বাঙ্গালীদের রসনাভোজঃ বগুড়ার দই

লোরক
Published : 20 Dec 2011, 06:45 AM
Updated : 20 Dec 2011, 06:45 AM

পাকিস্তানের তৎকালীন স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান বগুড়ায় এসে দইয়ের স্বাদ পেয়ে ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তাদের সহানুভূতি পেতে পাঠান এই দই।

বিদেশে বগুড়ার দইয়ের খ্যাতি সর্বপ্রথম ১৯৩৮ সালে ইংল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়ে। ওই বছরের গোড়ার দিকে তৎকালীন বাংলার ব্রিটিশ গভর্নর স্যার জন এন্ডারসন বগুড়া নওয়াববাড়ি বেড়াতে এসে প্রথম দইয়ের স্বাদ গ্রহণ করেন। তাকে কাচের পাত্রে তৈরি করা বিশেষ ধরনের দই খেতে দেওয়া হয়। লোভনীয় স্বাদের কারণে গভর্নর এন্ডারসন বগুড়ার দই ইংল্যান্ডে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন।

বগুড়ার দই এর স্বাদ পেতে এখন ভারত উঠে পড়ে লেগেছে। গত বছর জলপাইগুড়ি জেলার চেম্বার কর্মকর্তাদের মধ্যে বগুড়ার দই নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। ওই সময়ে সেখানে অনুষ্ঠিত বাণিজ্যমেলায় বগুড়ার দইয়ের কদর এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে বগুড়া থেকে ১০ মেট্রিক টন (প্রতিটি ৬শ' গ্রাম ওজনের ১৭ হাজারেরও বেশি সরা) দই সরবরাহের অনুরোধ জানানো হয়েছিল। পরে অবশ্য অল্প সময়ের মধ্যে এত দই পাঠানো যায়নি। গত বছর ডিসেম্বরে জলপাইগুড়িতে অনুষ্ঠিত নর্থ বেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এনবিএনসিসিআই) আয়োজিত বাণিজ্যমেলায় পরীক্ষামূলকভাবে ৫শ' কেজি দই পাঠানো হয় বগুড়া থেকে। আর যায় কোথায়! দইয়ের স্বাদ পেয়ে সেখানকার লোক পিপড়ের মতো লাইন ধরে। ভিড় করতে থাকে স্টলে। এত চাহিদা পূরণ করা যায়নি।

বাংলাদেশের অন্যান্য জেলা কিংবা অঞ্চলে উৎপাদিত হলেও কিছু বিশেষত্বের কারণে 'বগুড়ার দই'-এর খ্যাতি দেশজুড়ে। উৎপাদন ব্যবস্থার প্রতিটি পর্যায়ে কারিগরদের (উৎপাদক) বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণের পাশাপাশি মান নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তারা যত্নবান হওয়ায় বগুড়ার দই স্বাদে-গুণে তুলনাহীন। প্রায় দেড়শ' বছর আগে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ঘোষ পরিবারের হাত ধরে বগুড়ায় দইয়ের উৎপাদন শুরু। পরবর্তী সময়ে বগুড়ার নওয়াব আলতাফ আলী চৌধুরীর (পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলীর বাবা) পৃষ্ঠপোষকতায় শেরপুরের ঘোষ পরিবারের অন্যতম সদস্য গৌর গোপাল বগুড়া শহরে দই উৎপাদন শুরু করেন।

বগুড়ার দই ব্রিটেনের রানী ভিক্টোরিয়া, রানী এলিজাবেথ থেকে শুরু করে মার্কিন মুল্লুকে পৌছে গেলেও আমরা এই দই বড় পরিসরে রপ্তানী করতে পারছি না। রফতানির সম্ভাবনা থাকলেও কাস্টমসের ট্যারিফ সিডিউলে পণ্যের তালিকায় দইয়ের নাম অন্তর্ভুক্ত না থাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের বাইরে বাজার সৃষ্টি করা সম্ভব হচ্ছে না।

আশা করছি সরকার এই বিষয়ে আন্তরিক হবে। আমাদের দেশীয় খাবারের এত সুনাম তারপরও কেন আমরা এ থেকে মুনাফা অর্জন করতে পারছি না তা এক বড় দুঃখ।

আমাদের ফেইসবুক পেইজে গিয়েও বাঙ্গালিদের রসনাভোজ সম্পর্কে জানতে পারেন-
লোকসংস্কৃতি রক্ষা করি (লোরক) সোসাইটি>