মাশরুম কবে সহজলভ্য হবে?

মামুন ম. আজিজ
Published : 10 Oct 2011, 06:58 AM
Updated : 10 Oct 2011, 06:58 AM


মাশরুম– আমার অত্যন্ত পছন্দের একটি খাদ্য। অথচ দুঃখ জনক হলেও সত্য এই খাদ্যটি চাইলেই জোগাড় করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা, কারন এটি সহজলোভ্য নয়।

ঢাকায় আমার পৈত্রিক বসতিস্থান যাত্রাবাড়ী ছাড়িয়ে অদূরে দনিয়া নামক স্থানে। অত্র এলাকায় কোন বাজারে , কোন বড় গ্রোসারি শপে মাশরুম পাওয়াটা প্রায় অসম্ভব। এমনিক অত্র এলাকার একমাত্র চেইন শপ -স্বপ্ন তেও আমি অনরেকবার খুঁজে মাশরুম পাই নি। তারা রাখে না কারন এই আইটেম চলে না। এদেশের অধিকাংশ মানুষ এখনও বোধহয় মাশরুমকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করার মানসিকতায় পর্যবসিত হতে পারেনি বা হতে চায়না।

বছর্ খানেক আগে এলাকায় কিছু তরুন মাশুরুমের চাষের উদ্যগ নেয়। আমি ক্রয়ও করি। কিন্তু মানের দিক দিয়ে খুব একটা ভাল উৎপাদন তারা করতে পারে নি। তার উপর তাদের থেকে যে মাশুরুম কিনেছিলাম সেটি ছিল ওয়েষ্টার মাশরুম

ঢাকার শাহবাগস্থ ছবির হাটে মাশুরুমের তৈরী চপ ভাজা পাওয়া যায়। কয়েকবার খেয়েছি। সেটাও এই প্রকারেরই মাশুরুম। এর আগে বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বুনিয়াদী ট্রেনিংয়ের সময় পার্শ্ববর্তী মাশরুম উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কেন্দ্র, সাভার এর বদৌলতে যে মাশুরুম এর স্বাদ গ্রহণ করেছিলাম তাও পরে জানলাম এই ওয়েষ্টার প্রজাতেরই মাশুরুম।

কিন্তু এই জাতের মাশরুমে মনটা যেন ভরে না। কারন চাইনীজ রেষ্টুরেণ্টগুলোতে থাই স্যুপে যে মাশরুম খাই তার স্বাদ ও রূপ ভিন্ন। ঐ স্বাদ খুজে ফেরে মন এবং ঢাকায় স্যুপ খাওয়ার আড়ালেই মাশুরুমের স্বাদ নেয়ার সুযোগটা হয় বারংবার।

ইতিমধ্যে ২০০৯ সালে চায়নায় এক ট্রিনিংয়ে থাকাকালীন মন ভরে মাশরুম খেত পেরেছিলাম। কুনমিংয়ে এক রেষ্টুরেন্টে খাদ্যের আইটেমের মধ্য কেবল মাশরুমই ছিল নয় পদের। সবগুলো মাশরুমের তো আকার মনে নেই রং ও মনে নেই। তবে একটা যে ব্লাক মাশরুম ছিল এটা মনে আছে।

। অনন্য তার স্বাদ।

দেশে চাইনীজ রেষ্টুরেন্টে স্যুপের সেই মাশরুম আমি দোকানে খুঁজে বেড়াই। সহজে পাইনা। গুলশান ডিসি মার্কেট এর বড় বড় সবজি দেকানের ফ্রিজে মাশরুম দেখা যায়। হাতে নিই । সব সেই ওয়েষ্টার মাশরুম। হঠাৎ এগোয়ার পেয়ে যাই। কিন্তু সেটা দেশি নয়। বিদেশ থেকে আমদানী কৃত। মধ্যপ্রাচ্যের কোন এক দেশে থেকে সম্ভবত । ঠিক মনে নেই। চিনে নেই। নেট ঘেটে নামও বের করে ফেলি। এই প্রজাতিটিই সবচেয়ে বেশি পপুলার সারা বিশ্বে। নেট এমনই তথ্য সরবরাহ করে। এই প্রজাতির নাম আছে। সবচেয়ে কমন নাম বাটন মাশরুম। অনেকে এটাকে হোয়াইট মাশরুমও বলে থাকে।

