আগামী নির্বাচনের আগাম ফলাফল নিয়ে মনগড়া চাতুর্যপূর্ণ প্রচারনা

মাহবুবুল আলম
Published : 16 Sept 2012, 07:16 AM
Updated : 16 Sept 2012, 07:16 AM

দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত একটি চাতুর্যপূর্ণ মনগড়া খবরকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনীতি সচেতন মানুষের মধ্যে তোলপার শুরু হয়েছে। সেই চাতুর্যপূর্ণ খবরটি হলো; আগামীতে বিএনপি ও তার মিত্ররা সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। বেশ কিছুদিন যাবত বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ ধরনের চাতুর্যপূর্ণ মনগড়া খবর প্রচার করে দেশের সাধারণ মানুষকে এমন একটি ধারণা দেয়ার চেষ্টা চলছে যে, আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বিএনপি-জামায়াত তথা ১৮ দলীয় জোট ক্ষমতায় আসবে। খবরটি এমন চাতুর্যপূর্ণভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে যে, ১৯৯১ সালের পর থেকে কোন রাজনৈতিক দলই নির্বাচনে পর পর দুইবার বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে পারেনি । তাই আগামীতে আওয়ামী লীগ আর ক্ষমতায় ফিরতে পারছেনা।

এই খবরটি ওই ঘরাণার নেতাকর্মীদের অতি উৎসাহিত করে তুলছে। তাদের এ অতি উৎসাহের আগুনে আরো ইন্দন যোগাচ্ছে বাংলাদেশের বিভিন্ন বেসরকারী টেলিভিশনের মধ্যরাতের 'টকশো'। আর ওই ঘরাণার টকশোওয়ালারাতো দুই-তৃতীয়াংশ মেজরিটি দিয়ে এখনই পারলে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়ে, আগামীতে তাদের কর্মপরিকল্পনা কি হবে, অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে কিভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে তা ও বলে দিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে অতি সম্প্রতি দৈনিক জনকন্ঠে শিক্ষাবিদ আব্দুল মান্নান তাঁর এক নিবন্ধে বলেছেন,'…বিভিন্ন মিডিয়ার বদৌলতে এমন একটি ধারণা মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে যে, আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের পুনরায় ক্ষমতায় আসার একটা সম্ভবনা দেখা যাচ্ছে।…বিএনপিও মোটামুটি নিশ্চিত যে, সামনের বার নির্বাচনে জয়লাভ করে তারা ফের সরকার গঠন করছে এবং নির্বাচিত হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের কর্মসূচি কি হবে তা ও তারা ইতিমধ্যে ঠিক করে ফেলেছে। তারা ঘোষণা করেছে 'বর্তমান সরকারের আমলে যতগুলো প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে বা বাস্তবায়নের পথে তার সবই ক্ষমতায় এলে বাতিল করে দেবে।'

আগামী নির্বাচনে, বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় ফিরে আসছে দেশি ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ার মনগড়া খবর প্রসঙ্গে অধ্যাপক ও ইতিহাসবিদ মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী সম্প্রতি সহযোগী দৈনিকে প্রকাশিত 'আন্দোলনে বিএনপির কৌশল পরিবর্তন এবং একটি মূল্যায়ন' শিরোনামের নিবন্ধে মিডিয়ার অতি উৎসাহী ও মনগড়া প্রচার সম্মন্দে বলেছেন,'…আমাদের দেশের কিছু কিছু মিডিয়া এরই মধ্যে একটি ধারণা দেয়ার চেষ্টা করছে যে, আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে। এর কারণ হিসেবে তাদের রাজনীতির সরল অঙ্ক হচ্ছে এদেশের ভোটারগণ নাকি পর পর দুইবার কোন দলকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। জানিনা তাদের এমন ধারণার ভিত্তি কতটা পরিবর্তনশীল বিশ্ব রাজনীতির বাস্তবতা নির্ভর। নিকট অতীতের দু'চারটা নজিরকে স্বতঃসিদ্ধ ভাবার কারণ আছে বলে ধরা যায় কি? যাহোক যে কারণে প্রসঙ্গটি বিবেচনায় এনেছি তা হচ্ছে কোন কোন মিডিয়ার ভবিষ্যত সরকার সন্মন্ধে এমন প্রচারনার ফলে বিএনপির অভ্যন্তরে পদ পদবী নেয়ে ঠেলাঠেলি এখনই শুরু হয়ে গেছে…।'

এ প্রসঙ্গে ২৯ আগস্ট টাইমস অব ইন্ডিয়ায় ভারতী জৈনির একটি প্রতিবেদনে বলা হয় যে, আগাম নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষমতায় আসার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে, তাই ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের ভূখন্ড ব্যবহার করে ভারতবিরোধী শক্তিগুলোর সন্ত্রাসী ও নাশকতামূলক কর্মকান্ড আবার মাথাচারা দিয়ে ওঠতে পারে বলে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সন্দেহের কথা বলা হয় । এ খরবটি উল্লেখ করে পরদিন ৩০ আগস্ট বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রিকাও ফলাও করে আগামী নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতাসীন হওয়ার মনগড়া খবর প্রচার করে। এর পরই বিএনপির পক্ষ থেকে ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় না দেয়ার ব্যাপারে ভারতকে আশ্বস্ত করা হয়। এ ব্যাপারে দৈনিক সমকাল তাদের ৬ সেপ্টেম্বর ২০১২ শেষ পাতায় 'ভারতকে আশ্বস্ত করতে বিএনপির জোর লবিং' শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য বাংলাদেশে নিযুক্ত আমেরিকার রাষ্ট্রদূত মজিনা খালেদা জিয়ার সাথে দেড়ঘন্টার এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মিলিত হবার কথা বলা হয়।

