পাকিস্তানি স্কুলে তালেবানি হত্যাযজ্ঞ: ঘৃণা জানানোর ভাষা নেই

মাহবুবুল আলম
Published : 17 Dec 2014, 05:21 PM
Updated : 17 Dec 2014, 05:21 PM

শিশুরা হলো নিষ্পাপ। এদের সবাই শ্রষ্ঠার দূত হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। তারা কোন রাজনীতি বোঝেনা, বোঝেনা কুটিলতা। সারল্যতা নিয়ে তারা প্রকৃতির কোলে বেড়ে ওঠে। বড় হয়ে তারা দেশ ও জাতিকে উপহার দেয় তাদের সর্বোত্তম পরিসেবা। দেশে দেশে শিশুদেরকে তাই সবাই ভালোবাসে। তাদের অনাবিল হাসি জুড়িয়ে দেয় মা-বাবার প্রাণ। এমন শতাধিক শিশুকে পাকিস্তানের পেশোয়ারে আর্মি পরিচালিত একটি স্কুলে ঢুকে ছাত্রসহ অনেককে হত্যা করেছে পাকিস্তানের তালেবাণী জঙ্গীরা। তালেবানী জঙ্গীদের এই বর্বেরোচিত নৃশংস হত্যাকান্ড সারা বিশ্বের বিবেকবান মানুষের হৃদয়কে বিদীর্ণ করেছে শোকে, ঘৃণায় ও অভিসম্পাতে। তাই মানবতাবিরোধী নৃশংস এ হত্যাযজ্ঞে ঘৃণা জানানোর ভাষা আমার জানা জানা নেই। বিশ্বের বিভিন্ন গণ মাধ্যমে এ নিয়ে ঘৃণা ও প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠেছে।

এএফপি, বিবিসি ও ডন অনলাইন ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে গতকাল ১৬ ডিসেম্বর সকালে পেশোয়ারের ওয়ারসাক রোডের ওই বিদ্যালয়ে ঢুকেই তালেবান জঙ্গীরা প্রায় ৫শ' ছাত্র-শিক্ষককে জিম্মি করে। এ সময় জঙ্গীরা সেনাবাহিনীর পোশাক পরা ছিল। তালেবান জঙ্গীরা স্কুলে ঢুকে নির্বিচারে গুলি চালায়। এই নৃশংস হামলায় শতাধিক ক্ষুদে শিক্ষার্থী নিহত এবং আহত হয় আরও শতাধিক শিক্ষার্থী। সর্বশেষ এ বর্বরোচিত হামলায় ১৪১ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ১৩২ জনই ক্ষুদে ছাত্র। আহতদের বেশিরভাগ ছাত্রের অবস্থাই গুরুতর বলে স্থানীয় সামরিক হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে। আহতদের মধ্যে কয়েক শিক্ষকও রয়েছেন। তেহরিক-ই তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) মুখপাত্র মুহাম্মদ খোরাসানি হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে বলেন, এতে ছয় জঙ্গী অংশ নিয়েছে। তবে সেনাবাহিনী জানায়, হামলায় আট থেকে ১০ জন অংশ নেয়। রাতে তেহরিক-ই-ইনসাফ মুখপাত্র শিরীন মাজারি এ ঘটনায় ১৪৬ জনের নিহত হওয়ার কথা জানান।

