জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ বাংলাদেশ

মাহবুবুল আলম
Published : 22 July 2012, 06:46 AM
Updated : 22 July 2012, 06:46 AM

পৃথিবীতে যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শিল্প কারখানা সুতরাং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব প্রতিকার করা একটি প্রায় অসম্ভব বিষয়। তবে অনেক বিজ্ঞানীর মতে জলবায়ূ পরিবর্তনের মূলকারণ শিল্প বিপ্লব, এর জন্য দায়ী উন্নত দেশগুলি। তাদের শিল্প কারখানা থেকে নির্গত কার্বন অধিকহারে জলবায়ুতে মিশে যাবার কারণে বাড়ছে তাপমাত্রা; ফলে অস্বাভাবিকভাবে দুই মেরুর বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা বাড়ছে। আর জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে এভাবেই। তাই জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টি আসলে কি তার ওপর কিছুটা আলোকপাত করা দরকার।
আমাদের প্রাণপ্রিয় পৃথিবীর বায়ুমন্ডল জলীয় বাষ্প, কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও মিথেন গ্যাসের পুরু কম্বলের ন্যায় একটি স্তর দ্বারা গঠিত। এই স্তরটির গঠনপ্রণালীই এমন যে এ-স্তর ভেদ করে পৃথিবীতে সূর্যরশ্মি প্রবেশ করতে পারলেও সেই তাপ বায়ুমন্ডল ভেদ করে ওপরে ওঠতে পারে না। এ স্তরটি আমাদের পৃথিবীর তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষা করে পৃথিবীকে বসবাসযোগ্য করে তুলেছে। এ স্তরটাকেই বলে গ্রীন হাউজ। এ গ্রীন হাউজ এ্যাফেক্ট-এর ফলে আমাদের বায়ুমন্ডলে যে তাপ সঞ্চিত হয় তা বিকীরণ হতে বাঁধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে আমাদের বায়ুমন্ডল দিনে দিনে উষ্ণ হয়ে ওঠছে। আর তা হচ্ছে আমাদেরই দোষে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন এক হাজার বছরে আগে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমান ২৮০ পিপিএম (পার্ট পার মিলিয়ন) প্রায় সমান সমান ছিল। এর পর থেকে দুইটিই সমান হারে বেড়েছে। ২০০৫ সালে বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাইঅক্সাইডের পরিমান বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭৯ পিপিএম। এর মাধ্যমেই বিজ্ঞানীরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, গত চার যুগ ধরে অতিমাত্রায় জলবায়ূ পরিবর্তন ঘটেছে সাথে সাথে পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশও ঘটছে বিপুল পরিবর্তন।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বায়ুমন্ডলের অধিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণ ঘটাচ্ছে উন্নত দেশগুলো। এসব উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশী কার্বন নিঃস্বরণ করছে চীন ও আমেরিকা। এ দুইটি দেশের কার্বন নির্গমনের পরিমান মোট নির্গমনের প্রায় ৫০ শতাংশ। এর পরেই রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, ব্রাজিল, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা প্রভৃতি দেশ। বাংলাদেশের কার্বন নির্গমনের পরিমান সবচেয়ে কম মাত্র দশমিক শূণ্য দুই শতাংশ। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ১৯৫০ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত শিল্পোন্নত দেশগুলোর কারণে পৃথিবীতে মোট কার্বন নিঃসরণের পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৭২ শতাংশ। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা নিরীক্ষা ও গবেষণা করে দেখেছেন, বিগত সাত লাখ ৫০ হাজার বছরের মধ্যে বিশ্বে কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমান বর্তমানে সবচেয়ে বেশি।
শুরুতেই বলা হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হবে আমাদের বাংলাদেশ। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আমাদের দেশের জলবায়ু পরিবেশ ও জীববৈচিত্রেও নানা ধরনের বিরূপ প্রভাব ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। এখন পূর্ণবর্ষাকেও গ্রীষ্মকাল বলে ভ্রম হয়।এঘোর বর্ষায়ও প্রচন্ড খড়া ও ভ্যাপসা গরমের জনজীবন ওষ্ঠাগত। আবহাওয়ার এ কু-প্রভাব ও উল্টোপাল্টা আচরণে নানা অসুখ-বিসুখ যেন আমাদের পিছু ছাড়তে চাইছে না। বৃষ্টির অভাবে ভূ-গর্ভস্ত পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে কৃষিকাজ ও চাষাবাদে। একই কারণে আমাদের জীববৈচিত্রও আজ হুমকীর সন্মুখিন। এক তথ্য থেকে জানা গেছে আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে দেশের ৬০ প্রজাতির মাছ ও পাখি বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
সবশেষে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কৃষি ও অন্যান্য খাত কতটা ঝুঁকিপূর্ণ তার ওপর দৃষ্টি আকর্ষণ করেই এই নিবন্ধের ইতি টানবো। এরই মধ্যে আমাদের কৃষিখাতের বিলুপ্ত প্রায় কয়েক'শ প্রজাতির শস্য। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তন ঘটছে জীব-বৈচিত্রেও। কাজেই জলবায়ু পরিবর্তনের সর্বগ্রাসী বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য এখনই আমাদেরকে জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণকে এর প্রতিকারে সম্পৃক্ত করতে হবে। দেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু স্থিতিশীল রাখার জন্য প্রয়োজন আমাদের মোট ভূ-খন্ডের এক-চতুর্থাংশ বনভূমি। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য তা খুবই জরুরী। কিন্তু আমরা যেভাবে নির্বিচারে গাছ ও পাহাড় কেটে সবুজ বনভূমি ধ্বংস করে চলেছি তা আমাদের জন্য এক অশনী সঙ্কেত। আমাদের দেশে বর্তমানে সবুজ বনভূমির পরিমান সর্বনিন্ম পরিমানেরও কম। কাজে পাহাড় কাটা বন্ধ করে বেশী বেশী গাছ লাগিয়ে বাংলাদেশকে সবুজে সবুজে ভরে তুলতে হবে তবেই যদি কিছুটা রক্ষা হয়।