বাড়ীওয়ালার শখের পুতুল ভাড়াটিয়া

লিয়া সরকার
Published : 16 Oct 2012, 05:09 PM
Updated : 16 Oct 2012, 05:09 PM

বাড়িওয়ালা ,ভাড়াটিয়া পরিচয় যাই হোক সবাই আমরা মানুষ ।মানুষ হিসেবে আমরা যদি অমানুষ,বিবেকহীন হই তবে আমাদের পক্ষে সব করা সম্ভব । আর এই খারাপ স্বভাবের জন্য বাড়িওয়ালা কিংবা ভাড়াটিয়া খারাপ হিসেবে গণ্য হয় । আমার নিজের কিছু অভিজ্ঞতা তুলে ধরছি ।

মা,বাবা,ভাই বোন নিয়ে আমাদের সাত জনের সংসার ছিল। বড় পরিবার বলে অনেকেই বাড়িভাড়া দিতে চাইতো না। একবার একটা বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলাম, তখনো নির্মাণ কাজ চলছিল এবং সঠিক সময়ে আমাদের কাছে হস্তান্তর করতে পারবেন বলে বাড়িওয়ালা আশ্বাস দিয়েছিলেন। বাড়িওয়ালা সৌদি প্রবাসী,অমায়িক লোক। বাড়ি বানাবেন বলে দেশে এসেছেন। কাজ শেষে আবার চলে যাবেন। উনার স্ত্রীকেও আমাদের ভালো মানুষ হিসেবে পছন্দ হল , ভীষণ ভাল ব্যবহার। বুকিং মানি দেয়ার সময় বাড়িওয়ালা আমার বাবাকে বললেন – আপনি আমার বড় ভাইয়ের মত। আমি চলে যাওয়ার পর দয়া করে আমার বাড়ির খেয়াল রাখবেন।

আমরাও খুশি, কারন ভাল বাড়িওয়ালা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। নতুন বাসায় যাব,বাসাটা সুন্দর তাই আমাদের অনেক আনন্দ হচ্ছিল। মাস শেষ হওয়ার দুদিন আগে বাবা নতুন বাড়িটার খোঁজ নিতে গিয়ে দেখলেন এখনও কাজ শেষ হয়নি। অবাক ব্যপার, উনি তাতে মোটেও বিচলিত নন। বাবা খুব ভাল করে উনাকে বোঝালে উনি আশ্বস্ত করলেন যথাসময়ে কাজ শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় মাসের প্রথম তারিখে উনি কাজ শেষ করতে পারেননি,এদিকে আমাদের পুরনো বাসা ছেড়ে দিতে হবে। তখন ছিল বর্ষাকাল। ট্রাক এসে দাড়িয়ে আছে মালপত্র নেয়ার জন্য । কিছু একটা তো করতে হবে ,পুরনো বাসায় নতুন ভাড়াটিয়া আসবে আজ রাতে। এখানেও থাকা সম্ভব না । পরে নতুন বাসায় কোন রকমে মালপত্র রেখে আমরা আত্মীয়ের বাসায় রাত কাটালাম। আমাদের হয়রানির শেষ ছিল না সেদিন।

সেই থেকে শুরু হল বাড়িওয়ালার নতুন রূপ। প্রথম মাসেই ভূতরে বিদ্যুৎ বিল । সবচেয়ে অবাক ব্যাপার উনার বাসায় টিভি,ফ্রিজ থেকে আই পি এস সহ সব ব্যবহার করেও বিল আসে মাত্র ২৩০ টাকা। এ কি করে সম্ভব? এ ঘটনা প্রতি মাসেই ঘটতে থাকল। একসময় আমার মা এই নিয়ে বাড়িওয়ালার স্ত্রীর সাথে কথা বললে উনি রেগে যান ,এবং শেষে বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করতে বললেন। আমরাসহ মোট আটটি পরিবার এই বড়িতে ভাড়া থাকতাম। তারমধ্যে চার জনের এই সমস্যা হত।

