আমরা এখন কোথায় যাব, কার কাছে চাইবো প্রতিকার

মাহবুবুল আলম
Published : 18 July 2012, 05:28 PM
Updated : 18 July 2012, 05:28 PM

বাংলাদেশের ভেজাল সন্ত্রাসীদর কাছে জিম্মি এখন দেশের ১৫ কোটি মানুষ । বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্যে ভেজালের কারণে আমাদের জনস্বাস্থ্য এখন চরম হুমকীর সন্মুখীন । এতদিন আমরা বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল মেশানোর কথা শুনে ও জেনে আসলেও নকল খাদ্যদ্রব্যের কথা কমই জানি । সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ও পিলে চমকানো খবর হলো ভেজাল সন্ত্রাসীরা এখন খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল মিশিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছেনা. তারা এখন তৈরি করছে নকল দুধসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী । এমন ধরনের একটি খবরে দেশের প্রতিটি মানুষ আতঙ্কিত না হয়ে পারছেনা । আসন্ন রোজার মাসকে সামনে রেখে অতি মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ীরা নকল দুধ তৈরি করে আকর্ষণীয় প্যাকেটে বাজারে ছাড়ছে নকল দুধ । ১৭ জুলাই ২০১২ `দৈনিক বাংলাদেশ সময়' ইকবাল হাসান ফরিদের `তৈরি হচ্ছে নকল দুধ' শিরোনামের এমনই একটি প্রতিবেদন ছেপেছে । ওই প্রতিবেদনটি পাঠ করলে যে কোনো মানুষেরই গা শিহরে ওঠবে । প্রতিবেদনে বলা হয়,`কিছুদিন ধরে দুধে ভেজাল মেশানোর মহোৎসব চলছে ।… প্রতি ৩৭ লিটার পানিতে ৩ লিটার দুধের ননী, ৫০ গ্রাম খাইসোডা, কয়েক চামচ পারক্সাইড, ফরমালিন ও কাটিং অয়েল মিশিয়ে ১ ক্যান ( ৪০ লিটার ) নকল দুধ তৈরি করা হচ্ছে ।' এ ছাড়াও পানিতে বিষাক্ত পাউডার, নারকেলের রস ও মেলামাইন মিশিয়ে দুধ হিসেবে বিক্রি করছে । বিশেষজ্ঞদের মতে-এসব কেমিক্যাল মিশ্রিত দুধ পান করে বড়রা যেমন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সেই সঙ্গে ছোট শিশুরাও আক্রান্ত হচ্ছে আরো অধিক হারে । এইসব নকল ও ভেজাল দুধ পান করার পর মানুষের লিভার, কিডনী মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে নামীদামী ব্রান্ডের দুধের নামে বাজারে যা বিক্রি হচ্ছে তাতেও পুষ্টিগুণ নেই বললেই চলে । দুধকে ননফ্যাট করতে যেয়ে অনেকাংশেই পুষ্টিগুণ নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে ।

বর্তমানে মাছ-মাংস, শাক-শব্জি, ফল-মূল ও বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের কাঁচামালসহ এমন কোনো খাদ্যসামগ্রী নেই যাতে ভেজাল মেশানো হচ্ছেনা । এসব খাদ্যদ্রব্যে বিষাক্ত রঙ, ফর্মালিন ও কার্বাইডের মতো জীবনঘাতি কেমিক্যাল মিশানো হচ্ছে অহরহ । চিটাগুড়ের সাথে নিন্মমানের আটা, সোডা ও হাইড্রোপারক্সাইড মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে আখের গুড় । পাম অয়েলের সাথে রঙ, ঝাঁঝ ও ফ্লেভার মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে খাঁটি সরিষার তেল । ঘি মনে করে আমরা বাজার থেকে যে স্নেহজাতীয় দ্রব্যটি কিনে খাচ্ছি আসলে তা ঘি নয়; সাবান তৈরির সেমাই ভাজার চর্বি, রঙ ও ফ্লেভার মেশানো একটা আজব দ্রব্য । ঘি তৈরিতে সাবান তৈরির যে উপজাত সোডিয়াম ষ্টেরিয়াট ব্যবহার হচ্ছে তা মানব দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক একটি কেমিক্যাল ।

বাংলাদেশের একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী চক্রের কারসাজিতে এসব বিষ মেশানো খাদ্যদ্রব্য জনস্বাস্থ্যকে প্রতিনিয়ত চরম হুমকীর মুখে ঠেলে দিচ্ছে । তাদের অতি মুনাফার ও লোভের জন্য প্রতিদিনই আমরা খাদ্যের সাথে কিছু না কিছু বিষ খাচ্ছি । এর ফলে আমাদের শরীর ধীরে ধীরে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে । এসব ভেজাল খাদ্যের কারণে আমশয়, ডায়রিয়া, গ্যাষ্টিক আলসার, হৃদরোগ, ক্যান্সার ও হেপাটাইটিস-বি'র মতো রোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে প্রাণ হারাতে হচ্ছে । এসব ভেজাল খাদ্যের দীর্ঘ মেয়াদী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় মস্তিস্ক, কিডনী ও লিভার কার্যক্ষমতা হারিয়ে আমাদের জীবনকে মৃত্যু ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে । এসব অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের মনুষ্যত্ব কতটা নিচু পর্যায়ে নেমে গেলে মানুষের জীবন নিয়ে এমন ছিনিমিনি খেলায় মেতে ওঠতে পারে তা ভাবতেও ওদের প্রতি ঘৃণায় গা রি রি করে ওঠে ।

ভেজাল সন্ত্রাসীদের এমন অপকর্ম দেখার যেন কেউ নেই ।`কাজীর গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই' প্রবাদটির মতো বিএসটিআই নামক প্রতিষ্ঠানটির নির্লিপ্ততা ও তদারকীহীনতায়ই জাহান্নামের কীট ওইসব ভেজাল সন্ত্রাসীরা দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে ওঠতে পারছে । তাদের হাতেই এখন আমাদের মৃ্ত্যু পরোয়ানা । তাহলে এর প্রতিকারের কি কোনো উপায় নেই ? আমরা কোথায় ? কার কাছে চাইবো এর প্রতিকার ????????