বইয়ের ফ্ল্যাপ, মেলার শেষ দিন এবং প্রচারণা

আইরিন সুলতানাআইরিন সুলতানা
Published : 28 Feb 2017, 03:13 AM
Updated : 28 Feb 2017, 03:13 AM

বইয়ের ফ্ল্যাপ লেখা ওপার বাংলার কথা সাহিত্যিক অমিতকুমার বিশ্বাসের। তাই বইমেলায় একজন বই হাতে নিয়ে প্রশ্ন করলেন, এই বই কি ওপাশেও প্রকাশ হয়েছে। আমারও ইচ্ছে ছিল প্রশ্নটা আসুক। কারণ কথাসাহিত্যক অমিতকুমার বিশ্বাসের লিখিত ফ্ল্যাপ আমার গল্পগ্রন্থের জন্য শুভেচ্ছাস্বরূপ। আমার বইযের প্রচ্ছদ প্রেসের যাওয়ার জন্য রেডি, ওরকম তাড়াহুড়োতে নিজের ভীষণ ব্যস্ততা, ঘুমে ঢুলু ঢুুলু চোখে ফ্ল্যাপ লিখতে বসে গেলেন অমিতকুমার। এটা তিনি করতে পারেন, কারণ তিনি সাহিত্যকে ধারণ করেন বলে। এটা তিনি করতে পারেন কারণ, তিনি সাহিত্যকে পিলার দিয়ে আটকে রাখেন না বলে। এটা তিনি করতে পারেন কারণ শুভাকাঙ্খী বলে। এবং এটা তিনি করতে পারেন কারণ আমার গল্পগ্রন্থের অনেক গল্প লেখায় তার দায় আছে বলে।

অমিতকুমারের একটি নিরিক্ষণধর্মী গল্পগ্রন্থের নাম ছিল 'আইরিনদের চিলেকোঠায় বুলডোজার ভাঙছে জোছনা-রঙ', সেটা একবার গল্পগ্রন্থের নাম নিয়ে আলাপে আলাপে। যেমন অমিতকুমারের গল্পগ্রন্থের নামে আমার যতসামান্য অংশগ্রহণ ছিল। তেমনি ইচ্ছে ছিল, সহলেখক অমিতকুমারকেও আমাদের বইমেলার অংশীদার করা। মনে হচ্ছে আমার ফ্ল্যাপ অমিতকুমারের উপস্থিতি নিশ্চিত করছে আমাদের বইমেলায়। সহলেখক অমিতকুমার বিশ্বাসের শুভেচ্ছা বার্তা নিয়ে প্রকাশিত 'জীবিতের বা মৃতের সহিত সম্পর্কহীন' গল্পগ্রন্থটি পাঠককে নিরাশ করবে না বলেই মনে করি।

এমনকি সহলেখক, কবি তমাল বন্দোপাধ্যায় -ও ভীষণ শুভেচ্ছা নিয়ে আমার বইয়ের খোঁজ নেন। সময়মত উত্তর করে জানাতে পারিনা, সেটা আমার ব্যর্থতা যদিও। কিন্তু কবি তমালের শুভেচ্ছা এবং গল্পকার অমিতকুমারের দেয়া প্রেরণা – সবটাই নিখাদ তা অস্বীকার করার জো তো নেই। তারা আমাকে লিখতে বলেন বারবার। আর তাতে আস্ত একটা মলাটবদ্ধ বই হয়ে গেল। সেই বই পাঠকের কাছে পৌঁছানোর জন্য লেখক হিসেবে আমার প্রচেষ্টা। প্রকাশকের প্রচেষ্টা। তাই পাঠকের কাছে অনুরোধ, বই কিনে পড়ুন। আর যেহেতু গাঁটের পয়সা খরচা করে বই কিনবেন, তাই পড়ার পর প্রতিক্রিয়া জানান। এতে পাঠক – প্রকাশক-লেখকের লাভ। এবং তাতে সাহিত্যও বেঁচে যাবে।

***

গতবছর বইমেলার শেষ দিন ছিল মনে হয় ছুটির দিনে। এবার শেষ দিনটা কর্মদিবসে। তাতে কি ভিড় কম হবে?

বইমেলার শেষদিন মানে হলে লেখক-প্রকাশক-পাঠক-দর্শনার্থীদের জন্য আবেগঘন দিন। বই অনলাইন থেকেও কেনা যায়। কোনো একটা বইয়ের দোকান থেকেও কেনা যায়। বই পড়া যায় লাইব্রেরি থেকেও। কিন্তু বইমেলা আসলে অন্যরকম। এখানে বই দেখা যায়। বই শোনা যায়। বই পড়া যায়। তাইতো মিলনমেলা।

এবারের বইমেলায় সার্বিক বিকিকিনি কেমন হলো এটা হয়ত মেলা শেষে জানা যাবে। তবে শেষ দিনেও অনেকের বইটা আসে। পাঠকও কেনে। এই লেখক ও পাঠকদের শুভেচ্ছা।

কোনো একভাবে লেখক ও প্রকাশকদের প্রতিবার একটা ঐক্যমতে আশা উচিৎ বই প্রকাশ করলে ডিসেম্বরের মধ্যে পাণ্ডুলিপি চূড়ান্ত করে ফেলতে হবে। একেবারে প্রকাশযোগ্য। যেন বইমেলার প্রথম সপ্তাহেই বই চলে আসে। এতে করে লেখক-প্রকাশকের প্রচারনার সময় পাওয়া যাবে বেশ। মানে পুরো মাসটা কাজে লাগানো যাবে। পড়ার সুযোগও হবে মেলাচলাকানীন। মেলাচলাকালীন পাঠকমত জানার, রিভিউয়েরও সুযোগ হবে। এই চর্চাটা মেলার প্রতি আগ্রহ বাড়াবে।

এবারের বইমেলার শেষদিন লেখক-পাঠক-প্রকাশকে জমজমাট থাকুক। স্মৃতিময় হয়ে থাকুক।

***

আর এই সুযোগে জানিয়ে রাখি আমার বইয়ের কথা।

১. কাব্যগ্রন্থ: গলিত জোছনায় প্লাবিত নগরে ঈশ্বর – প্রকাশক: শব্দশৈলী (স্টল#৩৫৭-৫৮-৫৯, সোহরাওয়ার্দী)

২. গল্পগ্রন্থ: জীবিতের বা মৃতের সহিত সম্পর্কহীন – প্রকাশক: এক রঙা এক ঘুড়ি (লিটিল ম্যাগ চত্বর, মেঘফুল স্টল)