পুঁথি পাঠ শুনবেন, পুঁথি পাঠ?

লোরক
Published : 14 August 2011, 06:55 PM
Updated : 14 August 2011, 06:55 PM

বাংলাদেশের যদি কোন ইউনিক বা গর্ব করে বলার মত কিছু থাকে তাহলে তা হচ্ছে পুঁথি পাঠ। একসময় গ্রামের মানুষের বিনোদন ও শিক্ষার মাধ্যম ছিল এই পুঁথি পাঠ। সাধারণত সন্ধ্যায় কোন এক বাড়ির উঠানে জড় হয়ে সবাই এই পাঠ শুনত। পুঁথি পাঠের ভঙ্গিমা একে দিয়েছে স্বতন্ত্রতা। বর্তমান প্রজন্ম পুঁথি পাঠের সাথে পরিচিত নয়। এর জন্য দায়ী আমাদের স্যাটেলাইট চ্যানেল গুলো। আরেকটি কারণ হল- সমসাময়িকতা অর্থাৎ পুঁথির কাহিনীগুলো অনেক পুরাতন। কেউ এই পুরাতন পুঁথি শুনতে আগ্রহী হবে না। আমাদেরকে আধুনিক ও সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে পুঁথি রচনা করতে হবে যেমন মুক্তিযুদ্ধ, পুঁজিবাজার, স্বৈরাচার আন্দোলন, সমসাময়িক প্রেম ভালোবাসা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে পুঁথি লিখতে হবে। যারা পুঁথি লিখে তাদের শায়ের বলে। এখন শায়ের হওয়া কি এত সোজা???

বাংলাদেশে একমাত্র কাব্য কামরুল নামে এক ব্যক্তি পুঁথির এ্যালবাম প্রকাশ করেছে। লোরক সোসাইটির পক্ষ থেকে সাধুবাদ জানাই। লোরক আমাদের লোকসংস্কৃতিকে রক্ষা করে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে তার সাংস্কৃতিক সৌন্দর্যের মাধ্যমে তুলে ধরতে চায়। আমরা যদি আমাদের শেকড়কে ভুলে যাই তাহলে জাতি হিসেবে আমরা মাথা তুলে দাড়ালেও আমাদের কোন বংশ পরিচয় থাকবে না।

একটি সুসংবাদ দিতে চাই। আমাদের লোরক পরিবারে তিনজন সদস্য আছে যাদের বিধাতা পুঁথি লেখার ক্ষমতা দিয়েছে। তারা সমসাময়িক অনেক বিষয় নিয়ে পুঁথি লিখতে পারে। লোরক তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করতে চায়। আমাদের ইচ্ছা আছে একটি পুঁথির এ্যালবাম প্রকাশ করা। যদি কেউ এই শায়েরদের পৃষ্ঠপোষকতা করতে চান তাহলে আওয়াজ দিয়েন।

তারা কেমন পুঁথি লেখে তার একটা নমুনা স্বরূপ একটি পুঁথি আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি। আপনাদের মন্তব্য আশা করছি।

