হায়রে শহীদেরা!‎

লুৎফর ফরাজী
Published : 4 June 2011, 03:45 PM
Updated : 4 June 2011, 03:45 PM

দুর্ভাগা আমি। স্বাধীনতা সংগ্রাম দেখিনি। দেখিনি স্বাধীনতার জন্য পাগল আমাদের পূর্বসূরিদের টগবগে যৌবনের ‎বীরত্বপূর্ণ আত্মত্যাগ। দেখিনি পাকিস্তানী হায়েনাদের নির্মমতা। আমাদের মা-বোনের গগনবিদারী ‎আর্তনাদ। দেখিনি বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের দীপ্ত ভাষণ। শুনিনি কালুর ঘাট বেতার ‎কেন্দ্র থেকে প্রচারিত শেখ মুজিব স্বাক্ষরিত স্বাধীনতার ঘোষণা জিয়ার প্রদীপ্ত কণ্ঠে। হায়েনা গাদ্দার ‎রাজাকার আল বদর আল শামছের নিষ্ঠুরতা। দেখিনি সন্তান হারানো দুঃখিনী মায়ের শেষ রাতের অঝর ‎ক্রন্দন। আল্লাহর আরশও কেঁপে যেতো যেই কান্নার তীব্রতায়। দেখিনি রক্তের হোলি খেলায় মত্ত পাক নরপশুদের উদ্দাম উল্লাস। দেশীয় গোক্ষুরদের শয়তানী হাসি। রক্ত স্রোত ডিঙ্গে। জালিমের নিম্রমতা ভেদ ‎করে উঠা স্নিগ্ধালোয় উদ্ভাসিত স্বাধীনতার প্রদীপ্ত দিবাকর দেখার সৌভাগ্যও আমার হয়নি। কারণ আমি যে ‎তখন জন্মই নেইনি

তবে শুনেছি মনভরে। পড়েছি আকুল হয়ে। আমাদের বীরত্বমাখা ইতিহাস। গর্বে বুকটা ভরে উঠেছে। ‎আমরা মাথা নত করা জাতি নই। চির উন্নত মম শির, শির নেহারী আমারী নত শির ঐ শিখর হিমাদ্রীর। ‎চোখ থেকে ঝরে পরেছে মনের অজান্তে তপ্ত অশ্রু। হায়! ওরাইতো ছিল মানুষ। নিজের জীবন দিয়ে ‎দেখিয়ে গেছেন কেমন করে ভালবাসতে হয় দেশকে। যে মা-বোনের ঘোমটা দেয়া মুখটি দেখতে পেতোনা ‎প্রতিবেশিও, সেই তাদের হানাদার অমানুষরা করেছে বেইজ্জত।

দেশের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করা ঐ সকল শহীদদের সঠিক কদর কী আমরা করছি? দেশদ্রোহী-‎রাজাকাররাতো এখনও বহাল তবিয়তে। দাম্ভিক উক্তিতে কাঁপিয়ে দেয় দেখি মুক্তিযোদ্ধাদের কলজেটাও। ‎শত মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠনকারী হায়েনাদের এখনো দেখি বিচার হবে কীনা দ্বিধায় আছে আমাদের ‎কর্তারা। এরকম চিহ্নিত খুনীরা নিরাপদে দম্ভ করবে বলে কী এতো রক্ত বিসর্জন? এতো মায়ের সন্তানের ‎কুরবানী? মা-বোনের ইজ্জতের এই কী প্রতিদান? আমাদের বোধোদয় হবে কী কখনো? আমাদের ‎পরবর্তী প্রজন্মের কাছে জবাব দেবার মত কোন যুৎসই উত্তর কি আমাদের জানা আছে? নাকি বলব-বাবা! ‎আমরা আসলে এখনো স্বাধীন হয়নি!!!! ‎

জাতির বিবেকের কাছে আমার প্রশ্ন-যেই স্বাধীন দেশে আমরা আজ দম্ভ করে ঘুরে বেড়াই। যাদের জন্য ‎অর্জিত এই সুন্দর আমাদের দেশ। তাদের জন্য আমরা কী করছি? আমার জনা মতে এ দেশের শহীদ ‎হওয়া অধিকাংশ শহীদ ছিলেন মুসলমান। মুসলমান বলেই আমরা জানি-কবরে একজন মুসলমান কতটা ‎অসহায়। দুনিয়ার মানুষের অশ্রু ঝড়ানো দু'য়ার কতটা কাঙ্গাল হয়ে অপেক্ষা করে তারা। একটু দু'য়া, আর ‎কুরআন তিলাওয়াত তাদের কবরকে কতটা সুখে করে আচ্ছাদিত। কিন্তু আফসোস! আমরা স্বাধীনতা আর ‎বিজয় দিবসে তাদের জন্য ফুলেল শুভেচ্ছা আর দেশের গান গাইলেই মনে করি তাদের প্রতি আমাদের ‎দায়িত্ব শেষ। অথচ এই ফুলের বিসর্জন থেকে তারা শতকোটি গুন বেশি খুশি হতো আমাদের মুসলমান ‎শহীদেরা, যদি তাদের জন্য কোরআনখানি হতো। অশ্রুবন্যায় প্লাবিত দু'য়া তাদের জান্নাতি মাকামকে ‎করতো আরো উর্ধ্বমুখী। কিন্তু তবলা আর হারমোনিয়ামের ঝংকারে তাদের কবরে আমরা কি পৌঁছুচ্ছি ‎একবার ভাবার কী দরকার মনে হয় আমাদের? আমরা কী মেনে নিব-যাদের জন্য আমাদের এতো ‎আত্মত্যাগ তারা আমাদের মৃত্যু দিবসে আমার জন্য গান গেয়ে আমার কবর আযাবের কারণ হবে???‎

শুধু আবেগ নয় শান্ত মস্তিষ্কে বিষয়টি নিয়ে ভাবার জন্য সবার প্রতি আমার আকুল আবেদন রইল।