পিডোফেলিয়া, পর্নোগ্রাফি ও শিশু পর্নোগ্রাফি আইন

আইরিন সুলতানাআইরিন সুলতানা
Published : 25 July 2014, 10:13 AM
Updated : 25 July 2014, 10:13 AM

কোন সংবাদটি আমাদের পীড়িত করছে বেশি? বাংলাদেশে শিশুপর্নো-বাণিজ্য? নাকি একজন শিশুসাহিত্যিক টিপু কিবরিয়ার শিশুপর্নো-বাণিজ্যে সংশ্লিষ্টতা? কোনো সন্দেহ নেই দ্বিতীয় খবরটি আমাদের ভয়াবহ নাড়া দিয়েছে। তবে বাংলাদেশ পর্নোগ্রাফিমুক্ত, এমন ধারণা কারও থাকলে তাকে অসচেতন নাগরিক বলা চলে। একটা বুলেট প্রশ্ন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিও। সব সংবাদেই এসেছে, ইন্টারপোলের রিপোর্টের পরই বাংলাদেশ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তদন্তে নামে এবং টিপু কিবরিয়াকে তার শিশুপর্নো উৎপাদন ডেরায় হাতেনাতে আটক করে।

আশ্চর্যজনক হল, এদেশে শিশুপর্নোর পেশাদার চক্র আছে, এদেশ থেকেই শিশুপর্নো পাচার হচ্ছে, এদেশের শিশুদের পর্নোগ্রাফি নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে, অথচ আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়ে সজাগ-সক্রিয় নয় কেন?

বিকারগ্রস্ত যৌনতায় শিশুদের অপব্যবহার নতুন কিছু নয়। যেমন, বিলুপ্ত ঘেটুদলের, বিশেষত বালকদের যৌননিপীড়ন করা হত। যখন অনলাইন প্রযুক্তিনির্ভরতা ছিল না, তখন সিনেমা হলে 'কাটপিস' জুড়ে পর্নোগ্রাফি চলেছে। টু-জি প্রযুক্তি বিস্তারকালে উপযুক্ত আইনি কাঠামো না থাকায় সাইবার ক্যাফে, মোবাইল ফোন, অনলাইন সাইটে পর্নোগ্রাফি ছড়াতে থাকে দুষ্টক্ষতের মতো। এর ধরন দুটো– অ্যামেচার পর্নোগ্রাফি ও পর্নোগ্রাফি সিন্ডিকেট। অ্যামেচার পর্নোগ্রাফিতে নারীর অসম্মতিতে মোবাইলে, গোপনে ধারণকৃত ভিডিও আপলোড করে নারীর পারিবারিক-সামাজিক অবস্থান হেয় করার চেষ্টা থাকে। পর্নোগ্রাফি সিন্ডিকেট মূলত শক্তিশালী পর্নোগ্রাফি বাণিজ্যচক্র।

ধরণ যাই হোক না কেন, যৌনবিকারগ্রস্ত ব্যক্তিরা সহজেই এসব অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ে– পর্নো ভোক্তা হিসেবে, পর্নোব্যবসায়ী হিসেবে। গুগলে 'বাংলায়' অনেক ধরনের কী-ওয়ার্ড খুঁজতে গেলে যে ধরনের সার্চ রেজাল্ট আসে তা বিব্রতকর। পর্নোর লিখিত (বাংলায়) সংস্করণ যাকে 'চটি' বলা হয় তা অনলাইনে মহামারির মতো বিস্তৃত। ফেক্সিলোডের মতো মোবাইলে পর্নোগ্রাফি লোড করে নেওয়া যায়।

জেলা-উপজেলা পর্যায়ের আইন-শৃঙ্খলাজনিত সংবাদগুলোতে বহুবার উঠে এসেছে স্কুল-কলেজগামী মেয়েদের আপত্তিকর ছবি মোবাইলে ধারণ করে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা। পরিণতিতে ক্ষতিগ্রস্ত মেয়েদের বেছে নিতে হয়েছে আত্মহননের পথ। গ্রামাঞ্চলে ও শ্রমিক শ্রেণির বিনোদনে পর্নো সহজ্যলভ্য হয়ে যাওয়ায় পর্নো-আসক্ত কমিউনিটি গড়ে উঠছে ক্রমাগত।