বাংলাদেশী ভাইয়েরা শোন নিবেশিত মনে,

দেশীয় সংস্কৃতির গল্প বলিব এই ক্ষণে।

গ্রামের বাড়িতে দেখি সেদিন সকালে উঠিয়া

একদল শিশু গান গাহিয়া যায় ধান ক্ষেত ছুটিয়া।

কিন্তু তাহাদের গানের ভাষা অপিরিচিত ছিল,

অপরিচিত ভাষায় তাহারা সবাই গান ধরিল।

দল বাঁধিয়া গেল সবাই সেচকলের কাছে,

গেলাম আমি কৌতূহলে তাহাদের পাছে পাছে।

সেচকলেরই জলে তাহারা মুখ ধৌত করিল,

সাথে সাথে তাহারা আবার গানের সুর ধরিল।

তাহার পড়ে শিশুগুলি বসে সবুজ ঘাসে,

ততক্ষণে আসিলাম ভাই তাহাদেরি পাশে।

নিকট হইতে শুনি যখন তাহাদের মুখের গান,

আচমকাই কাপিয়া উঠে দেহ মন প্রান।

অবিরত হিন্দি ইংলিশ গাহিতে তাহারা থাকে,

ফাঁকে ফাঁকে জোড় গলায় শিলা শিলা বইল্যা ডাকে।

বুঝিলাম যখন চোখের সামনে এই ঘটনা ঘটিল,

গ্রামে গঞ্জেও শিলা তাহার জায়গা করিয়া নিল।

বহু আগেই কাজলা দিদি নিল বিদায় দেশে,

হইল জায়গা কাজলা দিদির বইয়ের পাতা শেষে।

কম্পিউটারে হইল ব্যস্ত শিশু দিনে দিনে,

গোল্লাছূট আর বৌ ছি খেলা নাহি কেহ চিনে।

ডাংগুলি আর দারিয়াবান্দা গেল জাদুঘরে,

তাহাদের জায়গায় মাঠে এখন ক্রিকেট চোখে পড়ে।

বিরক্তকর লাগে আজই জারি সারি ভাটিয়ালি,

বাড়িল ভাই দিনে দিনে পপ রিমিক্স এর প্রীতি।

হারাইলো ভাই জারি সারি পালা গানের মেলা,

যেদিকে যাই দেখি খালি ধান্দাবাজির খেলা।

বাউল গান আর পল্লী গান জোয়ারে ভাসিলো,

র‍্যাপ মিউজিক রক মিউজিক কত কি আসিল।

বিদেশী শিল্পী আসে দেশে কয়দিন পরে পরে,

পর সংস্কৃতি ছড়ায় তাহারা মোদের ঘরে ঘরে।

পর সংস্কৃতিতে আমরা ভুলিলাম জনে জনে,

নিজ পরিচয় যাই ভুলিয়া আমরা ক্ষণে ক্ষণে।

যাহারা আজও নিজ সংস্কৃতি ধরিয়া রাখিলো,

জীবন দশায় তাহারা আজ অসহায় থাকিলো।

সংস্কৃতি কর্মী মরিলে আমরা সুন্দর কথা বলি,

সারা জীবন যদিও তাহাদের ক্ষতি করিয়া চলি।

এইতো সেদিন সংবাদপত্রে খবরও আসিল,

বাউলের দল্কে জোড় করিয়া চুল দাড়ি কাটিল।

আমাদেরই ভুলের কারণে এই ঘটনা ঘটে,

আমরাই পর সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক বটে।

সরকার আর জনগনে সকলে মিলিয়া,

উৎসাহিত হইলাম বড় পর সংস্কৃতি নিয়া।

তখন যদি নিজ সংস্কৃতির কথা কেহ বলে,

মুখে মুখে তাহাদেরই সমালোচনা চলে।

আমাদেরই সংস্কৃতি ভাই সব সংস্কৃতির সেরা,

এই সংস্কৃতি ভাই বর্ণাঢ্য এক ইতিহাসে ঘেরা।

রক্ত দিয়ে কেনা ভাষা সমৃদ্ধ সংস্কৃতি,

দিনে দিনে হারাইতেছে জনগনের প্রীতি।

মধুসুধন বহু আগে পরের দেশে গিয়া,

কাজ করিল সেই দেশেরই সংস্কৃতি নিয়া।

সংস্কৃতিতে আমরাই সেরা ইহা চির সত্য,

তাইতো পরে পাইলো শিক্ষা মধুসুদন দত্ত।

অবশেষে মধুসুধন ফিরিয়া নিজের দেশে,

সাহিত্য সংস্কৃতি নিয়া কাজ করিল শেষে।

মধুসুদন যেই শিক্ষা পায় বহু বছর আগে,

আজও নাহি জুটিল সেই শিক্ষা মোদের ভাগে।

এই প্রতিভাগুলো রক্ষা করার জন্য দরকার আপনাদের সাহায্য। আশা করছি সাথে পাবো। আমাদের ওয়েবসাইট ভ্রমণ করতে পারেন www.lorok.com