বন্ধ করো মানব পাচারের মৃত্যুযাত্রা

মাহবুবুল আলম
Published : 17 May 2015, 05:04 AM
Updated : 17 May 2015, 05:04 AM

এক শ্রেণীর ধোঁকাবাজ অর্থলিপ্সু মানব পাচারকারীর নানা প্রলোভনে সোনার হরিণের আশায় মৃত্যুযাত্রা করছে সহজ-সরল মানুষ। কেউবা প্রলোভনে পা রাখছেন অন্ধকারের জগতে। কেউবা বরণ করছে দাসত্বের জীবন। মানব পাচাকারী দালালদের খপ্পরে পড়ে মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ করে মাছধরা ট্রলারে করে বেরিয়ে পড়ছে সমুদ্রযাত্রায়। মানব পাচারে নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বাংলাদেশের সমুদ্রপথ। বিভিন্ন পরিসংখ্যান জানা গেছে , থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায়সহ বিভিন্ন দেশে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক মিয়ানমারের। বাংলাদেশের ৪১ জেলা থেকে মানুষ পাচার হচ্ছে। এর মধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ বেশি। এজন্য তিন শতাধিক দালালচক্র কক্সবাজারসহ সমুদ্র এলাকায় ৬০টির বেশি পয়েন্টে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। চলতি বছরের তিনমাসে ২৫ হাজার বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গা বিভিন্ন দেশে পাচার হয়েছে। তাদের মধ্যে নির্যাতিত হয়ে ও খাবার সঙ্কটে মারা গেছে তিন শতাধিক মানুষ। সাধারণ মধ্য ও নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষভাগ্য পরিবর্তনের জন্য পাচারের শিকার হচ্ছে। তাদের অনেকেই সহায়সম্বলহীন। সম্পদ বিক্রি করে অল্প অর্থে অবৈধভাবে বিদেশ পাড়ি দিতে দালালদের প্রলোভনে নিজের ও পরিবারের জীবনকেই বিপন্ন করে তুলছে। নিজ দেশের মানুষকে পাচারের মতো জঘন্যতম কাজটি করে থাকেন একশ্রেণীর অর্থলিস্পু দালাল। স্থানীয় দালালরা মালয়েশিয়া গমনেচ্ছুদের কাঠের ট্রলারে করে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী গভীর সমুদ্রে অপেক্ষায় থাকা বড় ট্রলারে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে কাঙ্খিত দেশের দালালের কাছে তাদের হস্তান্তর করা হয়। তারপরই শুরু হয় অবৈধ অভিবাসীদের অনিশ্চিত যাত্রা। এভাবেই অবৈধভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের পাচারকারীদের মধ্যে হাতবদল হয়।
ইউনাইটেড নেশন্‌স-এর সংজ্ঞা অনুসারে মানব পাচার বা human trafficking হল: ভয় দেখিয়ে বা জোর করে অথবা অন্য কোনও ভাবে জুলুম করে, হরণ করে, প্রতারণা করে, ছলনা করে, মিথ্যেচার করে, ভুল বুঝিয়ে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে, দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে, অথবা যার উপরে একজনের কর্তৃত্ব আছে পয়সা বা সুযোগ-সুবিধার লেনদেনের মাধ্যমে তার সম্মতি আদায় করে -শোষণ করার উদ্দেশ্যে কাউকে সংগ্রহ করা, স্থানান্তরিত করা, হাতবদল করা, আটকে রাখা বা নেওয়া।ইউএনডিপির তথ্য মতে এক দশকে বাংলাদেশ থেকে ১২ থেকে ৩০ বছর বয়সী প্রায় তিন লাখ নারী ও শিশু পাচার হয়েছে। বিভিন্ন মানবাধিকার, নারী ও শিশুকল্যাণ সংগঠনের গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত তিন দশকে বাংলাদেশ থেকে ১০ লাখের বেশি মানুষ পাচার হয়েছে। সবচেয়ে বেশি পাচারের শিকার হয়েছে সীমান্তবর্তী জেলার বাসিন্দারা। তবে সম্প্রতি সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দাদের ভাল চাকরির আশ্বাস দিয়েও পাচার করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, পাচারকৃত বাংলাদেশী নারীদের যৌনবৃত্তি, গৃহকর্মী, পর্নো চলচ্চিত্র নির্মাণ কাজে এবং শিশুদের অঙ্গহানি করে ভিক্ষাবৃত্তি, মাদক বহন ও উটের জকি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ইউএনএইচসিআর'র বিবৃতিতে বলা হয়, ঝুঁকি সত্ত্বেও অনেক মানুষ এই বিপদসঙ্কুল পথ ব্যবহার করে বিদেশ পাড়ি দিচ্ছেন। যার ফলে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে প্রায় ২৫ হাজারের মতো বাংলাদেশী এবং রোহিঙ্গা মানবপাচারের শিকার হয়েছে। বেঁচে যাওয়া অভিবাসীদের তথ্যের উপর ভিত্তি করে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের প্রথম তিন মাসে অনাহার, পানিশূন্যতা এবং পাচারকারীদের নির্যাতনে আনুমানিক ৩০০ জন মানুষ সমুদ্রে মারা গেছে। ইউএনএইচসিআর-এর মুখপাত্র এ্যাড্রিয়ান এডওয়ার্ডস জানান, মানবপাচার করা একটি লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। ফলে শিশুদেরও অপহরণ এবং জোর করে মানবপাচারের উদ্দেশ্যে নৌকায় তোলা হয়। এছাড়া যারা বিদেশ যাওয়ার জন্য এসব পাচারকারীদের টাকা দেন তারা ভাবতেও পারেন না, তাদের থেকে জোর করে টাকা আদায় করা হবে।

