বাহরাইন অভ্যূত্থানঃ ডে অফ রাথ

আইরিন সুলতানাআইরিন সুলতানা
Published : 23 Feb 2011, 07:48 AM
Updated : 23 Feb 2011, 07:48 AM

বাহরাইনের প্রতিবাদ বিপ্লব সম্পর্কে গ্লোবাল ভয়েসেস-এর বিশেষ কাভারেজে ২৩শে ফেব্রুয়ারি ২০১১ তারিখের খবর শিরোনাম- বাহরাইন: রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানাচ্ছে, প্রতিবাদকারীদের হাতে ছিল তলোয়ার, বন্দুক এবং গোলাবারুদ

বাহরাইনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন (বিটিভি) রাজধানী মানামার পার্ল রাউন্ডএ্যাবাউটে সমাবেত হওয়া হওয়া বিক্ষোভকারীদের উপর ভোর রাতে চালানো হামলার ব্যাপারে এই মাত্র সরকারের জবাবদিহিতা প্রদান করল। এই হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন, অজস্র আহত হয়েছেন এবং যে ৬০ জনের মত ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছে, আর এখনো তাদের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না:

সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থেকে সুলতান আল কাশেমি নামক টুইটারকারী পুরো ঘটনার সংবাদ প্রকাশ করেছে, যে অনুষ্ঠানে দাবি করা হয়, প্রতিবাদকারীদের এই হামলা সম্পর্কে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল। তবে আজ সকলে একটা টুইটার পোস্টে বলা হয় যে প্রতিবাদকারীদের সেখানে থেকে যেতে বলা হয়েছিল, যেমনটা গ্লোবাল ভয়েসেস-এ, সংবাদ প্রদান করা হয়েছে।

এই অনুষ্ঠানে আহত নিরাপত্তা কর্মীদের ছবি দেখানো হয়, একই সাথে অস্র, গোলাবারুদ এবং তলোয়ারের ছবি দেখানো হয়, যে ছবিগুলো বেশ পীড়াদায়ক। এই অনুষ্ঠানে বলা হয় এগুলো প্রতিবাদকারীদের জিনিসপত্র। এদিকে বাহরাইনি টুইটারস্ফেয়ার এই নিয়ে বিতর্ক অব্যহত রয়েছে, আজ সকালে কি ঘটেছে এবং কেন ঘটেছে।

অন্য আরেকটি খবরে দেখা যায়, মূল সংবাদদাতা Yacoub Slaise জানিয়েছেন (অনুবাদ করেছেন বিজয়),

বৃহস্পতিবার, ১৭ ফ্রেব্রুয়ারি, ২০১১ তারিখে ভোর রাতে বিক্ষোভকারীদের উপর হামলা চালানো হয়। এরপর বাহরাইনের রাজধানী মানামার লুলু রাউন্ডএবাউট নামক এলাকার বিক্ষোভকারীদের মাঝে সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে যে, সামরিক বাহিনীর ট্যাঙ্ক সমূহকে রাজধানী শহরের দিকে এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে।

ভোর বেলায় লুলু রাউন্ডএ্যাবাউটে হামলা চালানো হয়। এই এলাকাটি ১৪ ফ্রেব্রুয়ারি ২০১১, তারিখ হতে বাহরাইনে যে সরকারি বিরোধী বিক্ষোভ প্রদর্শিত হচ্ছে তার কেন্দ্রবিন্দু। এই হামলায় আহত অনেককে দ্রুত সালমানিয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তিনজন লোক মারা গেছে।

যখন আহত প্রতিবাদকারীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে, তখন হাসপাতালের অবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। আহত ব্যক্তিদের রক্তদানের জন্য নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

