বাজেট এবং সাধারণ জনগণ

লিনা জাম্বিল
Published : 2 June 2017, 06:04 PM
Updated : 2 June 2017, 06:04 PM

বাজেট নিয়ে বেশী ভাবনা থাকে সাধারণত মধ্যবিত্ত সাধারণ মানুষের, কারণ এ শ্রেনীর মানুষের আয় খুবই সীমিত এবং সবসময়ই টানাপোড়ন দিয়ে সংসার, সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ, চিকিৎসা এবং অন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের যোগান দিতে হয় যার কারণে হিমশিম খেতে হয় । মাননীয় র্অথমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মহিত ২০১৭ – ২০১৮ র্অথবছরের বাজেট পেশ করেছেন। যেখানে ব্যায় ৪,০০,২০০ কোটি এবং আয় ধরা হয়েছে ২,৯৪,৪৯৪ কোটি তার মানে বাজেটের ঘাটতি ১,০৫,৭০৭ কোটি । এই যে এত পরিমান ঘাটতি তা কোথা থেকে আসবে?
আপাত দৃষ্টিতে এ সরকারের বড় সাফল্য হচ্ছে বাজেট সম্পর্কে রিক্সাওয়ালা থেকে শুরু করে মুদি দোকান, ফেরিওয়ালা, ছোট ব্যবসায়ী এমনকি দিনমজুর যারা তারাও বাজেট সম্পর্কে মোটামোটি ভাবে জানে মানে তারা বাজেট মানে জানে হলো জিনিসের দাম বাড়ানো এবং বাজেট মানে হলো সরকারের পক্ষ থেকে সবকিছুর উপর দাম বাড়ানো যা গরীব ও মধ্যবিত্ত মানুষদের জন্যই মূলত সমস্যার সৃস্টি করে । অনেক রিক্সাওয়ালাদের কথা হলো আমরা প্রতিদিন যা আয় করি তার কিছু অংশ ব্যাংকে রেখে দিতাম বিপদ আপদের জন্য এখন বাজেটের কারণে নাকি সেটাও কেটে নিবে ব্যাংক থেকে সরকার । সারাদিন রোদেপুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে নিজে রোজগার করে তার থেকে খেয়ে না খেয়ে কিছু রাখার চেষ্টা করি সমিতির মাধ্যমে যদি সরকার কেটে নেয় তাহলে এই যে এত কষ্ট করে টাকা কামায় করি তা রাখবো কোন দুঃখে।
যারা ব্যাংকের মালিক যারা র্কতৃপক্ষ যারা ব্যাংক পরিচালনা করে তাদের তো কিছু যায় আসবেনা । বিশ হাজার পরিমান লেনদেন করলেই সরকারকে কর দিতে হবে। এক লক্ষ টাকা থাকলেই কেটে নিবে এক হাজার টাকা। তার মানে ব্যাংকে যারা হিসাবধারী তাদের উপরই সব খড়গ চালানো হবে এমনই একটি কৌশল । একদিকে আমানত করা টাকার যেমন সুদ কমেেেছ তেমনি হিসাবে রাখা টাকা থেকেও কেটে নিবে । সুতরাং তার চেয়ে টাকা পয়সা আগেকার যুগের মত কাসার পাত্রে মাটিতে পুটে রাখলেই যেমন পরিমান তেমন থেকে যাবে কেটে কুটে আর কেউ কমাতে বা নিতে পারবে না।

দাম বাড়বে গ্যাস, বিদ্যুৎ সহ বাড়বে মোবাইল ফোনের দাম অথচ বড় লোকদের গাড়ীর দাম কমে যাবে । আড়াইলাখ টাকা ইনকাম হলেই কর বাধ্যতামূলক আবার ভ্যাট রেখেছে ১৫% । সবকিছুই যেন তালগোল মিলে একাকার আবার সরকারী র্কমর্কতাদের বেতন বৃদ্ধির ঘোষনা ইতিমধ্যেই দেয়া হয়েছে। আরেকটি বিষয় লক্ষনীয় যে, বেসরকারী র্কমর্কতাদের উপর বিশেষ নজরদারী এবং কর দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে । বলে কয়ে যেন ডাকাতি ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে এমন মনে হয় । চলতি অর্থ বছরে মাথাপিছু আয় নাকি হবে ১৬০২ ডলার মানে বছরে সোয়া এক লাখ টাকা একেক জনের তার মানে মাসে ১০ হাজার টাকার বেশি ইনকাম এক ব্যক্তির অথচ দেশে চরম দরিদ্রের হার এখনো ১২.৯% মানে ১৬ কোটির মধ্যে ২ কোটি ৬ লাখ মানুষ চরম দারিদ্রসিমার নীচে বসবাস করছে (বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো)। এই গরীব মানুষগুলোকে রেখেতো একটি দেশ উন্নয়ণ হতে পারেনা।
সামনে যেহেতু ভোটের ব্যাপার স্যাপার আছে সেহেতু নেতাদের হিসাব নিকাশের সাথে সাধারন জনগনের হিসাব নিকাশে বিস্তর ফারাক তো থাকবেই । জনগন চিন্তা করে নিজেদের দৈনন্দিন জীবন জীবিকার কথা আর নেতারা চিন্তা করে ক্ষমতার কথা একটার সাথে আরেকটার কোন মিল নেই থাকবেওনা যদিও জনগণের ভোটে নেতা র্নিবাচিত হয়।

সাধারন ও গরীব জনগণের কাছ থেকে কর নিয়ে বিলাসিতা করবে কেউ কেউ তা কিভাবে মেনে নিবে জনগণ। না নিলেও তো উপায় নেই। দেশে থাকতে গেলে সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতেই হয় এবং হবে । গরিব রিক্সাওয়ালার কর্ষ্টাজিত টাকা তাদেরই থাকুক নতুন বাজেটের কারণে আরেকজনের হাতে যেন না যায় এ প্রত্যাশাই করি।