সেভ দ্য চিলড্রেনের তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরে দেশ থেকে প্রায় ৫ লাখ নারীকে নানাভাবে পাচার করা হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পাচার হওয়া এসব নারীর কিছু অংশ মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরলেও মিলছে না এদের স্বাধীনতা। স্বাধীনভাবে চলাফেরাতো দূরের কথা, পরিবারের সদস্যদের কাছেও এরা অবহেলার পাত্র। এ অবহেলা ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের কারণে অনেক পাচার হওয়া নারী পরিবারের কাছে ফিরতে চায় না। এছাড়া দেশের অভ্যন্তরে পতিতা পল্লীগুলোতে বিক্রি হওয়া নারীদের ক্ষেত্রেও ঘটছে একই ঘটনা। পাচার রোধে সংশি¬ষ্টদের আরও কঠোর হওয়া প্রয়োজন। এছাড়া পাচার হওয়া নারীদের ফেরত আনার পর যথাযথ পুনর্বাসনের জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্রও জরুরি। এক শ্রেণীর মানুষ নারী ও শিশু পাচারকে ব্যবসা হিসেবে নিয়েছে। তাদের এ ব্যবসা চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতেই চলে এবং পাচার হওয়া অধিকাংশ নারীকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের 'ট্রাফিকিং ইন পার্সনস' শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, পাচাররোধে বাংলাদেশ 'টায়ার-২' এ অবস্থান করছে। যার অর্থ, পাচার বন্ধে বাংলাদেশ ন্যূনতম মাপকাঠিও পূরণ করতে সক্ষম হয়নি। অন্যদিকে ভারতে যৌনবাণিজ্যে বাংলাদেশী নারীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দিল্লী¬ সরকার। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের তথ্যে, প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষ পাচারের শিকার হচ্ছে। আর বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির তথ্যে এ সংখ্যা ২০ হাজার। ভারতের 'টাইমস অব ইন্ডিয়ায়' প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫০ হাজার লোক পাচারের শিকার হচ্ছে। 'ট্রাফিকিং ইন পার্সনস' শীর্ষ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে সংশ্লিষ্টদের পাচারের শিকার ব্যক্তিদের শনাক্তকরণে যথাযথ ব্যবস্থা জানা নেই। বাংলাদেশ হচ্ছে মানবপাচারের উৎসস্থল এবং এ দেশ থেকে পাচার হওয়া নারী-পুরুষ ও শিশুরা জোরপূর্বক শ্রম ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে ভারত ও পাকিস্তানে পাচার হওয়া নারী-শিশুদের যৌন ব্যবসার শিকার হতে হচ্ছে। এ দেশ থেকে রোহিঙ্গাদের পাচার হওয়ার ঘটনাও বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি নির্বাহী পরিচালক, সালমা আলীর মতে, বাংলাদেশে মানব পাচার অপরাধের শিকার ব্যক্তিদের সুরক্ষা ও অধিকার বাস্তবায়ন, নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করা এবং পাচারকারীদের শাস্তির জন্য রয়েছে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২। মানব পাচার প্রতিরোধ সংক্রান্ত জাতিসংঘ কনভেনশন ২০০০ এবং সার্ক কনভেনশন অনুসরণ করে সংঘবদ্ধভাবে সংঘটিত আন্তঃদেশীয় অপরাধগুলো প্রতিরোধ ও দমনের জন্য আন্তর্জাতিক মানদন্ডের সঙ্গে এ আইনকে সঙ্গতিপূর্ণ করা হয়েছে। এই আইন অভ্যন্তরীণ ও আন্তঃদেশীয় সব ধরনের মানব পাচারকে অপরাধ বলে গণ্য করার পাশাপাশি পৃথক ট্রাইব্যুনাল গঠন করে অপরাধীদের কঠোর শাস্তির বিধান করেছে, যদিও অদ্যাবধি এ ধরনের পৃথক ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়নি। তিনি বলেন, তাছাড়া সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি কর্তৃক অপরাধ মানব পাচার সংক্রান্ত মামলাগুলো নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পরিচালিত হচ্ছে, যার ফলে মামলাজট আশঙ্কতাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তদন্ত কাজ ৯০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করার বিধান থাকলেও সমিতির এ্যান্টি ট্রাফিকিং সেল কর্তৃক ৩০টি মামলা মনিটর করে দেখা যায়, গড়ে তদন্ত কাজ শেষ করতে সময় লেগেছে ১৯৫ দিন।

