৩য় বিশ্বে পড়ালেখা করাটা আফিম খেয়ে নেশাগ্রস্থ হওয়ার মত …

লোকমান বিন ইউসুপ,চিটাগাং
Published : 9 June 2012, 11:48 AM
Updated : 9 June 2012, 11:48 AM

কোন কোন দার্শনিক বলেছেন "ধর্ম হল আফিম" । আমি মনে করি এই উক্তি তাদের ব্যর্থতার প্রতীক। কারন ধর্মের ভালবাসা থেকে সাধারন মানুষকে নিজের ভক্ত করতে গিয়ে তাদেরকে প্রচন্ড বেগ পেতে হয়েছিল। ধর্মের জোর থেকে তাদের জোর ম্রিয়মান হয়েছিল বিধায় এ খেদোক্তি।

কিন্তু আমি মনে করি ৩য় বিশ্বে পড়ালেখা করাটা আফিম খেয়ে নেশাগ্রস্থ হওয়ার মত। স্পেশালি বাংলাদেশ। আমি জ্ঞান অর্জনের জন্য পড়ালেখাকে বুঝাচ্ছিনা। অন্ধকার দুরীকরনের জন্য যে পড়ালেখা সে পড়ালেখাকে স্বাগত জানাই।

কিন্তু চাকরি পাওয়ার জন্য পড়ালেখা আফিম খেয়ে নেশাগ্রস্থ হওয়ার মত। আমাদের দেশের সিস্টেম আমাদেরকে এই আফিম খাওয়ায়ে নেশাগ্রস্থ করে রাখতে চায়। চাকরী নাই, কর্মখালি নাই,নতুন কর্মসংস্থান নাই। দেশের বিভিন্ন সময়ের গভঃমেন্টগুলো কর্মসংস্থান তৈরীতে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য চাকরীর পড়ালেখা নামক আফিমের সৃষ্টি করেছে।

একজন শিক্ষার্থীকে এস.এস.সি , এইচএসসি পাশ করার পর কলেজে – বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে গিয়ে অনেক বেগ পেতে হয়। ভর্তি কোচিং আর টেনশন তাকে ছাড়েইনা। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য পাশ করাটায় তো বড় যোগ্যতা। কিন্তু সবাই তাহলে অনার্সে ভর্তি হতে পারবে না কেন? পাশ করাটাই তো উচ্চ শিক্ষার জন্য ছাড়পত্র। তাহলে আবার ভর্তি পরীক্ষা নির্যাতন কেন? রেজাল্ট অনুসারে ভর্তি করানো উচিত।

অনার্সে ভর্তি হওয়ার পর তীব্র সেশনজট, কোন্দল মারামারি, টেন্ডারবাজি আরও হরেক রকমের বৈরী পরিবেশে তাকে পাশ করে অবতীর্ন হতে হয় চাকরী পাওয়ার যুদ্ধে। চাকরী প্রার্থী আছে ১০ লাখ । পোস্ট খালি আছে ২০০। এদেশের ম্যানেজম্যান্ট কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে নি।

বেকারদের আত্বীয় স্বজন শুধু বেকারদের উপদেশ দেয় পড়ার জন্য।জব কোচিং কর। বিসিএস কোচিং কর। মাতাপিতার উপর চলে সন্তানদের মানুষ করার জন্য মেন্টাল টর্চার এবং প্রেসার। আচ্ছা !আমরা আম্মা আব্বাকে কি দিতে পারি? নতুন সংসার শুরু হলে দেখা দেয় ভাঙ্গনের সুর।

সবাই যদি মারাত্বক রকমের চাকরির প্রস্তুতি নেয় তবে সবাই কি চাকরি পাবে??? পাবেনা। চাকরীর জন্য এই পড়ালেখাটা হচ্ছে আফিম খাওয়ায়ে নেশাগ্রস্থ করে রাখার মত । বেকারকে সবাই বলে পড় পড় পড়। বেকারের অধিক পড়া , পছন্দের পাত্রীর বিয়ে হয়ে যাওয়া , টিউশনী জীবনের নিগ্রহ , ব্যাংকড্রাফট নির্যাতন, ঢাকায় পরীক্ষা দিতে আসার খরচ, বেকারজীবনের যাতনা তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। এই বেকাররা একটি ফ্লাট বাসাও পায়না থাকার জন্য। মালিক পক্ষ বলে দেয় ব্যাচেলর ভাড়া দেবেনা। নুন্যতম পড়ার পরিবেশ থেকেও তারা বঞ্চিত।

দেশের ম্যনেজমেন্ট পড়ালেখা নামক আফিম খাওয়ায়ে অনেক বেকারকে নেশাগ্রস্থ করে রেখেছে। অনেক পড়ে পরীক্ষায় টিকার পর মালিক পক্ষের মন্তব্য হচ্ছে আপনার অভিজ্ঞতা নেই। অভিজ্ঞতা থাকলেও ঘুষ লাগবে চাকরী পেতে। এ এক নিদারুন খেলা। সবার পরে লাগবে এমবিএ (মাস্টার অব বাথরুম ম্যানেজমেন্ট) ডিগ্রি। সবার মাঝে এখন হুড়োহুড়ি এমবিএ ডিগ্রি করার জন্য ।

