ্ন সত্যটি হলো, ১৯৭১ -এ বীরাঙ্গনাদের এই সমাজ তো দূরের কথা নিজ পরিবারই গ্রহণ করেনি। কতশত বীরাঙ্গনাদের পূনর্বাসন হয়েছিল নীরবে-নিভৃতে। প্রসব বেদনায় চিৎকার করতে পারেনি কতশত নারী। গোপনে "পারজ" জন্মদান করেছিল জীবিত বীরাঙ্গনারা। সদ্যজাত পাকি-জারজের তথা "পারজ" এর মুখ দেখে বীরাঙ্গনা মায়ের অনুভূতি কেমন ছিল?

এই সমাজে নিজেদের জারজদেরই জায়গা নেই, তাই পাকি জারজদের পুনর্বাসিত করা সম্ভব ছিল না।

এ সমাজে জারজরা পঙ্কিল। এখানে কেবল দেশপ্রেমিকরাই সিনা টান করে ফেসবুকিং করার অধিকার রাখে।