বৃহস্পতিবার, ১৭ ফ্রেব্রুয়ারি ২০১১- তারিখে, বাহরাইনের স্থানীয় সময় রাত ৩টায়, দাঙ্গা পুলিশ লুলু রাউন্ডএ্যাবাউটে ঘুমিয়ে থাকা বিক্ষোভকারীদের উপর হামলা চালায়। "ডে অফ রাথ" (ক্ষোভ প্রকাশের দিন) নামে পরিচিত এই ঘটনার উপর ধারণ করা এখন পর্যন্ত যে কয়টি ভিডিও নেটে ছড়িয়ে পড়েছ, তার কয়েকটি লিংক প্রদর্শতি হচ্ছে গ্লোবাল ভয়েসেস এ।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার ওয়েবসাইটে এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এক বিবৃতি প্রকাশ করেছে, গ্লোবাল ভয়েসেস থেকে সেই বিবৃতির অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে,

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (এমওআই, মিনিস্ট্রি অফ ইন্টেরিয়র) :

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বিগ্রেডিয়ার তারিক হাসান আল হাসান ঘোষণা করেছেন যে, নিরাপত্তা বাহিনী পার্ল রাউন্ডএ্যাবাউট নামক এলাকা থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়। তাদের সাথে চলা সকল আলোচনা ব্যর্থ হয়ে যাবার পরই এই ঘটনা ঘটানো হয়। তাদের সরে যেতে বলার সময় কেউ কেউ ভালোভাবে সাড়া দেয়, এবং দ্রুত স্থান ত্যাগ করে, অন্যরা এই নির্দেশ মানতে অস্বীকার করে, যার ফলে তাদের জোর করে সেখান থেকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়।

তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, নিরাপত্তা বাহিনী আত্ম-নিয়ন্ত্রণের ব্যপারে সতর্ক ছিল এবং তারা বিখ্যাত কিছু ব্যক্তির মাধ্যমে বিক্ষোভের জন্য তৈরি করা এই এলাকায় অবস্থান গ্রহণের বিষয়টির ইতি টানার জন্য বিক্ষোভকারীদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে, যাতে এই প্রতিষ্ঠানিক রাষ্ট্রে আইনের অনুশীলন বজায় থাকে। এদিকে কয়েকজন বিক্ষোভকারী এই সহনশীলতার সুযোগ গ্রহণ করে। তারা অবৈধ কিছু কাজ করা শুরু করে এবং এখানকার নাগরিক এবং এলাকার বাসিন্দাদের চেক পয়েন্টে থামিয়ে তাদের বিরক্ত করতে থাকে। তারা রাউন্ড্এ্যাবাউট এলাকায় লোকদের এবং সেই পথ দিয়ে চলা পথিকদের গাড়ি দুরে গিয়ে খুঁজে নিতে বাধ্য করে। বিষয়টিকে অন্যতম এক আইন ভঙ্গকারী বিষয় হিসেবে দেখা হচ্ছে, যার মধ্যে দিয়ে জনতার মাঝে ভীতি ছাড়ানো হচ্ছে এবং এই ঘটনাটি এলাকার বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর প্রভাব ফেলছে।

মুখপাত্র নিশ্চিত করেন যে, এই বিষয়ে স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়ে জনতার কাছ থেকে অনেক অভিযোগ এসেছে, যা প্রচণ্ডভাবে ব্যক্তিগত এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর প্রভাব ফেলছে, যারা এর ভুক্তভোগী। তিনি বলেন যে, এ রকম এক গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হওয়ায়, তা জাতীয় অর্থনীতি, বাণিজ্য, পর্যটন এবং জন গুরুত্বপূর্ণ কাজের উপর প্রভাব ফেলছিল এবং এটি উক্ত এলাকার পরিবহণের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করছিল।

ব্রিগ্রেডিয়ার আল হাসান জনগণকে, মত প্রকাশের সময় সংবিধান ও আইন মেনে চলার এবং স্বদেশ প্রতি ভালোবাসা আর দেশের মঙ্গলের প্রতি সচেতন থাকার আহ্বান জানান।

———————————————————————————————
তথ্যসূত্রঃ গ্লোবাল ভয়েসেস

———————————————————————————————
ফিচার ছবিঃ silenceoutspoken এর ওয়ার্ডপ্রেস ব্লগ থেকে সংগৃহিত