শিশুরাও এই আসক্তিমুক্ত নয়। বাংলাদেশের গণমাধ্যম গবেষণায় উঠে এসেছে এক ভয়ংকর পরিসংখ্যান। ৮২ শতাংশ শিশু মোবাইলে পর্নোগ্রাফি দেখে থাকে। ক্লাসের মাঝে মোবাইলে পর্নোগ্রাফি দেখে শতকরা ৬২ জন শিশু। পর্নোগ্রাফি আসক্তি উঠতি বয়সের এই শিশুদের মানসিক ভারসাম্যে বিঘ্ন ঘটাবে তো বটেই, অনুসন্ধিৎসু আচরণ এদের 'ভিকটিম' হওয়ার পথ করবে সুগম।

সুনির্দিষ্টভাবে শিশুদের সঙ্গে যৌনাচার প্রসঙ্গে মেডিকেল সায়েন্স পিডোফেলিয়া (Paedophilia) টার্মটি ব্যবহার করে থাকে। পিডোফেলিয়া হচ্ছে শিশুদের প্রতি তীব্র যৌনমনোকাঙ্ক্ষা, যা অবশ্যই মানসিক বিকারগ্রস্ততা। যারা পিডোফাইল (Paedophile), তারা চাইল্ড পর্নোগ্রাফির ওয়েবসাইট ছাড়াও ফেসবুকে শিশুদের প্রোফাইল, ছবি থেকে তাদের পরবর্তী শিকার বেছে নেয়। মিশ্র চরিত্রের পিডোফাইল বয়স্ক এবং শিশু উভয়ের সঙ্গে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করে থাকলেও, এমন পিডোফাইল আছে যারা কেবলমাত্র শিশুদের সঙ্গে যৌনসম্পর্কে আগ্রহী হয়।

বস্তুত শিশুরা পিডোফাইল দ্বারা যৌননির্যাতনের (Child molestation) শিকার হয়। আন্তর্জাতিক গবেষণা বলে, আপনার প্রতিবেশিটিও একজন পিডোফাইল হতে পারে। ছেলেশিশু এবং মেয়েশিশু উভয়েই পিডোফাইল দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। ২০০৩ সালে ব্রিটিশ পুলিশের একটি বিশেষ দল জানিয়েছিল, তারা মাত্র ৪ সপ্তাহে ১০০ জনকে শিশুপর্নোগ্রাফি ডাউনলোডকালে গ্রেপ্তার করেছে। মুম্বাইতে এক সুইস দম্পতি পুলিশ কর্তৃক ধৃত হয়, যারা বস্তির ছেলেমেয়েদের আপত্তিকর ভঙ্গিমায় ছবি তুলতে বাধ্য করত। এ সব ছবি বিশেষত পিডোফাইলদের জন্য তৈরি পর্নোসাইটগুলোতে প্রকাশিত হত।

ব্রিটেনের আইনি ইতিহাসে অপারেশন ওরে (Operation Ore) কে সর্ববৃহৎ অপরাধ তদন্ত বলে গণ্য করা হয়। এই তদন্তে অসংখ্য ক্রেডিট কার্ড চিহ্নিত হয়েছিল, যেগুলো শিশুপর্নোগ্রাফি ক্রয়ে ব্যবহৃত হত। এই তদন্তে সন্দেহভাজন তালিকায় পুলিশ অফিসার, ডাক্তার, সেলিব্রেটিরাও ছিল। ২০১২-২০১৩ সালের দিকে অস্ট্রেলিয়ায় একটি আন্তর্জাতিক চাইল্ড পর্নোগ্রাফি তদন্ত টিম ২৫ থেকে ৭২ বছর বয়সী ৩৮৪ জন অপরাধীকে আটক করে যাদের মধ্যে ডাক্তার, নার্স, এমনকি যাজকও ছিল। সাড়ে তিন লাখ স্থিরচিত্র এবং ৯০০০ ভিডিওচিত্র জব্দ করা হয় তদন্তে। ভারতে একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদবির আর্মি অফিসারও চাইল্ড পর্নোগ্রাফিতে জড়িত থাকায় ধৃত হয়।