গ্রামের সহজ-সরল নারীদের চাকরিসহ নানা প্রলোভন দেখিয়ে ভারত-পাকিস্তানে পাচার করা হয় এবং দেশের পতিতা পল্লীতে বিক্রি করে দেয়া হয়। এছাড়া কাজের জন্য যারা বিদেশ যায়, তাদেরকে দেশ বদল করে পাঠানো হয় ভিন্ন দেশে এবং কাজ বদলে করা হয় সম্ভ্রমহরণ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কাজ ঠিক থাকলেও সম্ভ্রমহরণ বন্ধ থাকে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে চাকরি করতে গিয়ে নির্যাতন ও প্রতারণার শিকার হয় হাজার-হাজার নারী। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে তাদের দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া ছাড়াও করা হয় শারীরিক নির্যাতন। অনিরাপদ এই শ্রম অভিবাসনের নামে কার্যত নারী পাচারের ঘটনাই ঘটছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ধরনের ঘটনায় প্রতারণার শিকার হওয়া বেশির ভাগ নারী লোকলজ্জার ভয়ে মামলা করতে চায় না, আবার অনেকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে কিছু টাকা পেলেই খুশি। তবে এসব নারী কোনোভাবে মুক্তি পেলেও বিভিন্নভাবে সামাজিক সম্মান থেকে বঞ্চিত হয়।

সাধারণ মধ্য ও নিন্ম মধ্যবিত্তের নারী ও শিশুরাই পাচারের প্রধান শিকার। নারীদের পাচার করার উদ্দেশ্য মূলতঃ তাদের দেহব্যবসায়ে কাজে লাগানো-ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌনকর্মে নিয়োজিত করা, পানশালায় নাচানো, অশ্লীল ছবি, চলচ্চিত্র ইত্যাদিতে অংশঘ্রহণ করানো| এছাড়া সস্তা শ্রমের জন্য ব্যবহার করা, নেশার দ্রব্য পাচার করানো, তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রি করা, ভিনদেশী পুরুষদের যৌনলালসা মেটানোর জন্য বিয়ের নামে বিক্রি করে দেওয়া, ইত্যাদি।শিশুদের ক্ষেত্রে পাচারের উদ্দেশ্য হল-সস্তা শ্রম, ভিক্ষাবৃত্তিতে ব্যবহার, যৌন শোষণের জন্য বিক্রি করা| এছাড়া নেশার দ্রব্য পাচার, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রি ইত্যাদির জন্য শিশুদের পাচার করা হয়। কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপসহ বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মালয়েশিয়াগামীদের জড়ো করার হার বেশি বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়। পুলিশের তথ্যমতে, এর বাইরে কক্সবাজার সদর উপজেলার নয়টি, মহেশাখালীর চারটি, উখিয়ার ছয়টি, টেকনাফের ১৭টি, চকরিয়ার দুটি, পেকুয়ার দুটি, চট্টগ্রাম জেলার পাঁচটি এবং নগরীর তিনটি পয়েন্ট দিয়ে মালয়েশিয়াগামীদের জড়ো করে ট্রলারে তুলে দেয় দালালরা। এছাড়া নোয়াখালী, পটুয়াখালী, সাতক্ষীরা, খুলনা জেলার উপকূল থেকেও দালালরা মালয়েশিয়াগামীদের ট্রলারে করে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী মানব পাচারকারীদের ট্রলারে তুলে দেয়। সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় মানব পাচার কাজে উপকূলীয় এলাকায় শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জনের সিন্ডিকেটের মধ্যে গডফাদার রয়েছে। আগে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাসহ এই অঞ্চলের মানুষ নৌকায় করে মালয়েশিয়ায় যাত্রা করত। কিছু মানুষ থাইল্যান্ড পৌঁছে মোটা অঙ্কের টাকা পরিশোধ করে গন্তব্যে পৌঁছলেও অনেকেই ট্রলারডুবির ঘটনায় মারা যাচ্ছেন। অনেকে নিখোঁজ হচ্ছেন। আবার অনেকে ধরা পড়ে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের কারাগারে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। অধিকাংশ দালাল যাত্রীদের সমুদ্রে নিয়ে জলদস্যুদর হাতে তুলে দিচ্ছেন। দস্যুরা বেদম পিটিয়ে যাত্রীদের সর্বস্ব লুট করছে। ঘটছে ধর্ষণের মতো ঘটনাও। জলদস্যু, সন্ত্রাসী বাহিনী আর দালালের যোগসাজশে চলছে উপকূলে মানব পাচারের রমরমা বাণিজ্য। মানব পাচারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, গত তিন বছরে সমুদ্রপথে ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষ মালয়েশিয়ায় রওনা দিয়েছেন। এর মধ্যে একাধিক ট্রলারডুবির ঘটনায় অন্তত ৫০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ দেড় হাজারের বেশি মানুষ। উপকূলে অনুসন্ধান চালিয়ে তারা এই তথ্য পেয়েছেন বলে জানান।

