থামাও তোমার মানুষ পুড়িয়ে হত্যার পৈশাচিকতা

মাহবুবুল আলম
Published : 4 Feb 2015, 06:43 AM
Updated : 4 Feb 2015, 06:43 AM

সর্বশেষ বিএনপি-জামায়াতের পেট্রোল বোমার আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে প্রাণ হারালো আরও ৭জন নিরীহ সাধারণ মানুষ। পুড়ে দগ্ধ হয়ে হাসপাতালের বিছানায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে আরো বেশ ক'জন হতভাগ্য বাসযাত্রি। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেছে, গতকাল ৪ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লায় আইকন পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি নৈশকোচে পেট্রোবোমা হামলায় ৭ যাত্রী নিহত হয়েছে। এতে দগ্ধ ও আহত হয়েছে কমপক্ষে ৩০ জন। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেছে, কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আইকন পরিবহনের একটি নৈশ কোচ (ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৪০৮০) মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৩টার দিকে চৌদ্দগ্রামের মিয়াবাজারসংলগ্ন জগমোহনপুর নামকস্থানে পৌঁছলে বিএনপি-জামায়াতের মানুষখেকো পিশাচরা বাসটি লক্ষ্য করে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে। এতে বাসটির ভেতরে-বাইরে দাউদাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে। এ সময় বাসে ঘুমিয়ে থাকা যাত্রীরা কোন কিছু বুঝে ওঠার আগে আগুনে পুড়ে ঘটনাস্থলেই ৭জন মারা যায়। নিহতরা হচ্ছে ' যশোরের গণপূর্ত বিভাগের ঠিকাদার জেলা সদরের ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের বাসিন্দা (বাসা- ৩৫, গোলাপ সেন্টার), হাজী রুকনুজ্জামানের পুত্র নুরুজ্জামান পপলু (৫০), তার একমাত্র মেয়ে যশোর পুলিশ লাইন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী মাইশা নাঈমা তাসনিন (১৫), কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার আবু তাহের (৩৮) ও আবু ইউসুফ (৪৫), নরসিংদীর পলাশ উপজেলার আসমা আক্তার (৩৮) ও তার ছেলে শান্ত (৬) এবং শরিয়তপুর জেলার ঘোষেরহাট উপজেলার দক্ষিণ গজারিয়া গ্রামের ওয়াসিম। নিহতদের দেহ পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। দগ্ধদের মধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ৬ জন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।

বিএনপি-জামায়াত তথা ২০ দলীয় জোটের ডাকে কথিত অবরোধ ও হরতালের নামে মানুষ পুড়িয়ে মারার যে পৈশাচিকতা চলছে কোন সভ্য মানুষ তাকে রাজনৈতিক অধিকার বলে মেনে নিতে পারে না। কেননা, গত ২৮ দিনের বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ ও হরতালের নামে এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। আর ও শত শত দগ্ধ, পুড়ে কয়লা হওয়া মানুষের চিৎকার ও তাদের স্বজনদের আহাজারিতে বিভিন্ন হাসপাতাল ও নার্সিং হোমের পরিবেশ শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। আর এসব নৃশংস পৈশাচিকতা দেখে দেশের সাধারণ মানুষ শোকে মুহ্যমান হয়ে যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। দেশব্যাপী শুরু হয়েছে বিএনপি-জামায়াত তথা ২০ দলীয় জোটের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। তাই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিএনপি-জামায়াতের পেট্রোল বোমা হামলাকারী ও নাশকতাকারীদের যেখানেই ধরতে পারছে, সেখানেই গণধোলাই দিয়ে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে সোদর্প করছে। এভাবেই সারাদেশে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠছে প্রতিরোধ। আর এর বাইরেতো প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে এই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে ঘৃণা প্রকাশ করে যাচ্ছে। সারা দেশ আজ এক পাগলা হাতির পায়ের তলায় পিষ্ট হচ্ছে। কিন্তু তবুও থামছেনা ওদের উন্মত্ততা। বিএনপি নেত্রী তার বড় ছেলে তারেক রহমান, জামায়াত ও পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের পরামর্শ ও নির্দেশে অবরোধের পাশাপাশি একের পর এক হরতাল দিয়ে নাশকতা ও মানুষ পুড়িয়ে মারার এক নৃশংস খেলায় মেতে ওঠেছে।

বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া কতৃক পেট্রোল বোমার মাধ্যমে মানুষ পুড়িয়ে মারার নির্দেশ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় তাদের আন্দোলনের সাথে জনসাধারণ দূরে থাক দলের নেতাকর্মীরাই যোগ দিচ্ছে না। এতে দিনে দিনে বাড়ছে বিএনপির প্রতি মানুষের ঘৃণা ও ক্ষোভ। আর বিএনপির নেত্রীর পুত্র তারেক রহমান আইএসআইয়ের পরামর্শে নাশকতা সৃষ্টির জন্য লন্ডন থেকে ফোনে যে সব আদেশ নির্দেশ দিচ্ছে তারেক রহমানের সেসব ফোনকল রেকর্ড রয়েছে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে। শুধু তা ই নয় রিমান্ডে যাওয়া দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারও একই কথা কথা বলছেন গোয়েন্দাদের কাছে। লন্ডন প্রবাসী পুত্র তারেক রহমানের কথা ছাড়া আর কারও কোন কথা শুনেন না বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রশ্নের উত্তরে এই ধরনের কথা বলেছেন রিমান্ডে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, উপদেষ্টা মোসাদ্দেক আলী ফালু, শামসুজ্জামান দুদু ও যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ-বিএনপির এই চার নেতা। লন্ডন প্রবাসী তাদের নেতা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মোবাইল ফোনের কল রেকর্ডে কথোপকথন রেকর্ড পরীক্ষা করেও এর সত্যতা পেয়েছেন গোয়েন্দারা।

কারো কথাই শুনছে না এ অশুভ মিলিত অপশক্তি। না মানছে বিশ্ব ইসতেমা, না মানছে, ধর্মীয় উৎসব, না মানছে ছেলে-মেয়েদের পরীক্ষার সময়সূচি। বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ একই সাথে হরতালের কারণে দেশের ১৫ লাখ এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনকে এক অনিশ্চিত অন্ধকারে ঢেকে দিয়েছে। পরীক্ষার ঠিক আগে আগে অবরোরোধের সাথে প্রথমে ৭২ ঘন্টা ও পড়ে আরও ৩৬ ঘন্টার হরতালের কারণে পরীক্ষার সময়সূচি তচনচ হয়ে গেছে। তাদের অবরোধের আগুন থেকে রেহাই পাচ্ছে না কেউ। রেহাই পাচ্ছে না শিশু, নারী, বৃদ্ধ, শিক্ষক, ক্ষুদে ব্যবসায়, বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রী, পথচারী সাধারণ মানুষ। তাদের প্রতিহিংসা, সহিংসতা ও নাশতকতার আগুনে পুড়ে মরছে বাস-ট্রাকের ড্রাইবার হেলপার। পাথর নিক্ষেপে মারা যাচ্ছে শিক্ষয়ত্রী, বোমা ও ককটেল হামলায় মারা যাচ্ছে কোচিং থেকে ফেরা ছাত্র-ছাত্রীরা। তাদের আঠাশদিনের অবরোধে প্রতিদিন দেশের ক্ষতি হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার। ব্যহত হচ্ছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নাগরিক লক্ষ লক্ষ সোনামনি ছেলে-মেয়েদের লেখা পড়া। এত মানুষ পুড়িয়ে মেরেও যেন গলছে না পাষাণীর মন। তাই আজ আমাদের সেচ্চার প্রতিবাদের স্লোগান হোক 'থামাও তোমার মানুষ পুড়িয়ে মারার পৈচাশিকতা '।