সিটিজেন জার্নালিজম নিয়ে অল্পস্বল্প গল্প

আইরিন সুলতানাআইরিন সুলতানা
Published : 17 July 2011, 09:15 AM
Updated : 17 July 2011, 09:15 AM

যদি প্রশ্ন করা হয় বস্তুত সিটিজেন জার্নালিজম কী অর্থ্যাৎ এর সংজ্ঞায়ন কিভাবে করা হবে, তবে সহজ কথায় এরকম বলা যায়-

স্বতস্ফূর্ত ও স্বপ্রণোদিত হয়ে গণমানুষের বা আম-জনগণের খবর ও তথ্য সংগ্রহ, পরিবেশন, বিশ্লেষণ এবং প্রচারে অংশগ্রহণ হচ্ছে সিটিজেন জার্নালিজম বা নাগরিক সাংবাদিকতা।

এ প্রেক্ষিতে Authors Bowma ও Willis এর বক্তব্য হচ্ছে-

The intent of this participation is to provide independent, reliable, accurate, wide-ranging and relevant information that a democracy requires.

এই অংশগ্রহণের উদ্দেশ্য হচ্ছে স্বাধীন, বিশ্বাসযোগ্য, সঠিক, বিস্তৃত পরিসরের এবং যথাযথ সম্পর্কযুক্ত তথ্য প্রদান যা গণতন্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয়।

এখানে একটি বিশেষ দ্রষ্টব্য -ও পাওয়া যায়; কমিউনিটি জার্নালিজম বা সিভিক জার্নালিজমের সাথে সিটিজেন জার্নালিজমকে গুলিয়ে ফেলার অবকাশ নেই। কারণ কমিউনিটি জার্নালিজম চর্চিত হয় পেশাদার সাংবাদিক কর্তৃক অথবা যৌথ উদ্যোগে – পেশাদার ও অপেশাদার সাংবাদিকদের দ্বারা। এক্ষেত্রে সিটিজেন জার্নালিজম হচ্ছে সিটিজেন মিডিয়ার অন্তর্ভূক্ত যেখানে সাধারণ ব্যবহারকারী (দর্শক, পাঠক) কর্তৃক কর্তৃক এর কনটেন্ট সরবরাহ হয়।

সিটিজেন জার্নালিজম -ই বেশি প্রচলিত, তবে বিভিন্ন সময়ে এর ভিন্ন নামকরণও ঘটেছে। যেমন –

  • স্ট্রিট জার্নালিজম
  • পাবলিক জার্নালিজম
  • ডেমোক্রেটিক জার্নালিজম
  • পারটিসিপেটরি জার্নালিজম

সিটিজেন জার্নালিজমের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিতর্কও রয়েছে এবং এখানে সিটিজেন জার্নালিজমকে অবশ্যই তুলনা করা হচ্ছে পেশাদারি সাংবাদিকতার সাথে।

ডেভিড সাইমন বলেছেন,

সখের বশে লেখালেখি করা আনপেইড ব্লগারদের পক্ষে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত, পেশাদার, ঝানু সাংবাদিকদের জায়গা দখল করা সম্ভব নয়।

এরকম মনোভাব পোষনকারীর সংখ্যা কম নয়। ফলে বিষয়টি নিশ্চয়ই সিটিজেন জার্নালিজম চর্চাকে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করে তুলেছে। তথাপি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং এর পরিধি যত বেড়েছে, সিটিজেন জার্নালিজম ততো জোরেসোরে উচ্চারিত হয়েছে। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং জগতে আলোচিত সাইট গুলো দেখা যাক –

ফেসবুক, টুইটার এবং হালের সংযোজন গুগল+ এর পাশাপাশি বহুদিন ধরে বহু ভাষায় চর্চিত ব্যক্তিগত ও কমিউনিটি ব্লগ সাইটগুলো সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং দুনিয়াকে মাতিয়ে নিজেদের দুনিয়া হিসেবে ব্লগোস্ফিয়ারের ঘোষণা করেছে।

ব্লগের রকমভেদ দেখা গেছে –

  • ভিডিও ব্লগ (ভ্লগ নামেও পরিচিত)
  • অডিও ব্লগ
  • ফটোব্লগ
  • মাইক্রোব্লগ
  • মম ব্লগ (ফ্যামিলি/পারিবারিক ব্লগ হিসেবে পরিচিত)
  • পলিটিক্যাল ব্লগ
  • ট্রাভেল ব্লগ (travelogs)

Technorati 'র মে ২০০৪ সালের পরিসংখ্যান সে সময় ২.৪ মিলিয়ন ব্লগের অস্তিত্ব ঘোষণা করে। ভেবে দেখুন এই সংখ্যাটি ২০১১ সালে কী রূপ পেতে পারে!

