অনায়াসে মাসটাশ! (১ম পর্ব)

মহানীল বঙ্গোপাধ্যয়
Published : 17 Sept 2017, 03:09 AM
Updated : 17 Sept 2017, 03:09 AM


শুধুমাত্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভূক্ত দেশের ৬০টি জেলার ৩৯২টি, মতান্তরে ৪৯৮ বেসরকারী অথবা বা ৫৫৭টি সরকারী-বেসরকারী কলেজের মাধ্যমে প্রতিবছর ৩ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীকে স্নাতক সম্মান ডিগ্রি প্রদান করে আসছে।

পূর্বপ্রচলিত তিন বছরের সনাতনী ধারা পরিবর্তন করে, ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষ হতে প্রফেশনাল কোর্স হিসাবে চারবছর মেয়াদী স্নাতক (সম্মান) এবং একবছরের স্নাতকোত্তর কোর্স শিক্ষাক্রম চালু করা হয়। উচ্চশিক্ষাকে দোরগোড়ায় এনে দিতে প্রতিবছর বেসরকারী কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমতি-স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে।

সরকারী কলেজের দৈন্যদশার সংবাদ বহুল প্রচারিত। দেশের অন্তত একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় নেই যাকে মানসম্মত বলা যায়। বেসরকারী কলেজের ৯০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান, দৃশ্যত পাঠাগার-সেমিনারবিহীন।দুইজন শিক্ষক বিশটিরও অধিক স্বতন্ত্র বিষয়ের পাঠদান করে থাকেন। উপকরণ, প্রশাসনসহ অবকাঠামোগত দুর্বলতার চিত্র শতভাগ প্রতিষ্ঠানের চলমান চলচ্চিত্র।

প্রাচীন যুগের তপোবনীয় শিক্ষার অনুকরণে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কলকাতায় ১৯২১ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৫১ সালে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি লাভ করে। বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিনস্থ কলেজগুলো জনহীন গভীর বনের মতও হতে পারেনি। এমন শিক্ষালয় থেকে প্রতিবছর পাশ করা শিক্ষার্থী কালক্রমে শিক্ষক হয়ে গেলে দাতা-গ্রহীতার আন্তব্যক্তিক সম্পর্ক ও অনায়াসে ডিগ্রি লাভের বিষয়টি নিয়ে রঙ্গ করা অপ্রাসঙ্গিক ও রসহীন মনে হতে পারে না।

বরং, বাংলাদেশকে উচ্চশিক্ষিত করে তুলতে আদিঅন্তহীন প্রচেষ্ঠা দেখে আনন্দিত কিংবা শিক্ষারসে সঞ্চারিত হয়ে বিণোদিত হওয়া হয়ত মন্দ নয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সামগ্রিক চিত্র সর্বোচ্চ মাত্রার ব্যঙ্গার্থক ও হাস্যকর কমেডিপূর্ণ। শিক্ষার প্রধান দুইটি ভিন্ন উপাদান হলো শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী এবং উপাদান দুটির মধ্যে আপেক্ষিকতার সম্পর্ক থাকা আবশ্যিক।

প্রত্যহঘটিত শিক্ষারঙ্গকে প্রাণখোলা ও স্বাস্থ্যপ্রদ দমফাটানো হাসির লিখিত প্রকাশ করতে, ব্যাঙ্গাত্মক শিরোনামের অবতারণ। শিরোনামটি প্রাসঙ্গিক না হলেও অবাস্তব নয়। অনায়াসে ইংরেজীতে "ইজিলি ডান্" এবং "কেয়ারলেসনেস্", "এফোর্থলেস্" বলে অথবা বাংলায় শব্দগুলোর অর্থের সাথে মানবদেহের মুখে জন্মানো গোফ বা গুম্ফের সচিত্র মিল রয়েছে। ছেলে বা পুরুষদের হরমোনজনিত কোন সমস্যা না থাকলে, বয়সের সাথে সাথে আপনাআপনি গোফরেখা দেখা দেয়। বিপরীতে, মেয়েদের হরমোনজনিত সমস্যা থাকার ফলে মুখে গোফ দেখা দিতে পারে। তেমনি, কোনরকম ভর্তি হতে পারলে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করা স্বাভাবিক। অনায়াসে করতে না পারাটা হরমোনজনিত সমস্যার ফল বলে সহজেই ধারণা করা যায়।

বিগত দশ বছরে এদেশের অনার্সসহ মাস্টার্স কমপ্লিট করা চাকুরীপ্রার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। চার বছরের প্রফেশনাল অনার্স, তারপর এক বছরের মাস্টার্স কোর্স পাশ করা যুবক নিজের বিভাগ ও পঠিত বিষয়াদির নাম জানাতে ব্যর্থ বলে পরিলক্ষিত হলে উক্ত ডিগ্রিসমেত পড়ালেখাকে অনায়াসকে অনার্সে, মাসটাশ বা গোফকে মাস্টার্সরূপে অংকন করা হয়েছে। পাবলিক বা সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে প্রতিদিন একটি হলেও হাস্যকর অসংগত বা পাগলাটে ঘটনার সংবাদপত্রে প্রচারিত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক, শিক্ষাবিদ ও লেখক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ইংরেজী বিভাগে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ ইংরেজী দূরে থাক বাংলা বাক্যও শুদ্ধ করে লিখতে পারে না। এমনকি এদের সংখ্যা ৮০ শতাংশ বলেও জানান।

যশোর শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আমিরুল আলম খান জানিয়েছেন, এই শিক্ষা শিক্ষাও নয়, সৃজনশীলও নয়। স্ব-স্ব ব্যক্তিদ্বয়ের অবস্থান স্বীকৃত হলে সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব যে, সামান্য ঘটনার বৃহদাকারের ব্যপ্তি থাকতে পারে। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক ও শিক্ষক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ক্লাসটা চালিয়ে নিতে, বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ে "কুটনীতি" শব্দটিকে- গ্রামাঞ্চলে প্রচলিত কুটনামি, কুবুদ্ধি ইত্যাদির মত খারাপ একটি নীতি বললেও চলে। আবার, ভারতের রাজনীতিতে মনমোহন সিং বড় নাকি সোনিয়া গান্ধী বড়- এমন প্রশ্ন করা বা ধারনার বাইরে থাকা উক্ত বিভাগের প্রভাষকের ৪/৫ বছরের সম্মানসহ মাস্টার্স জ্ঞানার্জনের নমুনা প্রকাশ করে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান (অনার্স) ১ম বর্ষে ভর্তির পরীক্ষার ভর্তিচ্ছু, আইটি ভবন (IT Bhabon) কে 'ইট' ভবন উচ্চারণ অনার্স সন্ধানী আগামী দিনের মাস্টার্স।