এফবিআই এজেন্টকে ঘুষ: কেলেঙ্কারী কিছুতেই বিতর্ক পিছু ছাড়ছেনা বিএনপির

মাহবুবুল আলম
Published : 26 Oct 2014, 07:41 AM
Updated : 26 Oct 2014, 07:41 AM

আওয়ামী লীগ সরকার বিশেষ করে শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি এখন শেখ হাসিনা তনয় সজীব ওয়াজেদ জয়ের চরিত্রে দুর্নীতির কালিমা লেপনের জন্যে জয়ের বিষয়ে গোপন তথ্য সংগ্রহ করার জন্যে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইর এজেন্টকে চল্লিশ হাজার মার্কিন ডলার ঘুষ দেয়। তারেক রহমানের এই অপকর্ম ফাঁস হয়ে যাওয়ায় দেশে এবং বিভিন্ন দেশের বাংলাশি কমিউনিটির মধ্যে রীতিমতো সমালোচনার ঝড় বইছে। বিএনপি কর্মীর ঘুষ দেয়ার কথা স্বীকার করা নিয়ে চলছে ব্যাপক সমালোচনা। দুদিন আগে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে জালিয়াতির অপরাধে লন্ডনে তারেক রহমানের উপদেষ্টার গ্রেফতারের ঘটনায় সমালোচনার ঝড় বইছে। একই সাথে লন্ডনে চিকিৎসার নামে তারেক রহমানের রাজনীতি ও রাজকীয় জীবন যাপনের বিতর্কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঘুষ কেলেঙ্কারি।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত সিংবাদ থেকে জানা যায় সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে গোপন তথ্য হাতিয়ে নেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোর (এফবিআই) এজেন্টকে ঘুষ দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন একজন প্রবাসী বাংলাদেশী ও তার এক মার্কিন সহযোগী। তারা মার্কিন আদালতে ঘুষ দেয়ার কথা স্বীকার করে জবানবন্দী দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ওই বাংলাদেশীর নাম রাজীব আহমেদ সিজার । তার মার্কিন সহযোগীর নাম জোহানেস থালের । রাজীব আহমেদ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বিএনপির নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনের ছেলে। রাজীব আহমেদ সিজার ও জোহানেস নিউইয়র্কের হোয়াইট প্লেন ফেডারেল কোর্টের বিচারক ভিনসেন্ট এল ব্রিকেটির সামনে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। এর আগে এফবিআইয়ের এক সাবেক এজেন্টকে ঘুষ দেয়ার জন্য আদালতে মামলা করা হয়। মামলার বিবরণে বলা হয়, বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিতে সক্রিয় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত এক ব্যক্তির ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের জন্য তারা ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১২ সালের মার্চ পর্যন্ত এফবিআইয়ের সাবেক এজেন্ট রবার্ট লাপ্টিকের সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগ করেন। তথ্য পেতে তারা এফবিআইয়ের ওই এজেন্টকে প্রথম দফায় ৪০ হাজার ডলার দেন এবং মাসিক কিস্তিতে ৩০ হাজার ডলার করে দেয়ার কথা হয়। মামলার নথিতে বাংলাদেশের শীর্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তির নাম-পরিচয় দেয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন ওই ব্যক্তি যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তনয় সজীব ওয়াজেদ জয় তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। মামলার আবেদনে বলা হযৈছে ওই ব্যক্তির রাজনৈতিক ক্ষতি সাধনের জন্য রাজীব এ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। মার্কিন বিচার বিভাগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জোহানেস থালের এফবিআই এজেন্ট লাপ্টিকের ছোটবেলার বন্ধু। আর রিজভি ছিলেন থালের পরিচিত। দোষী প্রমাণিত হলে লাপ্টিকের সর্বোচ্চ ২৫ বছর কারাদন্ড হতে পারে। এছাড়া জোহানেস থালের ও রিজভির সর্বোচ্চ ২০ বছর করে কারাদন্ড হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