ব্লগার ও সিটিজেন জার্নালিস্টদের মধ্যে যোগসূত্র কোথায়? কিংবা আন্তর্জালে সিটিজেন জার্নালিস্ট কারা? নীচের ছবিটি দেখুন, তাহলেই উত্তরটি পরিস্কার হয়ে যাবে।

দেখা গেছে, তথ্যপ্রযুক্তি সিটিজেন জার্নালিজম চর্চায় বিশেষ ভূমিকা রাখছে। কিভাবে? এ নিয়ে মার্ক গ্লেসার বলেছেন (মার্ক একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক যিনি নিউ মিডিয়া নিয়ে প্রায়ই লিখে থাকেন। তিনি এই উক্তি করেছিলেন ২০০৬ সালে),

সিটিজেন জার্নালিজমের পেছনের ধারনাটি হলো, যাদের প্রাতিষ্ঠানিক সাংবাদিকতার প্রশিক্ষণ নেই তারা আধুনিক প্রযুক্তি এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করে নিজেরা অথবা অন্যের সহায়তায় একটি বিকল্প অথবা তথ্য-যাচাইয়ের মাধ্যম তৈরী করতে পারে। যেমন ধরা যাক, আপনি নগর পরিষদের সভা নিয়ে নিজের ব্লগ অথবা একটি অনলাইন ফোরামে লিখতে পারেন। এমনকি আপনি একটি মূল গণমাধ্যমের সংবাদপত্রের খবরের তথ্য যাচাই করতে পারেন এবং তথ্যগত ভ্রান্তি বা পক্ষপাতিত্ব নিয়ে ইঙ্গিত দিতে পারেন আপনার ব্লগে। অথবা আপনি আপনার এলাকায় পরিবেশন করার মত কোন ঘটনার একটি ডিজিটাল ছবি তুলতে পারেন এবং অনলাইনে পোস্ট করতে পারেন। অথবা আপনি সেই একই ঘটনার একটি ভিডিওচিত্র ধারণ করতে পারেন এবং ইউটিউবের মত একটি ওয়েব সাইটে প্রকাশ করতে পারেন।

এখন পর্যন্ত কী ধরণের একটিভিটি সিটিজেন জার্নালিজম আখ্যা পেয়েছে?

মার্ক গ্লেসার এর মতে, ৯/১১ এ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার আক্রমনের ঘটনার অনেক প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য এসেছে সিটিজেন জার্নালিস্টদের কাছ থেকে। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার এর কাছাকছি অবস্থানরত সিটিজেন জার্নালিস্টদের তোলা ছবি এবং বর্ণনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

আব্রাহাম জ্যাপ্রুডার প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি'র হত্যাকান্ডটি ভিডিওচিত্র ধারণ করেছিলেন একটি সাধারন ক্যামেরা দিয়ে। আব্রাহামকে আজকের সিটিজেন জার্নালিস্টদের পূর্বপুরুষ বলে থাকেন অনেকে।

এ বছর জাপানে ভূমিকম্প ও সুনামি বিপর্যয়কালে লাইভ টুইটার আপডেট দেখা গেছে।

মধ্যপ্রাচ্যে টুইটার বিপ্লব, ফেসবুক বিপ্লব তাদের আন্দোলনকে চাঙ্গা করতে সহায়তা করেছিল। এগুলোর অধিকাংশই সম্ভব হয়েছিল, সাধারন মানুষের কারণে, যারা অজান্তেই সিটিজেন জার্নালিজমের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে আপডেট জানিয়ে যাচ্ছিলেন।

আমাদের দেশে টুইটার নির্ভরশীলতা কম, সে তুলনায় ফেসবুক ও ব্লগ ব্যবহারকারীরা সংখ্যায় অধিক। বেশ অনেকদিন ধরে ব্লগ ও ফেসবুককে নাগরিক ও সামাজিক সচেতনা বৃদ্ধির প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। পেশাদার মিডিয়ায় খবর প্রচারিত হওয়ার আগেই অপেশাদার ব্লগাররা ফেসবুক ও ব্লগে ছড়িয়ে দিচ্ছে সাম্প্রতিক খবরের সর্বশেষ তথ্যটি। মেহেরজান বির্তক, তেল-গ্যাস চুক্তি নিয়ে আলোচনা, ভিকারুননেসা নুন স্কুলে ছাত্রী নির্যাতন নিয়ে প্রতিবাদ- সব ক্ষেত্রেই ব্লগারদের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

এক কথায় জেনে, না জেনে ব্লগাররা অথবা সিটিজেন জার্নালিস্টরা সাম্প্রতিক খবরের সর্বশেষ তথ্যটি তুলে আনতে সক্ষম হচ্ছে পেশাদার গণমাধ্যমেও আগে!

আপনি কি ব্লগোস্ফিয়ারের এই বিশাল ক্ষেত্রটিতে সাম্প্রতিক যে কোন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে একমত-দ্বিমত কিংবা তৃতীয় মতামতের আলোচনায় আছেন? যদি না থাকেন তো পিছিয়েই রইলেন কিন্তু …!