বিজয়ের মাসে বিএনপি-জামায়াত ও জঙ্গিদের প্রতিহিংসার আগুনে জ্বলছে বাংলাদেশ

মাহবুবুল আলম
Published : 10 Dec 2012, 04:13 PM
Updated : 10 Dec 2012, 04:13 PM

যে কোনো উপয়ে ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের উদ্দেশ্যে ডাকা বিএনপি-জামায়াত-আঠারো দলীয় জোট ও পর্দার অন্তরালে থাকা জঙ্গিদের রাজপথ ও সড়কপথ অবরোধের নামে ৯ নভেম্বর সারা বাংলাদেশে যে অগ্নিউৎসব দেখলাম তা কেবল একাত্তরের পাক হানাদার বাহিনী তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদর-আল-শামসের মেসাকারের কথাই মনে করিয়ে দেয়। এতে স্তম্ভিত বাংলাদেশের বিবেকবান প্রতি মানুষ। একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে এমন তান্ডব ও প্রতিহিংসার অগ্নিউৎসব এর আগে মানুষ কখনো দেখেছে কি না তা আমাদের জানা নেই। দেশের সম্পদ এভাবে ধ্বংস করে বিএনপি ও যুদ্ধাপরাধীদের দল বাংলাদেশেকে কোথায় নিয়ে যেতে চাচ্ছে তা ভেবে পাচ্ছেনা দেশের সাধারণ মানুষ। তাই তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ও ধিক্কারে জেগে ওঠেছে দেশে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। আমরা জানি গণতান্ত্রিক যে কোনো দেশে প্রতিটি রাজনৈতিক দল তাদের নিজেদের ও জনসম্পৃক্ত যে কোনো দাবি আদায়ের জন্য শান্তিপূর্ণ হরতাল অবরোধ, বন্ধ, ধর্মঘট ইত্যাদি কর্মসূচি পালন করতেই পারে। এটা কোন কোন অন্যায় কাজ নয়। বরং প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই এটা রাজনৈতিক অধিকার। কিন্তু সে অধিকারের চর্চা করতে গিয়ে কোন বিবেকবান রাজনৈতিক দল এভাবে জ্বালাও-পোড়াও ও সহিংস তান্ডব চালেতে পারেনা। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা প্রদানে পুলিশ বা আইন-শৃংখলা বাহিনী বাধা দিলে সেখানে শান্তিপূর্ণ অবস্থানের মাধ্যমে তারা তাদের কর্মসূচি পালন করতে পারে। কিন্তু এমন জঙ্গিরূপ ধারন করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর বিনা উস্কানিতে আক্রমন চালিয়ে নির্বিচারে গাড়িতে আগুন দিয়ে, দোকানপাট ভাংচুর করে যে ঘটনার জন্ম তারা দিল তা তাদের জন্য কতটা মঙ্গল বয়ে আনবে তা দেশে প্রতিটি মানুষই বিবেচনা করবে।

অবরোধের নামের দেশব্যপী তাদের তাণ্ডবের বিভিন্ন সচিত্র প্রতিবেদন দেশের প্রতিটি পত্র-পত্রিকাই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবেশন করেছে এ এ নিয়ে কোন কোন পত্রিকা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে একাধিক মন্তব্য প্রতিবেদনও ছেপেছে। যা এক ধরনের ঘৃণারই বহিঃপ্রকাশ। যেখানে বাংলাদেশের প্রতিটি দেশপ্রেমিক মানুষ বিজয়ের ৪২তম বর্ষ পালনের প্রস্তুতি গ্রহণের পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে মাঠে নেমে এসেছে তখনই বিএনপি-জামায়াত মরিয়া হয়ে এসব ধ্বংসাত্মক ও নাশকতামূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করে অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে নিয়ে যেতে চাইছে। একই সাথে অবরোধের নামে জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচির মাধ্যমে দেশকে ধ্বংসের কাছাকাছি নিয়ে যেতেও চাইছে।

দেশের প্রতিটি সচেতন নাগরিক মনে করছে, যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচালের পাশাপাশি হাজার হাজার কোটি টাকা মানি লন্ডারিং এর দায়ে অভিযুক্ত ও চিকিৎসার নামে বিদেশে স্বেচ্ছা নির্বাসিত বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দুই ছেলের বিচার বন্ধের প্রক্রিয়া হিসেবে সরকারকে হটিয়ে তাদের স্বরাজ কাময়মের জন্য এসব ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড চালাচ্ছে তারা। তাই আইএসআই ও বিদেশী অদৃশ্য শক্তির সহযোগিতায় ক্ষমতায় থাকাকালীন অবাধ লুটপাটের টাকা খরচ করে, বিদেশে লবিষ্ট নিয়োগ করে দেশে বিরোধী নানা অপতৎপরতা চালাতে কসুর করছে না তারা।

আমরা বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার খবরা খবরে যা দেখেছি তাতে প্রতীয়মান হয়েছে যে, তাদেরে এসব ধ্বংসাত্মক অবরোধের সাথে দেশের সাধারণ মানুষের কোনো অংশগ্রহণতো ছিলই না বরং এদের প্রতিরোধে সাধারণ মানুষও রাস্তায় নেমে এসেছে। নাস্তায় নেমে এসেছে সরকার দলীয় নেতাকর্মী সমর্থকরা। এতে অনেকে দোষ খুঁজতে পারেন যে, বিরোধী দলের অবরোধ কর্মসূচিতে সরকার দলীয় সমর্থকরা কেন বাধা দিতে যাবে। কিন্তু একটি কথা সকলেরই স্মরণ রাখা উচিৎ যে সরকারই যে সময় ক্ষমতায় থাকে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া সে সরকারেই দায়িত্ব। সেক্ষেত্রে সরকার যদি জন নিরাপত্তার স্বার্থে এগিয়ে না এসে ঘরে বসে বসে আঙুল চোষে তা হলেও তো লোকে বলবে বিএনপি-জামাতের তান্ডবে সারা বাংলাদেশ জ্বলছে তখন সরকার কেন ঘরে নির্বিকার বসে আঙুল চুষছে। এখানে সরকারের জনগণের কাছে জবাবদিহিতার প্রশ্নটিও গুরুতরভাবে জড়িত।

আমরা দেশের শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষ কোনো পক্ষেরই এমন তান্ডব দেখতে চাইনা। আমরা চাই আগামী নির্বাচনে জয়লাভ করে যে দলই ক্ষমতায় আসবে তাদেরই আমরা স্বাগত জানাবো। তারপরও যারা দেশবিরোধী এসব জ্বালাও-পোড়াও ও তাণ্ডবের সাথে জড়িত থেকে দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে তাদের প্রতিরোধ করবো। সেখানে কে আওয়ামী লীগ আর কে বিএনপি তা আমাদের কাছে বিবেচ্য বিষয় নয়।