ব্যারিস্টার রফিক উল হকের সাম্প্রতিক বক্তব্য ও কয়েকটি প্রশ্ন

মাহবুবুল আলম
Published : 15 May 2012, 05:16 AM
Updated : 15 May 2012, 05:16 AM

দেশের শীর্ষস্থানীয় আইনজ্ঞ ব্যারিষ্টার রফিক উল হক আজকাল সরকার ও মন্ত্রীদের সমালোচনা করে গণমাধ্যমের শিরোনাম হচ্ছেন এবং বিশেষ মহলের হাততালি ও পাচ্ছেন, যা সম্প্রতি ওনাকে পাদপ্রদীপের নিচে নিয়ে আসছে। ড.ইউনুসের সমালোচনা করায় শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়াকে `ড.ইউনুসের নখের যোগ্য নয়' এবং স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে `বেকুব' বলে গালমন্দ করেছেন। তাঁর এ গালমন্দ নিয়ে দেশে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে বেশ। ওনার মতো একজন শ্রদ্ধাভাজন মুরব্বি পেশাজীবীর মুখ থেকে অন্য শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এ-সব উচ্চারণ শুনলে আমাদের মতো নালায়েক মূর্খরা কোথায় যাবে? ব্যারিষ্টার রফিক উল হক স্বৈরশাসক এরশাদের আমলে এর্টনী জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যতটা না পরিচিতি লাভ করেছিলেন তা থেকে বেশী পরিচিতি লাভ করেছিলেন `ওয়ান ইলেভেনের' পর দুই নেত্রী হাসিনা খালেদার মামলা পরিচালনা করে। সেই কারণে তিনি সেসময় মোটামুটি হিরো বনে গিয়েছিলেন। কিন্তু আজকাল তিনি বেশী কথা বলে সে ইমেজ হারানোর পথে। তিনি ইদানিং কাদের সিদ্দিকী, কল্যাণ পার্টি ওয়ালাদের নিয়ে একক বক্তৃতার অনুষ্ঠানও করে বেড়াচ্ছেন। এ একক অনুষ্ঠান নিয়ে একটা মজার ও হাস্যকর খবর(ঠিক খবর নয় রিপোর্টারের মন্তব্য পড়লাম জনকন্ঠে।) খবরটির শিরোনাম হলো: `একক অনুষ্ঠানে একক শ্রোতা' খবরট এখানে উধ্বৃত করছি-`মুক্ত চিন্তা ফোরাম নামের একটি সংগঠন রাজধানীর পুরানা পলটনে ফটোজার্নালিষ্ট এ্যাসোসিয়েশনের মিলনায়তনে হত্যা, গুম, অপহরণ ও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের নির্ধারিত সময় ছিল পৌনে ১১ টা। ব্যারিস্টার রফিকুল হক সেখানে উপস্থিত হন নির্ধারিত সময়ের কয়েক মিনিট আগে। কিন্ত মিলনায়তনের দর্শক শ্রোতা সারিতে দু জন শ্রোতা থাকায় অনষ্ঠান শুরু হয় ১১ টায়। এ সময় ও শ্রোতার সংখ্যা ছিল ৭-৮ জন । এ দৃশ্য দেখে মঞ্চে ওঠে চেয়ারে বসেই আয়োজকদের উদ্দেশ্যে রফিক উল হক বলে ওঠেন, ভালই হলো একক বক্তৃতার অনুষ্ঠানে একক শ্রোতা।' তবু এ-সব অনুষ্ঠানে তাঁর বক্তব্য শুনলেই বিএনপির বড় নেতাদের চেয়েও বড় নেতা মনে হবে তাঁকে। তাঁর এ-সব বক্তব্য ও কথায় একপক্ষ হাততালি দিলেও অন্য পক্ষ হচ্ছে নাখোশ। এ-নিয়ে এখন তাঁর ইমেজ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। তাই এ মুহূর্তে ব্যারিস্টার হকের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে সবিনয়ে কয়েকটি প্রশ্ন করতে চাই –