শিশু পর্নোগ্রাফির দ্রুত বিস্তার জাপানকে নাজুক পরিস্থিতিতে নিয়ে গেছে। ২০১০ সালে জাপানে শিশুপর্নোগ্রাফির হার ছিল ৪০ শতাংশ। ইইউ-এর জরিপ মতে, ২০০৮ সালে ১০০০ বাণিজ্যিক ও ৫০০ অবাণিজ্যিক শিশুপর্নো সাইট চিহ্নিত করা হয়। প্রযুক্তির সহায়তায় বিকারগ্রস্তরা যৌনবৈচিত্র্য খুঁজে নিচ্ছে পর্নোসাইটগুলোতে। শিশুপর্নো বা চাইল্ড পর্নোগ্রাফি নিয়ে গড়ে ওঠা শক্তিশালী সিন্ডিকেট এভাবে তাদের নেটওয়ার্ক প্রসারিত করছে।

আন্তর্জাতিক তথ্য-উপাত্তে পিডোফাইল, পর্নোগ্রাফি, চাইল্ড পর্নোগ্রাফি, পর্নোগ্রাফি আইন নিয়ে নানাবিধ কেসস্টাডি, পরিসংখ্যান, মন্তব্য, সরকারি উদ্যোগ চোখে পড়ে। বাংলাদেশে পিডোফাইল সংক্রান্ত একাডেমিক গবেষণা সমৃদ্ধ নয়, এটা অনলাইন ঘাঁটলে বোঝা যায়। শিশু পর্নোগ্রাফি নিয়ে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোনো উদ্বেগ লক্ষ্য করা যায় না।

একটি জাতীয় দৈনিকে ২০১১ সালের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ ছিল, বাংলাদেশে ৬.৬ শতাংশ ছেলেশিশু এবং ১৫.৩ শতাংশ মেয়েশিশু যৌননিপীড়নের শিকার হয় বন্ধু, শিক্ষক, আত্মীয়, পরিচিতজন কর্তৃক। আশংকার বিষয় হল, অধিকাংশ ঘটনা থানা-পুলিশ পর্যন্ত নথিভুক্ত হয় না।

সরকারি ওয়েবসাইট থেকে (নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৩-২০২৫) শিশুনির্যাতনের একটি পরিসংখ্যান পাওয়া যায়, যা মূলত জাতীয় দৈনিকগুলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনের সংকলন, কোনো সরকারি জরিপ নয়। নিচের চিত্রে ২০১০ থেকে ২০১৩ সালের 'শিশু' কলামগুলোতে শিশুনিপীড়ন পরিসংখ্যান রয়েছে। শিশুনিপীড়নের পাঁচটি প্রকরণের মধ্যে প্রথম চারটিই শিশুর উপর শারীরিক ও যৌন আক্রমণজনিত।

দেশের মোট জনসংখ্যার ৪৫ ভাগ শিশু। এদের শৈশব-কৈশোরের নির্মলতা রক্ষা করা পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আমাদের দেশে প্রচলিত ধারণা আছেই, দেশে আইন আছে বাস্তবায়ন নেই। কিছু আনুষ্ঠানিক নীতিমালা, আইন, সনদে শিশুদের নিয়ে তৎপরতা দেখা গেলেও বাস্তবায়নে রাষ্ট্রীয় অবহেলা ও অজ্ঞতা রয়েছে। এক নজরে নিচের তালিকা থেকে জেনে নেওয়া যাক বাংলাদেশে শিশুদের জন্য কী ধরনের আইন, নীতিমালা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম রয়েছে।

– শিশু আইন, ২০১৩

– জাতীয় শিশু নীতি ২০১১

– নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৩-২০২৫

– জাতীয় শিশুশ্রম নীতি-২০১০

– নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল

– শিশু আদালত

– নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০

সহিংসতা প্রতিরোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৩-২০২৫ এ শারীরিক নির্যাতনের বিবরণে স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও শরীরের কোনো অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যৌনহয়রানির তালিকায় রয়েছে পর্নোগ্রাফি প্রদর্শন এবং স্থির অথবা ভিডিওচিত্র ধারণ। পর্নোগ্রাফি, মোবাইলে পর্নো ছবি ধারণ প্রযুক্তিভিত্তিক অপরাধ বিধায় প্রযুক্তি আইন বা সাইবার আইনের শাখায় এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।