তাছাড়া কয়েকদিন আগে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে জালিয়াতির অপরাধে লন্ডনে তারেক রহমানের উপদেষ্টার গ্রেফতারের ঘটনায় সমালোচনার ঝড় বইছে। সদ্যনিযুক্ত তারেক রহমানের মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা এম এ সায়েমকে গ্রেফতার করা হয় কয়েকদিন আগে। ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে একজন মক্কেলকে সহায়তার অভিযোগে ইস্ট লন্ডনে তার আইনী সহায়তা প্রতিষ্ঠান উজমা ল সেন্টার থেকে গ্রেফতার করা হয়। আটক অবস্থা থেকে এক দিন পর মুক্ত হলেও শীঘ্র পার পাচ্ছে না অপরাধীরা। উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার ১০ দিন পার না হতেই সায়েমের অপকর্ম ফাঁস হয়ে পড়ে।
এই জালিয়াতির সঙ্গে লন্ডনে নির্বাসিত বিএনপির নীতি নির্ধারক তারেক রহমানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে সংবাদ পত্রের খবরে জানা গেছে। তাছাড়া তারেক রহমানের এই উপদেষ্টা কোন উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্প্রতি নিওইয়ার্ক সফর উপলক্ষে আমেরিকা অবস্থান করেছিল তাও খেতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের বাঙালি কমিউনিটি।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর সূত্রে জানা গেছে সদ্যনিযুক্ত তারেক রহমানের মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা এম এ সায়েম মাত্র বছরখানেক আগে গণফোরাম থেকে বিএনপিতে যোগ দিয়েই ইউরোপ ও বহির্বিশ্ব-বিএনপির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রক বনে গেছেন। যুক্তরাজ্য বিএনপি, স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল এবং ইউরোপ বিএনপির বিভিন্ন কমিটি গঠনে তার মতের বাইরে কেউ কমিটি গঠন করতে পারছেনা। এ নিয়ে যুক্তরাজ্যে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে কোণ খুঁটিন জোরে যুক্তরাজ্য বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও এম এ সায়েম সম্প্রতি বাগিয়ে নিয়েছেন তারেক রহমানের মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টার পদ। এ নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

আর দলের বাইরে ব্রিটেনের বাঙালি বাংলাদেশি কমিউনিটিতে সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভিসা স্ট্যাটাস ও দেশটিতে থেকে তার রাজনৈতিক বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক চলছেই। কিন্তু প্রকৃত অবস্থাটি কি, সে বিষয়ে কেউ স্পষ্ট কিছু বলছেন না। প্রায় পাঁচ বছরের অধিক সময় ধরে বিএনপির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে বসবাস করছেন। প্রশ্ন উঠেছে, তিনি লন্ডনে বসে কেন এবং কিভাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশ নিচ্ছেন?

শেষ করবো এই বলেই যে, তারেক রহমানকে নিয়ে নানাবিদ বিতর্ক যেন কিছুতেই বিএনপিকে পিছু ছাড়ছে না। এসব কারণেই বিএনপির প্রতিটি পর্যায়ে এখন ভয়াবহ সাংগঠনিক দুরবস্থার। এর সাথে গোদের ওপর বিষ ফোঁড়ার মতো যুক্ত হয়েছে বিদেশে ঘুষ কেলেঙ্কারি।বিএনপি তার প্রতিষ্ঠার ৩৬ বছরের মধ্যে এর আগে এমন সঙ্কটজনক অবস্থার মধ্যে আর পড়ে নাই। অনেকেই বলছেন, ক্রান্তিকাল চলছে দলটির। প্রতিষ্ঠার পর সব সময় ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলে থাকলেও এখন ক্ষমতারও বাইরে। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ক্ষমতার রাজনীতির ২৩ বছর পর একেবারেই ক্ষমতার বাইরে। এর জন্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বিএনপির জামায়াত তোষণ ও নেতিবাচক রাজনীতিকেই দায়ী করছেন। কেননা, জামায়াতের পরামর্শে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বয়কট ও প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে বিএনপি চরমভাবে ব্যর্থ হয়ে ক্ষমতার বলয় থেকে অনেকটা ছিটকে পড়েছে। ১৯৯১ সাল থেকে দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে সোয়া দুইবার প্রধানমন্ত্রী এবং তিনবার বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসেবে দেশের ক্ষমতার বলয়ে ছিলেন। কিন্তু এই প্রথম তিনি বিরোধী দলীয় নেত্রীর পদটিও হারিয়ে এখন দেশে-বিদেশে ধর্ণা দিচ্ছেন পাশাপাশি মধ্যবর্তী নির্বাচন আয়োজনের জন্যে সরকারের সাথে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে বার বার প্রত্যাক্ষাত হচ্ছেন। তাই বিএনপির কোন কুট কৌশলই এখন আর কাজে আসছে না। লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেফতারের অযৌক্তিক দাবি করে বিএনপি-জামায়াতের কয়েকটি পদলেহী ইসলামী দলের মাধ্যমে আজকের হরতাল ঘোষণা করানো নিয়েও নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সরকারী দলের পাশাপাশি দেশের সাধারণ মানুষও এখন বলাবরল করছে যে, দুর্নীতি মামলায় আদালতে হাজিরা না দেয়ার কৌশল হিসেবেই বিএনপি এ হরতাল ডাকিয়েছে। যদিও দেশের মানুষ এ হরতালে সাড়া দেয়নি। তার পরও বিএনপি মতো একটি দল কিছুতেই দেশের মানুষের নাড়ির স্পন্দন বুঝতে না পেরে একের পর এক হটকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেই চলেছে।