নীরবতা সম্মতির লক্ষণ নয়

লিনা জাম্বিল
Published : 5 June 2017, 02:30 AM
Updated : 5 June 2017, 02:30 AM

নীরবতা সম্মতির লক্ষণ বলার অপেক্ষা রাখেনা। সবাই মানে সবাই জানে সেভাবেই সবাই বিশ্বাস করে। কিন্তু চারপাশে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত যে অপ্রত্যাশিত মানবতাবিরোধী অন্যায় অত্যাচার নির্যাতন ঘটে চলেছে তা দেখে কোন বিবেকবান মানুষ অনুভূতিহীনভাবে নিরবে চুপ করে বসে থাকতে পারেনা। টিভি অন করলেই দেখি, অনলাইন হলেই দেখি, সামাজিক বিভিন্ন পাতা খোললেই দেখি এত এত নির্যাতন অত্যাচার অনাচার বিবেক বর্জিত ঘটনা।

যাদের কথা বলার অভ্যাস নেই, একবারে নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পছন্দ করে, কোন বাইরের কোন কিছুতেই নিজের মতামতকে প্রকাশ করতে চায়না তারাও এ সময়ে যেন চুপ থাকতে পারছেনা। হয়তো খোলাখুলি ভাবে মতামত প্রকাশ করছেনা কিন্তুু মনের ভিতরে একটু হলেও মানবতাবোধের বোধটুকু নড়েচরে হয়তো বসছে, কিন্তু প্রকাশ করার পথ জানা নেই।

একটার পর একটা ঘটনা সারিবদ্ধ ভাবে লাইন করে করে মিছিল করে করে যেন চারিদিকে আবির্ভূত হচ্ছে। একটি অসাম্যতা, বর্বর ঘটনার ন্যায়বিচার শুরু হতে না হতেই আরেকটি নতুন আরো ভয়ংকররূপে আর্বিভূত হচ্ছে। আগের সেই ঘটনা তখন হারিয়ে যাচ্ছে আরেকটি ঘটনার ভীড়ে। সেই ঘটনার খবর কেউ যখন রাখেনা, রাখার মত সময় পরিবেশ পরিস্থিতি থাকেনা তখন অন্যায়কারী নির্যাতনকারীরা বিচারবিহীন ভাবেই সমাজে বুক ফুলিয়ে বিচরণ করে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে সবাইকে। তখন অসহায় হয়ে পরে বিবেকবান মানুষগুলো। বাহ্যিক বা বাস্তবে অনুভূতিহীন নীরব মনে হলেও নিশ্চয় ভিতরে ভিতরে প্রতিবাদের ভাষা কথা বলে যাচ্ছে।

পারিবারিক চাপে, সামাজিক চাপে. পেশাগত চাপে বা রাজনৈতিক চাপে সবাই সমানভাবে প্রকাশ্যে হয়ত প্রতিবাদ করার সুযোগ পাচ্ছেনা এবং পাইনা। আমি নিজের কথাই বলি। ভিতরে ভিতরে কত রক্তক্ষরণ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু প্রকাশ করতে পারছি কই? কত কত সীমাবদ্ধতা নিয়ে চলি, স্বাধীনভাবে কথা বলা যায়না, মন্তব্য করা যায়না, নিজের মত প্রকাশ করা যায়না যুক্তিগুলো তুলে ধরা যায়না চারিদিকে শুধুই সীমাবদ্ধতার দেয়াল ঘেরা। কত কথা, কত মন্তব্য, কত যুক্তি মনের ভিতরেই খেলে যাচ্ছে অবিরত কিন্তু প্রকাশ করা যাচ্ছেনা।

ধর্ষণ, হত্যা, নারী নির্যাতন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে নিরপরাধ ব্যাক্তিদের অকারণে জেল জুলুম, হয়রানী, ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে জবর দখল, ভাংচুর, গুম, সত্যকে মিথ্যা এবং মিথ্যাকে সত্য বানানোর জোর তৎপর, অপচেষ্টা আরো কত কিছু চোখের সামনে হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দেখেও না দেখার মত, শুনেও না শুনার মত, বুঝেও না বুঝার মত বোধহীনভাবে থাকতে হচ্ছে।

ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামার লেলিহান শিখা যেন জ্বলতে শুরু করেছে চারিদিকে কিন্তু স্বাধীনভাবে প্রতিবাদ করার মত পরিস্থিতি আর নেই। কারণ একটা বললে তার সাথে রং রস সত্য মিথ্যা লাগিয়ে এমনভাবে মিথ্যাচার শুরু করে, মান সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকা তো দূরের কথা, কোনভাবে প্রাণে বেঁচে থাকাটাও তখন হুমকিস্বরুপ। না বুঝে না শুনেই এমন ভাষায় গালি গালাজ শুরু করবে যা শুনলে কারো কারো মনে হবে এমন গালি শুনার আগে কেন মাটিতে মিশে গেলাম না।

সুতরাং এত কিছু অন্যায় অত্যাচার দেখার পরও শুধুমাত্র নিজের মানসম্মান এবং জীবন নিয়ে বেঁচে থাকার জন্যই অনুভুতিহীন অস্বাভাবিক অসুস্থ্য মস্তিষ্ক নিয়ে বিবেকবিহীন মানুষের মত বেঁচে থাকতে হচ্ছে নীরবে। চারিদিকে এমন পরিস্থিতি দেখে খুব মনে হচ্ছে নীরবতা সম্মতির লক্ষণ হতে পারেনা। পরিস্থিতির চাপে পরে নীরবে সহ্য করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত শুধুমাত্র সুন্দর দিন দেখার প্রত্যাশায়। তখন নাহয় না বলা কথাগুলো নীরব প্রতিবাদগুলো আলো হয়ে আলোকিত করবে!