বাংলাদেশকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে

মাহবুবুল আলম
Published : 11 Sept 2014, 04:57 AM
Updated : 11 Sept 2014, 04:57 AM

বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের ৪৩ বছর পার হতে চললেও ক্রমেই যেন আমরা একটা ভয়ঙ্কর দ্বিধাবিভক্ত জাতিতে পরিনত হতে চলেছি। একইভাবে যেন আমাদের মাঝে জাতীয় ঐক্য ও দেশপ্রেমের ঘাটতি প্রকট হয়ে ওঠছে। এতে আমরা জাতি হিসেবে এক ধরনের পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত হয়ে যাচ্ছি দিন দিন। আদর্শ, কোন সৎ উদ্যোগ এবং শান্তি ও প্রগতির বাণীই যেন আমাদের সে নিমজ্জন ঠেকাতে পারছে না। স্বাধীনতা লাভের ৪৩ বছর পরও একটি গোষ্ঠী বাংলাদেশকে পাকিস্তানী ভাবধারায় ফিরিয়ে নিতে প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। সেই চিহ্নিত গোষ্ঠী দেশকে বিশ্বের দুর্ধর্ষ জঙ্গী সংগঠন আল কায়েদার ঘাটি বানিয়ে বাংলাদেশকে আফগানিস্তান বানাতে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই গোষ্ঠী এই গোষ্ঠী ও তাদের তল্পিবাহকরা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর দোসরে পরিনত হয়ে ম্যাসাকার চালিয়েছিল। কিন্তু তারা আমাদের স্বাধীনতাকে ঠেকাতে পারেনি। বাংলাদেশ একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে বুকে দীপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে যাচ্ছে।

কিন্তু বাংলাদেশকে নিয়ে তাদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। বাংলাদেশকে আল কায়দার চারণভূমি বানিয়ে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে ব্যর্থরাষ্ট্রে পরিনত করতেই একের পর এক নীল নকশা প্রণয়ন করছে দেশবিরোধী গোষ্ঠী। যা ৩ আগস্ট ২০১৪ অনলাইনে পোস্ট করা ৫৫ মিনিটের ভিডিও বার্তায় উপমহাদেশে আলকায়েদার শাখা গঠন বিষয়ক আল কায়দা প্রধান জাওয়াহিরির ভিডিও বার্তায় স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। বাংলাদেশে আল কায়েদাকে জামায়াতে ইসলামী-শিবির, নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জেএমবি, হুজি ও হিযবুত তাহরীর সহায়তা করছে । বিশেষ করে জাওয়াহিরির ভিডিও প্রকাশের সঙ্গে ছাত্রশিবিরের ওয়েবপেজ বাঁশের কেল্লার এ্যাডমিনিস্ট্রেটর ও ছাত্রশিবিরের প্রযুক্তিবিদ রিসাদ বিন সাত্তার গ্রেফতারের পর জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে আল কায়েদার যোগাযোগ থাকার বিষয়টি একেবারে দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে যায়। সম্প্রতি অনলাইনে পোস্ট করা ৫৫ মিনিটের ভিডিও বার্তায় উপমহাদেশে আল কায়েদার শাখা গঠনকে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভারতের অসম, গুজরাট, আহমেদাবাদ ও কাশ্মীরের মুসলমানদের জন্য 'আনন্দের খবর' বলে অভিহিত করেন জাওয়াহিরি। এই পদক্ষেপ উপমহাদেশে ইসলামিক আইনের প্রসার ও 'জিহাদের পতাকা সমুন্নত রাখবে' বলে ঘোষণা দেয়া হয়। এমন ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, আল কায়েদার নতুন এই শাখা এ অঞ্চলের মুসলমানদের অবিচার ও আগ্রাসন থেকে উদ্ধার করবে।' জাওয়াহিরির এ ভিডিও বার্তার প্রমাণও হাতে নাতে ধরা পরেছে। এ ভিডিও বার্তা প্রকাশের পরই বাংলাদেশে আসার পথে আরেক ভয়ঙ্কর জঙ্গী সংগঠন আইএসের চার সদস্য গ্রেফতার হয়েছে কলকাতায়।

