বাল্যবিবাহ এবং কিছু কথা

লিনা জাম্বিল
Published : 16 Oct 2014, 11:33 AM
Updated : 16 Oct 2014, 11:33 AM

বাল্য বিবাহের বয়স নিয়ে নতুন করে আবার সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়েছে যা আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য কোনভাবেই কাম্য নয় । বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়ের সাথে ২১ বছরের কম বয়সী ছেলের বিয়েকেই বাল্যবিবাহ বলা হয়। ১৯২৯ সালের বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে বাল্যবিবাহ বলতে বোঝায়, বাল্যকাল বা নাবালক বয়সে ছেলে মেয়েদের মধ্যে বিয়ে। এছাড়া বর-কনে দুজনেরই বা একজনের বয়স বিয়ের আইন অনুযায়ী নির্ধারিত বয়সের কম হলে অর্থাৎ বিয়েতে মেয়ের বয়স ১৮ বছরের নিচে অথবা ছেলের বয়স ২১ বছরের নিচে থাকলে সেটাও আইনের চোখে বাল্যবিবাহ বলে চিহ্নিত হবে।
১৯২৯ সালের বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন অনুযায়ী-
-> বাল্যবিবাহ আইনের দৃষ্টিতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ
-> পিতা-মাতা সহ এই বিয়ের সাথে যুক্ত সকলেই শাস্তি পাবেন
-> বাল্য বিবাহ একটি বাতিলযোগ্য বিবাহ ।

২১ বছরের বেশি বয়সের কোন পুরুষ অথবা ১৮ বছরের বেশি বয়সের নারী কোন বাল্যবিবাহের চুক্তি করলে, সে ১মাস পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদন্ড বা ১ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড হতে পারে।

এত কিছু থাকার পরও বাল্যবিবাহের হার বর্তমানে 'বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের হার ৬৪%' | ২০১৩ সনে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ও আইসিডিডিআরবি পরিচালিত বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ সংক্রান্ত জরিপ প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে।যা আমাদের জন্য খুবই উদ্বেগজনক।

অথচ ইদানিং বিয়ের বয়স কমিয়ে মেয়েদের ১৬ এবং ছেলেদের ১৮ বছর করার জন্য যে পায়তারা চলছে তা কতটুকু ধবংসের পথ বানানো হবে তা আমাদের কল্পনার বাইরে । ভয়ানক একটি অবস্থা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে বলেই মনে হচ্ছে । ১৬ বছরের একটি কিশোরী যার ভাল মন্দ, বিচার বিবেচনা করার মানসিকতা যার পোক্ত হয়নি সে বিয়ে করে কিভাবে সামাল দিবে? নিজেকে সামাল দিবে নাকি স্বামীকে নাকি পরিবারকে? তারপরে বিয়ের পর পর ১ বছর না পেরোতেই যুক্ত হয় নতুন সদস্য, বাড়তে থাকে নতুুন ঝামেলা । শিশুকে যত্ন করবে না নিজেকে যত্ন করবে না পরিবারকে যত্ন করবে? দিশেহারা হয়ে যায় একজন কিশোরী নানা রোগ শোকে আক্রান্ত হতে থাকে যার কারনে চেহারার লাবন্য নষ্ট হয়ে যায় আর মেয়ে সন্তান জন্ম দিলে তো বাড়তে থাকে আরো যন্ত্রনার মাত্রা আর এদিকে স্বামী নামক মানুষটি আবার নতুন বউয়ের সন্ধানে ব্যাতিব্যস্ত হয়ে যায়। এত সুন্দর পৃথিবীতে বাঁচার ইচ্ছেটুকুও তখন ঐ কিশোরীর আর থাকেনা । কুড়িতে বুড়ি হয়ে যায় কথাটি তার জীবনে ১০০% প্রতিফলিত হয় । কি করবে সে বেঁচে থেকে এমন ভাবনা মাথায় ভর করতে থাকে ।

সোনার বাংলার সম্ভাবনাময়ী কিশোর কিশোরীদের জীবন সুরক্ষিত হোক –এ কামনা করি –এবং সবার কাছে তাই প্রত্যাশা করি । সরকার ইচ্ছে করলে তা রক্ষা করতে পারে ।