আমরা যথারীতি বিদ্যুৎ অফিসের লোক এনে লাইন ,মিটার চেক করিয়েছি ,কিন্তু তিনি তাতে নাকি কোন গড়বড় খুঁজে পাননি । পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে সময় বেঁধে দিয়েছিলেন,ফলে রান্না বান্না, গোসল করাতেও আমাদের সমস্যা হতো । তার উপর কয়েক মাস পর ভাড়া বাড়িয়ে দেন।

এরকম বহু ঘটনা আছে যা লিখে শেষ করবার নয়।কিছু বললে উনি বলেন আপনারা তাহলে বাসা ছেড়ে দিন। আরে ভাই এটা তো আমরাও জানি। কিন্তু চাইলেই তো বাসা বদলানো যায় না ।

এই সব ঘটনা ভাড়াটিয়ার জীবনে ঘটবে এটা যেন স্বাভাবিক । বাড়িওয়ালারা যা ইচ্ছে তাই করবেন। যখন খুশি বাড়ি ভাড়া বাড়াবেন, বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিবেন। আরও কত কি !

সারা দিনের কর্মব্যস্ততার পর আমরা ভাবি ,শান্তির নীড়ে কখন ফিরে যাব। কিন্তু সেই নীড়টাই যদি অশান্তিতে ভরপুর থাকে,তবে সে দুঃখ আমরা রাখব কোথায় ?

বাড়িওয়ালারও কিছু অভিযোগ আছে। অনেক বাড়িওয়ালার অভিযোগ ভাড়াটিয়ারা অনেক সময় সময় মত ভাড়া দেন না ,এতে করে ব্যঙ্কের কিস্তি কিংবা অন্যান্য ঋণ দিতে তাদের সমস্যা হয় । অনেকে আবার বাড়ি ভাড়ার টাকায় সংসার চালান ,ফলে টানাপোড়ন দেখা দেয় , যা ভাড়াটটিয়ারা ভাবেন না।

অনেক ভাড়াটিয়া নিজের ভুল তথ্য দিয়ে বাড়ি ভাড়া নেন ,এবং অপ্রীতিকর কাজ করে থাকেন যার দায় ভার বাড়ীওয়ালার ঘাড়ে বর্তায়। দীর্ঘদিন ভাড়া থেকে অনেকে আবার দখল ছাড়তে চান না ,যা অনেক সময় আদালত পর্যন্ত গড়ায় ।

অনেক ভাড়াটিয়া বাড়ীর ক্ষতি করে থাকেন ,যা আদৌ উচিত নয়, ইতাদি।

ভাল বাড়িওয়ালার দেখাও আমি পেয়েছি।আমি এখন সুন্দর একটি বাসায় অনেক দিন যাবত আছি। বাড়িওয়ালা ও তার স্ত্রী খুবই ভাল মানুষ । আমাদের সমস্যা হচ্ছে কিনা নিয়মিত তার খোঁজ রাখেন।

ভাল বাড়িওয়ালা ও মন্দ ভাড়াটিয়ার সংখ্যা কম । আমরাবাড়িওয়ালার ভাল আচরণের অভাবে ভুগছি । এ সমস্যা আমাদের প্রতিদিনের । আমরা ভাড়াবাড়ি নিয়ে সারাক্ষন ভাবলে বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যায় না ? তাহলে আমরা অন্য কাজ কখন করব? সময় তো সেই ২৪ ঘন্টাই। সুতরাং এর দ্রুত সমাধান দরকার।

বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়া সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটানোর জন্য সরকারের নিরবতা ভাঙ্গতে হবে। বাড়িভাড়া আইন, ১৯৯১ কার্যকর করা উচিত ।

ব্যক্তি হিসেবে যদি একজন ভাল না হন,তবে তিনি একজন বাড়িওয়ালা কেন ভাল ফেরিওয়ালাও হতে পারবেন না । তাই আসুন আমরা ভাল মানুষ হবার চর্চা করি। আমরা সবাই সবার অবস্থান থেকে নমনীয় আচরন করি । অপরের মঙ্গল করার ইচ্ছা পোষণ করি । তবেই সব বিতর্ক এড়ানো সম্ভব। নয়তো আইন থাকলেও প্রয়োগের অভাবে আইনের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে।

লিয়া সরকার ।