হঠাৎ করে আগামী নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের সরকার গঠনের মতো মনগড়া খবরা-খবর প্রচার মিডিয়ায় শুরু হয়েছে এর সুনির্দিষ্ট সূত্র কি? এসব পত্র-পত্রিকা, ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এসব মনগড়া খবরা খবর প্রচার করছে এ দৈব বাণীর উৎসই বা কি, কারা এমন দৈব বাণী শোনাল এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে দেশের সচেতন নাগরিকদের মনে । কেননা, বর্তমান যুগে কোন নির্বাচনে ভোটের ফলাফল ঘোষণার আগ মুহূর্তেও যেখানে নিশ্চিত করে বলা সম্ভব হয় না, কোন দল বা ব্যক্তি জয়লাভ করবে, সেখানে যে সরকারের মেয়াদকাল এখনও এক বছরের কিছু উপরে রয়েছে সে সরকার আগামীতে আর ক্ষমতায় ফিরতে পারবেনা মিডিয়া এতটা নিশ্চিত হলো কি করে? বিএনপি-জামায়াত তথা ১৮ দলীয় জোট সরকার গঠন করবে এমন দৈববাণী প্রচারের আসল উদ্দেশ্য কি তা সাধারণ মানুষের কাছে পরিস্কার না হলেও রাজনৈতিক সচেতন মানুষের কাছে দিবালোকের মতো ফকফকা । হয়তো সুপার পাওয়ার আমেরিকা বা তাদের মিত্রজোটের নিকট থেকে ডিকটেটেড হয়ে এমন মনগড়া খবর প্রচার করে থাকতে পারে। তাই এ দৈববাণীর শান-এ-নজুল কি তা পাঠকদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরতে চাই।
'শত শত কোটি টাকায় নিয়োগকৃত লবিস্টরা বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সমালোচনার পাশাপাশি বিদেশের বিভিন্ন প্রভাবশালী পত্র-পত্রিকার অসাধু হলুদ সাংবাদিকতায় বিশ্বাসী সাংবাদিক ও রিপোর্টারদের দিয়ে বাংলাদেশ তথা সরকার বিরোধী বিভিন্ন সংবাদ ও প্রতিবেদন প্রকাশ করছে । এর সাথে জড়িত হয়ে পড়েছে সুপার পাওয়ার আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রভাবশালী কিছু পশ্চিমাদেশ ও তাদের তাদেরদার সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ । আর বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সুশীল সমাজের তকমাধারী ব্যক্তি, গোষ্ঠী এবং পশ্চিমা দেশের অর্থে গড়ে ওঠা এনজিও ও প্রভাবশালী মিডিয়া যাদেরকে পশ্চিমা শক্তি বাংলাদেশে অশান্তি ও অস্থিরতা জিইয়ে রাখতে ও তাদের পার্পাস সার্ভ করতে সরকারের বিপরীতে অদৃশ্য সরকার হিসেবে কাজ করে যাওয়ার জন্য কোটি কোটি টাকার তহবিল সরবরাহ করে থাকে সেই সুশীল সমাজ ও মিডিয়াও সরকার ও দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের পাশাপাশি মনগড়া খবরা-খবর প্রচারের সাথে যুক্ত রয়েছে । আর বিএনপির বন্ধু ড. ইউনূসতো তার মুব্বীদের মাধ্যমে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে দৌড়াদৌড়ির করে যাচ্ছেনই। এমনও একটি খবর এখন গ্রাম-গঞ্জে কান পাতলেই শোনা যায় যে, আগামী নির্বাচনে গ্রামীণ ব্যাংকের তৃণমূলের লক্ষ লক্ষ মাঠ কর্মীর মাধ্যমে প্রচারনা চালিয়ে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় ফিরার পথ রুদ্ধ করে দেবে।

প্রিয় পাঠক যাদের চোখ কান খোলা তারা সবাই জানেন, ভাল সংবাদ মাধ্যমের পাশাপাশি হলুদ সাংবাদিক ও তাদের ধারক-বাহক হলুদ মিডিয়ার সংখ্যাও এ বিশ্বে কম নেই। এসব পত্রিকার হলুদ সাংবাদিকতায় বিশ্বাসী সাংবাদিকদের নগদ নারায়নের মাধ্যমে কব্জা করে সহজেই মনগড়া খবরা-খবর প্রচার করা যায়। সত্য-মিথ্যা যা ই হোক এসব খবর প্রচার করে সরকারী দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মনোবল ভেঙে দেয়ার পাশাপাশি বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করে তুলে নিরপেক্ষ ভোটারদেরও সহজেই বিভ্রান্ত করা যায়। আর এ উদ্দেশ্যেই যে আগামী নির্বাচনে ক্ষমতার পালাবদলে আগাম মনগড়া খবরা-খবর প্রচার হচ্ছে তা বুঝতে কারো বাকি থাকার কথা নয়।