ডিজিটাল বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার উৎসাহিত করতে হবে। কিন্তু এতে যে পর্নোগ্রাফি বৃদ্ধি পাবে তা কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণে সরকারের প্রস্তুতি কী? দুটো আইন উল্লেখ করতে হয়–

– পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২

– তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬

তথ্য ও প্রযুক্তি (সংশোধিত) আইন ২০১৩

আমেরিকায় ফেডারেল আইনের আওতায় চাইল্ড পর্নোগ্রাফি আইনকে আনা হয়েছে। জার্মানি দ্রুততার সঙ্গে আইন প্রণয়ন করে শিশু পর্নোগ্রাফি সাইট বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে। ২০০৯ সালে ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি আইনে কেবল শিশু পর্নোগ্রাফি উৎপাদন ও প্রচারই নয়, চাইল্ড পর্নোগ্রাফি ওয়েবসাইট দেখাও অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের 'নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধকল্পে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে' প্রণীত পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২-এ দণ্ডবিধির ৮(৬) ধারায় শিশু পর্নোগ্রাফি বিষয়ক শাস্তি বর্ণিত রয়েছে।

তথ্যপ্রযুক্তি আইনে পর্নোগ্রাফি ও চা্ইল্ড পর্নোগ্রাফি সংক্রান্ত বিধি যুক্ত নেই। প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে, অপরাধ-অপরাধী শনাক্তকরণ, তদন্ত প্রক্রিয়া, বিচার প্রক্রিয়া, ভিকটিমের সুরক্ষা নিশ্চিতে চাইল্ড পর্নোগ্রাফি নিয়ে সয়ংসম্পূর্ণ আইন প্রস্তাব-প্রণয়ন-বাস্তবায়ন করতে সরকারকে আবেদন জানাই ।

প্রযুক্তির অগ্রযাত্রায়, অপরাধীরাও আধুনিক পদ্ধতিতে অপরাধ সংঘটনের সুযোগ পায়। অনেক ক্ষেত্রেই 'অ্যানোনিমিটি' রক্ষার্থে টর নেটওয়ার্কের (Tor network) আওতায় চাইল্ড পর্নোগ্রাফি ওয়েবসাইটগুলো পরিচালিত হয়। তাই সরকারকে উন্নত প্রযুক্তিবান্ধব হতে হবে। পর্নোগ্রাফির এই ক্যান্সার সমাজকে আরও অসুস্থ করার পূর্বেই আন্তর্জাতিক কেস স্টাডির পাশাপাশি পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণে গৃহিত বৈশ্বিক ব্যবস্থাগুলোর মডেল অনুসরণ করা সরকারের অবশ্য করণীয়। সরকারের আশু যে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত তা হল–

(১) সাইবার ফরেনসিক ল্যাব গঠন। সন্দেহভাজন 'আইপি বা সার্ভার অ্যাকটিভিটি' পর্যবেক্ষণ করতে উন্নত 'সিসটেম বা সফটওয়্যার' দরকার। এ ধরনের ল্যাবে সাইবার অপরাধের 'ট্রেন্ড অ্যানালাইসিস' করা সহজ হবে।

(২) শিশু পর্নোগ্রাফি সম্বলিত সাইট আটকে (Block) দিতে আইএসপি (Internet Service Provider) গুলোকে নির্দেশ প্রদান।

(৩) সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে শিশু পর্নোগ্রাফি, পিডোফেলিয়া বিষয়ে গবেষণা ও পরিসংখ্যান প্রস্তুতকরণ।

(৪) ১৮ বছরের পূর্ব পর্যন্ত শিশুদের মোবাইল, কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহারে অভিভাবক ও স্কুলের শিক্ষকদের তত্ত্বাবধায়ন নিশ্চিত করা।

(৫) শিশু পর্নোগ্রাফি রোধে বিশেষ টিম গঠন এবং এ ধরনের টিমে শিক্ষক ও মনোচিকিৎসক অন্তর্ভূক্তিকরণ।

