১৭৫৭ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানি বাংলা –বিহার -উড়িষ্যা জয় করে বাংলার কিছু মীর জাফর সহ আরও অনেকের বিশ্বাসধাতকদের মাধ্যমে। ক্ষমতার মোহ বিশ্বাসধাতকদের অন্ধ করেছিল। বিভেদের দেয়াল তখন ক্ষমতার মোহ। লর্ড ক্লাইভের সেনারা যখন পরাজিত নাবাব সিরাজুদ্দউলাকে ধরে নিয়ে যায়, সেই সময় রাস্তায় যত লোক ছিল তারা যদি একটা করে কঙ্কর নিক্ষেপ করতো তাহলে লর্ড ক্লাইভের সেনাবাহিনী অস্তিত্ব বিলিন হতো। তখন মানুষ দেখে অভ্যস্ত রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, না হয় আরেক নতুন রাজা আসলো, আর সাধারন মানুষ তখন নির্বিকার। লর্ড কর্ণওয়ালিশ বিভেদের দেয়াল তুলেন মুসলিম এলাকায় হিন্দু জমিদারদের খাজনা আদায় করতে দিয়ে। এরপর বঙ্গভঙ্গ সহ সবকিছুতেই হিন্দু-মুসলিম বিভেদ বেড়েছে। "ভেঙ্গে ভেঙ্গে শাসন কর" ব্রিটিশদের ভারত উপমহাদেশ শাসনের মুল মন্ত্র।
১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্থান স্বাধীন হয়, হিন্দু–মুসলিম বিভেদের দেয়াল তুলে। হিন্দু–মুসলিম বিভেদ এমন পর্যায়ে পৌছায় শত শত হিন্দু-মুসলিম সহ অনেকেই মারা যায় দাঙ্গায়। আর এই বিভেদ আজও বিদ্যমান। বাংলাদেশে আছে মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান সহ আরও অনেক জাতি গোষ্ঠী। আর বাংলাদেশে সবাই মিলে মিশে বসবাস করে। কিন্তু একটা শব্দ "বিভেদ" আমাদের দেশ থেকে মুছে ফেলা যায়নি। নির্বাচনের পরে হিন্দুদের ঘর – বাড়ি, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে ছাই করাটা নিয়মিত, হটাত করে বৈদ্ধ মন্দির জ্বালিয়ে দেয়া সহ অনেক কিছু, কিন্তু ইসলামে কি বলা আছে এভাবে অমুসলিমদের অপর নির্যাতন করতে? বলা নেই, তবে তারা করে কেন, কারন হিন্দু–মুসলিম বিভেদের দেয়াল।
আজও বর্তমান বাংলাদেশের রাজনীতির নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের পর দেখে নেয়ার রাজনীতি বিদ্যমান। নেতারা ইতিহাস নিয়ে নানান সময় নানান কথা বলেন যাতে বাংলাদেশে বিভেদের দেয়াল মজবুত হয়। শেখ মজিবর রহমান এবং জিয়াউর রহমান তাদের ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অবদান নিয়ে একে অপরকে আক্রমন, পাল্টা আক্রমন বিদ্যমান। উদাহরনঃ
১] ১৯৭১ সালে ৭ মার্চ শেখ মজিবর রহমানের ভাষণ আর বর্তমানে ৭ মার্চ তারেক রহমানের মুক্তি দিবস।
২] ১৫ ই আগস্ট শেখ মজিবর রহমানের মৃত্যু দিবস, ১৫ ই আগস্ট বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন।
৩] স্বাধীনতার ঘোষক শেখ মজিবর রহমান যখন আওয়ামী লীগ সরকার আর জিয়াউর রহমান যখন বি এন পি সরকারে থাকে।
ইত্যাদি…
বি এন পি সরকারে থাকলে এক ইতিহাস আর আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে আরেকটা ইতিহাস।
নরেন্র মোদী হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় এত ভালো ভুমিকা রাখেন যে ভারতের কোন মুসলিম নরেন্র মোদীকে ভোট দিতে চায় না। নরেন্র মোদী আরও অনেক নেতা বিভেদের দেয়ালকে মজবুত করে নির্বাচনী পরীক্ষায় পাস করতে চান। কয়েকদিন আগে এক ভারতের নেতা বাংলাদেশের কাছে ভুমি দাবি করলেন যা অযৌক্তিক।
অনেক সমস্যায় ভারতের সাথে বাংলাদেশের বিভেদ তৈরি হয়, ভারত ও বাংলাদেশের মনোভাব ইতিবাচক হউয়া জরুরী। পানি নিয়ে সমস্যা, আমাদের দেশে ভারত বিরোধী মনোভাব তৈরি হয়, যা ভারত নিজে তৈরি করে। ভারতের যেমন বাংলাদেশের সহযোগিতা দরকার তেমনি বাংলাদেশের ভারতের সহযোগিতা দরকার। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সকল সমস্যার সামাধান সম্ভব। ভারতের রাজনীতির ভিতরে অনেক মত বিরোধ বিদ্যমান, কিন্তু জাতীয় ইস্যুতে তারা একমত। আর আমাদের বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে বাংলাদেশের সব দল একমত হতে পারলনা। তবে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন থামেনি।
বাংলাদেশে একে অপরকে আক্রমন আর বিভক্তি আনলে কি দেশ এগিয়ে যায় না পিছিয়ে যায় তা মালয়েশিয়া থেকে জানা যাক, মালয়েশিয়াতে তিনটি জাতি বিদ্যমান, মালয়, চীনা, এবং ইন্ডিয়ান। ডঃ মহাথির মুহাম্মদ তিনটা জাতিকে এক করার কারণে, বর্তমান মালয়েশিয়ার উন্নতি। মালয়েশিয়াতে যখন একটা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না তখন বাংলাদেশে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আর অনেক উন্নতির সম্ভাবনা। আজও উন্নতির সম্ভাবনা আছে বংলাদেশে, যা আমরা আর কোন বিভেদের দেয়াল তুলে না হারাই।
আল্লাহ ভাল জানেন আর কত বিভেদের দেয়াল আছে এই বাংলাদেশে। আল্লাহ যেন আমাদের দেশ, মানুসের মধ্যে থেকে বিভেদের দেয়াল সরিয়ে দেন। আমাদের সবার সাথে মিলেমিশে চলার তৌফিক দান করেন।