গুলশান ডিসি মার্কেট বা ঢাকার অন্যান্য উন্নত এলাকার বড় বড় মার্কেটে ও গ্রোসারি শপে এই মাশরুম খুবই সহজ লোভ্য আজকাল। কিন্তু বেশীরভাগই বিদেশ থেকে আমদানীকৃত। যে কারনে দামটিও একটু বেশি। টিনজাত অবস্থায় চীন থেকে আমদানীকৃত বাটন মাশরুম গুলশান ডিসি মার্কেটে খুব সহজলোভ্য এবং এইটিই আমি বর্তমানে ক্রয় করি।

কৃষি মন্ত্রনালয়ের অধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায় সাভারে মাশরুমের জন্য একটি স্বতন্ত্র মাশরুম উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কেন্দ্র স্থাপিত হয়ছে । সেতো অনেক বছর হয়ে গেলো। …পত্র পত্রিকায় ওয়েব ব্লগে মাশরুম নিয়ে অনেক লেখা হয়েছে এবং হচ্ছে। যার বেশীর ভাগই দেখা যায় মাশরুম কি , এর বৈজ্ঞানিক বিন্যাস , ইতিহাস , গুনাগুন, রন্ধন প্রনালী . চাষৈর উপায় নিয়ে ঘূরে ফিরে সেই একই আলোচনা করতে। উদাহরণ সরূপ কৃষিবাংলা .কম সাইটের কিছু লাইন উদ্ধৃত করলে দেখি–

মাশরুম কি ?
মাশরুম হলো এক ধরণের ভক্ষণযোগ্য মৃতজীবী ছত্রাকের ফলন্ত অংগ। এগুলো মূলত Basidiomycetes অথবা Ascomycetes শ্রেণীর অন্তরগত ছত্রাক। ছত্রাকবিদরা বিশ্বে প্রায় ৩ লক্ষ প্রজাতির ছত্রাক চিহ্নিত করতে পেরেছেন। এই অসংখ্য ছত্রাকের মধ্য থেকে দীর্ঘ যাচাই ও বাছাই করে যে সমস্ত ছত্রাক সম্পূর্ণ খাওয়ার উপযোগী, পুষ্টিকর ও সুস্বাদু সেগুলোকেই তাঁরা মাশরুম হিসেবে গণ্য করেছেন। সুতরাং ব্যাঙের ছাতা এবং মাশরুম এক জিনিস নয়। ব্যাঙের ছাতা প্রাকৃতিক ভাবে যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা বিষাক্ত ছত্রাকের ফলন্ত অংগ কিন্তু মাশরুম হলো বিশ্বের সর্বাধুনিক পদ্ধতি (টিস্যু কালচার)-এর মাধ্যমে উৎপন্ন বীজ দ্বারা সম্পূর্ণ পরিচ্ছন্ন পরিবেশে বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে চাষ করা সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং ঔষধীগুণ সম্পন্ন সবজি, যা সম্পূর্ণ হালাল।

পবিত্র কোরআন ও হাদীসে মাশরুমকে অত্যন্ত মর্যাদাকর খাবার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সহীহ বুখারী শরীফে রাসুল (সঃ) বলেছেন, আল কামাতু মিনাল মান্না ওয়া মাহা সাফা আল্ আইন" অর্থাৎ মাশরুম এক শ্রেণীর মান্না এবং এর রস চোখের জন্য ঔধষ বিশেষ। আর মান্না সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে সূরা বাকারার ৫৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে – অযাল্লালনা আলাইকুমুল গামামা ওয়া আনযালনা আলাইকুমুল মান্না-ওয়াস্-সালওয়া কুলুমিন তায়্যিবাতি মা রাযাক্বনাকুম; ওমা জলামুনা আলাকিন কানূ আনফুছাহুম ইয়াযলিমূন অর্থাৎ আর আমি মেঘমালা দিয়ে তোমাদের উপর ছায়া দান করেছি এবং তোমাদের জন্য অত্যন্ত সম্মানিত খাবার পাঠিয়েছি মান্না ও সালওয়া। তোমরা খাও সে সব পবিত্র বস্তু যা আমি তোমাদের জন্য দান করেছি। সুতরাং পবিত্র কোরআন ও হাদীসের ভাষায় মাশরুম অত্যন্ত উন্নত ও সম্মানিত খাবার হিসেবে বিশেষভাবে উল্লেখিত।