বিসিএস নামক আরেক জগাখিচুড়ীর সম্মুখীন জাতির মেধাবী তরুনেরা। একবার প্রিলিমিনারীতে ঠিকলে হয়না । বারবার প্রিলিতে ঠিকে লিখিত পরীক্ষা দিতে হয়। ভাইভা! এটি আরেক শুভংকরের ফাকিঁ। ৫৫% চলে যাবে কোটাতে।দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রোল এক করার জন্য কোটাপদ্ধতি চালু করা দরকার। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতিপতি দিগকে কোটাপ্রথার মাধ্যমে রোল- ১ ,২, ৩ করা হোক।

বিসিএস এর জন্য না পড়ে ভাল জবের জন্য পড়া অনেক ভাল। বিসিএস করে দুর্নীতি করতে হবে ভাল করে বেচে থাকার জন্য । সেলারী এত কম যে বেচে থাকা যাবেনা। আবার ভাইভাতে গিয়ে যে হবে এর কোন গ্যারান্টি নাই। আমার অফিসে একজন ৪ বার ভাইভা দিয়েছে আর একজন ৩ বার ভাইভা দিয়েছে। পুরো টাইমটা লস। এর থেকে আইএলটিএস দিয়ে বাইরে চলে যাওয়া অনেক ভালো। এখানে জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই। বিসিএস হলেও লেজুরভিত্তি না করলে ওএসডি, সাসপেন্ড। হক কথা যেখানে বলা যাবেনা , যেখানে নিজের মেধা অনুযায়ী কাজ করা যাবেনা সেখানে গিয়ে আত্বা বিক্রি না করে বাইরে রাস্তায় মিছিল করে মরে যাওয়া অনেক ভাল।

এই বাংলাদেশে আমরা কাজ করতে ঘৃনা করি। কাজ করাটা আমরা স্টেটাস মেইন্টেন বিরোধী মনে করি। কাজের উদ্যোগ নেয়াটাকে আমরা ছোট করে দেখি। বিয়ের জন্য পাত্রী খুজতে গেলে দেখা হয় চাকরীতে কত টাকা পায়। কে কত ক্লাসিক চাকর সেটি দেখা হয়। মনুষত্ব্য দিয়ে নয় টাকা দিয়ে মানুষকে মূল্যয়ন করা হয়। তাই আমাদের সমাজে বনখেকো ওসমান গনি আর রেলখেকো অফিসার মন্ত্রীদের উদ্ভব হয়েছে।

আমরা পড়ালেখা করে নেশাগ্রস্থ হয়েছি। এই পড়ালেখা জ্ঞান অর্জনের জন্য নয় । মনের অন্ধকার বা চরিত্রের অন্ধকার দুরীকরনের জন্য নয়। টাকা কামানোর জন্য । সুন্দর একটা নারী পাওয়ার জন্য । অধিক বেতনের একজন স্বামী পাওয়ার জন্য।

পড়ুয়া সৎ ও শান্ত ছেলেটি পুলিশ হয়ে রুক্ষ ,বেয়াদব ও গুন্ডা প্রকৃতির হয়ে যায়। টাকা ঘুষ নেয়ার মত অমানবিক কাজটুকু করে নির্দ্ধিধায়। আমার পরিচিত অনেক পুলিশ অফিসার কোটিপতি হওয়ার পথে। আমাকে একজন এসআই বলল সে ৫ বছরে কোটিপতি হতে চায়। বিসিএস ক্যাডার , সরকারী চাকুরে, কোর্ট কাচারীর ছাপোষারা ,পোর্টের কর্মকর্তা-পিয়ন , সাংবাদিক , আইনজীবী , ডাক্তারদের মধ্যে অনেকে চরম অসৎ। এরা পড়ালেখা করেছে টাকা কামানোর জন্য । চরিত্রবান হওয়ার জন্য নয়। এরা আফিম খেয়ে নেশাগ্রস্থ হওয়ার মত পড়ালেখা করে নেশাগ্রস্থ ।

একজন বাংলাদেশী ছাত্র পাশ করার পর তটস্থ থাকে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হওয়ার জন্য, অনার্সে ভর্তি হওয়ার জন্য , চাকরী পাওয়ার জন্য , ভাল চাকরী পাওয়ার জন্য । পড়ে আর পড়ে আর নেশাগ্রস্থ হয় টাকা কামানোর জন্য । মীর মোশারফ হোসেন আজ যদি বেচে থাকত তবে অর্থকে মহাপাতকী না বলে বলত অর্থই জীবনের সব। একসময়ে আমার ছিল লৌহমানবের মত একটি মন যেটি আপোষ করতে চাইতনা। আজ সেই মনও কেন যেন বলে উঠে

"যদি চাও সফলতা মেনে নাও এই সিষ্টেম
ফেলে দাও স্রোতের মুখে
আদর্শ বিবেকও প্রেম
এই সমাজ মানবে তোমায় গাইবে তোমার ই জয়গান। "

শিক্ষক সমাজ অপাঙ্থেয়, করুনার পাত্র। মেধাবীরা শিক্ষক না হয়ে টাকার জন্য কেরানী হতে চায়। এই দেশের ধ্বংস অনিবার্য।