সাগর-রুনি হত্যা: প্রতিবাদে-দাবিতে রঞ্জিত রাজপথ

আইরিন সুলতানাআইরিন সুলতানা
Published : 6 May 2012, 04:03 PM
Updated : 6 May 2012, 04:03 PM

প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সংগ্রহের ছুটোছুটি সেরে খাওয়ার সময় হাতে পায়নি কেউ কেউ। বদলে ওরা লেগে গিয়েছিল খড় একাট্টা করে শক্ত করে বাঁধাছাদায়। তারপর বালতিতে সাদা পাউডারের সাথে পানি গোলানো। তারপর লাল রঙ মেশানো এক বালতিতে, অন্য বালতিতে হলুদ রঙ মেশানো। ব্লগার ‍জুয়েল এ রব চারুকলার শিক্ষার্থী, তিনি আরো দু'জন চারুকলার শিক্ষার্থীকে নিয়ে এসব গুছিয়ে নিচ্ছিলেন। সহযোগিতা করছিল ব্লগার মাহবুবুর রহমান, ব্লগার সোহেল মাহমুদ। ততক্ষণে পৌঁছে গেছেন ব্লগার জাহেদ-উর-রহমান, ব্লগার আবু সুফিয়ান, ব্লগার কৌশিক আহমেদ। ব্লগার আজমান আন্দালিব পৌঁছে গিয়েছিলেন। চলে এলেন মঞ্জুর মোর্শেদ। ব্লগার আবু সাঈদ আহমেদ অনেকবার নিশ্চিত করেছিলেন আসবেন। তিনি এলেনও চারুকলার উঠানে অপরাপর ব্লগারদের মাঝে। সাথে ছিলেন শব্দনীড় ব্লগের নিয়মিত ব্লগার ফকির আব্দুল মালেক, আরো এলেন ব্লগার ভালবাসার দেয়াল। শব্দনীড় ব্লগের সভা ছিল সেদিন। সভা শেষ করে চলে এসেছেন ওরা, সাগ্রহে। ব্লগার ভালবাসার দেয়াল খুব বেশিক্ষণ থাকতে না পারলেও ব্লগারদের প্রতিবাদি উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়ে গেলেন।

এরই মধ্যে ব্লগারদের প্রাথমিক প্রস্তুতি শেষ। ব্লগাররা ব্লগে আগেই কর্মসূচী ঘোষণা দিয়েছিলেন- সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে ব্লগারদের ধারাবাহিক প্রতিবাদের অংশ হিসেবে এবার প্রতিবাদের রঙে রঞ্জিত হবে রাজপথ। প্রতিবাদের মঞ্চে দৃঢ় পায়ে ব্লগারদের অবস্থান নেয়ার সেই ক্ষণ এখন। জনতার সাথে মিশে যাওয়ার ক্ষণ এখন। তারিখটা ছিল ২৭ এপ্রিল ২০১২। শুক্রবার। তপ্ত বিকেল। দল বেঁধে হাজির হল ব্লগাররা জাতীয় জাদুঘরের সামনে।

ব্লগাররা যেমন জানত কী করণীয়, তেমনি ভাবে চারুকলার শিক্ষার্থী আরমান, ধিমান, খাইরুল, নিটোল ও হামিদ -রাও জানত নাগরিকদের প্রতিবাদের ভাষাকে-দাবিকে কিরূপে রাজপথের সাথে লেপ্টে দিতে হয়। জাতীয় জাদুঘরের সম্মুখভাগ, এর আশপাশের বাতাবরণ মুহূর্তেই আমূল বদলে গেল। অদূরের ব্যস্ত সড়ককে ছাপিয়ে রাজপথের ক্যানভাসে ফুটে উঠল টান টান ভাবগাম্ভীর্য।

এ সত্য যে অপরাধের নাগপাশ আমাদের সমাজকে, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ঘিরে আবর্তিত হয়ে আছে। কিন্তু প্রতিবাদী জনতার পদযাত্রা এগুতো এগুতে সেই অনাহুত সর্পবেষ্টনিকে দলিতমথিত করে দেয়ার অবস্থানে পৌঁছে গেছে …


এ প্রশ্ন কেবল ব্লগারদের হয়ে থাকেনি, অনেকে হাতে প্ল্যাকার্ডটি তুলে নিয়েছিল, আর উচ্চারণ করেছিল সেই অনিবার্য প্রশ্নটি ক্ষোভের সাথে – বাংলাদেশে কতদিনে ৪৮ ঘণ্টা হয়?

দৃঢ় প্রত্যয়ী ব্লগাররা রাজপথ রঞ্জিত করে চলছে একাগ্রতায়…

উৎসুক জনতারা দেখছিলেন, সমর্থন জানাচ্ছিলেন, বলছিলেন – এ প্রতিবাদের প্রয়োজন আছে।

নির্মম এ হত্যাকাণ্ড, প্রকারন্তরে এরূপ হত্যাযজ্ঞ কি মেনে নেয়া যায়? যায় না,কিছুতেই না।


প্রশাসন কি শুনছে? আর কতকাল বধির থাকবে প্রশাসন? ঘুমাবে কুম্ভকর্ণের ঘুম? কতবার এড়াবে দায়? কতবার করবে প্রহসন?


জাগো বাহে … এ আহবান প্রশাসনের জন্য … জাগো বাহে … এ আহবান সচেতন নাগরিকদের জন্য

ব্লগার জাহেদ-উর-রহমান জানাচ্ছিলেন তার ক্ষোভের কথা, আশংকার কথা – নাগরিকের নিরাপত্তা কোথায়?

ব্লগার জুয়েল এ রব বলছিলেন, সচেতন ব্লগারদের জেগে ওঠার কথা।

আমরা সচেতন ব্লগার, সচেতন নাগরিকরা হাল ছাড়িনি, কণ্ঠ ছেড়েছি … জোরে… সমস্বরে …

এমন নৃশংসতার পুনরাবৃত্তি চাই না আর …

বিচারের নামে প্রহসন বরদাস্ত করবে না আর নাগরিকরা …

আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে রাষ্ট্রকে …

এ কথা চলতি পথের প্রতিটি পথিকের …

প্রতিটি নাগরিকের …

আম-জনতা একত্রিত আজ … রাজপথে …!

হত্যাকারী যেই হোক, তার/তাদের গ্রেফতার ও শাস্তি চাই …

বিচার চাই…বিচার চাই… বিচার চাই।