জানতে শুরু করেছি গারোদের ইতিহাস

লিনা জাম্বিল
Published : 9 May 2019, 02:26 PM
Updated : 9 May 2019, 02:26 PM

বাংলাদেশ এবং ভারতের মেঘালয়ে দেখা যায় গারো আদিবাসীদের বসবাস।  গারো আদিবাসীদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ খৃষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হলেও  প্রথাগতভাবে গারোদের যে স্বকীয়তা রয়েছে সেটাকেই ধারণ করে চলেছে তারা।

আমি নিজে গারো আদিবাসী বলে এই জনগোষ্ঠী সম্পর্কে  আগ্রহ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের বই পড়ি ও জানি।  গারোদের যে ইতিহাস তা ভিন্নরকম বললে কমই বলা হবে। গারোদের ইতিহাস  খুবই বিচিত্র এবং অনেক সমৃদ্ধ মনে হয়েছে আমার কাছে । গারোদের জীবনযাত্রা, চারিত্রিক বৈশিষ্ট, সামাজিক জীবন,  প্রথা সবকিছুর মধ্যে রয়েছে নিজস্ব আমেজ।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় গারো সম্পর্কে বিস্তারিত তেমন লেখা পাওয়া যায় না । প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বইয়ে গারো জনগোষ্ঠী নিয়ে যে কয়েক লাইন পাওয়া যায় তা অনেক ক্ষেত্রেই গারোদের বাস্তব জীবন চিত্রের সাথে মেলে না বললেই চলে।

গারো ছেলেমেয়েরা বেশিরভাগই গারোদের উৎপত্তি সম্পর্কে জানে না বা জানার আগ্রহও তেমন নেই।  সহজলভ্য তথ্য না থাকা এর একটি কারণ।

শ্রী অঞ্জন জ্যোতির লেখা গবেষনামূলক গ্রন্থ  'চ্যাঞ্জিং স্ট্যাটাস অফ ওমেন ইন এ ম্যাট্রিলিনিয়াল গারো সোসাইটি' পড়ে নিজের জনগোষ্ঠীকে জানতে শুরু করলাম।

সুভাষ জেংচামের বাংলাদেশের গারো আদিবাসী বইটিতে গারো আদিবাসীর ১৩টি বিভিন্ন সামাজিক কাঠামোগত দলের কথা উল্লেখ আছে। এগুলো হলো – আওয়ে, আবেং, আত্তং, রুগা, চিবক, চিসক, দোয়াল, মাচ্চি, কচ্চু, মাত্তাবেং,  গারা গানচিং, মেগাম এবং  আতিয়াগ্রা।

শ্রী অঞ্জন জ্যোতির লেখা বইটিতে অবশ্য বারোটি দলের কথা বলা আছে । আতিয়াগ্রার উল্লেখ সেখানে নেই।

তাছাড়া  বিভিন্ন বইয়ে বিভিন্ন ধরনের তথ্য উপাত্ত রয়েছে যা একটি বইয়ের সাথে আরেকটি বইয়ের তথ্য উপাত্তের সাথে অনেক কিছুই ভিন্নতা রয়েছে ।

যেহেতু গারোদের কোনো ইতিহাস আদিযুগ থেকে লিখিত আকারে সংগৃহীত  ছিল না, মুখে মুখ ছিল সে কারণে হয়তো স্থান ও ব্যক্তিভেদে এমন তথ্যের ভিন্নতা রয়েছে।

গারোদের কৃষ্টি কালচার, সামাজিক কাঠামো, রীতিনীতি অনেক বৈচিত্রময়, সমৃদ্ধ এবং আকর্ষনীয় , অন্যদের সাথে তুলনা করলে সর্ম্পূন ভিন্ন ধরনের। গারো  অনেক লোককাহিনী থেকে জানার আছে, বোঝার আছে, শেখার আছে। যদিও আমরা গারো তরুণ প্রজন্মের অধিকাংশিই তা জানি না।

এজন্যই গারো নিয়ে লেখার ইচ্ছে জাগলো মনে। যেখানে তুলে ধরবো ইতিহাস, উৎপত্তি, সামাজিক কাঠামোগত বিষয়। মায়ের কাছ থেকে যে দুয়েকটা গল্প শুনতাম সেগুলো মিলিয়ে দেখারও একটা প্রচেষ্টা ছিল মাত্র। তাতে কিছুটা হলেও নিজের শিকড় সম্পর্কে জানবে ও বুঝবে বলে গারো প্রজন্ম।