তালেবান জঙ্গীদের সঙ্গে ৯ ঘণ্টার রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর জিম্মি উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করে সেনাবাহিনী। সেনা কর্মকর্তারা জানান, উদ্ধার অভিযান শেষ। সাত জঙ্গী নিহত হয়েছে। তবে সেনাবাহিনী বোমার খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সেনা সূত্র ৯ জঙ্গী নিহত হওয়ার কথা জানায়। অভিযানে সাত সেনা আহত হয়েছে বলে রয়টার্স জানায়। বিভিন্ন সূত্রের খবরেজানা গেছে , ছয় জঙ্গী তালেবান সামরিক পোশাকে পেশোয়ারের ওয়ারসাক রোডে আর্মি পাবলিক স্কুলের নিরাপত্তা বেষ্টনী কেটে স্কুলে ঢোকে।প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনামতে, জঙ্গীরা যখন স্কুলে ঢোকে তখন স্কুল মিলনায়তনে সেনাবাহিনীর একটি দল শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল। জঙ্গীরা স্কুল ভবনে ঢুকেই কয়েকটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। হামলার সময় কমপক্ষে ১৫টি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। নিরাপত্তা বাহিনী স্কুলের দিকে অগ্রসর হলে বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়। গুলি ও আত্মঘাতী বোমা হামলায় এ বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন গণ মাধ্যমে সাক্ষাতকার বা বিবৃতি দিয়ে এ জঘণ্য হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদ জানিয়েছে। প্রদিবাদ জানিয়েছে পৃথিবীর সকল বিবেকবোধ সম্পন্ন মানুষ। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ মঙ্গলবারের হামলার ঘটনাকে কাপুরুষোচিত আখ্যা দিয়ে এর সঙ্গে জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তির কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে পাঠানো এক বার্তায় নিরাপত্তা বাহিনীর স্থানীয় সকল সামরিক এবং বেসামরিক কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। স্কুলের সকল শিশু এবং নিরীহ লোকদের নিরাপদে বের করে আনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার কথা বলা হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাকিস্তানের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ছাত্র-শিক্ষকের ওপর ঘৃণ্য হামলা চালিয়ে সন্ত্রাসীরা আবারও বিকৃত মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে। এ অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় পাকিস্তান সরকারের প্রতি ওবামা তাঁর সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পেশোয়ারে তালেবানদের হামলায় শতাধিক স্কুল ছাত্রসহ নিরস্ত্র বেসামরিক বহু মানুষকে হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সোমবার এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এ বর্বর ও ন্যক্কারজনক হত্যাকা-সারা বিশ্বের মানুষকে শোকাহত ও স্তম্ভিত করেছে। তিনি এ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের পুনরাবৃত্তিরোধে উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তি এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এই অঞ্চলের জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করার আহ্বান জানান।

ইসলাম হলো শান্তি ও প্রগতির ধর্ম। এই শান্তির ধর্মের নামে উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তি সারা বিশ্বের সন্ত্রাসবাদ সৃষ্টি করে যতসব মানবতাবিরোধী কার্যকলাপের মাধ্যমে ইসলামকে অন্যান্য ধর্মবলম্বীদের কাছে সন্ত্রসী ধর্ম হিসেবে পরিচিত করার অপচেষ্টা যাচ্ছে। এরই সর্বশেষ কাপুরুষোচিত হত্যাযজ্ঞ চালানো হলো শিশু-কিশোরদের বিদ্যাপিঠে। যে সব শিশু বা সামরিক বা বেসামরিক নাগরিক এ বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের শিকার হলো, কি অপরাধ করেছিল তারা। কেন তারা ধর্মীয় উন্মানদনায় এতগুলো শিশুকে হত্যা করলো? এই তাদের ইসলাম? এই কি তাদের তালেবানী শিক্ষা?

পরিশেষে এই বলেই শেষ করতে চাই, পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইতো বাংলাদেশে জন্মলগ্ন থেকেই আমাদের বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ কায়েম করতে হাজার হাজার কোটি খরচ করছে। গোয়েন্দগিরি করছে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। অার আমাদের দেশেতো ১৯৭১ সালের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে পাকিস্তান এই সংস্থাটি বদ্ধপরিকর। কিন্তু তাদের দেশ পাকিস্তান যে উগ্র সাম্প্রদায়িক বিষভাস্পে ধ্বংস হতে হতে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিনত হতে চলেছে, সে দিকে কি তারা গোয়েন্দাগিরী করতে পারে না! এই যে সেনাবাহিনী পরিচালিত একটি স্কুলে হামলা চালিয়ে শতাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থীকে হত্যা করলো তখন কি আইএসআই নাকে সরিষার তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছিল? নাকি পাকিস্তানে একটি বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টি করার লক্ষ্যে সব কিছু জেনেও না জানার ভান করে ছিলেন? এর দায় কি পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং আইএসআই কোনোভাবেই এড়াতে পারবে?