মাশরুম একপ্রকার অপুষ্পক উদ্ভিদ। সবজি হিসেবে এটি একটি পুষ্টিকর খাদ্য। এটি ছত্রাকের বা ইউমাইসেটিসের অন্তর্ক্তূক্ত। এতে সবুজ কণা (Chlorophyll) নাই বিধায় সবুজ কণাযুক্ত উদ্ভিদের মতো নিজের খাদ্য নিজে প্রস্তুত করতে পারে না। সে কারণে খাদ্যের জন্য এরা প্রাণীজ বা উদ্ভিজ বস্তুর ওপর নির্ভরশীল। মাশরুমের মত দেখতে বন জংগলে ছাতা আকৃতির ছত্রাক জন্মে যেগুলো খাওয়ার অনুপযোগী ও বিষাক্ত। গ্রীকরা মাশরুমকে যোদ্ধাদের শক্তিবর্ধক খাবার হিসেবে গন্য করেন, রোমানরা একে ঈশ্বরের খাবার এবং চাইনিজ লোকেরা মাশরুমকে দীঘজীবি হওয়ার খাদ্য হিসেবে বিশ্বাস করেন। ছত্রাকের উঁচু ও নিচু এই দুটি স্তর রয়েছে, মাশরুম উঁচু স্তরের ছত্রাক এবং প্রধানতঃ ব্যাসিডিউমাইসেটিস শ্রেনীর অন্তর্ভূক্ত, এতে যৌন স্পোর হয়। ক্যারিওগ্যামী (Karyogamy) ও মিওসিসের (meosis) ফলশ্রুতিতে এই স্পোর উৎপন্ন হয় এবং এগুলো এক নিউক্লিয়েট বিশিষ্ট এবং হ্যাপলয়েড (Haploid)| ব্যাসিডিওমাইসেটিস ব্যতিত এসকোমাইসেটিস শ্রেণীর অন্তর্গত কিছু মাশরুম রয়েছে এগুলো স্পঞ্জ মাশরুম বা মোরেল (morels) নামে পরিচিতি। এক্ষেত্রেও যৌন স্পোর হয় তবে তা বেসিডিও স্পোর নয়, তা এসকোস্পোর (ascospore) নামে পরিচিতি। স্পঞ্জ মাশরুমও ভক্ষণযোগ্য। আমরা ছাতার মতো মাশরুমের যে অংশটি দেখতে পাই এটিকে ছত্রাকের ফ্রুটিং বডি (fruiting body) বলা হয়। মাশরুমের ফ্রুটিং বডি বা ভক্ষণযোগ্য অংশটি সাধারণতভাবে চারভাগে ভাগ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রতদিনের একটি ফিচারে পাই –মাশরুম চাষে ক্যারিয়ার সম্ভাবনা। যেখানেও সেই একই ধরনের কথা।

কিন্তু মূলত মাশরুম কিভাবে আরও মানুষের নিকট সহজলোভ্য হবে এবং জনপ্রিয় হবে, সস্থা হবে কিংবা আমাদের রসনালয়ে আর সকল তরি তরকারীর সাথে মাশরুমের মত একটি অত্যান্ত উপাদেয় পুষ্ঠিগুন সম্পন্ন খাদ্য নিত্যদিনের জন্য স্থান করে নেবে সে বিষয়ে কোন পরিকল্পনার কথা পড়ি না।

মাশরুম.কম নামে একটি বাংলাদেশী সুন্দর সাইট পেলাম যেখানে মাশরুম নিয়ে অনেককিছু বলা হয়েছে। কিন্তু দুৎখ জনক সেখানের সেলস এন্ড সার্ভিস বাটনে ক্লিক করলে আন্ডার কন্টষ্ট্রাকশন লেখা চলে আসে।

আশা করি একদিন প্রতিটি বাজারে আর সকল তরকারীর পাশাপাশি বিক্রি হবে প্রিয় সব মাশরুম। সেই দিনের অপেক্ষায়।