বাংলাদেশের রাজনীতিতে আগস্ট ষড়যন্ত্র

মাহবুবুল আলম
Published : 1 August 2014, 05:22 AM
Updated : 1 August 2014, 05:22 AM

মাহবুবুল আলম

বাংলাদেশের রাজনীতিতে আগস্ট মাস একটি ষড়যন্ত্রের মাস হিসেবে চিহ্নিত। ১৯৭৫ খ্রীঃ ১৫ আগস্ট দেশি-বিদেশী ষড়যন্ত্রে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের নিশ্চিন্ন করে আওয়ামী লীগের রাজনীতি চিরতরে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে শেখ হাসিনার সন্ত্রাসবিরোধী জনসভায় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ইতিহাসের নৃশংসতমতম গ্রেনেড হামলা চালিয়ে আওয়াম লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাতদিকা আইভি রহমানসহ ২৪ জনকে হত্যা করেছিল। ভাগ্যজোরে সেদিনের সে ভয়াভহ গ্রেনেড হামলা থেকে শেখ হাসিনা রক্ষা পেয়েছিলেন। আবার ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জামায়াত-শিবির ও জঙ্গীবাদের দোসররা সারা দেশে ৫শ' স্থানে একযোগে বোমাহামলা করে তাদের জঙ্গিবাদী শক্তির প্রকাশ ঘটিয়েছিল। তাই বাংলাদেশের রাজনীতিতে আগস্ট মাসকে সবাই কলঙ্কিত ও শোকের মাস হিসিবে গণ্য করে থাকে। আর এই মাসেই বাংলাদেশের পাকিস্তানপন্থী রাজনৈতিক দল ও স্বাধীনতাবিরোধী আইএসআইয়ের এদেশীয় দালালারা আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু পরিবারকে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে নিশ্চিন্ন ও ধ্বংস করে একাত্তুরের পরাজয়ের চরম প্রতিশোধ নিতে বার বার আত্রমন করেছে। তা হলে অনেকেই হয়তো বলতে পারেন তাহলে শুধু আগস্ট মাস কেন? অন্য মাসকে ঘিরে ওতো ষড়যন্ত্র হত্যাকান্ড সংগিঠিত হতে পারতো? কথা না বাড়িয়ে এ প্রশ্নের উত্তর এক কথায়ই দেয়া যায়। কেননা মাস হলো পাকিস্তানের স্বাধীনতা লাভের মাস। মুক্তিযুদ্ধে এ মাসেই পাকিস্তানী সেনাদের ওপর মুক্তিবাহিনীর আক্রমন শাণিত থেকে শাণিত হতে থাকে। যার ফলে ১৬ই ডিসেম্বর'৭১ আমাদের স্বাধীনতা লাভের বিজয় তরান্বিত হয়। তাই আওয়ামী লীগের ওপর আক্রমনের জন্য পাকিস্তানী গোয়েন্দ সংস্থা আইএসআই ও তাদের বাংলাদেশী দোসররা এ মাসকেই বার বার বেছে নেয়। প্রিয় পাঠক আসুন এ পর্যায়ে আমরা পর্যায়ক্রমে জেনে নিই বাংলাদেশের রাজনীতিতে আগস্ট ষড়যন্ত্রের ঘটনাগুলো:

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে বাংলাদেশের ইতিহাসকেই পাল্টে দিতে চেয়েছিল দেশি-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা। ইতিহাসের এই নৃশংসতম হত্যাকান্ড বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে কলঙ্কতিলক লেপে দিয়েছিল তা কোনদিনই মুছে যাবে না। বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশে আগস্ট ষড়যন্ত্র শুরু হলেও তা বন্ধ হয়ে যায়নি তা এখনো অব্যাহত আছে। সেই কারণে এই নিবন্ধের অবতারণা। প্রথমেই শুরু করবো ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ইতিহাসের কলঙ্কজনক হত্যাকান্ডের ঘটনা দিয়ে।