(৬) গুগল সার্চ বক্সে যে শব্দ লিখলে শিশু পর্নোগ্রাফির লিংক, ভিডিও বা অবৈধ কোনো ওয়েবসাইটে চলে যাওয়া সম্ভব এ ধরনের ১৫০ ভাষার এক লাখ সার্চ শব্দকে সরিয়ে ফেলার কথা জানিয়েছিল গুগল। ধারণা করা হয়, এর বাস্তবায়নে শিশু পর্নোগ্রাফি বিক্রেতাদের ব্যবসা ৩০ শতাংশ কমে যাবে। বাংলা ভাষায় পর্নোগ্রাফি সাইট সার্চ রোধে গুগলের সহায়তা নিতে প্রস্তাব করা যেতে পারে সরকারের পক্ষ থেকে।

(৭) শিশু পর্নোগ্রাফি রোধে ব্রিটেন-আমেরিকা জোটবদ্ধ হয়েছে। বাংলাদেশেরও দক্ষিণ এশিয়াভিত্তিক পর্যায়ে এবং অবশ্যই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ ধরনের জোটে শরিক হওয়া আবশ্যক।

(৮) সাইবার জগৎ একটি সীমানাহীন বিশ্ব। সাইবার অপরাধ, পর্নোগ্রাফি চক্র প্রযুক্তি ও ইন্টারনেট নির্ভর হওয়ায়, এর পরিচালনা, বিস্তার, প্রভাব, ক্ষতি পৃথিবীর যে কোনো স্থানে হতে পারে। তাই সরকারকে মূলত কাজ করতে হবে 'ক্রস-বর্ডার সাইবার ল' (Cross Border Cyber Laws) গঠনে।

(৯) সামাজিক, মানসিক সুস্থ বিকাশ ব্যতীত অপরাধ প্রবণতা বাড়তেই থাকবে। সামাজিক মূল্যবোধ জাগ্রত করার স্লোগানের পাশাপাশি 'সাইবার ইথিকস' নিয়ে সচেতনতা গঠন আবশ্যক।

(১০) বাংলাদেশও যোগ দিক ইউনিসেফ (জাপান)-এর 'নো' (No) ক্যাম্পেইনে। আমরাও সচেতন স্লোগান তুলি, শিশু পর্নোগ্রাফিকে 'না' বলুন [Say 'No' to Child Pornography]।

ফিরে আসা যাক পিডোফেলিয়া প্রসঙ্গে। একজন পিডোফাইল নিশ্চিতভাবেই মানসিকভাবে অসুস্থ। শিশুকালের তিক্ত অভিজ্ঞতা, প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের ব্যর্থতা– এমন অনেক কারণে এই মানসিক বিপর্যয় ঘটতে পারে। পিডোফাইলদের চিকিৎসাও হয়। তবে একজন পিডোফাইল কতটা আক্রান্ত তার উপর নির্ভর করে চিকিৎসা সফলতা। মানসিক অসুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে আইনি শাস্তি প্রযোজ্য না চিকিৎসা?

একজন কারগার মনোচিকিৎসক (Dr. Mace Knapp, Nevada State Prison Psychologist) বলেছেন, শিশুকে যৌননির্যাতনকারীর আর একজন সিরিয়াল কিলারের ব্যক্তিত্বে একই বৈশিষ্ট বিদ্যমান। একটি মতবাদ আছে, পিডোফাইল মাত্রই একজন শিশুনিপীড়ক, তবে শিশুনিপীড়ক মাত্রেই পিডোফাইল নয়। আইনি কার্যক্রমে অপরাধীর মানসিক অবস্থা চিকিৎসক কর্তৃক পরীক্ষিত হলে এ নিয়ে দ্বিধান্বিত হওয়ার সুযোগ কম।

শিশুকে যৌন নির্যাতনকারীর, চাইল্ড পর্নোগ্রাফি উৎপাদনকারীর দ্রুত বিচার পদ্ধতিতে সর্বোচ্চ সাজাপ্রাপ্তি ঘটুক।

তথ্যসূত্র:

http://bdlaws.minlaw.gov.bd/bangla_all_sections.php?id=950

***
প্রকাশিত: http://opinion.bdnews24.com/bangla/archives/18751