পূবালী বাতাস

এ.এম.আহাদ লিও
Published : 25 Nov 2017, 06:14 AM
Updated : 25 Nov 2017, 06:14 AM

তিনি পূবালী বাতাস হয়ে এসেছিলেন আমাদের বাংলা সঙ্গীতের জগতে। আষাঢ় মাসে পূবালী বাতাস যেমন প্রচণ্ড খরা শেষে জোয়ার আনে নদীতে, তেমনি তিনি এসেছিলেন আমাদের বাংলা লোক সঙ্গীতের জগতে হঠাৎ করেই সৃষ্ট এক শূন্যস্থান পূরণে শাস্ত্রীয় জোয়ার হয়ে। বুক ভরা কান্না নিয়ে তিনি ভরা গাঙে পাল তুলে এসেছিলেন। বাঙালি হৃদয়ের আবেগকে তিনি নিংড়ে বের করে এনেছিলেন। এ বড্ড কঠিন কাজ ছিল। কিন্তু তিনি তা পেরেছিলেন। হঠাৎ করেই শহুরে মানুষগুলোও হয়ে উঠেছিলো গ্রামীণ লোক-মানুষ। এপার বাংলার ভাটিয়ালী সুরকে এস.ডি.বর্মন সেকালে বোম্বের চলচ্চিত্রে প্রতিষ্ঠিত করে দেখিয়েছিলেন সেই ভাটিয়ালী সুরের ক্লাসিক্যাল এক ভিত্তি দিয়ে। তেমনি বারী সিদ্দিকীও আমাদের লোক সংগীতের এক ক্লাসিক্যাল ভিত্তি গড়ে দিয়ে গিয়েছেন।

অনেক সাক্ষাৎকারে তাঁকে আফসোস করতে শুনেছি তাঁর গানগুলোকে শুধুই লোক সংগীত হিসেবে পরিচিতি পাবার বিষয়কে কেন্দ্র করে। বরং তিনি তাঁর গানগুলোকে শাস্ত্রীয় লোক সংগীত বলতেই বেশি পছন্দ করতেন। তাতে আমাদের মতন শ্রোতাদের কিছুই যেত-আসতো না। আমরা শুধু তাঁর সুরের নান্দনিকতা আস্বাদনেই মুগ্ধ থেকেছি, থাকবো অনন্তকাল, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। তবে একটি বিষয়ে আমার বড্ড চিন্তা হচ্ছে, বাঙলা লোকসংগীতে ক্লাসিক্যাল ধারার মিশ্রণ আর কারো দ্বারা সম্ভব হবে কিনা, কিংবা তাঁর এই প্রচেষ্টাকে আর কেউ চলমান রাখতে পারবে কিনা সে বিষয়ে। তিনি লোক সংগীতকে লঘু সংগীতের বেড়াজাল থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে এনেছিলেন। এই কাজটি করতে পেরেছিলেন বলেই শহুরে লঘু সংগীতকে হটিয়ে দিয়ে রাজত্ব শুরু হয় লোক সংগীতের।

এই লোকটা বড্ড খারাপ ছিলো, মানুষকে কাঁদিয়ে সুখ পেতো, সুর আর আবেগের যাদুতে যেমন কাঁদিয়েছে, ঠিক তেমনি হঠাৎ করেই আমাদের ছেড়ে চলে গিয়ে এক হাহাকার তৈরী করে দিয়ে গেলেন। আমরা আবার 'বাদাম দেইখ্যা চাইয়া থাকি, আমার নি কেউ আসে রে'। আবার এসো হে লিলুয়া বাতাস, আমরা অপেক্ষায় থাকবো তোমার বাঁশীর সেই বাতাস সুর হয়ে আমাদের কানে ভেসে আসবার। তুমি আমাদের লোকসংগীতের ইতিহাসে নতুন এক বিশেষায়িত অধ্যায় শুরু করে দিয়ে গেলে হে সাধক… খামখেয়ালী সাধক…।