পাকিস্তানের ২৪ বৎসরের শাসনকালের ১৪ বৎসরই বাঙ্গালীদের দাবী আদায়ের সংগ্রামের জন্য যে মহান নেতার কারাগারে কেটেছে, যার উজ্জীবনী নেতৃত্বে ঘুমন্ত বাঙালী জাতি পাকিস্তানী দুঃশাসনের নাগপাশ ছিড়ে জেগে ওঠেছিল মুক্তির অদম্য সাহসে, যার ডাকে সারা দিয়ে বাঙালী আবালবৃদ্ধবনিতা ঝাপিয়ে পড়েছিল সশস্র মুক্তিযুদ্ধে এবং ত্রিশলক্ষ জীবন ও তিনলক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতার লাল সূর্য পতাকা। দেশী বিদেশী চক্রান্তে মাত্র সাড়ে তিন বৎসরের মাথায় সেই দেশ প্রেমিক মহান নেতা, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট স্বপরিবারে হত্যা করে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পূনর্গঠন, স্বল্পতম সময়ে মাত্র নয় মাসের মধ্যেই সংবিধান প্রণয়ন, সাধারণ নির্বাচন, কমনওয়েলথ, জাতিসংঘ, জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন, ওআইসি'র সদস্যপদ লাভ, চীন ও সৌদি আরব ছাড়া বিশ্বের প্রায় সব রাষ্ট্রের স্বীকৃতি অর্জন প্রভৃতি কর্মকান্ড বঙ্গবন্ধু সরকার সম্পন্ন করেছিল মাত্র সাড়ে তিন বছরে। ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের জন্য জাতীয় সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী, বিডিআর, পুলিশ বাহিনী গঠন করেন। তিনি বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশের বিমান নাম দিয়ে জাতীয় এয়ালাইনস প্রতিষ্ঠা করেন। বিধ্বস্ত সড়ক ও রেলপথ, রেলসেতু ও সড়ক সেতু পুননির্মাণ করেন। ময়মনসিংহে প্রথমে পশু চিকিৎসা কলেজ স্থাপন করেন। ফেঞ্চুগঞ্জে দেশের প্রথম সার কারখানা স্থাপন করেন। চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য এফডিসি গঠন করেন। শিশুদের জন্য শিশু একাডেমি, শিশু পার্ক নির্মাণ করেন। প্রথম পঞ্চ-বার্ষিকী উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সেচ ব্যবস্থার জন্য প্রথম ওয়াটার ও পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট র্বোড (ওয়াপদা) গঠন করেন। রমনা পার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেন নির্মাণ করেন। সরকারিভাবে বাংলা ভাষার ব্যবহার প্রবর্তন করেন। প্রথম জুট মার্কেটিং করপোরেশন স্থাপন করেন। আলিয়া মাদ্রাসার স্থায়ী ভবন নির্মাণ করেন। প্রথম প্ল্যানিং বোর্ড (উন্নয়ন) গঠন করেন। সাভারে প্রথম ডেইরি ফার্ম স্থাপন করেন। বিচার বিভাগকে মূল প্রশাসন থেকে সম্পূর্ণ পৃথকীকরণ প্রক্রিয়া শুরু করেন। বনশিল্প সংস্থা গঠন করেন। ধান ক্ষেত সেচ ব্যবস্থার জন্য প্রথম (১০০০) পাওয়ার পাম্প প্রবর্তন করেন। প্রথম পর্যটন বিভাগ গঠন (কক্রাবাজারকে কেন্দ্র করে) করেন। প্রথম শিল্প ট্রাইব্যুনাল। গঠন করে বঙ্গবন্ধু যখন বিদেশী সাহায্যের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে জাতিকে আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তোলার কাজে ব্যস্ত এবং দেশ যখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পথে ঠিক তখনই স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীলচক্র এবং দেশী-বিদেশী শক্ররা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করে।

আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান ও তাদের সম্মিলিত মিত্র শক্তি ও এদেশীয় তাদের দোসর এবং বেনিফেসিয়ারীরা তাদের চরম পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়ে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিন্ন করে এদেশকে আবার পাকিস্তানী সেবাদাসে পরিনত করতে চেয়েছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে জিয়াউর রহমানের যে পরোক্ষ সম্পৃক্ততা ও সংস্রব ছিল তা এখন মার্কিন আর্কাইভসের বাংলাদেশ সংক্রান্ত গোপন দলিলপত্র থেকেই বেরিয়ে আসছে। তাই এই হত্যাকান্ডে ইতিহাসের রহস্য পুরুষ জিয়াউর রহমানের গোপন সম্পৃক্ততা নিয়ে আজ আর কারো মনে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। ইতিহাসের এ নৃশংস জঘন্যতম হত্যাকান্ডে জিয়াউর রহমানের জড়িত থাকার বিষয়ে একটি বিদেশী মিডিয়ায় প্রথমেই হাটে হাড়ি ভেঙে দেয় খুনী কর্নেল রশিদ। খুনী রশিদ সে সাক্ষাতকারে বলেছিল,' শেখ মুজিবুর রহমানের মানুষকে উজ্জীবীত করার এমনই এক ক্ষমতা ছিল যে, তাকে এভাবে সরিয়ে না দিয়ে কিছুতেই ক্ষমতা থেকে হটানো সম্ভব ছিলনা। কর্নেল রশিদ তার ঐ সাক্ষাতকারে আরো বলেছে,' আমরা শেখ মুজিবকে ক্ষমতাচ্যুত করার বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন উপ-সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের সাথে আলাপ করতে গেলে তিনি আমাদের এই বলে বিদায় করেছিলেন যে,'আমাকে এ ব্যপারটিতে সরাসরি না জড়িয়ে তোমরা জুনিয়ররা যা পার তা করে ফেল।' জিয়াউর রহমানের এ বক্তব্যের মাধ্যমে সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হয় যে, তিনিও ছিলেন বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের মূল হোতাদের অন্যতম। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে শেখ পরিবারকে নিশ্চিন্ন করে দেয়ার ষড়যন্ত্র করলেও বিদেশে অবস্থানের কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও রেহানা প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু জিয়া সরকারের রোষানলে দুইবোন দেশে ফিরতে না পেরে ইতিহাসের ভারতসহ বিভিন্ন দেশে নির্বাসিত জীবন কাটাতে বাধ্য হন। পরবর্তীতে আভ্যন্তরীণ ও বিদেশে চাপে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে আসার অনমতি দিতে বাধ্য হয় বন্দুকের নলের মুখে ক্ষমতা দখলকারী জেনারেল জিয়াউর রহমান। এর পরের জিয়াউর রহমানের পরিনতি কী হয়েছিল তা সবারই জানা। এরপর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার পর থেকে শেখ হাসিনার ওপর বার বার সশস্ত্র হামলা হয়েছে। প্রতি বারেই তিনি ভাগ্যজোরে বেঁচে যান। তারপরও শেখ হাসিনার রাজনীতির আজন্ম শত্রুদের ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যে ভাবে রাতের আঁধারে কাপুরোষচিতভাবে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল সেভাবে শেখ হাসিনাকেও হত্যার ষড়যন্ত্র চলতে থাকে। তাই তার ওপর বার বার বুলেট ও বোমা ছুড়ে মারা হয়েছে। এ ষড়যন্ত্রে প্রকাশ্য বহিঃপ্রকাশ ঘটে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। আমি এখন আলোচনা করবো একুশে আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা নিয়ে:

একুশ আগস্টের গ্রেনেড হামলা বাংলাদেশের ইতিহাসে আরও একটি একই সাথে কাপুরুষোচিত ও বর্বরোচিত বোমা হামলা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রধান, বঙ্গবন্ধু কন্যা ও বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ২০০৪ খ্রি: ২১শে আগষ্ট আওয়ামী লীগের এক সন্ত্রাস বিরোধী সভায় ইতিহাসের বর্বরোচিত যে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ছিল, সে হামলার পিছনে যে হাওয়া ভবনের দুর্দান্ত প্রতাপশালী রাজনৈতিক ব্যক্তি তারেক রহমান ও তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সরাসরি হাত ছিল তা বিভিন্ন তদন্ত রিপোর্টে বেড়িয়ে আসছে। ইতিহাসের এই ভয়াবহ ও নারকীয় হত্যাকান্ডের নানা ধরণের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন জনকন্ঠ, ডেইলি ষ্টার, সমকাল, যুগান্তর, প্রথমআলোসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্র পত্রিকার রিপোর্টে ইতিহাসের সবচেয়ে কাপুরুষোচিত এই গ্রেনেড হামলায় যে, হাওয়া ভবন ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে যাবতীয় কলকাঠি নাড়া হয়েছে তা প্রকাশিত হয়েছে। গোয়েন্দাসূত্রে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ও বিশেষ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে পরিচালিত নারকীয় এ হামলার বিষয়টি পুরোপুরিই মনিটর করেছিল হাওয়া ভবন। এই মনিটরিং এর ধারাবাহিকতায় ও হাওয়া ভবনের মধ্যস্থতায় পাকিস্তান থেকে শতাধিক আর্জেস গ্রেনেড আনার কাজে সহায়তা করে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। সেই সময়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে ভাবেই হোক শেখ হাসিনাকে পৃথিবী থেকে চিরতরে বিদায় করে দিতে হবে। তাদের পরিকল্পনায় ছিল শেখ হাসিনার বাবাকে হত্যার পর যেমন আওয়ামী লীগ ২১ বছর পর ক্ষমতার মুখ দেখেছে; শেখ হাসিনাকে হত্যা করে এমন অবস্থা সৃষ্টি করতে হবে যাতে আওয়ামী লীগ ৪০ বছরেও ক্ষমতায় আসতে না পারে।

হাওয়া ভবনে শেখ হাসিনা কিলিং মিশনের যে বৈঠক হয়েছিল তার সচিত্র লোমহর্ষক ঘটনা জানা যায় মুফতি হান্নানের সেই বিষয়ক সাক্ষাতকারটির মাধ্যমে। প্রখ্যাত সাবাদিক ও কলামিষ্ট শাহরিয়ার কবিরে 'প্রোর্ট্রেট অব জিহাদ' প্রমান্য চিত্রে মুফতি হান্নানের এ লোমহর্ষক সাক্ষাতকারটি অন্তভুক্ত হয়েছে। ওয়েভ সাইটটির এ প্রামাণ্য চিত্রটি দেখলে যে কেউ আতংকে শিউরে ওঠবে। ওই সাক্ষাতকারে মুফতি হান্নান শেখ হাসিনার কিলিং মিশনের গ্রেনেড হামলার আদ্যপান্ত বর্ণনা করেছেন। প্রামাণ্যচিত্রে হরকাতুল জেহাদ নেতা হান্নান বিএনপি-জামায়াত জোট শাসনামলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের অঘোষিত যুবরাজের হাওয়া ভবনে বসে হামলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় বলে উল্লেখ করেন। ঐ সভায় জামায়াতের নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনী নূর চৌধুরীসহ আরো কয়েকজন জঙ্গি নেতার উপস্থিতির কথা তিনি বলেছেন। ২১শে আগষ্ট গ্রেনেড হামলার অপারেশনাল কমান্ডার মুফতি হান্নান হাওয়া ভবনে বৈঠক হওয়া থেকে শুরু করে জিয়াপুত্র তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, জামায়াতের সেক্রেটারী জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মেজর নূর জড়িত থাকার চাঞ্চল্যকর তথ্য ঐ সাক্ষাতকারে প্রকাশ করেছেন। মুফতি হান্নান তার জবানবন্দিতে বলেন,'হামলার মূল পরিকল্পনাই ছিল শেখ হাসিনাকে নিশ্চিন্ন করা। যার পরিকল্পনায় ছিল বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি খুনী নূর চৌধুরী এবং তারেক জিয়া নিজে। চারটি গোপন বৈঠকের মাধ্যমেই ২১ আগষ্ট হামলার পুরো চক্রান্ত করা হয় হাওয়া ভবনে বসেই। ১৪ আগষ্ট হাওয়া ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তিনটি প্রস্তাবের একটিকে অনুসরন করে চালানো হয় মূল হামলা।

তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, শেখ হাসিনাকে হত্যার মিশন সফল করতে মোটা অংকের টাকা লেনদেন হয়েছিল। টাকা লেনদেনের কাজটি করা হয় হাওয়াভবন থেকে। হাওয়া ভবনও মোটা অংকের টাকার ভাগ পায়। যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে গড়া একটি শীর্ষ ইসলামী রাজনৈতিক দল টাকার বিষয়টি মধ্যস্থতা করে। কিন্তু মিশন সফল না হওয়ায় বাবরকে হাওয়া ভবনে তলব করা হয়েছিল। বাবর সশরীরে হাওয়া ভবনে উপস্থিত হয়ে কৈফিয়তের জবাব দেয়। তদন্তকারী কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বাবর মামলা ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারকে দোষারোপ করেন। বাবর আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশমতেই দ্রুত মামলার তদন্ত শেষে চার্জশীট প্রদান করা হয়েছিল। বাবর জিজ্ঞাসাবাদে আরো বলেছে, গ্রেনেড হামলার আগাম তথ্য প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া পর্যন্ত জানানো হয়েছে। এমন কি তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে সময়ে সময়ে খালেদা জিয়াকে অবহিত করা হয়েছে বলেও বাবর জিজ্ঞাসাবাদেন বলেন।

২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। উগ্রপন্থি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সশস্ত্র যুদ্ধ শুরুর ঘোষণা দিয়ে জেএমবি সেদিন দুপুর ১২টার দিকে আদালত, জেলা প্রশাসক কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-আধাসরকারি স্থাপনায় একযোগে বোমা হামলা চালায় ।এতে মারা যায় দু'জন, আহত হয় আরো ২ শতাধিক মানুষ। জেএমবি'র জঙ্গিরা সেদিনের বোমা হামলার পরই থেমে থাকেনি। ১৭ আগস্টের পর তাদের চালানো একের পর এক আত্মঘাতী হামলায় বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ, সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তাসহ ৩৩ জন মারা যান, আহত হন ৪ শতাধিক।

সবকথার শেষ কথা, ঈদের পর আগস্ট মাস। ঈদের পরেই বিএনপি জামায়াত সরকার হটানোর কঠোর আন্দোলনের গুমকী দিয়ে রেখেছে আগেই। আগস্ট মাসকে উপলক্ষ করেই বিএনপি নেত্রী ও তার বড় ছেলে তারেক রহমান সৌদি আরবে ওমরাহ পালনের নামে জামায়াত নেতাদের সাথে যে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল তা দেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের প্রত্যক্ষ মদদে আরেকটি ১৫ আগস্ট ঘটানোর নীল নকশা প্রণিত হয়েছে সৌদী আরবে। তবে একটি কথা ঠিক দেশপ্রেমিক মানুষের কাছে আগস্ট মাস শোকের মাস হলেও বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতিসত্তার বিরোধীদের কাছে এটি একটি শুভ মাস বলে বিবেচিত। এ প্রসংগে অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন পাটোয়ারীর একটি লেখার কিছু অংশের মিল দেখে এখানে উদ্ধৃত করেই শেষ করবো "তাদের শুভ বিশ্বাসের পেছনে পাকিস্তানের জন্ম ১৪ আগস্ট, সেই বিশ্বাসে আস্থাশীল হয়েই তারা ১৫ আগস্ট সংঘটিত করেছিল, ২১ আগস্টও সংঘটিত করেছিল, ১৭ আগস্ট ৫০০'র মতো জায়গায় একসঙ্গে বোমা হামলা করেছিল। সবই বেছে বেছে আগস্ট মাসকে 'পবিত্র' মনে করেই করা হয়েছিল। সেই বিশ্বাস থেকেই ১৫ আগস্টকে তারা তাদের একটি জন্মদিন হিসেবে পালন করে থাকে। বেগম জিয়ার জন্মদিন প্রতীক মাত্র। এর তাৎপর্য তাদের কাছে গভীর ও সুদূরপ্রসারী- তা এদের কত সংখ্যক মানুষ এখন বুঝতে পারে তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।