বাংলাদেশ নিয়ে দেশ-বিদেশে একের পর এক ষড়যন্ত্রের ঘটনা ঘটছে। শেখ হাসিনা সরকারকে সরিয়ে দিতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ ব্যয় করার বিষয়ে ভারতীয় গোয়েন্দাদের দাবি একটি খবর ছাপা হয়েছে ভারতের লিডিং পত্র-পত্রিকায়। সেই খবরটি ফলাও করে প্রচার করেছে বাংলাদেশের প্রথম সারির পত্রিকাগুলো। কিন্তু এ খবরটি মার্কিনীরা অস্বীকার করলেও বাংলাদেশের মানুষ আমেরিকাকে বিশ্বাস করে না। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে দেশের শীর্ষস্থানীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বাংলাদেশকে নিয়ে আমেরিকার গোপন ষড়যন্ত্র প্রসঙ্গে বলেছে বলেছে, শেখ হাসিনার সরকারকে সরিয়ে দিতে মার্কিনীদের অর্থ ব্যয়ের নিশ্চয়তা, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব ও তাদের কর্মীদের হত্যা এবং অসন্তোষের মাধ্যমে বাংলাদেশে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিই মূল লক্ষ্য। সম্প্রতি ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলো হয়েছে,'রাজ্যসভায় তৃণমূলের এমপি আহমেদ হাসান ইমরান এবং টেকনাফ থেকে ভারতে পাড়ি জমানো মাওলানা আসিফ খান গত ছয় মাস ধরে খালেদা জিয়া নেতৃত্বাধীন বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাঠাচ্ছেন। ইমরান বাংলাদেশের দৈনিক নয়া দিগন্তের প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করেছেন, যে সংবাদপত্রটি জামায়াতঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। ভারতের ঊর্ধ্বতন এক গোয়েন্দা কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এ ও এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, এতে বলা হয় "আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব ও তাদের কর্মীদের হত্যা এবং জন অসন্তোষের মাধ্যমে বাংলাদেশে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিই মূল পরিকল্পনা।" প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মূলত ক্ষমতায় গেলে সেইন্ট মার্টিন দ্বীপে নৌঘাঁটি স্থাপনে অনুমতির প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় বিএনপি-জামায়াতকে সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ভারতের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জেনেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলে বর্তমানে লন্ডনে থাকা তারেক রহমানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বৈঠকও করেছেন '। এবং মার্কিনীদের অপতৎপরতার সঙ্গে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত রয়েছে বলে বিভিন্ন অনসন্ধানী প্রতিবেদনে বেরিয়ে এসেছে।

এর আলামতও ইতিমধ্যে প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। সেইসব ঘটনারগুলোর মধ্যে হাইকোর্ট মাজারের খতিব, চ্যানেল আইয়ের ধর্মীয় ভাষ্যকার মাওলানা নূরুল ইসলাম ফারুকীকে সন্ধ্যা বেলায় নিজ বাসভবনে জবাই করে হত্যা, মঘবাজারের সোনালীবাগে ত্রিপল মার্ডারসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গুপ্তহত্যার খবরগুলোর সত্যতার প্রমাণ দিচ্ছে। তাছাড়া হঠাৎ করেই এ কে খন্দকার এমন এক সময়ে একটি বিতর্কিত বই প্রকাশনা উৎসব। যুদ্ধাপরাধীর বিচার, পদ্মা সেতু নিয়ে দেশে ও বিদেশে নানামুখী ষড়যন্ত্র হয়েছে এবং এখনও অব্যাহত আছে। শেখ হাসিনার নেত্রীত্বাধীন সরকার একটার পর একটা অনাকাক্ষিত ঘটনা সাফল্যের সঙ্গে মোকাবেলা করার পরও এমন ধারাবাহিক ঘটনা ঘটেই চলেছে। এ কে খন্দকার সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের প্রধান, আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ও এমপি ছিলেন। এতদিন তিনি মুক্তিযুদ্ধের ও মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে কিছুই বললেন না। অথচ এমন এক সময়ে তিনি একটি বিতর্কিত বই প্রকাশ করে গোটা মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও স্বাধীনতার জনককে বিতর্কিত করার পেছনে দেশ-বিদেশের কোন অদৃশ্য মহলের হাত আছে কিনা তা নিয়ে দেশের মানুষের মনে নানা ধরনের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

শেষ করবো এই বলেই যে দেশবিরোধী গোষ্ঠী পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার আইএসআইয়ের টাকায়, ও আমেরিকায় সহযোগীতায় বাংলাদেশ নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তাদের একটি কথা মনে রাখতে হবে যে, ১৯৭৫ আর ২০১৪ এক নয়। দেশের মানুষ এখন অনেক সচেতন। বিশেষ করে আমাদের শিক্ষিত যুবসমাজ এখন আরও বেশি সচেতন। তারা দেশকে ভালবাসে, দেশকে নিয়ে ভাবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এই যব সমাজই ষড়যন্ত্রকারীদের বিষদাঁত ভেঙ্গে দিয়ে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।