এইবারই প্রথম দু’দফায় বিশ্ব ইজতেমাঃ সুবিধা নাকি দূর্ভোগ?

আইরিন সুলতানাআইরিন সুলতানা
Published : 23 Jan 2011, 10:21 AM
Updated : 23 Jan 2011, 10:21 AM

মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য হজ্জের পরই দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসমাবেশ ধরা হয় তুরাগ নদীর পাড়ের বিশ্ব ইজতেমাকে। ১৬০ একর জমির উপর চটের সামিয়ানা নীচে জমায়েত হবেন লাখ লাখ মুসুল্লীরা। ইজতেমায় যে কেবল এদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠি অংশ গ্রহণ করেন তা নয়। বিদেশ থেকেও প্রতি বছর ইজতেমায় যোগদানে আসেন বহুলোক। ইজতেমায় লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাই প্রতি বছর। ধারণা করা হচ্ছে এ বছর প্রায় ২০ হাজার বিদেশী অতিথির সমাগম হবে । ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীদের সুবিধার্থে সরকার বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। নোয়াখালী ওয়েবের তথ্যাসুনারে

১. মাঠের উত্তর-পশ্চিম কোণে ঢেউটিনের বেড়া ও চালা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে অস্থায়ী আবাসন
২. পানি সরবরাহের জন্য ঢাকা ওয়াসা থেকে তিনটি ও টঙ্গী ওয়াসা থেকে ১০টি ডিপ টিউবওয়েল এবং প্রায় ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন স্থাপনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে
৩. বিদেশি মুসল্লিদের জন্য ১৫৪টি গোসলখানা নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ২ হাজার ১৮৪টি গোসলখানা তৈরি করা হয়েছে মাঠের উত্তর ও দক্ষিণে
৪. মাঠে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ বিদ্যুৎ লাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে দু'একদিনের মধ্যে চারটি জেনারেটর স্থাপন করা হবে।
৫. অগ্নি নির্বাপণের জন্য টঙ্গী ফায়ার সার্ভিস অতিরিক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে
৬. নদী পারাপারে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে তুরাগ নদীর ওপর তৈরি করা হবে ভাসমান সেতু
৭. মুসুল্লিদের কেনাকাটার জন্য মাঠের অদূরে মুন্নু টেক্সটাইলের খোলা জায়গায় অস্থায়ী বাজার বসানো হবে

টঙ্গী ও উত্তরার ডেসকো ১৩২ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন উৎস থেকে তিনটি (১১ কেভি) ফিডারের মাধ্যমে ইজতেমাস্থলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। এ ছাড়া সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য চারটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটর এবং পাঁচটি ট্রলি (মাউন্ডেড ট্রান্সফরমার) অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছে।

ইজতেমা উপলক্ষ্যে সরকার ইজতেমা প্রাঙ্গনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে।

ইজতেমা মাঠে নাশকতামূলক যাবতীয় কর্মকাণ্ড এড়াতে কঠোর নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা হবে। আগামী ১৭ জানুয়ারি থেকে ইজতেমা প্রাঙ্গনে প্রায় ১৫ হাজার পুলিশ ও ৫৪০ জন আনসার নিয়োজিত থাকবে। প্রবেশ পথে র‌্যাবের ৯টি নিরাপত্তা টাওয়ার স্থাপন করা হবে। এসব টাওয়ারের প্রতিটিতে বসানো হবে অত্যাধুনিক মানের কোজসার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি)। এছাড়া মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে ভ্রাম্যমাণ তল্লাশি চালাবে র‌্যাব। সাদা পোশাকের গোয়েন্দা বাহিনীও ছড়িয়ে থাকবে মাঠে। এর বাইরে নিয়োজিত থাকবে ইজতেমা কমিটির নিজস্ব রাহবার (নিরাপত্তা কর্মী)।

(সূত্রঃ নোয়াখালী ওয়েব)

র‌্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান গতকাল সকালে ইজতেমাস্থল পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের জানান, ইজতেমা এলাকায় র‌্যাব পাঁচটি সেক্টরে ভাগ হয়ে নিরাপত্তা দেবে। ইজতেমা মাঠের প্রবেশপথে ও আশপাশে ৬০টি সিসি টিভিতে সার্বিক কার্যক্রমের চিত্র ধারণ করা হচ্ছে। সজাগ থাকছে র‌্যাবের স্ট্রাইকিং ফোর্স।

(সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, ২১-০১-২০১১)

অসুস্থ হয়ে পড়া মুসল্লিদের চিকিৎসাসেবা দিতে প্রতিবছরের মতো এবারও সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ১৩৫টি মেডিকেল টিম কাজ করবে। ইজতেমা মাঠ সংলগ্ন ৫০ শয্যা বিশিষ্ট টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা দিতে বিশেষ ক্যাম্প খোলা হবে। সার্বক্ষণিক সেবা দিতে ১২টি এম্বুলেন্স রাখা হবে মাঠের আশে পাশে।

দৈনিক প্রথম আলো (তারিখ: ২১-০১-২০১১) থেকে জানা যায়, প্রথম ইজতেমার পালনের রেওয়াজ শুরু হয় ১৯৪৬ সালে। কাকরাইল মসজিদে ইজতেমার আয়োজন করা হয়।

১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামের হাজি ক্যাম্পে এবং ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে একবার ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবছর মুসল্লি বাড়তে থাকায় ১৯৬৬ সালে তা টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে স্থানান্তর করা হয়। পরে সরকার তুরাগ তীরের ১৬০ একর জমি স্থায়ীভাবে ইজতেমার জন্য বরাদ্দ দেয়।

বিশ্ব ইজতেমার ৪৫তম আয়োজনে সরকার একটি ভিন্নধর্মী পদক্ষেপ নিয়েছেন। এবারই প্রথম ইজতেমাকে দুই পর্বে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম পর্বে ৩৩ জেলার মুসল্লিরা অংশ নেবেন। এ জন্য মাঠকে ৪৪টি খিত্তায় (ভাগে) ভাগ করা হয়েছে। চার দিনের বিরতি দিয়ে দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে ২৮ জানুয়ারি শুক্রবার, শেষ হবে ৩০ জানুয়ারি। জানা যায় যে, মাঠে জায়গা না হওয়ায় এবার দুই দফায় ইজতেমার আয়োজন করা হচ্ছে। দু'দফা ইজতেমা নিয়ে বিবিসি বাংলা গাজিপুরের জেলা প্রশাসক কামালউদ্দিন তালুকদারের সাথে একটি অডিও সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে।

প্রতি বছর ইতজেমাকালীন সময়ে নগরীতে যানযট সমস্যা প্রকট হয়ে পড়ে। নগরবাসীদের যাতাযাতে দূর্ভোগ বেড়ে যায় বিশেষত আখেরী মোনাজাতের পর হাজার হাজার বাড়িমুখো লোকসংখ্যার চাপে। সেই প্রেক্ষিতে দু'দফার ইজতেমাকে দু'দফা দূর্ভোগ হিসেবে দেখছেন কর্মজীবিরা। ব্লগার মেঘ -এর ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে জানা যায় যাতায়াত বিড়ম্বনা এড়াতে ইজতেমার সময় তিনি অফিসের কাছাকাছি কোন আত্মীয়র বাসায় অবস্থান নেবেন। ফেসবুক স্ট্যাটাসে বিরক্তি সহকারে তার বক্তব্য, সরকার কেন ইজতেমার আখেরী মোনাজাতের দিনকে সরকারী ছুটি ঘোষণা করছে না?