বর্তমানে কক্সবাজার, বান্দরবান, চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, ঢাকা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, পাবনা, পঞ্চগড়, যশোর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, জয়পুরহাট, সাতক্ষীরা, ময়মনসিংহ, ভোলা ও ঝিনাইদহসহ ৪১ জেলা থেকে সারা বছর মালয়েশিয়ায় মানব পাচারের জন্য কক্সবাজারের টেকনাফ,উখিয়া ও মহেশখালীতে পাচারকারী চক্র সংশ্লিষ্ট জেলার স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে কমিশনের ভিত্তিতে লোক সংগ্রহ করে কক্সবাজারে পাঠায়।

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের যে ৬০টি স্থান দিয়ে মানব পাচার হচ্ছে এসব পয়েন্টের মধ্যে উল্লেখযোগৗ পয়েন্ট হলো কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছটা, ফিশারিঘাট, নাজিরাটেক, সমিতিপাড়া, মহেশখালীর সোনাদিয়া, গোরকঘাটা, কুতুবজোম, ধলঘাটা, উখিয়ার সোনারপাড়া, রেজুরখাল, ইনানী, ছেপটখালী, মনখালী, টেকনাফের বাহারছড়া, সাবরাং, শাহপরীরদ্বীপ, ঘোলারপাড়া, মাঝরপাড়া, পশ্চিমপাড়া, কাটাবনিয়া, খুরেরমুখ, হাদুরছড়া, জাহাজপুরা, কচ্ছপিয়া, শামলাপুর, সদরের ঈদগাঁও, খুরুশকুল, চৌফলদন্ড, পিএমখালী, চকরিয়া, পেকুয়া, চট্টগ্রামের বাঁশখালী, আনোয়ারা, পটিয়াসহ অন্তত ৬০টি স্থান দিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ সমুদ্রে নেমে বিপদে পড়ছেন। কিন্তু এসব স্থানে সর্বক্ষণিক পুলিশের নজরদারি নেই। এসব স্থান দিয়ে মানব পাচার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমেদ বলেন, ৬০ কেন, ১২০ কিলোমিটারের পুরো সাগর উপকূলটাই আদম পাচারের নিরাপদ পয়েন্ট। এদিকে দেশের ৪১টি জেলা থেকে মানব সংগ্রহ করেছে পাচারকারীরা। চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, নরসিংদী ও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার সহজ-সরল লোকেরাই হচ্ছেন পাচারকারীদের প্রধান টার্গেট।

পরিশেষে বলতে চাই যে, মানব পাচার কোন নতুন ঘটনা নয়। এটি অহরহ ঘটছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা গেছে প্রতি বছরই বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষ একদেশ থেকে অন্য দেশে অবৈধ পথে পাড়ি জমাচ্ছে। তবে খরচ ও ঝামেলা কম বলেই বিভিন্ন দেশের অভিবাসি ও দালালরা সমুদ্র পথকে বেছে নিচ্ছে। এ নিয়ে সংবাদ হয় তখনই যখন ট্রলার বা নৌকাডুবিতে শত শত মানুষের প্রাণ যায়। ইদানিং বাংলাদেশেও মানব পাচারের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় প্রতিদিনই গভীর সমুদ্রে মানুষ ভাসির খবর হচ্ছে। এ নিয়ে দেশের মানুষ উৎকন্ঠিত। আইনশৃংখলা বাহিনীর শিথিলতা বা দালালদের দৌরাত্ব যে কোন কারণেই হোক মানব পাচারের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এটা বন্ধ করা অতি জরুরী। আর দেরি নয়; বন্ধ করো মানব পাচারের মৃত্যুযাত্রা।