ড. ইউনুসের নোবেল পুরস্কার অর্জনের পর দেশে বরেণ্য লেখক, সাংবাদিক ও কলামিস্টরা অনেক সমালোচনা করেছেন। সে সময় কি আপনি সেসব সমালোচনার কোনো জবাব দিয়েছিলেন বা এমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? আপনি একজন বিজ্ঞ আইনজ্ঞ; আপনাকে জ্ঞানদানের ধৃষ্টতা আমার নেই। তবু আপনার কাছে জানতে ইচ্ছে করে যেসব ক্রাইটেরিয়া মেনে নোবেল `শান্তি' পুরস্কার দেয়া হয় সেসব ক্রাইটেরিয়া কি ড. ইউনুসের ক্ষেত্রে মানা হয়েছে? আন্তর্জাতিকতার কথা বাদ দিলাম, দেশের কোনো সংঘাত, সংঘর্ষ, সন্ত্রাস, রাজনৈতিক সমস্যা নিরসনে কি কোনো কালে ভূমিকা রেখেছেন? বা বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ বিগ্রহ, জাতিতে জাতিতে হানাহানি সংঘাত প্রতিরোধে কোনো টু শব্দ কি করেছেন? এই যে আমেরিকা বিশ্বের দেশে দেশে অস্ত্র বিক্রির জন্য যুদ্ধ বাঁধিয়ে হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে এর বিরুদ্ধে কি ড. ইউনুস কোনো প্রতিবাদ কখনো করেছেন কি? তা ছাড়া বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড, একুশে আগস্ট নৃশংস গ্রেনেড হামলা, বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে বোমা হামলাসহ এসএমএস কিবরিয়া, আহসান উল্লাহ মাস্টার, মমতাজউদ্দিনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা সাংবাদিক বালুসহ বিভিন্ন সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের কি তিনি কখনো প্রতিকার করেছেন? বা দেশের ভেতর বোমা হামলা চালিয়ে যে এত মানুষ হত্যা করলো বা বিচারালয়ে বোমা মেরে দুই বিচারককে হত্যা করলো এর কি কোনো প্রতিবাদ করেছিলেন ড. ইউনুস? উপরোক্ত প্রশ্ন গুলোর উত্তর কি দিতে পারবেন আপনি? বরং আমেরিকা ও সাম্রাজ্যবাদের ক্রীড়নক হিসেবে তাঁকে নোবেল পুরস্কার দিয়ে এক/এগারো পরবর্তী সময়ে তাঁকে দিয়ে বাংলাদেশে কারজাই মার্কা সরকার গঠনের জন্য একটি দলও গঠন করিয়ে ব্যর্থ হয়ে পরবর্তীতে দই এর বিজ্ঞাপন চিত্রে অভিনয় করিয়ে ক্ষান্ত দিতে হয়েছে। এখন আবার হিলারিকে দিয়ে গ্রামীণ ব্যাংকে ফিরে আসতে চেষ্টা করে করছেন।

এত কিছুর পরও ড. ইউনুসকে নিয়ে কেউ কোনো কথা বললে তাকে কেন আপনার মতো ব্যক্তির গালমন্দ করতে হবে? সাম্প্রতিক আপনার এ-সব কথাবার্তায় কোনো কোনো মূর্খ ! এমনও মন্তব্য করছেন যে, কোনো বিশেষ মহল থেকে নাকি ব্যারিষ্টার হককে এমন সিগনাল দেয়া হয়েছে যে তারা আগামীতে ক্ষমতায় যাবেই এবং ক্ষমতায় গেলে এমাজউদ্দিন ও মনিরুজ্জামান মিয়াকে বাদ দিয়ে তাঁকে রাষ্ট্রপতি বানাবে। সে আশ্বাসের প্রেক্ষিতেই জনাব ব্যারিষ্টার হক এমন বিপ্লবীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। তা তিনি করতই পারেন এটা তাঁর গণতান্ত্রিক ও নাগরিক অধিকার। তা ই বলে তাঁর মতো ব্যক্তিত্বের মুখ থেকে এ-সব উচ্চারণ শুনলে আমাদের সকল আস্থার জায়গাটি যে নষ্ট হয়ে যায়। তাই দেশের সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা সুশীল সমাজের ছদ্মবেশ ত্যাগ করে বিশেষ দলটিতে নাম লেখানোই আপনার উচিত; তা না হলে এখনো যা ইমেজ অবশিষ্ট আছে তা ধ্বংস হতে বেশী দিন সময় লাগবে না।